আকাশি ট্যুর 

দু দিকেই ড্যাস বসেছে রুলটানা আকাশিট্যুরে। দশদিক নাচে দুর্গাদিগন্তের ভঙ্গিমায়। আমাকে জাগাচ্ছে  সীমান্তজীবী তরঙ্গমালা। বিদ্যুৎ কালিতে রূপসা ঝলক। ছৌ নাচে নিসর্গের ছায়াব্রতা ও গাছ গাছিনীর মুখোশ। পলাশ চূড়া মেতে ওঠে নিখোঁজ বিজ্ঞাপনের নাঙ্গা ডাঙায়। শব্দে শব্দে রিফু সেলাই। বোনা করি নক্সিগাথার মাঠ। গনগনের পাশে পঞ্চচুল্লি ভোজন। জাদুকরের ছড়িতে ম্যাজিক চমকায়। 

বিন্দু উনবিন্দু ছুঁড়ে খেলায় মাতি। একমুখো আমি, ভাঙি হাজার টুকরোয়। খেলে বেড়াচ্ছি মা পাহাড় থেকে পাহাড়িনী মেয়ের কালি ও কলমে। বোকা প্রণবের সাথে চালাক প্রণবের ঠোকাঠুকি। 

প্রজাপতি বুনছে গুমঘর। সলতে পোড়ে বাইরে। অনবরত বিষাদ লেখা শোনা করি। মাটির গোড়ালিতে অবুঝ সংসার। নিমজলে স্নান করে পোয়াতিধান, বিনাদুধের পেট। রোজ জন্মাচ্ছে ছুটিবারের শূন্য থালা। মজাদার কোয়ার্ক দোলে পেন্ডুলামে। ম্যাগনেটোরিয়ামের জালে বাজে ঢং ঢং---




                         

পাগল ঘন্টি

নীলকাম শূন্যে ছড়ানো রংয়ের অ্যালার্ম ! 
সীমা পার আলোর এপারে
আলোকিত আঁধার বোনা ক্ষেত
ছায়াতুতো পড়শির
                মিউজিয়াম জুড়ে। 

অপরাধ লিখছে নিজের ভুবন। 
চৌহদ্দির কোলাহল ছেড়ে
               মশারি ও মগজ পেরিয়ে
নিজেরই বিরুদ্ধে ছুটে যায় নিজের ওয়র‍্যান্ট।!
হ্যান্ডস্ আপ্ স্টিলগ্রাফে
ঘন্টার অপেক্ষায়
                স্ট্যাচ্যুইস্ট সবাক চ্যাপলিন 

বর্ণমালার ব্যারাকপুর জ্বলে যাচ্ছে
 নিজের চিতায়-----
পৃথিবীর যাবতীয় চুপ ভেঙে যাচ্ছে
চুপিচুপি হাতের তালুতে। 
পারফিউম ছাড়িয়ে আবার ঘামের গন্ধ
সুবর্ণ রেখায়। 
অন্ধকার গেলা আলোর সন্ত্রাসে
নীলগ্রস্ত শূন্যে বাজে পাগলঘন্টি ! 
চলা করি ভূগোলের ম্যাপ হারা
                               ন্যাংটো ভুবনে। 



              




সর্বনাম চলে যাচ্ছে 

সর্বনাম চলে যাচ্ছে দূরবন্তিক মাঠের ওপারে
একাকে ছিন্ন ক'রে বহুবচন লিখছে
                                         কণার মহিমা। 
পৃথিবীর অন্ধকার অনুবাদ হয়ে এলো
বাঙালি সন্ধ্যায়
এই পাগল চলনের শৃঙ্খলায়
পৈতে ডিঙনো ম্লেচ্ছতায়
সবুজ বেহালার মাতৃসদন। 

বিন্দু ছুঁড়ে ফুটবল খেলছে
মাথাময় বাইনাকুলার
গল্পজুড়ে কাঁচিকাটার দারিদ্রে
সর্বহারানো স্লোগান দিচ্ছে বিশ্ব চাম্পিয়ান। 
মজাকে মজ্জা সোজাকে শয্যায় রেখে
       বিন্দু আর বিন্দু ঝরছে ফোঁটায় ফোঁটায়। 

কেঁপে ওঠে স্টেডিয়ামের তালি
মাঠ ফুটছে পায়ের ঝালায়
শূন্যকে পূরণ করার এই রোদভাজা দুপুরবার
                           জেগে উঠছে চামড়ার নিচে। 
একটা ছুট কেনার ছুটোছুটি ছেড়ে
রিফিলের কত্থকে
মেতে উঠল একার অস্থির। 





                           

স্বপ্ন লাস 

পোড়া ছাইয়ের তলপেটে ঘুসঘুসে লালিম। কলমে স্বপ্নলাস। রোস্টেড পৃথিবীতে জিওল চোখের ফ্রেসেটেরিয়ানি উধাও। স্মৃতিকে ডাস্টারে মুছি। চলমান পায়ে বিউগল। চু কিতকিত খেলার যৌবন ঢোঁড়ে বর্ণ পরিচয়ের উল্লাস। দিগন্ত আঁকার পেন্সিলে ধর্মঘট লিখছে কেউ। সফর বসেছে রুকস্যাক নিয়ে। আহ্নিক বার্ষিক চঞ্চল মহাকাশের অলিগলি জুড়ে। রং লাগাই স্বরবর্ণ পাড়ার ব্যঞ্জনপল্লীতে। বর্ণে বর্ণে গিঁট বাধা টেলিস্কোপ। মগজে বোবা ফিল্মের ধ্বনি তরঙ্গে মাল্টিপ্লাই। চারায় চারায় বিন্দাসের ফোঁটা। ফুটি ফাটায় জল পড়তেই কারা বলে ওঠে! পায়ে পা পড়তেই কলমে মারভেলাস। একটা আনদেখা দুলছে ভোরের ডগায়। খিলখোলা রোদ। তুলিস্কর্য্যে লাফ দিল রং-ভাস। মরা মাছের জিয়ল সাঁতার। রিফিলের বুলি ফুটছে। কে যেন তা দিচ্ছে ঘুমনো রবিবার। হল্লা উঠলো। একলা ঘরে পংক্তি ফুটলো কচি ডগায়। উঠে দাঁড়ায় ম্যানুস্ক্রিপ্ট। পৃথিবী আগের মতোই ঘুরছিল। টের পায়নি আধ মরা মানুষের পা। 





                    

হিউজিয়াম 

ফাৎনায় স্ফুলিঙ্গ ও কণার ঝগড়া। বিস্ফোরণ থেকে ছোটে শতাব্দী তুফান। গল্পের আগ্নেয়পাত। ওঠে নামে বাউল নৃত্য। একতারার মন, তারায় তারায়। মুখ তুলে তাকায় পংক্তিমালা। হাই তোলে শতাব্দী এক্সপ্রেস।  উল্টো মুখে নদী নিয়ে ঋতুর তান্ডব। শীতের গায়ে বসে ফাগুনের হাওয়া। 


ছিপে বসেছি আগুন ধরতে। আগুনের গুণ। ভাঙা কাচের শব্দে উঠে বসে সবুজ মানচিত্রের জিন্দালাস। মেধার ছায়াপথ পেরনো আলোংকৃত অন্ধকার। পথে পথে কণা কুড়োই মুঠো ভ'রে। কণার গয়নায় যারা বিদ্যুৎখানা, কাছে ডাকি। হাজারমুখী উড়ানের বিদ্যায়তনে ঘন্টা বাজে বিকল্প চক ডাস্টারে। পুরনোই বেজেওঠে হিউজিয়ামের হারমনিয়ামে। বিশ্বরাগ সম্প্রসারিত চোখের চশমায়। দুলে ওঠা ছিপ ছোটাচ্ছে তলপেটে শুয়ে থাকা পরমাণুর আন্ডায়। অনর্গল দৌড়চ্ছি খোঁড়া পৃথিবীর সাথে। 





                   

প্রসারণ 

ছড়ানো সীমানা। শিষ আঁকে সবুজ হুইসেল। সার্কাস জ্যামিতি পড়তে পায় না। মিউজক্যাল চেয়ারের ডানা ঝাপ্টানো। এক ড্রপ শিশির ভাবি খোকামুখে। ভাবি আজকের বুলি। সবুজ ফোঁসে সাপুড়ের বিষ মাখানো ভিটামিনে। আকাশের এক্কাদোক্কা মহাকাশের সাথে। 

মাইক্রোফোনে ভবিষ্যৎ পেন্টিং আর সিগন্যাল ভেঙে চাঁদ ওঠে জোছনাপাড়ায়। অস্থির আমি খুঁজে বেড়ায় স্থির আমাকে। শুরুয়াতের জন্য গোটা জীবন রিহার্সাল। ইসকুলের রোল নাম্বারে ঠোকাঠুকি। ভিতরের অন্ধকার থেকে আসে স্ত্রীমেইল। ধান ও  প্রি-ধানের মধ্যে বুদবুদ। কাদায় রঙিন ডিম পাড়ে ফর্সা সকাল , ছড়িয়ে পড়ে রিনিউ প্রি-ভোর ! 





                        

স্বপ্নাভা 

ঘুমসুটির মিলিনিয়াম। 
নেভা ক্যাম্পফায়ার নাচে
মাতালের প্রচ্ছদে। 
বাক ও অবাকের স্টীলগ্রাফি, 
পূর্ণিমার নীল চাঁদে ট্রাফিক  সিগন্যাল। 
গলন্ত প্যারাফিনে
নিভে যায় আমিবার পেরিফেরি। 
মহাকাশের ধুলোয় লেগে আছে কাহাদের নাম! 

বেঁচে ওঠাই মনসেনট্রশন। 
আমাকে বাজালে 
বেজে ওঠে দূরের সেতার। 
ফার্নেসে দাবানল, 
একদাড়ি লালন ছোঁয়া নবেল বৈশাখ। 
জল ওড়ে আদিম আকাশে। 
ভোরের জন্মদিন
               প্রথম ডেকেছে কাকে ! 
কত আলো বছর দূরে তার প্রথম চিৎকার ! 

আঙুলে ঘোর কথাকলি। 
অশেষ চিৎকার একার আড্ডায়। 
সূর্য তোলা ভোরের কুয়াশায় 
ছোট চোখের দীর্ঘ মাপকাঠি
                     গুনছে নিজের অসীম, 
মাঠ ভাঙা বলের আলোকবর্ষ। 

একপাতার রোদাহল
গ্রহান্তের ন্যাংটো আকাশে
            ছবি ধরছে
            দু'পাতা চোখের পলকে। 
বিছানায় আর্তনাদ। 
সাইকেলে জ্বলে যায় প্যাডেলের পা। 
মাথার ঝিনচ্যাগ বোনা
বর্ণ কুরুশে
ফুঁড়ে যাই এফোঁড় ওফোঁড়। 

মগজ ঠিকরানো রাতের হেডলাইট
অনবরত সিগন্যাল টপকানো হর্ণ। 
স্থির কিতাবের চঞ্চল পাখিয়ারি জ্বলছে
                       কবিউনিজমের স্বপ্নাভায়। 





                   

মাতালের পা 

সাদা আঁচলের নিচে ব্রা  উনসার্টের থাবা। হিটসোলিনীর জীনে মহব্বত ফুটছে লোকাল টবে। টুকরো নয় আস্ত রুটির খুনিকে খোঁজে আগাথা ও ক্রিস্টোফার। পাহাড় জঙ্গলের নিসর্গ টলে। নির্মাণ ভাঙে পান্ডুলিপির নিরীহ চলনে। জং ছাড়ানো পা ডাকছে ঘুমানো পা-কে। আড় ভাঙে নেশাদ্রিত ঘুমে। সাপের গর্তে ডিমের মরশুম। গোয়েবেলের আন্ডা বাচ্চারা ছড়িয়ে পড়ে শহর নগর গ্রামান্তের হা-ভাতি সীমান্তে। কেউটে গ্রাম কেউটে নগরে ফণা দোলায় মিথ্যে ভান্ডারার চৌরশ্রী। অলক্ষীর পা আঁকে শূন্য মগজের দেউলিয়া হাত,  নিকনো মাটির সরল উঠানে। সবুজখাকির বন্দনায় দোলে ধেনো বাংলার মুখ। উদোমের সর্বনাশ নাচে মাতালের পা'য়। 




                           

আয়নার নাচ

ম্যাজিক আয়নায় রিয়ালিজমের কত্থক মাঝ রাতে। শুকিয়ে যায় সবুজের মাতৃসদন। গান ক্রমে স্লোগান হ'তে হ'তে স্ট্রনগানের আর্তনাদ শোনায়। ধান ক্ষেতে রক্তবীজ ছড়ায় শ্রীমতি লুম্পেন। লুঠেরার কাল। শব্দহীন মৃত্যুস্কর্য্যিত মিউজিয়ামে দোলে বাংলা বোতলের হাজারদুয়ার। একযুগ চুপ জমতে জমতে পাথর। 
চলন্ত আয়নার সেলুলয়েডে একটি সালোয়ার কামিজ। শূন্যজিয়াম খুলে দেখায় ছায়াপথের আলোতন্ত্র। অ্যালার্ম বাজে। আড় ভেঙে মোড়া ছাড়িয়ে সকাল হাতড়ায় কলিংবেল। ভন্ড ধবধবে পোষাক পালাচ্ছে নিজের ছায়া থেকে। একটা চুরমার প্রেগন্যান্ট হচ্ছে পেটে পেটে। ছেঁড়া মানচিত্রে রিফু করার হাওয়া দেখায় পাগল প্রতিবিম্ব। আমি নিজেকে দেখি আয়না আমাকে। 




                

চপ্পল জাগে 

ঘুমানো চপ্পল জাগে। একলার মাইলষ্টোন ভেঙে স্টেশনহারা ট্রেনরুট। চোখে চোখে জাগরণ!  অবুঝ কুরুশ বুনে যায় বুনো অন্ধকার। রোজ কারা নামে !  কারা ওঠে সূর্যের  আগে !  পাহাড়ি মেঘের দোস্তিতে তুলি ওঠে রং নামে। এপ্রিল ফুল ফোটে ক্যারামতির গায়। ভুল চলনেই যত আনন্দ। তাস বাটতে বাটতে একটা জিন্দেগী খরচ করার আগে সিকিমি রুটির উত্তাপ মাখা সোয়েটার পরি। গরম চায়ের ভাপে জবরদস্ত মাইনাস ডিগ্রী মিশিয়ে বুটে রোদ ঘষি। জানাসোনাকির আলোয় জঙ্গল আঁকে পাগল রং-ভাস। কবিতা ছিঁড়ে ভ্রমন পড়ছে কাহাদের পায় !  চরমারের মধ্যেই একটা নির্মাণ আঁকে বর্ণমালা। গাছে গাছে কারা স্বরবর্ণ ঝুলিয়ে অক্ষর আঁকে ফলের ডগায়। কচি আমের গন্ধে পাগল মুকুল অস্থিরপংক্তি লেখে সোনালিমায়। জল ফোটা কেতলির বুদবুদ ওঠে। হাতের পাতায় শ্বাস নিচ্ছে নিঃশব্দের কথাবলি। একটা দীর্ঘ আঁকা হচ্ছে হ্রস্বতার অণুস্ফুরণে। কোথাও ডিম ফোটে কুসুমে কুসুমে আর সাত পাগল রং ছড়িয়ে পুব ওঠে খাতার উল্টো পাতায়। 






প্রণব পাল

ঠিকানা:- ১৩৮/৩/১, বেনারস রোড, সালকিয়া, হাওড়া -- ৭১১১০৬
জন্ম :- ৫ই ডিসেম্বর ১৯৫৪
শিক্ষা:- এম. এ

প্রকাশিত গ্রন্থ
১) ম্যাজিক ক্যানভাস ( কবিতা)
২) ভাষা বদলের কবিতা(কবিতা)
৩)একলা অর্কেস্ট্রা(কবিতা)
৪)নিষিদ্ধ ভুবন(কবিতা)
৫)শাস্ত্রহীন চলার বেদনা( কবিতা)
৬) ক্যানভাস সত্তর(সম্পাদিত-কবিতা সংকলন)
৭) ভাষা বদলের পদ্য( কবিতা) বিষ্ণু দে পুরস্কার প্রাপ্ত
৮)রোদগ্রাফ(কবিতা)(কবি সুনীল কুমার স্মারক পুরস্কার ২০১২)
৯) ভাষা বদলের গদ্য (গদ্যের বই)
১০) যাযাঘর ( কবিতা)
১১) ভাষা বদলের মন্দাক্রান্তা(কবিতা)
১২) আগুন অ্যালবাম (গানের বই)

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন