অথচ কেউ নেই
অংশত চেনা মুখ তারপর
নির্লিপ্ত অন্ধকার। একে একে
শৈবাল ছত্রাক
কুমুদ কহ্লার পাশাপাশি তুলনামূলক
আরও কিছু দেখতে চেয়েছি। এই
অঙ্ক সহজে মেলানো যায় না।
রাতদুপুরে দরজায় কড়া নাড়া সিঁড়িতে
ধুপধাপ পায়ের শব্দ----অথচ কেউ নেই
এখানে কোন সম্ভাবনা জন্মায় না।
ডুবে যাচ্ছি নামহীন কবিতার রঙে রঙে
যেখানে উষ্ণতা ক্ষয়িষ্ণু বা কর্কশ
হয়ে ওঠেনি।
হেই মাঝি! ইধার আও----এপার ওপার
ধূসর থেকে সবুজে.... নিয়ে চল।
সুবোধ ঘুড়ি
কবিতা ছিঁড়ে উড়িয়ে দিলে নাকি জলজ্যান্ত
পাখি পাওয়া যায়। আর শূন্যে হাত মেলে
চৈ চৈ চৈ ডাকলে পাতিহাঁসও হাজির হবে।
ছবিটা এরকমই : বাতিস্তম্ভের মাথায়
সে-ই কবে বাঁধা পড়েছিল একটা সবুজ
রঙের সুবোধ ঘুড়ি। হাওয়ায়
ছটপট করছে।
এতো গেল চিত্রপ্রদর্শনীর বিষয়। মোদ্দাকথা
কোন্ বিন্দুতে দাঁড়াতে হবে অথবা কতোটা
ছুটতে হবে এবং চিরকালীন প্রশ্ন---
থামবো কোথায়?
মজা পুকুরের পুরনো ঘাটলায় দাঁড়িয়ে দেখি
না ডাকতেই অবাঞ্ছিত শ্যাওলা এগিয়ে আসে
শুধু তাই নয়, ফিসফিস করে বলে যায়----
কুমুদ-শালুকের দিন এলো বলে, তখন তুমি
আবার এসো----এসো কিন্তু!
কঙ্কাল
বিছানায় ধবধবে শাদা চাদর পাতা
বালিশে নকশাকাটা আবরণ দেয়ালে
নীল বাতি ও সুদৃশ্য দামি ঘড়ি
সাজানো গোছানো ঘর বইয়ের
আলমারি----রবীন্দ্র রচনাবলী। মোজার্ট
বিথোভেন রবিশঙ্কর।
সুরা ও সুবাসিত আবেশ ঘুম ঘুম পাশে
অসংলগ্ন এক কঙ্কাল---নিরাভরণ নয়।
এরপর কোন কথা নেই, জটিলতায়
গূঢ় রহস্য। রূপকথার গল্প শেষ করে
যে কোন রাস্তা বাঁয়ে নদী রেখে বনস্থলি
পার হয়ে যায়....
পিছনে শয্যাসঙ্গিনী অসংলগ্ন কঙ্কাল
মধ্যরাতে উঠে বসে। পুবের জানলা
খুলে দেয়। কত্তা বাবু ঘুমিয়ে কাদা।
গর্ত বিবর গুহা
নিজের সঙ্গে নিজের কথা
একটু আড়াল খানিকটা গোপন
আধখানা চাঁদ ও ছাতিম তলায়
রিম ঝিম ঝিম অন্ধকার।
শূন্য ধারণার বিরুদ্ধতায় সীমিত ধারণা
তবু গড়াপেটার কাজ চলছে।
কামারশালায় ব্যস্ত হাপর লোহাপোড়ানো
সামগ্রী জ্বলন্ত কয়লা অঙ্গার ছাইভস্ম
কালো কালো ধোঁয়ায়
নিজের সঙ্গে নিজের ভাষায় কথা।
রাত দুপুর অনেক ছিদ্র গর্ত ও আদিম এক
উলঙ্গ গুহা এবং সাগর পাহাড় মরু-বন
পেরিয়ে আসা চাকা----বুঝি বা না বুঝি
আগুনের পাশাপাশি থাকতেই হবে।
অন্ত্যোষ্টি
খুরের শব্দ অথচ আস্তাবল নেই।
আজ কবিতা এবং কবিতা
কোথাও ভুল ত্রুটি হচ্ছে না তো?
লাগামের ল-ও নেই, চাবুকের
হিস্ হিস্ শব্দ ঝড় তুলেছে
পিঠে সে-ই বাঘ-ডোরা দাগ কাটা!
বাঘ ভাবতেই সোঁদাবন উঠে এলো
বনবিবি দক্ষিণ রায় ইত্যাদি
ম্যানগ্রোভ অরণ্য, ওদের স্বাস্থ্য
আদৌ সুরক্ষিত নয়----।
আগুন----প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেয়
যেমন আমি আমার অন্ত্যোষ্টি বাতিল
করেছি। আগুনে শোব না কবরেও না,
দেহ রেখে যাব গবেষণার কাজে
এইসব ভেবে এখন খুব ভালো লাগছে।
কবিতার ঘরে সবাই একা
একা এবং কবিতা
একাকিত্ব ছন্দে ফেরে না। সুতরাং
বাউন্ডুলে স্বভাব দিব্যি টিকে আছে।
গাছপালা ইটপাথর প্রোমোটিং
শহিদমিনার উৎসব ও ক্যালেন্ডার
সবাই সশরীরে বহাল আছে।
জল গড়িয়ে যাচ্ছে। কাছাকাছি গর্ত
খানাখন্দ ; কাদামাটি মাখামাখি জল
জমা হচ্ছে সেখানেই।
খিদের জ্বালা বুঝিয়ে বলার নয়
ভুক্তভোগীরা গাঢ় কুয়াশারঙের প্রলেপে
ঢাকা পড়ে যায়। একাকিত্ব একার----
যুগলমিলন ছবি নেই।
নিয়মানুগত দুরন্ত গতিসম্পন্ন ট্রেন
নির্ধারিত দূরত্বের বাইরে যায় না। অথচ
কত না সহজে পাতা ঝরে পড়ে।
কবিতার ঘরে একা বাইরে ঝড় জল
ঋতু ও দিনরাত্রি। পাঠক থাকতেও পারে,
অথবা কেউই নেই। আর এই আবহে
মাঝ বরাবর একটা নীল পরদা ঝুলছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন