দেবব্রত রায়ের কবিতা - কেন্দ্রীয়-আধিপত্যবাদকে অস্বীকার করার দুঃসাহস

নিন্দুক ও সমালোচকদের মুখে ছাই দিয়ে বাংলা-কবিতার পরিসর দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে আশার কথা নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের একটা অংশ আজও, এই সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানা ডামাডোল ও ভ্রষ্টাচারের মধ্যেও কবিতামুখী। তারা কাটমানি-তোলাবাজি-দুর্নীতি ও দাদাগিরি বা চামচাবাজির গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসাতে চাইছে না। এসবের বিপরীতে দাঁড়িয়ে তারা কবিতাকে পছন্দ করছে এবং কবিতা লিখতে উৎসাহী হচ্ছে। অর্থাৎ তারা প্রতিবাদী। যদিও এই প্রতিবাদ ‘ভেঙে দাও-গুড়িয়ে দাও’ বা ‘জ্বালিয়ে দাও-পুড়িয়ে দাও’ মার্কা প্রতিবাদ নয়, এই প্রতিবাদ খুবই নীরব ও নিঃশব্দ, যার মধ্যে সুপ্ত আছে কেন্দ্রীয়-আধিপত্যবাদকে অস্বীকার করার দুঃসাহস।  
এখন যারা কবিতা লিখতে আসছে, তাদের মধ্যে অনেকেই কবিতাকে আপডেট করতে চাইছে। সেটাই তাদের  প্রতিবাদ। অর্থাৎ কবিতার চিরাচরিত প্রাতিষ্ঠানিক গৎ ও গতানুগতিকতাকে ভেঙে চুরমার করে কবিতার নতুন ভাব ও ভাষা নির্মাণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠান ও তথাকথিত মূলস্রোতের বিরোধী হবার কারণে স্বাভাবিকভাবেই তারা থেকে যাচ্ছে প্রচারের আলো থেকে বহু দূরে। মিডিয়াকে তারা পরোয়া করছে না, কারণ তাদের বুকের পাটা আছে এবং নিজের কথা নিজের মতো করে বলার স্পর্দ্ধা আছে। সুতরাং প্রতিষ্ঠান ও সিলেবাস থেকে ধার করা জ্ঞানগর্ভ বাঁধাবুলিকে তারা অবলীলায় বর্জন করতে পারছে। 
এই সময়ের এই ব্যতিক্রমী কবিদের মধ্যে একজন দেবব্রত রায়। বাঁকুড়া জেলার ঐতিহ্যবাহী শহর বিষ্ণুপুরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। রাঢ়-বঙ্গের বিষ্ণুপুর মানে কৃষ্ণনগর-নবদ্বীপ-কেন্দ্রিক ব্রাহ্মণ্যবাদ বা মুর্শিদাবাদ-কেন্দ্রিক নবাবি-সংস্কৃতির বিপরীতে মাটি-সংলগ্ন মানুষের গন্ধমাখা প্রাকৃতজনের টেরাকোটা। সেই সূত্রে রীতি-নীতি ভাঙার একটা পরম্পরা দেবব্রতের রক্তে রয়ে গেছে। উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া শুদ্ধতা ও পবিত্রতার তত্ত্বে দেবব্রতের বিশ্বাস নেই, মহাজ্ঞানী-মহাজনেদের অনুসরণ বা অনুকরণ না করে দেবব্রত চলতে চায় নিজের পথে, নিজের ছন্দে। সে-কথাই ধরা পড়ল ২০২২-এর কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রকাশিত দেবব্রতর একটা কবিতা-সংকলনে। ২৪ পাতা অর্থাৎ দেড়-ফর্মার সে বই। কলেবরে খাটো কিন্তু তার মধ্যেই কবিতার ভাব ও ভাষার ক্ষেত্রে দেবব্রতর চ্যালেঞ্জিং মেজাজটা চেনা যায়। বইয়ের নাম ‘মাধ্যাকর্ষণ একটি মিথ্যার আস্তাকুঁড়’। নামকরণেই বোঝা যাচ্ছে দেবব্রত প্রতিষ্ঠান-পোষিত গদগদ ছলছল নেকুপুষু কবিত্বের পক্ষে নয়। সে অন্য কিছু বলতে চায়। অন্যভাবে। 



এই সময়ে এসেও যারা কবিতার জন্যে অনেকটা সময় দেয়। কবিতা নিয়ে বাঁচতে চায়, দেবব্রত তাদেরই একজন। আবার দেবব্রত সেই কবিদের একজন যার কবিতা নিয়ে গভীর ও গম্ভীরভাবে ভাবতে হয় না, তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ বা ব্যাখ্যার দরকার হয় না এবং যার কবিতা পাঠককে মুগ্ধ করে না। ‘ইউয়োরস ওবিডিয়েন্টলি’-মার্কা কবি দেবব্রত নয়। কাব্যগ্রন্থের শিরোনামটা দেখুন, ‘মাধ্যাকর্ষণ একটি মিথ্যার আস্তাকুঁড়’। কোথায় মাধ্যাকর্ষণ আর কোথায়ই বা মিথ্যার আস্তাকুড়। আপাত-সম্পর্কহীন দুটো ঘটনা, সেখানে মাধ্যাকর্ষণকে কেন মিথ্যার আস্তাকুঁড় বলা হল, তার ব্যাখ্যা দেবার দায় কবির নেই, কবির মনে হয়েছে তাই সে এমনটা বলতে পারল। এটা তার কলমের স্বাধীনতা, তার কবিতার সত্য।  
সংকলনের প্রথম কবিতা ‘টিউটোরিয়াল হোমের বাইরে দাঁড়ানো সাইকেলগুলো’, তার প্রথম স্তবক- “ঠিক কত আউন্স খিলখিলিয়ে হাসলে একটা মনখারাপের / পিঠে ডানা গজায়, কিংবা কোন রংযের জলপট্টি / দিলে অসহ্য জ্বর-তাপও সেকেন্ডে হাওয়ায় মিশে যায়,/ এ-সব একমাত্র, টিউটোরিয়াল হোমের বাইরে দাঁড়ানো সাইকেলগুলোই বোঝে”, এই উচ্চারণ দেবব্রতর একেবারে নিজস্ব এবং বাংলা-কবিতাকে এক নতুন দিশার দিকে নিয়ে যায়। 
দেবব্রত কখনো অত্যন্ত সহজ-সরল ভাবে ও ভাষায় নিজের উপলব্ধিকে প্রকাশ করে- যেমন ‘অলটাইম ইজ কবিতাটাইম’ কবিতায়- … কবিতার খাতায় অ্যাটেনডেন্স / দেওয়ার জন্য আমার কোনো/ সময়গময় নেই/ কারণ, অলটাইম ইজ কবিতাটাইম/ অর্থাৎ স্বপ্ন দেখার কোনো নির্দিষ্ট সময় হয় না ; অথবা ‘কুমির চৌকাঠে টোকা দিচ্ছে’ কবিতায়- ফসলের মাঠ থেকে / ভেসে আসছে মাটিমাখা বৃষ্টি-গন্ধ/ কুরচি, শেয়ালমুখীর পাপড়িতে/ টেরাকোটা-ছবি আঁকে শিশিরকণা; আবার কখনো বা দেবব্রতর কবিতায় এক অদ্ভূত জটিলতা এসে উপস্থিত হয়। -  … আজকাল বাতাসে বিসমিল্লাহ খান / সিরিজের স্বপ্নগুলো আর ওড়াউড়ি করে না, / একটা হাত-পা, মুখবাঁধা পরিস্থিতিতে জং-ধরা/ পেরেক-লোহালক্কড় স্বপ্নের করিডোরে/ কাকড়াবিছের মতোই ঘোরাঘুরি করে (অলটাইম ইজ কবিতাটাইম)। এই জটিলতার আবর্তেই দেবব্রত নিজের বিজ্ঞানমনস্কতার সঙ্গে অনায়াসে মিশিয়ে দিতে পারে ধর্ম ও আস্তাকুঁড়কে, E=mc2-এর সঙ্গে জগঝম্প ও হেঁড়া-পরব-কে, যেমন - জিরো মাধ্যাকর্ষণে পৌঁছলেই / এক-একটা আস্তাকুঁড় কীভাবে / অদৃশ্য হয়ে যায়/ একমাত্র, নীল আর্মস্ট্রংই জানেন / সমস্ত ভ্রান্তি/ এমনকী, ধর্মের গসিপগুলোর স্থায়িত্বও / একটা ভরমাত্রার উপরেই নির্ভরশীল (মাধ্যাকর্ষণ একটি মিথ্যার আস্তাকুঁড়)। E=mc2  দুনিয়ায় মাদুলি-তাবিজ-তুতো আত্মীয়-/ স্বজনদের গজকচ্ছপই একমাত্র পাটনি/এবং তাদের জগঝম্প মানেই হেঁড়া-পরব  (জগঝম্প মানেই হেঁড়া-পরব)। 
প্রায় প্রতিটা কবিতাতেই লোকজ চিহ্নের ব্যবহার দেবব্রতর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য, এইভাবে সে কবিতার প্রচলিত ন্যারেটিভের প্রতিস্পর্ধায় এক কাউন্টার ন্যারেটিভকে তুলে ধরে। যেমন ‘বাবুইয়ের বৃষ্টি-ভেজা’ নামের কবিতায় প্রথম অংশে - ও লো চন্দনবিলাশের মা/ (গোবরকুড়ানি) / এখন তোর কথা খুব মনে পড়ে/ খাগড়াই কাঁসা-পিতলের/ ঘটিবাটির মতোই; ওই কবিতারি শেষ অংশে- এক সিকি = দেড়গণ্ডা গুবরে হাসি/ মুদ্রাস্ফীতির ভ্যাকসিন আপাতত, / একটা কনস্টিপেশনগ্রস্ত সকাল; এই যে প্রথম অংশে মনে পড়ার অনুষঙ্গে দেবব্রতর কবিতায় খাগড়াই কাঁসা-পিতলের ঘটিবাটির কথা এসে গেল বা শেষ অংশে বলল- এক সিকি = দেড়গণ্ডা গুবরে হাসি—এর থেকেই একজন কবির কবিতার মনোভূমির হদিশ করে নেওয়া যায়; তার কবিতায় ইতিহাস বোধও ফুটে ওঠে যখন দেখি, ওই কবিতাতেই সে লিখছে - গাধাকে ঘোড়া বানানোর কারখানায় / যে-সমস্ত ঘোড়াগুলো তৈরি হয় / তাদের ঘাট অবধি নিয়ে যাওয়া যায় / কিন্তু, মহব্বত-দোস্তি করেও/ কাউকে মারিয়েনগো/ কিংবা, রাণা প্রতাপের চেতক বানানো যায় না", এখানে চেতক যে রাণা প্রতাপের ঘোড়ার নাম সেটা উল্লেখ করলেও মারিয়েনগো যে নেপোলিয়ানের ঘোড়া সেটা বোঝার দায়িত্ব পাঠকদের ঘাড়েই এসে যায়। দেবব্রতর অনেক কবিতার পঙ্‌ক্তিতেই বিঞ্জানমনস্কতা, ইতিহাসবোধ, ঐতিহ্য-চেতনা, নস্টায়লজিয়ার নানা রকম বার্তার সন্ধান পাওয়া যায়।  
ক) ‘চাঁছাছোলা শব্দটা পড়তে গিয়ে/ পড়লাম ছাঁদনাতলা /অনেক ভেবেচিন্তে বুঝলাম এটা আমার জিভের / দোষ নয় এমনকী,  গেল সপ্তাহেই  চোখ পরীক্ষা / করিয়েছি অতএব, আন্দাজ করছি ভুলটা মাস্টার/ কম্পিউটারেরই কারণ, তার উইন্ডোজে কোনও / জীবনের সিগনাল আসে না’,…
খ) পৃথিবীটা বায়োস্কোপের মতো ঘুরে চলেছে/ অথচ, ডুগডুগির সেই নাড়ির টানে আমাদের বুকের ভিতরে/ আর সেতার এসরাজ গিটার /কঙ্গোবঙ্গকাড়ানাকাড়া কিছুই বেজে ওঠে না/ ভেষজ সুষেণকে লেখা আবেদনপত্রটা/ বারবার বেয়ারিং হয়েই ফিরে আসে (টুথব্রাশের দুনিয়াদারি)
গ) ইদানীং, ডিহাইড্রেশনে ভোগা দক্ষিণ-পশ্চিম/ মৌসুমিবায়ু পাহাড় ঝরনা প্রজাপতি অনর্থক-/কাকতাড়ুয়া এমনকী, কুহুহীন বসন্তও ভেবেছিল/ ফুলেরা হেসে উঠলেই সবকিছু মুহূর্তে সুচিত্রা/ সেন হয়ে উঠবে/ কিন্তু সুচিত্রা সেন ইন্টারভ্যালসহ মাত্র দু-ঘন্টা/ তারপর, আবারও সেই ধাপা-জীবন   (কাক-গন্ধহীন বাতাস) 
ঘ) ভেরি গুডবয় রেজিস্টারে / যেমন অমর্ত্য সেন-রা থাকেন/ তেমনই, জগাইমাধাইদেরও/ পাশাপাশি থাকতে হয় না হলে, এত/ সহজেই নিমাইকে চেনা যেত কি… (অমর্ত্য সেন ও জগাইমাধাই) 
ঙ) তাছাড়া, বাঁকুড়ার গামছা দিয়ে / আমি রোজ পিঠে টেরাকোটা / আঁকি, জাস্ট মাখন-চুলকানিগুলোর/ বিরুদ্ধে যারা শরীরময় ছৌ (পিঠচুলকানি এবং বাঁকুড়ার গামছা) 
চ) বুকের খোয়াইয়ের অজন্তা-ইলোরায় কান/ পাতলেই, পালতোলা জাহাজের দাঁড়ের শব্দে/ ভাটিয়ালি ঝুমুর বাউল এমনকী রবীন্দ্রনাথ/ জীবনানন্দের সঙ্গে ফ্যান-ভাতের / গন্ধও খাঁ-খাঁ মরুভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে (পাখিদের গণসংগীত)  
এবার দেবব্রতের একটা কবিতার কথা বিশেষ করে বলতে হয়। কবিতার নাম ‘হাওয়ায় থাপড়াই’, তার প্রথম অংশে দেবব্রত লিখছে - চল চামেলি, বলে হেল্পারসাহেব / কোমরে একটা দামড়া-থাপ্পড় /  ঝাড়তেই বাসের ইঞ্জিনটা তেজি / ঘোড়া-র মতন গা-ঝাড়া দিয়ে লাফিয়ে উঠল… । আমাদের রোজকার মধ্যবিত্ত জীবনে খুবই চেনা একটা ছবি কিন্তু দেবব্রতর ভাষা প্রয়োগের কৌশলে সেই ছবিটাই তেজি ঘোড়া-র মতন গা-ঝাড়া দিয়ে লাফিয়ে উঠল। আবার দেখুন, কবিতার মধ্যে কীভবে একটা হালকা যৌনতাও এসে গেছে, চামেলি সাধারণত একটা মেয়ের নাম, তার কোমরে দামড়া থাপ্পড় ঝাড়তেই সে তেজি ঘোড়ার মতো গা-ঝাড়া দিয়ে লাফিয়ে উঠছে। মফস্‌সলের বাসের হেল্পার-কনডাকটররা এভাবেই নানা আওয়াজ দেয়, দিনের বেশিরভাগ সময় তারা বাসে কাটাই, বাসই তাদের ঘর-বাড়ি-সংসার, এভাবে আওয়াজ দিয়ে তারা নিজেদের জীবনকে তেজি রাখে। 
আবার বলছি বিকল্প-ধারার লেখালিখিতে দেবব্রত অল্প সময়ের মধ্যে একটা বিশেষত্ব অর্জন করে নিয়েছে, তা হচ্ছে তার শব্দ-চয়ন খুব চাঁছাছোলা- ঝাঁঝাঁলো, কবিতার লাইনে লাইনে বিস্তর লোকশব্দ ও চেনা এবং ঘরোয়া ছবির ব্যবহার। যেমন ঘুঁটে-গোবর, সাপ-নেউল সম্পর্ক, তোলা-উনোন, ভাঙা কুলো, ছাইপাঁশ, কাঁচা কয়লা, হাতির দঁকে পড়া, পাতের ধারে পড়ে থাকা দুরছাই-মাছি হুড়োচাপা, ভাতারখাকি, ভাঙা গতর মন এবং কাঠঠোকরাদের কথা। দেবব্রত প্রচলিত যুক্তি-তর্কের ধার ধারে না, তাই এই সব কথা দিয়ে এবং তাদের মধ্যে নিজের মতো নানা সম্পর্ক তৈরি করে দেবব্রত তার কাব্য-ভাবনাকে রূপ দিতে চেয়েছে। যা-ইচ্ছা-তাই ধরনের কথা। ইচ্ছে-মতো ভাব-প্রকাশের স্বাধীনতা। তবে, সংসারের নানা কথা থাকলেও দেবব্রতর কবিতার ভাব এবং ভাবনা কিন্তু মোটেও সংসারী নয়, বরং তারা বাউল এবং বাউণ্ডুলে। 
বাউল এবং বাউণ্ডুলে বলেই তার কবিতায় কোন স্থির-বিন্দু থাকে না, কোনো সরল-গতিও থাকে না, বার বার সে সর্পিল ও পিচ্ছিল হতে চায়, তার কবিতায় টকের জ্বালা-তে যেমন বসন্তবাহার আছে, দীপক আছে আবার স্বপ্নের করিডরে রিভলবার পোষার বিজ্ঞাপনও আছে, এভাবেই সে একটা ভানুমতী-মরীচিকা তৈরি করতে চাইছে হয় কিন্তু সবই উল্টা বুঝলি রাম, তাই তার ঘুমের পরিখায় আশপাশের পরিদের আনাগোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এমনকি, খরগোশের কাছে দরজার দুব্বোঘাসও হয়ে যাচ্ছে ল্যান্ড মাইন, সেই টকের জ্বালায় পালিয়ে এসে  তেঁতুলতলায় বাস করার মতো ইদানিং প্রতিরাতেই ছেনোমস্তান এসে হানা দিচ্ছে, নিয়ন্ত্রিত পরমাণুশক্তিও যে ন্যাংটাকালী হয়ে উঠছে, ইত্যাদি । 
দেবব্রতর কবিতা-ভাবনা নানা বিনির্মাণ দিয়ে সাজানো, তাই তার কবিতায় তথাকথিত কোনো মহৎ-উচ্চারণ বা মহাভাব নেই, কৌলিন্য বা আভিজাত্যের দেখনদারি নেই, মার্জিত ও পরিশীলিত হবার মুখোশ নেই; তবে বিনির্মাণের কারণে তার কবিতায় অনায়াস জটিলতা আসে, যুক্তি-ফাটল আসে, অনিশ্চয়তা বা অমীমাংসা আসে, একটা শব্দ থেকে আরেকটা শব্দে বা একটা লাইন থেকে আরেকটা লাইনে যেতে গিয়ে চিত্রকল্প বদলে যায়। ভাব ও ভাবনার এই পিচ্ছিলতা পাঠকদের কাছে নানা বার্তা পৌঁছে দেয়। 
সব মিলিয়ে এই এক-বিংশ শতকে দেবব্রতর কবিতা তার নিজস্ব সত্য নিয়ে পথ চলতে চায়। পাঠককেও জানিয়ে দিতে চায়, ক্ষমতা ও প্রতাপের কাছে নতি স্বীকার নয়, পুরোনো ছক ভেঙে বেরিয়ে এসো, চারপাশকে নতুন করে জানো, নিজের ভাবনায় নতুনত্ব আনো, নতুন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখো। জেনে রাখো, তোমার বেঁচে-থাকা অন্য কারো চেয়ে কিছু কম নয়।    







মুরারি সিংহ

1 মন্তব্যসমূহ

  1. দেবব্রত রায়ের কবিতা মানে আপডেটেড কবিতা। আমাদের কবিতা। অপেক্ষায় রইলাম কবিতাগুলির জন্য।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন