হাঁটু - ধুলোর গান
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় 

গাছের গা থেকে যেসব শব্দ উঠে আসে
কোনো এক হারানো সন্ধেয় আমার বাপ-ঠাকুরদা
সুরের দোসর না থাকার দুঃখে 
চৌমাথা থেকে হাঁটা দূরত্বের এক পাতার ঘরে 
তাদের সন্তানসন্ততিদের রেখে এসেছিল
গলিপথ নয়, এ যেন এক সুড়ঙ্গপথে
সারি সারি শব্দরা দলবেঁধে পায়ে পায়ে
পাতাঘরে উঠে এসে কথা বলে প্রভাতীসঙ্গীতে

মাথার মিছিলের রক্তশূন্য শহরে
কাঠের পাতায় যাদের অক্ষর পরিচয় হয়েছিল
তারা ফেলে আসা পথের সবকিছু ভুলে যাওয়ার আনন্দে
হাত পা ছুঁড়েছিল 
ফুটন্ত জলের মতো অস্থির কোনো রেলস্টেশনে
শব্দের কারিগর অভিধার লোভ সামলাতে না পেরে
তারা টিনের কৌটোর মতো কিছু খনখনে শব্দ ছেড়েছিল
সেসব শব্দ এখন জলন্ত দাঁতের ঘষটানি, 
আকাশ কালো মেঘের ছাউনির শরনার্থী শিবিরে 
আত্মম্ভরি শাসকের বুটের নালে 
বারবার ফিরে ফিরে আসে

গাছের শব্দেরা বাউল গান, সারি গান, জারি গান
গ্রামের বাইরের রাস্তায় তারা এখন হাঁটু-ধুলোর গান
পাড়হীন অন্ধকার নদীর গভীর থেকে
ভরদুপুরে মোমের মৌমাছির মতো উঠে আসে মাছ
শাসনের দারুণ দাবদাহে গলে যায় সব

আর একটু পরেই গাছের শব্দেরা 
গায়ে গা লাগিয়ে শুরু করবে সন্ধ্যাহ্নিক 
যাবতীয় ডালপালার কম্পনে
তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে উন্নাসিক সভ্যতা
শুধু দোহারকুল গড়ে তুলবে ছন্দসভ্যতার সুরেলা সিঁড়ি
আর প্রভাতসঙ্গীত রচয়িতার একক কন্ঠে ধ্বনিত হবে
সুরপিতার বন্দনা গান ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন