ডাস্টার হাতে হেঁটে যান তিনি
লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

একজন কবি লিখলেন 'বাংলা কবিতার জন্য '  -
'' যারা চোখের জল ফেলেন, কুমিরের চোখের জলের সঙ্গে
তার কোন মিল নেই, ‘চোখর জল’ তবু কেন যে
লেখা হলেই উঠে আসে ‘কুম্ভিরাশ্রু’ তার সমাধান গুগুলও জানে না

আমি নিজেও কোনদিন বাংলা কবিতার জন্য অশ্রু বিসর্জন করিনি
শরীরের জল বা ঘাম ঝরিয়েছি কয়েক গ্যালন
তার জন্য বাংলা কবিতার কত মিলিমিটার আপডেট হয়েছে
তা জানার জন্য আরো কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হবে ''। 

এই মানুষের জন্য আমি কী লিখতে পারি । খুব বিস্ময় ও জিজ্ঞাসু মন নিয়ে এইসব কবিতা পড়লাম । আমার মনে যে সামান্য ধারণা ছিল তা ভেঙে চুরমার । পাল্টানো অনুভবের উপর গ্রহদের আবর্তন পথ পরিবর্তন হতে শুরু করল।   মহীরুহদের অবস্থান - মাটি আলো বাতাস পরিবর্তন হল জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে সাথে । এতদিন কেউ লক্ষই করেনি যে কত বিবর্তন হয়ে গেছে পৃথিবীতে । যখনই বুঝতে পারা গেল তখন আমূল কেঁপে উঠল পঙ্ ক্তি ভাষা শব্দের ব্যবহার । 

কিংবা  যখন পড়তে থাকি  -
''পাথরের গ্লাস আমাকে জানিয়েছিল- কুয়োর গভীরে একটা নির্জন
 চৈত্রমাস শুয়ে আছে। পাথরের গ্লাস আরো জানিয়েছিল,
 একধরনের পাখি আছে – যাদের ডানায় কোনো পালক নেই।
 নির্জন চৈত্রমাস এবং পালকবিহীন পাখি কীভাবে একই কুয়োয় ?
 তা তাে তার জানার কথা নয়,
তবে পাথরের গ্লাসের অগভীর জলে যদি ফাগুন মাসের
কোনাে একটি তারিখ লুকিয়ে থাকত, তাহলে ডুবুরি নামিয়ে
দেখতাম, তার ডানায় কোনাে পালক আছে কিনা! '' 
যেন দমকা-হাওয়া এসে প্রেমের লাজুক ঘোমটাখানি খুলে দিল। আমরা নবীন প্রেমিকেরা খোলা-প্রান্তরের এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আর মুহুর্মুহু লজ্জায় রাঙা হওয়ার পরিবর্তে মাথা নিচু করলাম । 

এক অগাধ বৃক্ষের নাম প্রভাত চৌধুরী । জাগরণ থেকে আলো বিচ্ছুরিত হল। তিনি কথাগুলো দেখাতে থাকলেন । তিনি সময়কে মুক্ত করে দিলেন । 
আমার যা মনে হয়েছে সেখান থেকে লিখতে শুরু করলে লিখতে পারি এই যে   -   প্রভাত মানেই প্রাতঃকাল। বিশেষণে   প্রভা যুক্ত   ।  এই প্রাতঃকালে  পৌঁছাতে অনেক পর্ব পেরিয়ে আসতে হয় । প্রাতঃকালের  কথা মনে আসে কখন ?  যখন দিনের আলোটাই চলে যায় । তারপরেই সাধনা চলে আলো ফিরে পাওয়ার। এবং তা শুরু হয় আলো চলে যাওয়ার পর থেকেই ।  সেই সময় অর্থাৎ সন্ধ্যা 'কে যদি প্রাতঃকাল সাধনার সূচনা ধরি তবে  সন্ধ্যা ‌‌‌‌‌➤১ম প্রহর  - প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, শাঁখের আওয়াজ   ➤ ২য় প্রহর  - জোনাকির মিটমিট , ঝিঁঝির শব্দ  ➤  ৩য় প্রহর - শেয়ালের ডাক , উজ্জ্বল নক্ষত্র  ➤  ৪র্থ প্রহর  পুবদিকে আলোর আভাস ,  পাখির কুজন । এসে পৌঁছানো যায় প্রভাত' এ।   
প্রভাতের সাথে প্রতিটি অন্ধকার ,  প্রহর এবং শব্দ অর্থাৎ sound ওতপ্রোত জড়িত । সেই শব্দ-ধ্বনি আত্তীকরণ করা অগাধ তপস্যার ব্যাপার । তার জন্য যে স্তোত্রপাঠের প্রয়োজন হয় তাও প্রভাত চৌধুরী কাছ থেকেই  নিতে হয় । 

আমি মানুষটির কাছাকাছি যাই নি কখনো ।  যাই নি মানে যেতে  পারিনি । আসলে আমার মধ্যে এক অন্তর্মুখিতা কাজ করে । অথবা আমি মুখচোরা । সব কিছুতেই আড়াল খোঁজা আমার স্বভাব হয়ে পড়েছে । এভাবেই চলছি - তবুও কোথা থেকে এক আকর্ষণ থেকে কবিতা পুরুষের কাছে যেতে চাইছিলাম ৷  এক কলিকাতা পুস্তক মেলায় সবুজ কার্পেটের উপর বসে আছেন তিনি। তিনি প্রভাত চৌধুরী ৷ তাই তার চারপাশে সবুজের ভিড় ।  স্বভাব বসত কাঁধে ঝোলানো ঝোলা  বামদিক থেকে ডানদিকে নিয়ে দাঁড়ালাম কবিতা পাক্ষিক' এর স্টলের সামানে । দু' কপি কবিতা পাক্ষিক সংগ্রহ  করলাম ।  ইচ্ছে হল জড়িয়ে ধরি কবিতা পাক্ষিক ' এর কর্ণধারকে। মাথায় বুলিয়ে নিই আশীর্বাদের চামর । শ্বেতশুভ্র মানুষটিকে জড়িয়ে ধরি ৷  কিন্তু পারিনি  - তখন আমার ভিতর Note of fruits প্রথম কবিতা 'আম'। " 'আ' এ 'আমটি ' আমি খাবো  পেড়ে'তে যে আমটি খাবার বাসনার কথা লেখা আছে সেটি আমি দেখিনি"  ।  তার সাথে আমার লুকিয়ে পড়া স্বভাব দায়ী । তাঁর পাশে বসেছিলেন  কবি নাসের হোসেন ,  কবি গৌরাঙ্গ মিত্র এবং মুখ নাচেনা অনেক কবি ।  একরাশ সংকোচের কারনে আমি চলে এসেছি বলব না ,  বলছি পালিয়ে এসেছি ।

T R A M পড়ছিলাম ।   T,R,A এবং M চরিত্র গুলি একসাথে গেয়ে উঠেছিল -
"স্মৃতির পাখিরা এসো, আলো খাও, ধ্বনি খাও,
পাঠলব্ধ স্মৃতিরা এসো
শ্রুতিলব্ধ ধ্বনিরা এসো 
মহাকাব্যের অর্গল পেরিয়ে, এসো, চশমার ঘষা কাচ থেকে
ছুটে এসে, হারিকেনের মৃদু আলো থেকে উঠে এসো 
মাছেদের ঘাইমারা থেকে দ্যাখা দাও 
ধান কাটা মাঠের ফাটল থেকে ফিরে এসো
স্মৃতির পাখিরা এসো, কৌশল্যা স্মৃতি নিয়ে।
দ্যখা দাও " 

পালিয়ে যাওয়ার পথ নেই । বার বার ফিরে আসি এই বৃক্ষের ছায়ায় । এই সর্বনাম থেকে বিশেষ্য-এ পৌঁছাতে চাই । কেননা দেখতে চাই জ্যোৎস্না রাতে আলোর আকাশ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন