কাব্যগ্রন্থঃ- বাস্তুসাপের খোলস (কবি-সুজিত রেজ)
প্রচ্ছদঃ- বৈদেহী রেজ
গ্রন্থস্বত্বঃ- চিত্রা রেজ
প্রকাকাশনাঃ- J.N. Chakraborty
13, Bankim Chatterjee Street
Kolkata-700 073
মূল্যঃ- ১২০/-
আলোচকঃ- সন্তোষ দাস।
ছেঁড়া মোজায় যার পায়ের হাজা আরাম পায় এবং ছেঁড়া ঘুড়ির সঙ্গে যার উড়ে যেতে ইচ্ছে করে তিনিই কবি।আর যাবতীয় খোলস যমদুয়ারে রেখে যে কবি মধ্যরাতে একা ভাসাতে পারেন মান্দাসের ভেলা, সেই কবির নাম সুজিত রেজ।
কবি অনুভব করেন - 'মনের ভিতর আছে খোলসের স্তর।' আর এই অনুভুতির কথাই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন তার 'বাস্তুসাপের খোলস' কাব্যগ্রন্থে।
কবি অনুভব করেন - 'মনের ভিতর আছে খোলসের স্তর।' আর এই অনুভুতির কথাই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন তার 'বাস্তুসাপের খোলস' কাব্যগ্রন্থে।
কবি তার চিন্তার সুগভীর গিরিখাত থেকে তুলে আনতে পারেন চিরায়ত দর্শন-চেতনা। তাই অকপটে উচ্চারণ করেন - 'জল থেকে খসে পড়ে জলেরই খোলস/ সে তো জলই তবে কেন মিছে জলদোষ।' কবি কল্পনার বেড়াজালে অহেতুক আটকে থাকতে রাজি নন। তাই সোজাসাপ্টা স্বীকারোক্তি-'মৃত্যুর ওপারে কোন স্টেশনে গিয়ে গাড়ি দন্ডায়/ সে প্রশ্ন এখন যাদুঘরে।' বিজ্ঞানের জয়রথে চেপে অগ্রগতির পথে আমরা কেমন আছি তা মনে করিয়ে দিতেই কবি লিখেছেন - 'বেসিনে বেসিনে হারপিক খেতে খেতে / নীলকন্ঠ হয়ে গেলাম।'
কবির ভ্রমণবৃত্তান্ত ফুটে উঠেছে কাব্যগ্রন্থের বেশ কিছু কবিতায়। কিন্তু এই ভ্রমণ শুধু পুণ্য সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে নয়। তিনি একাত্ম হতে চেয়েছেন প্রকৃতির সাথে- পৃথিবীর সাথে। তাই গঙ্গোত্রী দর্শনকালে ভ্রমণসঙ্গীকে বলে ওঠেন - 'ইভান, তোরা সন্ধ্যারতি দ্যাখ/ আমি অন্ধকারে গঙ্গার দোসর হই।'
পৃথিবীর প্রতিটি অণু-পরমাণু কবিকে আকর্ষণ করে। কবি পৃথিবীর পথে পথ হাঁটতে চান হাজার বছর ধরে। তাই তাঁর অমোঘ উচ্চারণ - 'মরতে ইচ্ছে করছে/ না, এ ইচ্ছের মৃত্যু হোক।'
পৃথিবীর সাথে একাত্মতার সূত্রেই কবি অনুভব করেন পৃথিবীর গভীর অসুখ। তাই আক্ষেপ - 'আসলে সব মনেই লখিন্দরের ছিদ্র।' এই ছিদ্র কি মেরামতের চেষ্টা করছে কেউ? নাকি ছিদ্রের পরিধি বেড়েই চলেছে ক্রমশ? কেন কবির কলম থেকে বেরিয়ে আসছে মর্মবেদনা- 'বংশী কখনও কখনও বাঁশ হয়ে ওঠে।'
প্রকৃতপক্ষে সুজিত রেজ হলেন মাটির কবি - মানুষের কবি - পৃথিবীর কবি - সুখের কবি - অসুখের কবি - ভালোবাসার কবি। তিনি তার কলমকে একটি নির্দিষ্ট গতে বেঁধে রাখতে রাজি নন। কবিতার অবমাননা দেখলে ফুঁসে ওঠে তার কলম- 'কবিতা শাড়ি নয় কুচি দিয়ে পড়বে / মুখ মুছে রুমালে লুচি খেয়ে সরবে।'
কবি কবিতাকে দেখতে চান তৃতীয় নয়নে অর্থাৎ অন্তর্দৃষ্টিতে। আকর্ষনীয় প্রচ্ছদের সযত্নে রক্ষিত ছয় ফর্মার সংকলনে পাঠক হৃদয়ের বার্তা পেয়ে যাবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন