ঋষিকাব্য
সৌরভ বর্ধন
দুঃস্থ মরালী তার শেষ অবলম্বন হিসেবে ছড়িয়ে দ্যায় হ্রদ....
রাত্রিকালীন উচ্চস্বর আলোকের পাশে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে ম্লান
ধীকাব্যের অবতারনা করতে চায়, করতে পারলেই আপামর
হয়ে ওঠে পতনকোণ ------ ফলে প্রকৃত ধ্বংস কাকে বলে তা
বোঝার ঠিক পরেই আমরা জীবাশ্ম হয়ে যাই। একদা অরণ্য
যাকে ভয় করে চলত, সেই ধীর পাতালকেও আজ শুনতে
হয় নির্বিকার গঞ্জনা; ঝরাপাতা যদিও কিছুটা উপশম। তবুও
কথা-বলা বন্ধ করা যায় না, মিহিমুঠো হাতের পাতায় পাতায়
পরাজিত কাটাকুটি অদ্ভুত আনন্দলহরি তোলে। যে দ্যাখেনি
সে কী করে জানবে স্বপ্ন কত বীভৎস হয়! ----- শনাক্ত পুঁথির
আকাশ চিরকাল নির্মোহ কন্ঠ যাপনের ক্ষতে বা ভোগ থেকে
ভোগে বিপজ্জনক প্রেমার্তরূপে বিলাপ করে... স্লেচ্ছ ভাষায়
যাকে জ্বর ছিঁড়ে কুড়িয়ে আনা ব্যাধির ধ্বনি অথবা তারিখের
মতো নির্দিষ্ট কোনো বিষয় বলা যায় ---- তাকে তড়িৎপ্রবাহের
শ্রুতিও বলা যেতে পারে ----- কিন্তু যার শৃঙ্খলা ছাড়া জেতার
মতো কোনো প্রতীক্ষাই বাকি নেই, তাকে এক আঁজলা কন্ঠ
উপহার দিয়ে তুমি কীরূপ মহৎ কাজটি করেছো তার সমূহ
সম্ভাষণেই সীমান্তরেখায় নির্মম রোদ রাখো, দূর থেকে শুঁকে
নাও জীবানুর অন্ধত্ব, নিদেনপক্ষে খুব জরুরি একটা ইমেলে
কিছু অস্ত্র পাঠাও আমায় ---- আমিও দেখি বাদলসমেত বৃষ্টি
আসতে মেঘের সম্মান আর কত কুড়ানি যায়, আর কত কত
ভাঙানির জলেথলে স্থাপত্যের ভেট দিতে পারে এই বৎসর!
কোন আশ্চর্য আত্মরক্ষাহেতু বহু পুরোনো কোনো কচুতেও
গলা চুলকায়, কী পরিমাণ ভয় নোনামাটিকে পেয়ে জরায়ুজ
অঙ্কুরোদগম সফল হয়। কিছু আমি তো লেখার মতো টাটকা
মাংসপিণ্ড ----- কিছু আমি তো রঙের মতো সমুজ্জ্বল অস্তিত্ব
ধারণ করে থাকি। আমাকে এঁদের পাশে বসতে দাও, আমি
জলসেচ করি পাতায় পাতায়, অন্তরে। চোখের পাশে ছায়া
রাখো, দেখবে অন্ধত্বের মৃগয়া ছুটে যাচ্ছে জঙ্গলে... অথবা
গাছের মতো ভেক ধরে থাকো, দেখবে নির্বিকার সাপ পড়ে
আছে গরিমার থকথকে। অবাধে পতনশীল স্বস্তির মুখে
কুলুপ এঁটে যে-ফুল নিজের শর্ত মিষ্টি করে তার নামে নৃশংস
সুখ বরাদ্দ করো, ঘুম থেকে নেমে দ্যাখো সব রং চুষে গ্যাছে
কামরূপ মেঘে; নিজস্ব করোটির পাত্র বিড়বিড় করে চলেছে
ফোড়ন অনুসারী গল্পের ইতিহাস, দূরের বাঁকে থেমে গ্যাছে
তাকানো চমক। অথবা যারা ঘৃত, আজকাল তীক্ষ্ণতর ধার
তাদেরই ধমকে মানায় --- ত্রাণযন্ত্র পর্যন্ত হাসে। বায়ুর তোড়া
দুই হাতে নিয়ে পরিচিত ঘরদৌড় আমি স্ব-পাঠে খুলে রাখি
লুকিয়ে পড়ি জালে। ফলত ভাস্বর রবি, রিগ্ধ চন্দ্র, দগ্ধ ধরা
কার্যকারণে খোলা থাকে আজীবন। নিয়মের দাসী বয়মের
ভেতর পিছমোড়া করে বাঁধা। আমার নিজের ভেতরে মধ্যে
যে-জীব সে গমনে অক্ষম, আমার নিজের গভীরে যে-শোক
সে বৈদিক গন্ধের কান্নায় শান্ত। আমি নক্ষত্রের দিকে ক্রমশ
ক্রমাগত ছুঁড়ে দিচ্ছি পিরানহা, মাঝে মাঝে অণ্ডকোশ নিয়ে
ঘাঁটছি, মাঝে মাঝে কলম; একটি পোশাক আমাকে নিজস্ব
তোরণের ভরসা দিতে পারে, তবু তাকে শরীর বলে ভুল হয়
এই জন্মসময় নাভির রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ, তাই ফার্নেসের
সামনে মুখ গুঁজে পড়ে আছে মহার্ঘ প্রেমিকা। নিটোল তাঁর
স্তন অতিদুর্লভ : তাকে মর্দন করা ক্রীতদাস আমি : আমার
সামরিক বীর্য টাঁটিয়ে ওঠে মন্দাক্রান্তায়। তুমিও প্রতীক্ষায়
রয়েছো প্রিয়, আবছা আমি'কে হারায়ে... ঝকঝকে শুভ্রালু
উদ্ভাষণে, আলো ও তমসায় দাঁড়ায়ে প্রিয়তম অন্তর আমার
রাধাময় করো, আমি ব্রহ্মবিম্ব ভালোবাসি, আমি রিগ্ধ চন্দ্র
ভালোবাসি। নিরন্ন ঠোঁটের কাছে অন্ধকারের তকমা পাওয়া
আমার মাথার পেছন দিকটা আহা! চিনচিন্ করে ওঠে মন
স্থানটাকে লঘুমস্তিষ্ক বলে জানি, জমির আল কেটে যে সমস্ত
মাছসহ জল নিয়ে চলে যায়। ঠুলি দিয়ে আকাশ দ্যাখা যায়
দ্যাখা যায় মানবের মতো কেউ মরণশীল কোল পেতে আছে
সময় হয়ে গ্যাছে ঢের, বর্ণান্ধতা শেষ করে দিতে হবে এইবার
যেহেতু কিছুতেই মানতে চাইব না হাততালি, আঁকুপাঁকু ভোর
সরলতা ফেলে এগিয়ে আসবে, জলকামানের ব্যস্ত ট্রিগারে
রাখতে চেয়ে বাঁটোয়ারা, আমি অন্যের স্কাইব্যাগে করে যাবো
জামদানি রোদসেচ, ফেলে আসবো প্রাণ খুলে হেসে উঠবে
মরাকোটাল, সমুদ্রের একপাশে থরেথরে রাখা পেঁজাবালিশ
অন্যপাশে এলোমেলো নিথর বস্ত্রাদি আর কিছু জল-মানুষ
কিছু জ্যান্ত-মানুষ, আয়োজনে কোনো ত্রুটি নেই তাঁর, শুধু
সময় হয়েছে তাই এখন বর্ণান্ধতা শেষ হবে, কিছুতেই মানতে
চাইবো না হাততালি। শ্যাওলা শুশুক কৃমি ------ একে একে
সকলের বাসা বদলের খবর বাজবে... উলঙ্গ সিংহের ঝুড়ি
নেমে আসবে লক্ষ মানুষের চিৎকারে, সুতীব্র উল্লাসে গর্জন
কীভাবে করতে হয় ভুলে গিয়ে দাঁতাল হাতি আত্মহত্যার ঢঙ্
সেজে বসে আছে কপালে। আমাকে মর্জির থেকে ছিনিয়ে
নিলো একটা কসরত, একটা উল্লম্ফন আমাকে সোজা গিঁথে
দিলো নায়কসভার আসনে, আমার দীর্ঘতম শ্রমণের ইতিহাস
এক লহমায় মুছে দিলো কেউ! ----- দিনভর কলোজিয়ামের
এই স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি, আমার প্রাচীন
ভেকস্তূতি ছাপিয়ে যায় শিরীষ চুল, আলকাতরার শ্বাস নিতে
ঘরে ফেরে অপার জঙ্গল। তবুও কোনো কিছুই যেন কাব্যিক
মনে হয় না ---- খাতায় দু-এক দানাও শব্দ নেই যেন! লেখার
চেয়ে কি প্রেমিক হওয়া ভালো তাহলে! --- আমাদের প্রেমের
ভেতর তো কারা যেন গুজব ছড়ায়, কারা যেন শীতল কল্পনা
দিয়ে ছুরি আঁকে, বলে এই অস্ত্রের ভেতর কোনো খাদ্য নেই
যেসব খাদককে আমরা মুখ ভাবি ----- তাদেরও নাকি নিবিড়
নিবিড়তর ভুখ এখন। শব্দ, আরও শব্দ দাও। ভাব, তীব্র ভাব
এনে দাও। দূরত্বের যে-রূপ চোখে দ্যাখা যায় না, আমি তাকে
ধরতে চাই। ছবি গঠনের একটা চিত্র অবিকল ধরতে চাই
চুম্বনে। ধানের মড়াইয়ে দৃশ্য-কুহকের স্পর্শব্যাপ্তি চলন দেখে
জিভের জলে পুষ্ট নদী ডেকে ওঠে ---- লাবণ্যের ভেতরে যায়,
শস্যের গভীরে যায় ----- যেন মূর্চ্ছনা জাগে। প্রতি ভোরে প্রাণ
পেয়ে পেয়ে আমাকে সামাজিক আদলে তৈরি করে কেউ....
মাঝে মাঝেই স্বপ্ন দেখি আমি খালি গায়ে এমন কোথাও
চলে গেছি উলঙ্গ ---- ধরা যাক গর্ভে গেছি এবং বিকেল হয়ে
যায়, ফলে আমার আর ফেরা হয় না। আমি নগন্য স্বেদের
মতন রং নিয়ে, অতীতের খাল খিঁচে দাঁড়িয়ে থাকি, সুদৃঢ়
চকচকে গীতের ভেতর আমার ঠাণ্ডাচোখ লাল মেলে ধরে
পরিপাক ও শোষণ শেষে আত্তিকরণের সময় যখন আসে
আমি অপহৃত বস্তুসমূহে উগরে দিই সাঁতার। দূর বৈরাগ্যের
বারোমাস্যা নিয়ে হরবোলা ডেকে যায় ধ্যানমন্ত্রে। আমি তৈরি
করি না তাঁকে, আমি সৃষ্টি করি না তাঁকে। শুধু ছুঁতে পাই তাঁর
উষ্ণ দেহের উদগ্র কাম, শুধু তখনই তাঁর পাইবস করি আমি
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন