প্রমাদ

বিকাশ দাস

তুমি এলে মনে হয়  পৃথিবী আসেনি

অন্যরকম চাওয়ার নিভৃতে মাটি ছুঁয়ে মাটি

আকাশের রোদ    বলতে পারেনি

বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় তোমার মুখ দেখেছি।


তুমি এলে মনে হয় স্পর্শের স্নানে

অভিমান মুছে ‘ভালোবাসি’ বলতে পারেনি।

বিন্দু বিন্দু জীবনযাপন আলগা খোলা আলোয়

দু’চোখ রেখে উড়ালসাঁকো ভাঙতে পারেনি।


তুমি আমার খুব পাশে বসে ছিলে

তবু আমি কুশলে আছি বলতে পারিনি।  

দরজায় টোকা শুনে ছুটে যায় এই বুঝি তুমি এলে 

অর্গল আলগা করলে দেখি তুমি আসোনি।


তুমি ফিরে গেলে মনে হয়

তুমি এসেছিলে সমস্ত আকাশ মাটি জুড়ে

পৃথিবীর বুকের ভিতে ঘর আগলে আছো আমার।


ভিনদেশী

বিকাশ দাস

 

আকাশ ভাগ হয়নি বলে 

এখনও মানুষ এক ছাদের নীচে

উথালি পাথালি মেঘ বাদলে রোদ বৃষ্টির একতার গান

মাটির জমিনে মাটি আঁকড়ে মানুষ ছুঁয়ে মানুষের কলতান

শূন্যের নিবিড়ে পৃথিবীর সুরভিতে নিকিয়ে চৌকাঠ উঠান

 

মানচিত্রদেশের সীমান্ত আঙুল দেখিয়ে বলে দিতে আসে

ফিরে যাও,  নিজের নিজের বসত ঘরে

ভুলে যাওকোনদিন তোমার মাথার উপর আকাশ ছিলো

পাখির ডানা জানেনা ‘ভিনদেশী’ কাদের বলা হয়েছিলো

স্বাধীনতা শব্দ এলোই বা  কি করে  ?

 

পাখি নদী বাতাসের  হিন্দোল  

শিকলে বেঁধে পেরেছে কি শাসাতে

সীমার সীমান্ত?      খবরদার! ‘যেতে নাহি দেবো ওপার

সীমারেখা বেড়া মানুষী কোন্দল  

আগলে চৌকি মূর্খতার মুখোশে প্রকৃতির গর্ভে জন্ম যার!

***

 

যখন ইচ্ছে তোমার

বিকাশ দাস


যখন ইচ্ছে তোমার

দু’চোখ ভরে দেখার

আলোর গভীরে কতটা তিমির অন্ধকার  জেনে নাও

যখন ইচ্ছে তোমার

বুক খুলে শ্বাস নেওয়ার

বাতাসের বিবরে কতটা ধুলোর পরিবাস জেনে নাও 

যখন ইচ্ছে তোমার

আমার কাছে আসার

শয্যার উত্তাপে কতটা আত্মসংযম শরীর জেনে নাও। 

যখন ইচ্ছে তোমার

সহমরণে যাওয়ার

চিতার আগুনে কতটা ভালোবাসার সঙ্গতা জেনে নাও 

***

ঘর সংসার

বিকাশ দাস


শিশুবৎ বাচ্চাদের দেখেছি খেলাচ্ছলে
ঘরবাঁধাখেলার নিমগ্নতায়
  ক্রমশ ডুবতে।
আবার ঠিক রকম খেলা না হলে ঝগড়া,
 চেঁচামেচি,
রাগারাগি কাটাকুটির ভেতর নিমিষে আড়ি নিমিষে ভাব হতে।
 
নিজেদের নালিশ
 নিজেরায় সালিসি  করতে ।  
কখনও খেলনাবাটি এলোমেলো হলে,
 চটপট হাতে হাতে
খুব সহজে গোছগাছ করতে।
সংসার একঘেঁয়েমি কাটিয়ে নিতে
  মাঝে মধ্যে অনেক রকম খেলায়
হাতে হাত মিলিয়ে গান গাইতে। এক্কা দোক্কায় লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে।

তারপর মিছিমিছি
খেলতে খেলতে দেখেছি সত্যি 
   শুয়ে পড়তে নিশ্চিন্তে
আকাশের স্বচ্ছতা দুচোখে পেতে আড়ি ভাবের মেঝেতে
ক্লান্তি নামিয়ে একবুক
  ঘুমের সংসারে ।  

আমি বড়ো হয়েছিতুমিও বড়ো হয়েছো
সামাজিক নিয়মে বাঁধছি ঘরসংসার,কিন্তু নিজের নিজের আধারে।
জমিয়ে রাখছি বচসা,কাজিয়া,রাগারাগি চোখে মুখে খবরদার,
 
যে যার নিজস্ব দাপট,জেদের অহংকারে

সংসারপাতা ছিঁড়লে,
 মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি। ছুটে যাচ্ছি
দুজনে নিজেদের ব্যস্ততার ক্যালেন্ডারের
  পাতায়
আলাদা আলাদা অবস্থানে যে যার আদবের চাদরের অন্ধকারে

তারপর সত্যি সত্যি পারছিনা।
সংসারের বিছানা বালিশে ঘুম জোড়া লাগাতে
বোঝাপড়ার শিকড় সারাতে,
 ভালোবাসা গোছাতে
ভুলভ্রান্তির অবসাদ তাড়িয়ে ,
বাচ্চার মতো সংসারের পাতায় দুচোখের পাতা এক করতে।



প্রিয়তমা

বিকাশ দাস


দূরত্ব বাড়িয়ে ফেলেছি

সাংসারিক অভাব লাঘব হবে বলে

এসেছি আর এক অন্য শহরে অন্নসংস্থানে

তোমাকে সাময়িক রেখে দূরের অতলে 

 

বুঝেছি ভালোবাসা

শুধু কাছে থাকা নয়

কাছে থাকা দূরে থাকা 

মেঘ যেন মাটি মাখা কামনার ঝনৎকার সপ্নময়   

বৃষ্টির স্বাদে দূরের ভেতর এলিয়ে হৃদয় পরিণয় 

 

কাছের যন্ত্রণা   হৃদয়ের রোদন

বিরহ প্রতিধ্বনি হৃদয়ের বোধন

প্রাণের গভীরে গভীরে প্রহর জাগে

ভাবনার সঙ্কেতে তোমারি অনুরাগে

আমি তৃষিত

তুমি  তৃষিত

সম্পর্কের বিস্তর পালঙ্কে দোঁহে

দু’জনের একলার  বিছিন্ন মোহে

বিরহের ধারালো  হাওয়ায় ভালোবাসার মোমবাতি

জ্বলতে থাকে

কাঁপতে থাকে

গলতে থাক

পুড়তে থাকে 

দিলদরিয়া দিগন্তের বসত মহলে

এক দু’জনার নিঃশ্বাস উথলে

শুয়ে পাশাপাশি

ছুঁয়ে ভালবাসাবাসি

আগুনে আগুন পোড়ে কাছে বা দূরে থাকার বহ্নিতাপে 

জ্বালার আরাম সুধাময় গোপনের বেড়ায় হৃদয়ের প্রলাপে

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন