প্রত্যয়

 পাখি উড়ছে

                 নদী ছুটছে

 উড়ে যাচ্ছে মাথার ওপর ধর্মের মেঘ

 আমরা হাওয়া খুঁজছি

                 হাওয়ায় উড়ছে প্রাচীন আবেগ


 পাখিগুলি সব বিবর্ণ উপলব্ধির

 নদীগুলি জীবনবোধের ক্ষয়িষ্ণু স্রোত

 ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন মেঘে ধর্মের ইমারত

 হাওয়ার কাছেই শুধু আস্ফালন

                            শূন্যতার নান্দনিক প্রহর


 প্রত্যয় হারাচ্ছে আমাদের মানবজন্মের অন্ধকার 








কুসুম

আমাদের সব আকাঙ্ক্ষায়

 অসহিষ্ণু বিষাদ লেগে আছে

 মোহিনীর ঘরে তবুও বসেছি নির্জনে

 চুমুক দিয়েছি হলুদ চায়ে


 নতুন নতুন বার্তা কিছু যদি আসে

 অলৌকিক ঘ্রাণের মতন দুলে ওঠে

 সে হিল্লোলে নবজন্ম পাবে

 পুরনো ভ্রমরগুলি আমাদের


 কেবল গুনগুন স্বর জেগে আছে

 অস্ফুট ধ্বনিতে সংরাগ চৈতন্য-বাঁশি

 যদিও কুসুম নাম শোভায় সংলাপে

 বারবার কাছে ডাকি তাকে


 ইঙ্গিতময় প্রবৃত্তি-সংকুল জীবনে

 কথা আসে, কথা চলে যায়

 নীরবতা কিছু ভাষা জানে

 পরাজিত এ-জীবন তবুও মুকুট পরতে চায়।






রং

ফুল হয়ে ফুটছি মনে মনে

 তুমি প্রজাপতি হয়ে এসো

 আমার বিষাদ বনে


 জটিল প্রশ্রয় শুধু

 পরাগ মোচন হলে

 ফলে ফলে ভরবে বাগান


 দূরের হাওয়ারা আসে

 দোলা দেয়

 দুলতে দুলতে তোমার সান্নিধ্যে লাগে রং


 রঙে রঙে মিশে যেতে চায় একটি জীবন







সর্বনামগুলি

 তুমি আমি অথবা আমাদের সর্বনামগুলি

 কোন্ ক্রিয়ার কাছে যেতে চায়?

 আজ আর কোনো আলো নেই

 নৌকা নিয়ে চলে গেছে যুগের মল্লার

 সব কাল্পনিক দৃশ্য এখন ইতিহাস

 আমরা স্বপনের কান্নার দোকানে

 অথবা দুঃখের হোটেলে

 অস্তিত্বহীন কারুণ্য বিষাদ খেতে খেতে

 কেবলই উন্মুখ হই


 আদৌ কি বের হবে কোনো ডানা?

 উড়ে উড়ে যেতে পারব তবে!







 ৫
লেনদেন

 এক অদৃশ্য লেনদেন চলছে আমাদের

 যদিও কথা হয়নি, যদিও তাকাও না তুমি আর

 জানালার বাইরে গাছ-পাখি-বৃষ্টি-আকাশ

 দেখে দেখে চলে যাচ্ছে দূরের সমাচার


 আমি ফিরছি না-বলা শব্দের কাছে

 আমার বিশ্বাস কখনো সাহসী হবে না

 একবারও চাইবে না তোমার ঠান্ডা জল

 ভেতরে বারুদ নিয়ে পুড়বে সব আগুন ইচ্ছায়


 যদিও কাহিনির জন্ম হবে

 তোমার কাঁপাঠোঁটে ফুটবে কথাফুল

 আমার অনুভূতি নিত্তান্ত ভ্রমর হয়ে উড়ে উড়ে যাবে

 খুঁজবে তোমার ঠিকানা ক্লান্তিহীন পৃথিবীতে


 রোদে-ঝরনায় স্নান করবে আমাদের নিঃস্ব বিকেল




 


সফলতাগুলি টুপি পরে এসেছে সবাই

 কাদের এত সফলতা চেয়ে চেয়ে দেখছে আমাকে?

 আমার কোনো সফলতা নেই

 ভাঙা পাঁচিলে রোদ পড়েছে বলে

 আজ কিছুটা আলোকিত মনে হয়।

 এপাশে ওপাশে দুরারোগ্য ক্ষত

 সহ্য করি অসহ্য চিৎকার।


 মৃত্যুরা খেলছে এসে

 এ খেলা সে খেলা নয়

 দু-ফলা চেরা জিভে চেটে নিচ্ছে দিন

 আমিও পোশাক বদল করে মঞ্চে দাঁড়াচ্ছি

 জীবন এসে শেখাচ্ছে অভিনয়


 সফলতাগুলি টুপি পরে এসেছে সবাই

 আমার শুধু ধার করা বিহ্বলতাটুকু...







 
 সব কথা ফুরিয়ে গেছে

 আর দেখা হবে না তোমার সাথে

 এক চিলতে রোদ্দুরে আমার শীতকাল

 এই জানালার পাশে অপেক্ষায় আছে

 অভিমানের শিশির শুকিয়ে গেছে

 কল্পনারা ফেরেনি কেউ

 আকাঙ্ক্ষার হলুদ চড়াইয়েরা

 অনুভূতির শস্য খুঁটে খুঁটে উড়ে গেছে


 তোমার হেঁটে আসা আর ফিরে যাওয়া পথটুকু

 সারাদিন তাকিয়ে আছে আমার দিকে

 আমার সব কথা ফুরিয়ে গেছে বলে

 সমস্ত চৈতন্য জুড়ে নির্বাক ভ্রমরেরা ঘোরাফেরা করে






 ৮
পান

এক খিলি পান চেয়ে খেয়েছিলাম একদিন

 তোমার হাতের ছোঁয়া পান

 এখন দরজার কাছে এসে দাঁড়াই

 দেখি তুমি পান নিয়ে অপেক্ষায় আছ !






অবেলায়

 জীবনের দীর্ঘ ছায়া অন্ধকারে মেশে

 আমি এখন নিজেকেই খুঁজতে থাকি

 এই মুখ কি আমার মুখ?

 এই হাত কি আমার হাত?

 বারবার ডাকি নাম ধরে…


 দু একটি প্রজ্ঞাপাখি ওড়ে

 ঐশীকেতনের মেঘ পার হয়

 কথা আসে দুর্মর সংকেতে


 অন্ধকারে গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে

 কোন্ গুহার নিকটে আমি যাই?

 পরাসংসারে অতিজীবিতের ঘুম ভাঙে

 নির্নিমেষ আমাকে ডাকে





১০
গান

 চমৎকার গান গাইতে পারো

 সুরের রশ্মি এসে হৃদয়কে  ভেজায়

 গান শুনে শুনে একটি জীবন পার করি

 এ জোয়ারে এখনও ভাসে আমার তরী



 


১১
স্মৃতিকণা

 তোমার স্নানের দৃশ্য

 মুদ্রিত করে রেখেছে আকাশ

 বৃষ্টি ফোঁটা গড়িয়ে নামছে চিকন শরীরে

 একখণ্ড নীল রঙের কাঁচুলি

 চোখের সামনে সরে যাচ্ছে বলে

 আমি আর তাকাতে পারছি না!






তৈমুর খান


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন