ক্লিক : রুপম (গুনুটিয়া, বীরভূম)






শূন্যে ফেরিওয়ালা বৃত্তে বেলুন

পর্ব-৫

পশ্চিমে বসবাস আজ বহু বছর। দেরিতে সূর্য ওঠা দেরিতে সূর্যের বাড়ি ফেরা এসবে নতুনত্ব নেই৷ বরং গ্রামের বাড়ি মানে মেদিনীপুর গেলে কেমন যেন অবাক হই। ভাত খেয়ে ছাদে দুটো গল্প করতে করতেই যেন ঝুপ করে সন্ধে নেমে ঘন রাত হয়ে যায়৷ আবার মুখে রোদ পড়লে ঘড়িতে দেখি সকাল পাঁচটা৷ ওই কথায় আছে না মানুষ অভ্যাসের দাস৷ আমার অবস্থাও অনেকটা সেই রকম। 

গোয়াতে এসে আমাদের প্রথম ইচ্ছে ছিল বেনাওলিম বিচে যাওয়া৷ আসলে থানে থেকে যতবার এসেছি বেশিরভাগই বেনাওলিমেই থেকেছি। বিচের ওপরেই রিসর্ট- দ্য লা-মোর বিচ রিসর্ট। ঝকঝকে বালি আর কম লোকের ভিড়ে এই বিচের সব থেকে ভালোলাগার জায়গা হল বিচের ওপর একটা রেস্টুরেন্ট। ওখানে ইংলিশ ব্রেকফাস্ট করতে করতে আমরা প্রত্যেকেই কেমন যেন বিদেশের মাটিতে পা রাখি।

 ভারতবর্ষের বেশিরভাগ জায়গাতেই বিভিন্ন বিদেশী খাবার পাওয়া যায় তবে সমস্ত খাবার দাবারই প্রায় ভারতীয় ছোঁয়ায় রান্না হয়ে থাকে৷ তাই সঠিক স্বাদ আমরা পাইনা বললেই চলে৷ কিন্তু গোয়ার গল্প আলাদা৷ এখানে পর্তুগিজ সংস্কৃতি তার শেকড় বিস্তার করেছিল বলেই মানুষজনের মধ্যে বেঁচে থাকাও অনেকটাই ওদের মতন৷ আর খাবার দাবারও৷ তাছাড়া টুরিজমের দিকে বা স্বচ্ছ বিচের কারণে গোয়াতে অনেক ফরেন টুরিস্টের আনাগোনা৷ সে কারণেই হয়তো এখানে ইংরেজ বা পর্তুগিজদের খাবার দাবারগুলো একেবারে ওদের মতোই খেতে হয়। এমনকি হ্যাম, বেকন, চীজ, বড় বড় মাপের স্লাইস পাউরুটি৷ 

ঢেউ দেখতে দেখতে স্ক্র‍্যাম্বল এগ খাওয়ার বা তরমুজের জুসে চুমুক দেওয়ার যে আমেজ তা সত্যিই লিখে বর্ণনা করা যায় না৷ এই সবই আবার বেছে নিতে প্রথম রবিবারেই চলে গেলাম বেনাওলিম বিচ৷ বাড়ি থেকে মাত্র চল্লিশ মিনিটের দুরত্ব৷ 

এখানে বর্ষা খুব তাড়াতাড়ি নেমে গেল। গেল মানে কি শুধু গেল? থানেতে থাকতে সব থেকে খারাপ লাগত চার মাসের বৃষ্টি৷ ভেবেছিলাম গোয়াতে একটু কম হবে। কিন্তু কোথায় কি? ওই বিচ ঘুরে আসার পর থেকে শুরু হল আকাশ ফাটা বর্ষা। টানা এক মাস দু মাস বিরাম নেই। বড় বড় ফোঁটার বৃষ্টি বিরাট ছাতা নিয়ে বেরোলেও ভিজে যাচ্ছি এমন পরিস্থিতি৷ আমার এতো বৃষ্টিতে প্রচন্ডই মনখারাপ করে৷ চারপাশে জল, তার মধ্যে গরুর গোবর - রাস্তায় বেরোলেই কেমন যেন লাগে৷ আর তার থেকেও বড় কথা এতো বৃষ্টিতে কোত্থাও বেরনো যায় না৷ বাজার হাট এখানে নিজেকেই করতে হয়। মুম্বাইতে অ্যাপে অর্ডার করলে এসে যেত। এখানে হোম ডেলিভারির গল্প নেই৷ তাই বৃষ্টির মধ্যেই জল ছপকে ছপকে যেতে হয় দৈনন্দিন কাজ সেরে নিতে৷ 

ভিজে ভিজেই কিভাবে যেন কেটে গেল চার মাস৷ জীবন কত পরিবর্তনশীল৷ এখানে শুরুতে কষ্ট হচ্ছিল। এখন ভালো লাগতে শুরু করেছে। এমনকি এখানেই পাশাপাশি মন্দির মসজিদ গীর্জা সহ মানুষের যে মেল বন্ধন তা আর কত জায়গায় দেখা যায়, আমার সত্যিই জানা নেই৷ মানুষ মানুষকে সাহায্য করার সেই প্রাচীন প্রথা এখানে পেয়েছি নতুন করে। রাস্তা ঘাটে যে যার মতো চললেও বিপদে 'সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে'। 

এভাবেই ভালো থাক মানুষ।  ভালো থাক গোয়া। ভালো থাকুক ভারতবর্ষের মধ্যেই ছোট ছোট ভারতবর্ষ।

(ক্রমশঃ চলবে...)





নীলম সামন্ত


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন