কবি প্রসঙ্গেঃ-
জন্ম  - ১৯৫৯, স্থান - ভাড়ড়, চব্বিশ পরগনা, পড়াশুনা- স্নাতকোত্তর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, পেশা -  প্রধান শিক্ষক (অবসরপ্রাপ্ত), নেশা- কবিতা
কিছু কবিতার বই  যেমনঃ-- নিদারুণ ছায়া/মেঘ এখানে এসে অন্যমনস্ক হয়ে যায়/দুই মাস্তুলের আকাশ

গোলাম রসুল- এর ১গুচ্ছ কবিতা


যে কুয়াশার দিকে চলে গেছে

পৃথিবীর শুরু থেকে হেঁটে আসছে যে আমি তাকে দেখে ছিলাম সন্ধ্যায়

সে কুয়াশার দিকে চলে গেল

এখন অনেক রাত
হাওয়ার রক্ত চলাচল শোনা যাচ্ছে
দুর্ভিক্ষ মহামারির পালকগুলো উড়ছে

আমি নেই 
তারই নৈঃশব্দ্য আমার সাথে
আমরা ভাসছিলাম

ঢেউ নেই
গড়ে ওঠে নি কোনো বাড়ি
কে রক্ষা করবে আমাদের ধর্মগ্রন্থ

তবু্ও সবকটা ঋতু পেরিয়ে যাচ্ছে
যে কুয়াশার দিকে চলে গেছে



শ্রেষ্ঠ শব্দটি উঠে আসুক পৃথিবীর ভিত থেকে

পৃথিবীর ভিত থেকে উঠে আসুক একটি  মারাত্মক শব্দ
আর ঈশ্বরে পৌঁছে প্রতিধ্বনি হোক

সব গাছগুলো শোকের
ধীরে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে নদী
আর নৌকার নিচে  কিছু একটা নির্দেশ যা আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে
আর একটি মাত্র দুঃখ থেকে কয়েকটি শহরের আলো জ্বলছে

প্রাচীন কুয়াশা
আমি ভাবছিলাম কিভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছিল একটি জলাধারের নিচে যখন বয়ে যাচ্ছিলো নদী

তবু্ও শ্রেষ্ঠ শব্দটি উঠে আসুক পৃথিবীর ভিত থেকে
         

একটি মাত্র উড়ে চলা

আমার গোড়ালিতে  পৃথিবী
আমি তখন উড়ে চলা বালক
জাঙাল যেভাবে চুমো খায় নদীর বুকে
আর নিঃসঙ্গ সারস এসে বসে 
জল নেমে গেল

ব্যথা উঠে যাচ্ছে  সিঁড়ির মতো
দুপুরের ওপরে
দিগন্তের একটি নিশ্চুপ বাড়ি 
চুনের চেয়েও সাদা
মহামারির কাল 
গলিপথে লুকিয়ে থাকা মহাদেশ
প্রত্যক্ষ একটি স্বর্গ

কে  ধরে রয়েছে সমুদ্রের একদিক
ঢেলে দিচ্ছে সন্ধ্যার প্রপাত
আফ্রিকার অন্ধকার
বালুকায় চাঁদ  আর নক্ষত্রের সমারোহ
তখনো খিলানে বসে আদিম পেঁচা
রাতভর দুঃখের উল্লাস
আমি প্রাচ্য লতা আর বাউলের মতো জড়িয়ে আছি আকাশের গায়
জীবন শুধু  কোন সুদূরের একটি মাত্র উড়ে চলা 

আমারা পান করছি আগ্নেয়াগিরির জল
দেবতাদের অতিথিশালা 
হাওয়া টেনে নিয়ে যাচ্ছে একটি বিশাল শহর
ভাঙা গাড়ির ঢেউ
সমুদ্রের জট

আকাশে পৃথিবীর ইঙ্গিত
আর চামড়া থেকে নিঃসৃত ব্যথা
      

কোনো উত্তর নেই

দুপুরের সূর্য 
সিঁড়ি ভেঙে ওঠা নামার মত
মেঘ এসে তোমার হাঁটুর দুর্বল মুহূর্তে লিখছে ভাগ্যের লিখন
মাঝ আকাশে চিন দেশের রীতিতে  সেই  কালো নৌকা 
ভেসে চলেছে উল্টো দিকে ধ্বংসের প্রেরণায়

বৃষ্টি পড়ছে মায়েদের অশ্রুর মতো

সাদা চুল পৌঢ়রা তাদের বৃদ্ধ পিতা মাতার জন্য আশীর্বাদ কুড়াতে চলেছে
শহরের রাস্তায় ছড়ানো পাথরের খোয়ার মতো লোকের ভিড়
আর দৌড়ে বেড়াচ্ছে লোকগুলোর ভিত

কোনো উত্তর নেই
প্রাগৈতিহাসিক ভারি পায়ের শব্দ

ফেরিওয়ালা এসে ঘুরে গেল দুপুরে
অপার্থিব ঋতু
দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হয়নি যেসব মানবশরীর  বাড়িগুলোও সেই রকম
রক্তের জলাভূমি
পুরোনো নিঃশ্বাস
গাছের পাতায় হাওয়ার পূর্ব পুরুষেরা

কতটা খারাপ লাগছে তোমার নিজের অস্তিত্বহীন এত পাথর

একটা ছায়া
কারুর নয়

আর একটা বিষয়
যখন সন্ধ্যা নামবে
আমারা একসঙ্গে ভাববো সেই যকৃতের অসুখটার কথা

পৃথিবী নিপাট ভালোমানুষ
 
রাত্রিতে আমরা ঘুম পাড়িয়ে রাখি অনুভূতিকে
         

ভুলে যাচ্ছি স্মৃতি

আমাদের কোনো পৃথিবী ছিল না তবু্ও আমরা বেঁচে ছিলাম

আমাদের কোনো শরীর ছিল না তবুও আমরা স্বপ্ন দেখতাম

এই সেই মহান রাত্রি
একটি ছোট্ট আলোয় সব ঈগল একত্রিত হয়েছে

একটি সময় গড়িয়ে পড়ছে জলের মতো
অশ্রুর চেয়েও মারাত্মক তার হৃদস্পন্দন

জীবনকে স্পর্শ করি
আর বজ্রপাত হয় লক্ষ লক্ষ বার

যে পালক আমাদের সমুদ্রে নিয়ে যেত আর নেই তার লেখা
যে পাথর আমাদের গৃহ ছিল তা এখন চুনের প্রলেপ সারা আকাশে

ছায়া পথ ধরে কে চলছে
আমাদের সেই প্রভুর মতো
ভ্রমরের মতো ঘুরছে পাখা
জুড়িয়ে যাচ্ছে আগ্নেয়গিরি
শুকিয়ে যাচ্ছে সমুদ্র

আমারা এখানে এসেছি 
একটি দারুন সমাধিস্থলে
পবিত্র মাটির একটি খন্দকে প্রদক্ষিণ করছি অনেক বছর হলো

রোগগ্রস্ত মেঘ
বৃষ্টি পড়ছে
ভুলে যাচ্ছি স্মৃতি

আমাদের জীবন হেঁটে চলে
আমাদের ওপর দিয়ে
        

হাওয়া নক্সা তুলছে একটি শিল্পের

নৈঃশব্দ্যের প্রহরীর মতো আমি ঘুমিয়ে আছি 
আমার ঘুমের ভেতরে জেগে আছে উদ্ভিদ

ঝড় চলে গেছে আমি তার ভিতের ওপর শুয়ে আছি

খোলা জায়গায়
চাঁদের আলোয় বালির ঢল 
আমি তলিয়ে যাচ্ছি 
জমির আলের স্বাধীনতার মতো পৃথিবী

এক জায়গায় মর্মর মূর্তি শোক পালন করছে 
স্মারকের মতো তোমাকে কবর থেকে তুলে নিয়ে কথা বলছিলাম
আর স্মার্টফোনে লিখছিলাম একটি আখ্যান
চোখের জলে সমুদ্রের স্বাদ
শিকল খুলে পালিয়ে যাওয়া আকাশ
রাত্রির প্রতীক ভুত 
আমরা একটি বনের ভেতরে
মানুষের ধর্ম নিয়ে যত যুদ্ধ হয়েছে সে সব এখন সারিবদ্ধ গাছ
আর গাছের ওপর হাওয়া নক্সা তুলছে একটি শিল্পের
      


প্রদয়র্শনের জন্য

পাথরের ওপর লেখা  দিন সপ্তাহ বছর 

উপত্যকা দিয়ে নেমে যাচ্ছে আমাদের আশা

জল আর পাথর এত শান্ত শোনা যাচ্ছে না পৃথিবীর চলার  শব্দ
যখন মানুষ চিন্তা করে একটি শিল্পের কথা
সূর্যের থেকেও মারাত্মক

কেউ দেখছে শূন্য।
যেখানে একটি হৃদয় রাখা আছে অনন্তকাল প্রদর্শনের জন্য
        


অনির্দিষ্টকাল ঋতু আর স্মৃতি

আমার নিজস্ব একটি সূর্য জ্বলছে আকাশে

আমার অশ্রুর জল বাহক 

শুকনো মরুভূমি পেরিয়ে নৃশংস ধাতুর ঈগল
ধাবমান কালো জাহাজ 
মিছিলে ঘুমিয়ে পড়েছে জনতা এমন এক আন্দোলনের ধার  দিয়ে ধীরে এগিয়ে চলেছে
দুটো কালো রং লাল হয়ে পাথরের মতো তাকিয়ে 
আর রাশি রাশি শুকনো পাতা যেভাবে মৃতরা ফিরে ফিরে আসে আমাদের স্মৃতিতে
এত ফাঁপা যে আমাদের একাকিত্ব নেই
নৈঃশব্দ্য ও নেই
আমাকে ছেড়ে গিয়ে ঝিঁঝিঁর মতো উড়ছে পৃথিবী
দুঃখে আমরা অবসর কাটাই
আর কিভাবে বানিয়েছি এই জীবন সমূহ
ঝড়ের মুখ থেকে লবণের গন্ধ 
আর কাতারে কাতারে লোক এদিকে আসছে
শান্ত অট্টালিকা
মরচে ধরা লোহার পাত
প্রাচীনকাল ধরে যখন আমি জাঙালের ওপর দিয়ে যাচ্ছিলাম
কুয়াশার মুসুরি খেত 
অনির্দিষ্ট ঋতু আর স্মৃতি

আমার একটি নিজস্ব সূর্য আছে
            


         

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন