বিচ্ছিন্ন মৌজা

ব্রান্ডের মাত্রায় ঢাকা পড়ে শরীর 
পথ ভেজে কোলাহলের তাপে  
মনটাই ঘ্রাণের অধীন নয়—
ফিকে হওয়া দুপুর কিংবা
মধ্যবিত্ত ফেনার বুদবুদ 
অপারগ তারে বলয়ে আনতে।

সাত শত ত্রিশ সিঁড়ি পেরিয়েও 
তাকে জাগিয়ে রাখে প্রথম শিহরণে
কী আশ্চর্য! সাদা অন্তর্বাসে সিঁদুরের স্রোত—
তার বুকের জামরুলের তৃষ্ণা 
দেখার করণকে করলো টগবগে কাল।

সব ভাষার গন্তব্য হলো স্বরবর্ণ
সম্মোহনীর এমন ব্যাকরণ 
সন্ধিবিচ্ছেদের আওতায় পড়লো না—
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুঝলোই না
সে কোন্ মৌজার অধীনে!







জলঋতু

তোমাদের মায়ায় চলে গেলে তোমরা
অছিয়তনামায় লিখে গিয়েছিলে একটা বর্ষা!

ত্রিভুজের মধ্যে বিন্দুর সত্যতা না-থাকলেও
'তিন হেফাজতে' আমায় বসিয়ে গিয়েছ আসনহীন কেন্দ্রে!

পৃথিবী মূলত ফুলের সুভাষ,
হিম আলিঙ্গন আর তৃষ্ণাঋতুতেই বিশ্বাসী। 
তাই মৌমাছিদের ব্যস্ততা বাড়লোই,
উষ্ণতার খোঁজে নিরুদ্দেশ হতেই হলো বৃষ্টিকে।

তোমরা চেয়েছিলে তিনটি সরলরেখায়
আবদ্ধ হোক এক ছাউনি 
রেখাগুলো সরলনীতিই অনুসরণ করেছে
তবে ভিন্ন-ভিন্ন বৃত্তে
তোমাদের বিশালতা ভুলেই গিয়েছিল বৃত্ত
খুব বেশি জরুরি ছিল একটা নির্দিষ্ট সূত্রের।

কালের সংজ্ঞায় ভুল করা অর্বাচীনের কাঁধে
চাপিয়ে দিয়ে গেলে তবু ত্রিকাল—
কতটা শক্তিশালী ছিল নিথর উপস্থিতি 
অভিমানের ঝিরঝির দেখেনি হয়তো।
তোমাদের দেয়ালের মূর্খ ঘড়ি
অ্যালার্ম বাজালো তাই ভুল সময়ে 
এতটাই কি শেওলা পড়েছিল (মায়ায়)
চলে গেলে! যেতেই হলো তোমাদের!







জৈব আশীর্বাদ

গমনের বৃত্তান্ত জানাই ছিল 
তবু ছিপছিপে জৈব আলোয়
কাঁঠালপাতা একমাত্র সত্য, পাগলা ঠোঁটে!

কী অদ্ভুত! কোনোকিছুই এড়ায়নি সে দাঁত
পৃথিবীর সব ভোগ চুষে নিয়ে নির্যাস করেছে মধু
জোড়ায় জোড়ায় বসন্ত জন্ম দিয়েও হয়নি পিতা
ডাকনামেও শীৎকারের গন্ধ
অথচ মিষ্টির কারিগরের মৃত্যুদণ্ড হলো
ধর্ষণের অভিযোগে
প্রেমকে ক্রিয়ায় বেঁধে বহুগামী হলো মায়া।

নির্বোধ হাওয়ায় চরিত্র হারালো বটগাছ
আলোর চশমা জানলোই না,
মধু থেকে শরীর খুলে গেলেই শুধু রংধনু হয়
আর একমাত্র আকাশই বহুগামী!

যদিও পাগল আকাশি ভাইরাসে আক্রান্ত 
তবুও গমনে ডুব দিলে সে-ও সর্বগামী 
প্রতিটি উড়াল শেষে পড়ে থাকে আশীর্বাদ!







উপসংহারের সংহার

স্বীকৃতিহীন কত দৃশ্য আঁকা হলো উড়ন্ত পিলারে 
উপসংহারে থেকেও শেষ হলো না ভূমিকা 
বাসাবাসির জমিনকে তুমি ভেজা পথই ভাবলে
ছিদ্র হাঁড়িতে রান্না করে গেলে নবান্ন!

পরিবর্তিত ঝলকে অগভীর দখলি দ্বীপ
সহীহ্ হয় না জোড়া সাক্ষ্য ছাড়া সাক্ষর
আমরা দূষিত রয়ে যাই হুজুরি দাওয়ায়—
আগভোর পিঠে হাত বোলায়,
রেকর্ড বাজতে থাকে
বিকর্ষণের কারিশমায় মিলি
অধিক থেকে অধিক সংহারে…







আলিঙ্গনে শূন্য

মেঘে মেঘে সেদিন আলিঙ্গন হয়েছিল কি না চোখে পড়েনি
যেদিন বলার প্রয়োজন মনে না-করে একটা শূন্য এঁকেছিলে।

চশমা পরে ঘুমাতে বলে
তোমার স্বপ্নের রঙে বা ফরিয়াদে
লিখতে পারিনি ঘুম—
তাই বলে কি পথ ভেঙে রেখে এগোতে হবে পথ!
স্পর্শ বেঁধে রেখে হাওয়ার সীমায়
ঢেকে রেখেছিলে সকল তোলপাড়।
মিউট রেখে উচ্চাঙ্গ আলো 
বুঝে নেওয়ারাও ছিল নাবালক

উন্মুক্ত করে উনবর্ণ ঘুমিয়ে পড়লে
শেষ দেখার আগের দেখায় বন্ধ করলে লিফট
কাজলে বাড়াতে মায়া 
ভেতরে থেকেও খুঁজছিলে গভীর
তখন বিন্দুমান অতিক্রম করেছিল পৃথিবী! 

তোমার তো কোনো হুল্লোড় ছিল না
কী স্বার্থপর তুমি! বৈশাখটুকুও কেড়ে নিলে
শূন্যের ওজন বাড়িয়ে ফের বাঁধলে জোড়া
নিছক হেলায় ফেলে গেলে বৃষ্টির যোজন
এতিম এতিম খুশবু ছড়িয়ে
নিজেকে করলে আলিঙ্গন!







খয়েরি সাইরেন

তুমি সুন্দরকে ছাড়িয়ে যাও বিশ্রীরকম ঘোরে!

আমার চোখের খাঁজে অবুঝের মতো
লাল চিমটি কাটে ডিংডং বেল।

সোডিয়াম বাতি খয়েরি হলেও পারতো
মিথরাজ্যে মনসার বিরহচাপ
তোমারে দুভাগ হতে দিত না!
মিলে গিয়েও ভিন্ন দুপুরে 
দোল খেত না রংসাইরেন
ভেঙে যেত না ঘোরবিন্দু।

ঝকঝকে বারান্দার আর্শিতে
তালপাখার অপেক্ষা খুব বেমানান।
আমি আশ্চর্য রকম শীতল কাঁথায়
তবু এঁকে যাই হেলানো সম্পর্ক!







ভুল বানান

ঘুমিয়ে থাকা একটা তুমিকে দেখে
অস্বীকার করা যায়
পৃথিবীর মধ্যভূমির উত্তরাধিকার!
বোবা রেডিও উন্মুক্ত করে সতেরো জনমের বায়না
আরও একবার কেঁপে ওঠে সৃষ্টির আরশ।

তোমার প্রশস্ত পিঠ, ঘাড়ের ভাঁজ,
তুলি দিয়ে বাঁধা ছোট্ট ঝুঁটি
ফের আমায় ফেরার গল্প শোনায়।
নীল রঙের বেডকভার, স্নানঘরের দরজা
কখনো সাক্ষ্য দেবে না 
অপরিণত নোনা স্রোতে একদিন
তৃপ্ত হয়েছিল লাল পিঁপড়ে আর চীনা আরশোলা!

আফসোস! সাদা-সবুজ ফোয়ারায় লাল ব্যানার থাকলেও উড়বে না ওড়ার প্রতীক
একটা দীর্ঘশ্বাসের বিনিময়ে কিনেছি যে মুশলধার,
অশিক্ষিত সময় তার কুশিলব রাখবে না
তোমার শার্টের বোতাম, নেইলকাটার, টুথপিকের কেয়ার
আগলে রাখতে পারবে না আলসারের ধোঁয়া।

ছিঁড়ে ফেলতে চাইলে গতপৃষ্ঠা 
আমার খুব চিৎকার পায়!
নাবালক বালিশে ফিরে যাওয়ার অভিনয়ে
টগবগে রাতের এমন লুকোচুরি 
স্মৃতিব্যাংকে জমা করে আরও একটা বরষা—

আমাদের বলা ফুরাবে কোনো এক ভুল বানানে!









নিষিদ্ধ ফ্লেভার

শরীরী ভোল্টেজ যদি নিয়ন্ত্রণ করে ভাটিয়ালি ছন্দ 
ডেথ রিভিউতে পড়া যেতে পারে চোখ
মনক্যালেন্ডারে নেই ফাগুনের আগমনী

সময় রিচার্জ করে দেউলিয়া রাত 
হাত বুলায় বিধবা বাতাসে।
বাসি-ঠোঁটের ক্ষুধা মিটাতেই 
শরীর আগলে রাখে রক্ষিতা 
মন প্রেম প্রেম বাজনায়…

শরীর থেকে আকাশ খুলে পড়ার গন্ধে
মূর্ছা যায় বিস্ময়—
এমন দৃশ্যে বৃষ্টি ঝরে না;
কিছু অগ্নিগিরির মুখ উন্মুক্ত হয়
স্ট্যাচু হয় কফির ধোঁয়া!

যেকোনো ছাড়পত্রই আপেক্ষিক
যদি না মিলিয়ে যায় আগামী আভা!
ফিরে ফিরে আসে নস্টালজি ছায়াপথ 
মুছে দেয় বৃষ্টি ও ধোঁয়া।

ভেঙে যাওয়া আয়নায় চোখ দেখতে নেই
সাক্ষ্যহীন হাওয়া তবে উড়ে উড়েই যাক…






ঝলমলে বদনাম

ব্যথার স্পর্শে বাঁধা শ্বাস, ওমকম্বল
পরাণ উতরে বয় শীতল পুকুর…

আগামীকালকে করে বর্তমান,
মিলে যাওয়ার এমন মেলায় ঝলমলে বদনাম।

ওমটাকে আর লুকিয়ে রাখা গেল না 
সমাপ্তি সিলেবাসও মুছে ফেলে পোড়া ঋতু।

পরোপকারী মেঘ উলঙ্গ করেছিল যে বেপরোয়া পৌষ,
তার ষড়যন্ত্রে গাছের পাতায় পাতায় ঘোমটা—

এমন দৃশ্যপটে, তিনি কি নিজেই লোডশেডিং!







কাঁচামাটির আকর্ষণ

আমি মূলত আমার সমগ্রের সাথে
ঝুলে আছি—মৃত্যুর মতো কারো ঈর্ষায়!

লোকাল এক্সপ্রেসের পেরোনো ঝনঝনে
রিক্তবমির কথা জানেন না চেকিং মাস্টার—
যদিও বক্ষব্যাধি সদন উন্মুক্ত উদাম পকেটের জন্য
তবু নিষিদ্ধ ঐতিহ্যের চশমা বাজারজাত।

এ হাটেও ঋষির টালিখাতায় কোনো বায়না হলো না
কাঁচামাটির অকারণ আকর্ষণে
মাটির মতো কেউ মাটি হলো বেগুনি রাতে।








তানিয়া হাসান 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন