পনের বছরের এক আরব কিশোর আর পনের বছরের এক আরব কিশোরী। অনেকে হয়ত বলবেন তারা সুন্দর নয়। কিন্তু আশ্চর্য লাবণ্য তাদের। দুটো আলাদা খাটে ঘুমিয়ে আছে। আলাদা আলাদা মাদক খাইয়ে তাদের ঘুম পাড়ানো হয়েছে, যাতে তাদের ঘুম আলাদা আলাদা সময়ে ভাঙে। দুজনেই চাদরের তলায় সম্পূর্ণ নগ্ন। এক প্রৌঢ় দম্পতি তাদের প্রেমের পরীক্ষা নেবেন। তাঁরা ওদের আশ্রয় দিয়েছেন। কিশোর-কিশোরী একে অন্যকে চেনে না, আগে কখনো দ্যাখেনি।
প্রথমেই প্রৌঢ়া আড়াল থেকে এক দণ্ডের সাহায্যে ঘুম ভাঙালেন কিশোরের। সে ঘুম থেকে উঠেই দেখল পাশের খাটে কিশোরী ঘুমোচ্ছে। কিশোরের মুখে অনাবিল আনন্দ ফুটে উঠল। সে কোমরে চাদর জড়িয়ে বিছানা থেকে নামল। কিশোরীর কাছে গেল, গায়ের চাদর সরাল, বেরিয়ে এল নিখুঁত এক মানবীর দেহ, অনিন্দ্যসুন্দর দুই স্তন, ঘন যৌনকেশ। কিশোর সাগ্রহে নগ্ন হল। কিশোরীর দুটি পা ধীরে ধীরে দুদিকে সরিয়ে দিল। দৃঢ় লিঙ্গটি হাতে ধরে শুয়ে পড়ল কিশোরীর উপর।
কিশোরের নিতম্ব উঠছে নামছে। প্রৌঢ়া এই দৃশ্যে সলজ্জ হেসে প্রৌঢ়ের সাদা দাড়িতে আদর করে দিলেন। আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হওয়ার পরে কিশোর উঠল, আবার ঢেকে দিল কিশোরীকে, এসে শুয়ে পড়ল নিজের বিছানায়, তার মুখে তখন অনির্বচনীয় আনন্দের হাসি, ঘুমিয়ে পড়ল।
এরপর প্রৌঢ় ঘুম ভাঙালেন কিশোরীর। সে ঘুম থেকে উঠেই দেখল কিশোরকে, তার মুখে তখন খুশির হাসি, সেও গায়ে চাদর জড়িয়ে শয্যা থেকে উঠল, কিশোরের কাছে গেল, চাদর সরাল, নগ্ন কিশোর ঘুমোচ্ছে, তার দীর্ঘ ও নিখুঁত লিঙ্গটিও নিদ্রিত। পুলকিত কিশোরী নগ্ন হল, শুয়ে পড়ল কিশোরের দেহে। কিশোরীর নিতম্ব উঠছে নামছে। এই দৃশ্যে সলজ্জভাবে হাসলেন প্রৌঢ়, এবং প্রৌঢ়ার গালে চুম্বন করলেন। নিজের সাধ মিটিয়ে কিশোরী নামল কিশোরের দেহ থেকে, কিশোরের লিঙ্গ তখনো জেগে আছে, কাঁপছে। কিশোরী এসে তৃপ্ত মুখে ঘুমিয়ে পড়ল নিজের বিছানায়।
প্রৌঢ় আর প্রৌঢ়া বাজি ধরেছিলেন, ওই দুই কিশোর-কিশোরীর মধ্যে কে বেশি ভালবাসে, সেই বাজি। কেউই জিতলেন না। একই আকাশে দুই চাঁদের মতো ওই কিশোর-কিশোরীর প্রেম।
এ যদি কবিতা না হয়, পৃথিবীতে আজ অবধি একটাও কবিতা লেখা হয়নি।
উপরের দৃশ্য ইতালির কবি ঔপন্যাসিক চিত্রনাট্যকার নাট্যকার অভিনেতা চিন্তক সমকামী এবং চলচ্চিত্র পরিচালক পিয়ের পাওলো পাসোলিনির বায়োস্কোপ ‘অ্যারাবিয়ান নাইটস’-এর। তাঁর ‘লাইফ ট্রিলজি’-র তৃতীয় চলচ্চিত্র। ‘দ্য ডেকামেরন’ (১৯৭১), ‘দ্য ক্যান্টারবেরি টেলস’ (১৯৭২) এবং ‘দ্য অ্যারাবিয়ান নাইটস’ (১৯৭৪) এই তিনটি চলচ্চিত্রে পাসোলিনি জীবনের স্পন্দিত ও শাশ্বত ইরোটিক রূপ মেলে ধরেছিলেন ক্ল্যাসিক সাহিত্য থেকে কাহিনি সংগ্রহ করে। সমাজের নিয়ন্ত্রণকে মানুষের দেহ কেমন নস্যাৎ করে দিতে পারে, দেখিয়েছিলেন। দেখিয়েছিলেন মানুষের কামপ্রবণতা কতখানি নিষ্পাপ অথচ অপ্রতিরোধ্য হতে পারে। একজন কবির পক্ষেই এ কাজ সম্ভব চলচ্চিত্রের মতো শিল্পমাধ্যম নিয়ে কাজ করতে এসে, যে শিল্প একই প্রেক্ষাগৃহে হাজার মানুষ পাশাপাশি বসে দ্যাখে। এখানে উল্লেখ করা যায়, পশ্চিমবঙ্গে আজ থেকে দশ-পনের বছর আগে এই সিনেমাগুলো ফুটপাতে পাওয়া যেত পাইরেটেড ডিভিডির স্তূপে ব্লুফিল্ম হিসাবে। অবিশ্যি এদের তো তৈরিই করা হয়েছিল নির্মল অতীতের সঙ্গে আমাদের দূষিত বর্তমানের বৈপরীত্য ফুটিয়ে তোলার জন্য।
১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে পাসোলিনি যখন চলচ্চিত্র বানাতে আসেন, তখনই তিনি ইতালির একজন খ্যাতনামা কবি, লেখক ও সমাজকর্মী। কবি ও লেখক হিসাবেই তিনি জীবন শুরু করেছিলেন। তাঁর সিনেমার কবিতাকে বুঝতে হলে চিত্রকলার কিছুটা জ্ঞান থাকা হয়ত ভাল। ১৯৬২-তে তিনি লিখছেন, ‘আমার চলচ্চিত্রের রুচি সিনেমা থেকে নয়, বরং চিত্রকলা থেকে জন্ম নিয়েছে।’ সেটা স্পষ্টই বোঝা যায় তাঁর যেকোনো সিনেমার যেকোনো ফ্রেম দেখলে- তিনি দৃশ্যের ব্যাকগ্রাউন্ডকে একটা পেইন্টিং-এর ব্যাকগ্রাউন্ড হিসাবেই দ্যাখেন, এবং সেটাকে মুখোমুখি আক্রমণ করেন। ষাটের দশকে বানানো তাঁর সিনেমাগুলো চলচ্চিত্র ও ইতালীয় চিত্রকলার অপরূপ মেলবন্ধনের সাক্ষ্য বহন করে। সেই মিলন তাঁর ফ্রেমগুলোর মধ্যে আশ্চর্য কবিতার জন্ম দ্যায়। যে সীমারেখায় গিয়ে পাসোলিনির চলমান চিত্র স্থিরচিত্রের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে, সেই সীমান্ত একান্তভাবেই ভাষার তথা কবিতার। বোঝা যায় সেখানে গিয়ে পাসোলিনি একজন চলচ্চিত্রকার হিসাবে নিজের দৃশ্যরচনার অসহায়তা বুঝতে পারছেন, লিখিত ভাষার অভাব টের পাচ্ছেন, তিনি বুঝতে পারছেন চিত্রশিল্পের মধ্যে শিল্পী নিজের চেতনাকে প্রকাশ করার অনেক বেশি স্বাধীনতা পান, চাইলেই চিত্রশিল্পকে বাস্তবতার সীমানা ছিঁড়ে বের করে আনা যায়- কারণ তুলি মানুষের হাতেরই একটা সম্প্রসারিত অংশ, কিন্তু সিনেমার যে কোনো দৃশ্যের একটা সীমাবদ্ধতা আছে- ক্যামেরা খুবই অবাধ্য এক যন্ত্র, এবং তার ফলেই সিনেমার দৃশ্য বড় বেশি বাস্তব ও মূর্ত। পাসোলিনি জানতেন নিজের সিনেমার দৃশ্যকে তাঁর কাব্যিক প্যাশন বহন করার উপযোগী করতে হলে কিছু ফিকির অবলম্বন করা প্রয়োজন।
পাসোলিনি ইতালির নিওরিয়ালিজম ঘরানাতেই কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে আলাদা করে চিনে নিতে আমাদের সমস্যা হয় না। পাসোলিনির চলচ্চিত্রের ভাষাকে তাঁর নিজেরই কথায় বলা যায় ‘চলচ্চিত্রের কাব্য’। এই কাব্যের একটা বড় দিক হল বিপরীতকে মিলিয়ে দেওয়া। পাসোলিনির চলচ্চিত্রে স্বর্গীয় আর নারকীয় একসঙ্গে মিলে যায়, পার্থিব আর অপার্থিব মিলে যায়, প্রেম আর ঘৃণার সংলাপ রচিত হয়, দেহের মধ্যে ফুটে ওঠে আত্মার অক্ষর, প্রাগৈতিহাসিক সময় এসে কথা বলতে থাকে বর্তমানের সঙ্গে, সুন্দর হাত রাখে অসুন্দরের কাঁধে। একটা বিশেষ ম্যাজিক সৃষ্টি হয়, যার সঙ্গে পৃথিবীর অন্য কোনো চলচ্চিত্রকারের কাজ মেলে না। নিওরিয়ালিজমের মধ্যে থেকেও তিনি আলাদা হয়ে যান রোসেলিনি, ডি সিকা, প্রথম পর্বের ভিসকন্তির থেকে। তিনি অনেক বেশি ব্যক্তিগত সুরে কথা বলেন ওঁদের তুলনায়, অনেক বেশি লিরিকাল। আবার যুদ্ধপরবর্তী ইতালির পণ্যায়িত জীবনের প্রতি পাসোলিনি অপরিসীম ক্রুদ্ধ। বারবার তাঁকে টানে ইতালির অতীত। সার্বিকভাবেই তাঁকে টানে মানুষের সেই সময়টা যা ইতিহাসের অনেক আগেকার, যেখানে অসীম সম্ভাবনা আছে নস্টালজিয়ার, আর আছে কল্পনার ফলপ্রসূ অবকাশ।
ইতালির নিওরিয়ালিজমের একটা বড় দিক ছিল অপেশাদার অভিনেতাদের ব্যবহার। অপেশাদার অর্থে এই অভিনেতাদের অভিনয় করার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। এর ফলে চলচ্চিত্রে নিওরিয়ালিস্ট পরিচালকরা একটা বিশেষ আবেদন ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলেন যা হলিউডের থেকে পুরোপুরি আলাদা। পাসোলিনিও একই কাজ করেছেন। পাসোলিনির সিনেমায় অপেশাদার অভিনেতাদের বেমানান আনাড়ি অভিব্যক্তি ও নিষ্প্রভ চোখগুলো তাঁর নিপুণ ফ্রেমের মধ্যে হেঁয়ালির মতো ভিড় করে আসে। কিন্তু পাসোলিনি একটা অদ্ভুত কাজও করেছিলেন। তিনি একই অপেশাদার অভিনেতাকে একাধিক চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেন। এটা অন্য কোনো নিওরিয়ালিস্ট পরিচালক করেননি। একাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করার ফলে তাঁরা একটা অন্য স্তরে উন্নীত হন। দর্শক তাঁদের চিনে নিতে যেমন পারেন, আবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাসোলিনির স্বাক্ষর- এ যেন জীবনানন্দের অনেক কবিতায় ‘ঢের’-এর প্রয়োগ ফিরে ফিরে আসা, সচেতন মুদ্রাদোষ একজন কবির। আবার, একই সঙ্গে, পণ্যায়িত শিল্পের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়
পাসোলিনি নিরীশ্বর ছিলেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি বানিয়েছিলেন ‘দ্য গসপেল অ্যাকর্ডিং টু সেন্ট ম্যাথিউ’। ম্যাথুর সুসমাচার অনুসারে যিশুর জীবনালেখ্য। এ এক মহাকাব্য। একজন নিরীশ্বর হয়েও তিনি ম্যাথিউয়ের গসপেলকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুসরণ করেছিলেন। ২০১৫-এ ভ্যাটিকান সিটির সংবাদপত্র L’osservatore Romano এই চলচ্চিত্রকে যিশুর উপর বানানো শ্রেষ্ঠ সিনেমার আখ্যাও দিয়েছে। কিন্তু প্রত্যেক ফ্রেমে তাঁর ব্যক্তিগত ভাষাও ফুটে উঠেছিল কবিতা হয়ে। যিশুর চরিত্রে তিনি বেছে নিয়েছিলেন এক উনিশ বছর বয়সী স্পেনীয় যুবককে। তিনি সুদর্শন, তীক্ষ্ণ চেহারার যুবক। চোখে আগুন ছিল তাঁর। যিশুকে এই ছবিতে একজন বিপ্লবী হিসাবে দেখা যায়। তাঁর প্রত্যেকটা সংলাপের মধ্যে হ্যান্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ প্রচ্ছন্ন ছিল। কিন্তু, একইসঙ্গে, তিনি বড় পলকা চেহারার এক যুবক, তাঁকে দেখলে মায়া হয়, মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছা করে। এই বৈপরীত্যের মাধ্যমে যিশুর চরিত্রাভিনেতা পর্দায় কবিতা হয়ে উঠলেন। আর যিশুকে ঘিরে তাঁর শিষ্যরা- তাঁদের মুখের ক্লোজ আপ, খেটে খাওয়া মানুষ তাঁরা, জীবনের ঘাতপ্রতিঘাত তাঁদের মুখের প্রত্যেকটা রেখায় ফুটে উঠছে। ভিড় করে আসছে জনতা। তাদের অসুন্দর কিন্তু মানবিক মুখের সঙ্গে যিশুর বারোজন শিষ্যের মুখের কোনো পার্থক্য নেই। একেকটা মুখ- একেকটা কাব্যোপন্যাস, নির্মম কিন্তু সত্য।
‘ঈদিপাস রেক্স’ ১৯৬৭ সিনেমায় রাণী যখন জানতে পারলেন তিনি তাঁর পুত্রের সঙ্গে মৈথুন করেছেন, এবং সেই পুত্রই তাঁর ভূতপূর্ব স্বামীর হত্যাকারী ও তাঁর বর্তমান স্বামী, তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করলেন। তাঁর উলঙ্গ মৃতদেহ ঘরের মধ্যে দুলছে। কী সুন্দর সেই মৃতদেহ! আর ঈদিপাসের মুখে ফুটে উঠছে বিকট ত্রাস। সে নিজেকে অন্ধ করে নিল। ঈদিপাস নিজেকে অন্ধ কেন করবে? সে কি কেবল আর রূপ দেখতে চায় না? নাকি সে জানতে পেরেছে সর্বজনীন সত্য মানুষের চোখের অপেক্ষায় থাকে না? চোখ গেলেই বরং সেই সত্য উদ্ভাসিত হয় যা রূপের আড়ালে থাকে আর মানুষ জীবনে একের পর এক যুক্তিহীন কাজ করে চলে- যেন তারা দেবতাদের হাতে কিছু মজার পুতুল। ঈদিপাসের তার অজ্ঞাত পিতাকে হত্যা করার তো কোনো কারণ ছিল না! তার ক্রোধ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ছিল। তার চোখে তো তাকে বলে দ্যায়নি সে তার মাতার যোনিতে সঙ্গম করছে! চোখ বন্ধ করে সেই যতবার পথের সন্ধান করেছে, চোখ খোলার পর সেই পথ তার সঙ্গে ছলনা করেছে। ৪২৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সফোক্লিস যে নাটক লিখেছিলেন ১৯৬৭-র চলচ্চিত্রে পাসোলিনি তাকে নতুন করে আবিষ্কার করলেন- সিনেমার পর্দাজুড়ে ছেয়ে আসা কবিতায়। জীবনের ধাঁধা স্ফিংক্সের হেঁয়ালির চেয়ে অনেক বেশি জটিল। বিভ্রম থেকে মুক্তির জন্য ঈদিপাস স্থায়ী অন্ধত্বকে বেছে নিল।
সিনেমা এবং কবিতার উচ্চাকাঙ্ক্ষা কোন উত্তুঙ্গ চূড়াকে স্পর্শ করতে চাইলে একজন পরিচালক দুঃসাহস করেন কুখ্যাত ফরাসি লেখক মার্কুইস দি সাদের (১৭৪০-১৮১৪) উপন্যাস ‘সালো, অর দি ওয়ান টুয়েন্টি ডেজ অফ সদোম’-কে চলচ্চিত্রে নিয়ে আসার! ১৯৭৫-এ পাসোলিনির হত্যার তিন সপ্তাহ পরে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমার পাইরেটেড ডিভিডি আমাদের দেশে ব্লুফিল্ম হিসাবে অঢেল বিক্রি হয়েছে, কিন্তু কোনো প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হবে, সেটা এই ২০২৩-এও অবিশ্বাস্য। এমন একটা সময়ে এই ছবি পাসোলিনি বানাচ্ছেন যখন তিনি ইতালির সমাজে কে ফ্যাসিস্ট আর কে ফ্যাসিজম-বিরোধী, আলাদা করে চিনতেই পারছেন না। এই ছবিতে চারজন স্বেচ্ছাচারী লম্পট ধনী অপহরণ করে আঠারোজন কিশোর কিশোরীকে, এবং চারমাস ধরে তাদের উপর অকথ্য হিংস্র যৌন ও মানসিক নির্যাতন চালায়। এই আঠারোজন নির্যাতিত কিশোর কিশোরীর উলঙ্গ সুকুমার দেহ যে কোনো লিখিত ভাষার চেয়ে বেশি করে তুলে ধরে রাজনৈতিক দুর্নীতি, ভোগবাদ, কর্ত্তৃত্ববাদ, নিহিলিজম, নৈতিকতা, পুঁজিবাদ, সর্বগ্রাসী শাসনতন্ত্র এবং ফ্যাসিবাদের স্বরূপ। ইতালিতে এই ছবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল ১৯৭৬-এর জানুয়ারিতে। ছবিটির উপর সাদ ছাড়াও প্রভাব ছিল ফ্রিদরিক নীৎশে, এজরা পাউন্ড এবং অবশ্যই মার্সেল প্রুস্তের। এই ছবিকে দুঃসাহসিক বললে খুব কম বলা হয়, পাঠক, আপনি হয়ত বাঙালি রুচি অনুসারে এই ছবি দেখতেই পারবেন না, চোখ বন্ধ করে নেবেন, রাতে দুঃস্বপ্ন দেখবেন। এই সিনেমা দেখে ওঠার পরে কেউ আর আগের মানুষ থাকে না।
পিয়ের পাওলো পাসোলিনি- বাঁচার আনন্দ আর বেঁচে থাকার বীভৎসতাকে বৈপরীত্যে সাজিয়ে উপহার দিয়ে গেছেন তিনি আমাদের। আমাদের সমাজে তাঁর সিনেমাগুলো দেখা ও দেখানো খুব প্রয়োজন। আমরা যৌনতাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারি না, অথচ দুর্নীতি আজ আমাদের অভ্যাসের অংশ হয়ে গেছে। এই সমাজেই ‘দ্য অ্যারাবিয়ান নাইটস’-র নিরপরাধ যৌনদৃশ্যগুলোর, এবং ‘সালো’-র ভয়ানক ফ্রেমগুলোর আছড়ে পড়া খুব দরকার, পাঠক।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন