পাতার আত্মকথা
['এক তাজমহল গড়ো
হৃদয়ে তোমার আমি হারিয়ে গেলে।... ' ] *
আমিই তো পুরো গাছটা।
বসন্ত, গ্ৰীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ,--
এই সব ঋতুতে আমিই তো জীবন্ত থেকে
তা-কে রান্না-করা খাবার দেই!
হাওয়ার দমকে
হেমন্তে ঝরি, কিন্তু না-মরি
মাটিতে লুটিয়ে পড়েও হাসি।
শীতে সব পাতা হারিয়ে সে কাঁপতে থাকলে,
মাটিতে মিশে গিয়ে--
মাটি-হয়ে আমিই তো তা-কে খাবারের উত্তাপ দেই--
বাঁচিয়ে রাখি।
তারপর তা-কে--
ফলের সম্পদ আর ফুলের সৌরভ দেই।
গাছের রান্নঘরে এসব
আমার সারাক্ষণের শ্রম।
শাহজাহান মালিকের নয়,
গাছ আমারই শ্রমের এক তাজমহল।
* [শিল্পী:পিন্টু ভট্টাচার্য, গীতিকার:মিল্টু ঘোষ, সুরকার:নচিকেতা ঘোষ]
পর্যটন
["এসেছে আদেশ--
বন্দরের কাল হল শেষ।"
--রবীন্দ্রনাথ, 'বলাকা']
যৌবন অতিক্রমে দু'দন্ড তো থিতু হয়ে
বসতি পাতিয়েছিলে মন--
ছায়াবিথী ছেড়ে,
এবার আবার বানপ্রস্থে পথচলে,
সাহসী পর্যটনে এসো ।
শুধু অলৌকিক এক টর্চের আলোয়
শ্বাপদ-সরীসৃপদের গর্ত চিনে চিনে,
পথের দুধারের
নানা স্মৃতি নিয়ে টানটান হেঁটে --
দার্জিলিং-দীঘা-ব্যাঙ্কক বা পুরীতে নয়,
এবার পথের প্রান্ত-তীর্থে চলো।
হোক না তা মানেহীন কোনো মরুতীর্থ হিংলাজ!
এলেম থাকলে জানাও--
তুমি কোনো স্বল্পপূঁজি নিয়ে
জীবনের পথে বেরিয়ে পড় নি!
ইতিহাসের থোবড়া বদল
ক্রুপসকায়া চুপিচুপি বললেন,
“ইস্, লেনিন যদি
ওই টাকে চুল গজানোর তেলটা পেতেন!”
জেনিও চুপিচুপি চোখে জল এনে বললেন--
“মার্কস খুব গরীব ছিলেন তো
তাই নাপিতের কাছে যেতে পারেননি,
বড়ো বড়ো চুল আর দাড়ি গজিয়ে ছিলেন!”
রুমালে নাক-মুখ মুছে তিনি আরও বললেন,
“একবার অবশ্য কাঁচি নিয়ে
এঙ্গেলস এগিয়ে এসেছিলেন,
কিন্তু পাশের বাড়ির জানালা খোলা ছিল!
উনি সেদিকে ইশারা করে মুখ সরিয়ে নিয়েছিলেন!”
নতুন প্রজন্মের একজন আলোচনায় যোগ দিয়ে
বললেন-
“হ্যাঁ,নেলসন ম্যান্ডেলাও প্রায়ই খুব আফসোস করে
ঘনিষ্ঠ মহলে বলতেন, 'আমার যুবক বয়সে
এই ফর্সা হবার ক্রিমটা যদি আবিষ্কার হত!’
গুগল-প্রকাশক প্রকাশিত ফিজিক্স বইতে
আমি এই ইতিহাসটা পড়েছি।”
আমি আর কী করবো?
বাজারে যাওয়ার পথে
সাইনবোর্ড দেখতে দেখতে হাঁটি,
বাজারে অ-পরিপাটি।
যেমন, সেদিন দেখলাম লেখাখানা--
“এখানে প্রসিদ্ধ ব্যালাস্টিক সার্জন দ্বারা
ইতিহাসের চেঞ্জ করা হয় থোবড়াখানা।”
পাশে দেখলাম এক পোস্টার দারুণ--
“প্লাস্টিক বর্জন করুন”...
'মূল্য ধরে দেওয়া'
না, অমূল্য অনেক কিছুরই
'মূল্য ধরে দেওয়া'—যায় না--
যতই শাস্ত্রজ্ঞ গুরুমশাইরা
পূজো অথবা শ্রাদ্ধে বসে
গরীব যজমানদের,
বা মান্যরা গদিতে বসে জনগনকে,
মিথ্যা প্রবোধ দিক না কেন!
একবার বায়ুভূত নিরালম্ব হলে--
সেসব কোনো কিছুরই আর
মূল্য ধরে দেওয়া যায় না!
যেমন জীবনের,
যেমন অরণ্যের, নদীর,
আগুন-পথে হাঁটা যৌবনের...
এসবের ভূতেরা এসে ঘাড় মটকাবেই বার বার।
ক্ষত জানে --
তা পুরানো হলেও,
লেখা হয় না, ক্ষতি পুরান!
রোদে এসো না
[গুগল বলে--
সাড়ে-চারশো কোটিরও বেশি পৃথিবীর বয়স ! ]
তাহলে ভাব একবার --
কত বছর ধরে ও ঘুরে-ঘুরে রোদে পুড়েছে ...
কিন্তু কখোনো কালো হয়নি!
তাই বলে--
বার্বি ডল আমার,
কাঁচ সড়িয়ে রোদে এসো না,
জ্যোৎস্নায় ভেজো--
ফর্সা হবে।
(যদিও পৃথিবীর কোনো ক্রিম তা পারেনি--
ক...ক্ষ...নো পারেনি!
কিন্তু তা-তে কী?)
মানব-ছা আমরা--
প্রকাশ্যে সভ্য!
পৃথিবী বেগুনি-দূষণ পেলেও,
আমাদের কাব্যে, পাঠ্যবইয়ে, দেওয়ালে ও
ক্যালেন্ডারের ছবিতে--
সর্বদা সে অনন্য!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন