কবিতার মতো

খোলা জানলা। হৈ হৈ করে পাখিরা উড়ে
চলে গেল। কার্নিশে কাক  চড়ুই  পায়রা আর
বাগানে ফুটে আছে চন্দ্রমল্লিকা রঙ্গন ও
শ্বেত করবী!

রাস্তার দুপাশে গাড়ির লাইন। বিশ্রাম নিচ্ছে।
গোত্তা মেরে ঢুকছে বালিভর্তি লরি। রোদ্দুর
শুষে নিচ্ছে ছায়া ও ধুলোয় গন্ধ। বহুতল-
প্রাসাদের বারান্দায় রঙচঙে শীতের পোশাক।

নাগরিক সকাল। রবিবাসরীয় ভীড়। জানলার
দক্ষিণ কোণে মাধবীলতার উঁকিঝুঁকি---- মাত্র
তিনটি পাতা
দৃশ্যত কবিতার মতো।
                 





যে রাতে জলমগ্ন...জনপদ

জন্মান্তর নেই।   নেই।
তবু মাঝে মধ্যে কী সব হয়ে যায় যেন....

ঘরের চার চারটে দেয়াল, অন্য রকমের
                   সিন্ধুসভ্যতার সমসাময়িক।

সুস্থ নদনদী।পবিত্র দুষণমুক্ত ; জলীয় উচ্ছ্বাস

যে রাতে জলমগ্ন জনপদ
আমার চারচৌকো ঘরের দেয়াল  ভিজে ওঠে

এ যেন এক ভিন্ন গ্রহ এবং আমিও তো
হরপ্পার ভগ্নমূর্তি!

শেষ অব্দি যাদুঘরে....!






বিধি ও বিধানে অবাক না

দিশেহারা। জরুরি অথবা উপযুক্ত
সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। শিলাবতী 
ভাসিয়েছে গ্রাম জনপদ।

সেবারের মতো প্রায় একই ঘটনার
পুনঃপ্রচার :
বুকে ও পিঠে ভূমধ্যসাগরীয় ঢেউ
মহাসাগরের নামটি ঠিক ঠিক
মনে রেখে বলতে পারলাম-----
তাই যারপরনাই খুশি।

শিকড় বাকড় নেই। ভাসমান একটা
ছোট দ্বীপ। নোঙর ফেলার সুযোগ নেই।
পৃথিবীর বিশালায়তনে কোন এক ক্ষুদ্র
ভগ্নাংশকে দেশ বলে দাবি করা যাবে না!

ধর্মাবতার! আমার কোন দেশ নেই এবং
নীতিকথা  বিধি ও বিধানে
এখন আর তেমন অবাক হই না।
              ---------------------

প্রস্তাবিত বহুতলে
------------------------
রোমকূপে অদৃশ্য জীবাণু, ভেব না 
সুস্থ আছ। এই ভুলটাই শোধরাতে হবে।
কাতর বিছানা বালিশ ও চাদরে
দুরারোগ্য দাগ ছোপ।

ধুলোয় গড়িয়ে যায় রোজকার খবর
প্রতি পদে পদে লাঞ্ছিত হয় রোজনামচা
বুকে চেপে বসে শান্তিরক্ষকের
ভারী বুট। আর রাজপথে
লটকে আছে ধুলোমলিন সফল চল্লিশ।

সমতলের ধরাছোঁয়ার বাইরে অথবা
প্রস্তাবিত বহুতলে
কলকাঠি নড়ে চড়ে। কথাটা সবাই জানে :

শয়তানের ঘুমের বালাই নেই।

         





বাসর সজ্জা

নানা রঙের নকশা কাটা টেবিল ক্লথ
মদ্দিখানে দামী প্লেটে রাখা আছে মুখোমুখি
আপেল ও কমলালেবু। মাঝরাতে
বিবাহ বাসর।

আজ আমার বাড়ি ফিরতে দেরি হয়েছে
প্রেমিকযুগল সন্তুষ্ট ছিল না। খুবই স্বাভাবিক।

অন্ধকার গলি। শ্যামাচরণের এসরাজে
সুরধ্বনি। আহা----মধু বৃন্দাবন!

আপেল ও কমলালেবুর শুভদৃষ্টি-----

এই রাতে পরাজিত কেউ নয়। অপরাজিত
মোমবাতিও। যাবতীয় কদর্য লোমশ হাত  
জ্বলে যাক।পোড়া ছাই দেখে গান গাইব।

পানপাত্রে তৃতীয়ার চাঁদ নেমেছে।
আকাশ জলকালো মেঘে ঢাকা নেই।
             






পুরনো ছায়া

কবিতা মোটেই সহজ নয়। পাথরের মতো
অনড় ও কঠিন। পুরনো কবিতা পড়তে গিয়ে
ভাবি, লেখাগুলো অধিকাংশই ভুলে গেছি।

নতুন কোনটাই মৌলিক নয়। পুরনো ছায়া
কিছুতেই পিছু ছাড়ে না।
চলন্ত ট্রেনের জানালার বিশ্বদর্শনের সুযোগ
এবং চলমান পশ্চাৎপদ দৃশ্য। পরস্পর
বিপরীতগামী তবে সংঘাত চোখে পড়ে না।

তবে  স্টেশনের মন পড়াও প্রায় অসাধ্য।
                






দেবানন্দ ভট্টাচার্য

২২.১১.২২

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন