(অসমিয়া থেকে বাংলা: বাসুদেব দাস)
নিবেদন দাস পাটোয়ারী-র কবিতা
অস্তরাগ
গতরাতে
আমার হাতের আঙ্গুলগুলির
দৈর্ঘ্য সমান হল
কোনোটা যদি বাড়ল
কোনোটা আবার ছোটো হল
সত্যি মিথ্যা জানিনা
অনেক বছর আগেও
একবার নাকি এরকম হয়েছিল বলে
দাদা বলেছিল
হোমিওপ্যাথির ছোটো মিষ্টি বড়ি
খেয়ে নাকি
আমার আঙ্গুলগুলি সমান হয়েছিল
গত কয়েকদিন
আমি ডাক্তারখানায় যাইনি
কম্পাউন্ডার বাবুর সঙ্গেও দেখা করিনি
কিন্তু আঙ্গুল গুলির
দৈর্ঘ্য সমান হল
কিছু একটা জিজ্ঞেস করার জন্য
দাদাও নেই
আমার বয়স আশি
এখন সমস্ত রঙই
আমি সাদা দেখি
অন্তিম আবরণটির মতো
সব কথারই
সময় থাকে
বোধ হয়
এভাবে
আঙ্গুল সমান
হওয়ারও…
কালি
কালি নীল
এক সরল প্রশ্নের উত্তর
আকাঙ্ক্ষিত উত্তর
আমার মতে
কালির নির্দিষ্ট রং নেই
রামধেনুর প্রতিটি রঙের নাম
কালি
কালি অক্ষর চিনে কিনা
জানিনা
কিন্তু কালির অতি পরিচিত
মন মস্তিষ্কের নদী
হৃদয়ের দোয়াত খালি হলে
কেবল কলমের কালি দিয়ে
দেখা যায় না
কাব্য গল্প উপন্যাস
লেখকের দুঃখের পেয়ালায়
ঠোঁট গুঁজে গুঁজে
কালি নীলকন্ঠ
রক্ত আমার অন্য কালি
যেখানে ফোটে থাকে
নিঃশ্বাসের সাদা মল্লিকা
কালি না হলে বাগানে ফোটে না বকুল
লাটাইয়ে হারায় সুতোর উৎস
মেঘ ঘিরে রাখে
নিজের সূর্য
রঙের কথা নেই
কালি
আমার বিশ্বাসী সঙ্গী
জীবনের দৃঢ় মশাল
জীবন
রাস্তার পাশের
ঠেলা গাড়িটিতে
রুটি বিক্রি করে সে
বেলনায় তার
পৃথিবীটা ঘোরে
ফুলতোলা জামায়
তার কাছে ছোট্ট মেয়ে
মেয়ের কোলে
ঘুমিয়ে পড়া
একটি শিশু
স্টোভ না জ্বললে
তার সবকিছুতেই অভাব
অম্লজানেরও
তারও ইচ্ছা করে
একটিকে কোলে
অন্যটিকে হাতে ধরে
মেলায় নিয়ে যেতে
লজেন্স অথবা একটি পাপড়
কিনে দিতে
কিন্তু
ঠেলার সামনের মেলাটা
সময়ে শেষ করতে পারে না
সে
গ্রাহকের চোখের নীল
তার অসমতল দেহে
ঘুরে বেড়ায় যে কোনো দিকে
রুটিতে
তার স্বাদ খুঁজে বেড়ায়
ঠেলাটির চারটি চাকা
তারা হয়ে জ্বলে
তার আকাশে
প্রতি রাত
তাকে বাঁচিয়ে রাখে
সে বেঁচে থাকে
কারণ
মৃত্যু
তার একমাত্র অপছন্দ
দুটি স্তবক
(১)
হাতের মুঠোতে একটি জোনাকি
মদার লাল হয়েছে
আঙ্গুল গুলি
মেহেন্দি মাখা পায়ে
নেমে গেল সে
হাত থেকে
(২)
তার বাড়ির উদ্দেশ্যে
হেঁটে চলেছি
ছোটো পথটা দীর্ঘ বলে মনে হচ্ছে
আজ
এক ঝাঁক সবুজ বৃষ্টি বোধহয়
তাকে ভিজিয়ে রেখে গেছে
হৃদয় পর্যন্ত
অপ্রেম
নিজেকে ভালোবাসে
প্রত্যেকে
সবচেয়ে
নিজের চেয়েও কেউ
আপন হলে
পর হয়ে পড়ে
পেছনের উঠোনের পুদিনা
তখন
প্রত্যেকের বুকে
ধুতরা ফোটে
এমনকি চাঁদ তারার ও
নিজের জন্য কোনো
কথা না থাকলে
সযতন সঁফুরা ফুটে
সরসর শব্দে
খসে পড়ে
সঞ্চিত শিশির
ইচ্ছা হলেই
কেউ
সূর্যটা চুরি করে
এরাল দেয়
নিজের মসৃণ বাগিচায়
মধ্যরাতে
বৃষ্টি ইতস্তত করে
প্রবেশ করে ঘরে
আর এঁকে যায়
স্বপ্ন রঙের পাখি
দুচোখে
স্বপ্নেও স্বপ্ন হোক বা নিঃশ্বাস
ভাগ বাটোয়ারা
এক কঠিন পরিমিতি
যতই আপন হোক না কেন
কেউ কার ও পরিপূরক নয়
তাই
নিজেকে
অল্প হলেও বেশি ভালো
বাসে
প্রত্যেকেই
নিজের অজান্তে…
টীকাঃ
সঁফুরা– ঢাকনি থাকা ডিবে।
এরাল– জন্তুর গলায় বাঁধা দীর্ঘ রশি।
পরিচয়: ১৯৭০-এ অসমের কামরূপ জেলার হাজোর বাহানা গ্ৰামে জন্মগ্ৰহণ করেন। গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪-এ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। বর্তমানে অসম সিভিল সার্ভিসের পদস্থ কর্মকর্তা। ১৯৯৪-এ প্রথম কাব্যগ্ৰন্থ প্রকাশিত। আজ পর্যন্ত তাঁর নাম সংযোজিত হয়েছে চারটি কাব্যগ্ৰন্থে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন