পূর্ব পশ্চিম

 আফজল আলি

গতরাতে যা ভেবে ঘুমিয়ে পড়েছিলে সকালে উঠে তাই যে থাকবে এমন নাও হতে পারে 

সময় সরছে , মনের উপর মাধ্যাকর্ষণ কি থাকে 

কালো চুলে প্রজাপতি এসে বসলে তখন সবে সন্ধ্যা 

রাত অপেক্ষাকৃত যেন ঘড়ির কাঁটা , তীব্র বেগে ছোটে

ধাওয়া করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ওঠা শরীর ঢলে পড়ে ঘুমে

ঘুম তো ইলিশ-মাছ , চকচক করে স্রোতে

এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এত লেখা 

লিখতে লিখতেই কেটে যাবে একটা জীবন 

তারপর এত হাসাহাসি করব , যেন বোকা আমি চক্কর দিয়েই কাটালাম

ভালোবাসার উত্তাপ কত যে পেলাম যেন খোলা চুলে স্নিগ্ধ আতরের দাগ

আতরের গন্ধে ভালোবাসা প্রগাঢ় হয় সুনীলবাবু বলেছিলেন 

একটা দৃশ্যের ভিতর কাপড় শুকাতে দেওয়া দড়ি

কিছু গাছপালা আর নীল আকাশ 

দিন দিন কবিতাগুলো যেন গদ্য হয়ে যাচ্ছে 

একটা শ্রাবণ মাস অতিক্রম করেছে 

যেগুলো চাওয়ার ছিল তা হয়নি , পূর্ব-নির্ধারিত সব কিছু ই যেন ঘটছে

আমার তো তাহলে কোনো পূর্ব পশ্চিম -ই থাকল না দেখছি


কাকের কবিতা

একদিন প্রেমের কবিতা লিখলে , দ্বিতীয় দিন মনে হয় কালো কাকের কবিতা লিখি

সকালেই কাকটা ইলেকট্রিক পোস্টের উপর এসে বসেছে

কাকের ঠোঁটদুটো তার গায়ের রঙের চেয়ে বেশি কালো

একটা কাক যখন এদিক ওদিক তাকায় তখন কি সে শুধু খাবারের-ই সন্ধান করে

কাকের কি জীবন বোধ থাকে না 

শুধু কাক কেন , শালিক টিয়া ফিঙে দোয়েল-- 

এদেরও সারাদিন কীভাবে কেটে যায় উড়ে , গাছে বসে , খাবারের খোঁজে 

পাখিদের ঘুমের দৃশ্য আমি দেখিনি সেভাবে 

কলেজ ফেরত ছেলেমেয়েরা ছন্দ আবেগ ও প্রেমের কবিতা পড়তে ভালোবাসে

তারা কি কাকের কবিতা পড়তে চায় , না অনুসন্ধান করে 

প্রশ্নটা আমার মাথায় এল 

কাক সমাজের ঝাড়ুদার , ভাবুন কতটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ওরা করে

সৌন্দর্যে কাক কোনো অংশেই কম যায় না 

এ কথা ভুলেও ভাববেন না যে কাক একটি কুৎসিত প্রাণী 

তার এদিক ওদিক চাউনির মধ্যে কী অসীম বিভাব

ঠিক যেন দৃশ্যের অদৃশ্যে প্রবেশ

এক এক সময় আমার মন এক এক জায়গায় বাসা বাঁধে 

খুঁজতে থাকি তার সৌন্দর্য , আনন্দে বিভোর হই

তারপর গভীর যন্ত্রণায় ডুবতে ডুবতে মনোস্তত্তের নিটোল বাতাসে ঘুমিয়েই পড়ি

স্বপ্নে উড়তে থাকে একটা কাক , কাকের কিছু সমস্যার কথা



অন্তর্গত স্রোত 

সময় বড়ো আনমনা। তুমি কি তাকিয়ে আছো সময়ের দিকে

তাকিও না 

বরং নিজের দিকে তাকাও 

নিজের ভিতর যা আছে সেগুলো দেখো , নাড়াচাড়া করো

দরজাটা খুলে রেখো প্রয়োজন হলে , এক্কেবারে বন্ধ করে দিও না 

সংরক্ষণ করতে করতে এই যে সরে যাচ্ছে প্রবাহ

এর অংশীদার তুমি ও তো হতে পারো

একটা বসন্তে নীরব থাকছ মানে এমনটা নয় 

দ্বিতীয় বসন্তে আন্দোলিত হবে না 

কবিতার কথাগুলো পূর্ণিমার রাত ,তাকিয়ে থাকে

তাকিয়েই থাকে

এত সৌন্দর্য কোথা থেকে আসে , কেই বা পাঠায়

অপেক্ষা করতে করতে ভীষণ আনমনা লাগছে তোমাকে 

ঠোঁট দুটো দেখো , ঠিক নীচে ই একটা কালো তিল

সমুদ্রের ভিতর বসে কবিতা লিখবে , কী কাল্পনিক সব কথাবার্তা 

কল্পনা নিয়েই তো বাসা বাঁধবে বলছ মঙ্গলে

তখন কি মনে পড়বে , এই যে আমি ছিলাম হৃদয়ে হৃদয়ে 

কোনো দিন কি ছিলাম 

শুধু এক অন্তর্গত দুঃখের স্রোত , সেই বিকেল বেলায় রোদ পড়েছিল ছাদে



পারলে নিজেকেই বিলিয়ে দাও 

কাউকে কষ্টের কথা বলো না, কারণ সে ধুলোয় উড়িয়ে দেবে

কাউকে কান্নার কথা বলতে যেও না , সে মূল্যই দেবে না 

বরং শক্ত হয়ে যাও ভিতরে ভিতরে 

একটা পাথর অনেক সহ্য করতে করতে শক্ত হয়ে ওঠে

ভাবছ বুঝি কেউ তোমার বিনিময়ের দাম দেবে 

সে সম্ভাবনা কম 

পারলে নিজেকেই বিলিয়ে দাও , একটা ফুলের মতো

একটা গাছের মতো 

আর দু দণ্ড ঘাসের উপর জিরিয়ে দেখে নাও আশপাশ

তোমার ভালোবাসার মানুষটা ঠিক কোথায় আছে

ভালোবাসার মানুষ তো একটি নয় , অসংখ্য 

পথে যেতে যেতে কত ভালোবাসার মানুষ গড়ে ওঠে 

ওদের জন্য একটু একটু করে ভাবলেই কষ্টগুলো সরে যাবে

খুব অন্তর দিয়ে ভালোবাসবে কিন্তু 

দেখবে বুকের পাঁজর তোমাকে ঠিক সহ্য করে নেবে 

তখন পৃথিবীটা আবার সুন্দর হয়ে উঠেছে , যেমন তুমি চাইছ



ছায়া শিকারী 

মুহূর্তগুলো সরে যায় ।

কী ভাবছ , রক্ত উৎপাদন কমে গেলে মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে

এই বিন্যাস জেনো মনের এক রোগ

পাহারা দেওয়ার পরিবর্তে খেয়ে নেয় 

এখন আর এভাবে সময় কাটিয়ে কী হবে

কিছু তো করো

অনেকটা ড্রাইভ করে এসে আমি নিজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ি

বিকেলের আলো কমে এলে 

এই পথেই যে একদিন বাঘ বেরোত, মনেই আসে না 

সদ্য বিচ্ছেদ হওয়া যুবতী , হ্যাঁ যুবতীই তো

কী আর বলা যাবে 

তার চোখে এখনও অনেক স্বপ্ন 

জানি না , স্বপ্নগুলোকে আবার কেউ হত্যা করে দেবে কি না

আমি তাকে দেখি, প্রতিদিন দেখি

না না তাকে দেখতে পাই না , অনুভব করি

যেন এক ছায়া শিকারী এসে ঘুম কেড়ে নেয় যেখানে জীবন ছিল

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন