পর্ব-3

ভূত অদ্ভূত অৎভূত



উঁহুঁ ভূত তো হাগে না মোতে না ঘামে না দেখিনি শুনিনি পড়িওনি। দেখিনি মানে তাদের হাগা মোতা পদার্থটা কখনো দেখিনি। ও হ্যাঁ দেবতারাও কিন্তু ইত্যাদি ইত্যাদি পদার্থগুলো করেন বলে শোনা যায় না। স্বর্গে জান্নাতে হেভেনে অনেককিছু থাকার বর্ণনা পড়লেও টয়লেট বাথরুম শৌচাগারের বর্ণনা কোত্থাও পায়নি। নরকে দোজকে হেলে অনেক নিপীড়ন উৎপীড়নের বর্ণনা পেলেও কেউ কখনও নারকীয় অত্যাচারের চোটে হিসু হাগু করে ফেললো এরকম কথা পায়নি। আবার মহান ঋষি মুনি পীর এনারাও বছরের পর বছর যুগের পর যুগ যখন সমাধিস্থ অবস্থায় তখনও এই কর্ম করার জন্যে সমাধি ত্যাগ করে উঠে পড়েছেন এটাও হয়নি। এদিক দিয়ে যা দাড়াচ্ছে মানে ক্রিয়া কর্মের দিক দিয়ে ভূত দেবতা মুনি ঋষি পীর ইত্যাদির কোনো পার্থক্য নেই। না না লাঠি গুলি ক্ষেপণাস্ত্র এগুলো তুলে নেবেন না আমার মতো চুনোপুঁঠি যা ভাবছে তাই লিখছে আপনাদের অন্য রকম মনে হলে আপনারা লিখুন না। ওনাদের জন্য টয়লেট বানিয়ে দিন না। 

এঁই এঁই ভূঁত সঁম্পর্কে কিঁছু নাঁ জেঁনে কিঁ আঁবল তাঁবল লিঁখছিস। এঁই দ্যাঁখো আঁমার সঁব কঁথাই চঁন্দ্রবিন্দু লা্গাচ্ছিস কেঁন। কেন ভূতেরাতো সব খোনা গলায় কথা বলে।
--চোপ। এটা তোদের সংষ্কার। পারমুটেশন কম্বিনেশন ভূত সম্পর্কে কিছু হুজুগুজু তোদের জিনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।  
--এ্যাঁ।  এই দ্যাখ বিস্ময়ে নিজেই কীরকম খোনা হয়ে গেলি। আচ্ছা বল ভূতেদের কোনো জাতি ধর্ম বংশ এসবের ভেদ আছে?  
--মানে মানে? 
--মানে মানে নয় এটাই ভাস্তব, মানে হলো ভূতের জগতে বাস্তব।  তোদের জগতে মানে তোদের কাল্পনিক জগতে তোরা মেছো ভূত গেছো ভূত পেত্নী শাঁখচুন্নি কত-শত ভাগ করে দিয়েছিস। কারণ তোরা যে ভাগের জগতে বাস করছিস। একের পর এক ভাঙছিস আর ভাগ করছিস। 
--কেন? 
--এই জন্যেই তোকে এতো ভালো লাগে। মনে হয় তুইও একজন নির্ঘাত ভূতস্য ভূত। নইলে এতো অনুসন্ধিৎসা আসতেই পারে না। যাকগে যাক তাহলে বুঝলি তো ভূতের পৃথিবীতে কোনো বিভাজন নেই। সোজা কথায় আমার তোমার স্বার্থ নিয়ে হানাহানি নেই। -- তাহলে ভূত হওয়াটা কেন?  কেউ মারা গেলে আমরা তার খাবার জন্যে পিণ্ডি দিচ্ছি কেন? আমরা তো শুনি আত্মার উদ্দেশ্যে পিণ্ডি দেওয়া হয়। 
--ভূর্খ।  তোদের শাস্ত্রে কী বলে? আত্মা পোড়ে না জলে ভেজে না ডোবে না। আত্মার ক্ষিদে নেই তেষ্টা নেই যন্ত্রণা নেই মুখ হাত পা মানে কোনো আকার নেই। তাহলে তুই যে বলছিস আত্মা খায় এটা কি ঠিক? 
-- হ্যাঁ, মানে না। 
-- মন গড়ায় গড়াগড়ি খাস না। ওই দ্যাখ চিনতে পারছিস ছেলেটাকে? 
--মানে, কে?
--মনে পড়ছে বাচ্চাটা প্রচণ্ড জলের তেষ্টা সহ্য করতে না পেরে মাষ্টার মশাইয়ের জন্য রাকা উচ্চ বর্ণের কলসি থেকে জল নিয়ে খেয়েছিল আর তার বিনিময়ে ওই মাষ্টার মশাইয়ের থেকে দলানো মোচড়ানো আঘাতের পর আঘাতে একেবারে দলে মলে শেষ। দলিত দলিত-অ হয়ে গেল।  
-- কিন্তু  এখানে তো ওকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে এতো আঘাত কষ্ট... একন তো বেশ জলজল তলতল তুলতুল লাবণি ঝড়ে পড়ছে।  ওর সারাটা হোহোহিহিজুড়ে।  না না য়ে মোটেই ওই বাচ্চাটা না।  তুমি আমায় বোকা বানাচ্ছ। 
--তুইতো বোকচন্দরই রে নতুন করে আর বোকা বানাবার কী আছে?  ওরে এই ভূত মানুষের রাজ্যে সবাইতো সমান। 
--তার মানে ওকে যে গর্ভস্রাব পাষণ্ডটা পিটে পিটে শেষ করে দিল সেও মরে গিয়ে ভূত হবার পরে উচ্চ বর্ণের থাকবে না? 
--না। বারবার বলছি না একানে ওই উঁচু রং নীচু রং এসব কিচ্ছুটি নেই। 
--আচ্ছা একটা কথা আমি কি এখন ভূত হয়ে আছি নাকি স্বপ্ন দেখছি নাকি কল্পনায় ভাসছি? না হলে... 

এতক্ষণ কার সঙ্গে কথা বলছিলাম?  নিজের সঙ্গে কি? তাইবা কী করে হয়? কিন্তু যার সঙ্গে কথা বলছিলাম তাকে দেখতে...  হ্যাঁ হুবহু আমার মতো! তাহলে কি আমি আমার ভবিষ্যত ভূতের সাথে...  না না একদিকে বলছি ভবিষ্যৎ আবার ভূত? সব কিরকম যেন ঘুলিয়ে যাচ্ছে। এই অমিতা এতক্ষণ তুমিতো আমার পাশেই ছিলে। ব্যাপারটা তুমি কী বুঝলে বলো তো?
--কোনো উত্তর নেই।
--তাইতো উত্তর থাকবেটা কীকরে? আমি তো একলাই কথা বলছিলাম। 
--এই কী জিজ্ঞাসা করছিলে? চুপ করেন গেলে কেন? 
--চমকে উঠলাম। একটা শিরশির শিহরণ। আমিতো জানি সত্যি অমিতাতো এখানে ছিল না। তাহলে অমিতা এখানটায় এলো কীকরে? এই বিছানায় এই খাটে এই চারপাশের বইয়ের জঙ্গলে...  কেমন একটা ভয় ভয়...এটা কি অমিতার ভূত? কিন্তু ভূততো মরে গেলে হয়। তাহলে কি অমিতা মারা গেছে আর আমি জানি না। কিন্তু অমিতার ভূতে আমার ভয় লাগছেটা কেন? আমার অমিতা। কিন্তু ভূত হয়ে যাওয়ার পর কি আমার তোমার থাকে? ক্রমশঃই নিজের মধ্যে সেঁটে যাচ্ছিলাম।
--কীহলো তুমি অতো ভয় পাচ্ছ কেন? তোমার চোখ মুখ সব ভয়ে সিঁটিয়ে আছে।
--চারধারে এতো ঘন অন্ধকার ও আমায় দেখতে পাচ্ছে কীভাবে?  আমি কাউকে দেখছি কীভাবে?  দু-দুজনেইকি ভূত হয়ে গেছি? 
--হঠাৎই ওর গায়ে আমার হাতটা ঠেকে গেল। ওহ্ কী ঠান্ডা!  জমে যাচ্ছি। আঙুলগুলো কি আর আঙুল আছে?  একটা ফিসফিস__ এই, এ যে বরপের চেয়েও ঠান্ডা এটা কি তুমি? 
--আমি ওর গায়ের গন্ধটা নাক দিয়ে টানবার চেষ্টা করি। আর অমনি...

(একটা ভৌতিক জাম্পকাট)
একটা মিচকি হাসিতে আমার আগ্রহটা বুঝিয়ে দিই। অমনি তপাঞ্জনা হাসি ঝষ্কারঝক্কাস।
--আচ্ছা একটা কথা যদি জীজ্ঞেস করি যে তুমি আর ও একই রেললাইন ধরে হাটছো হাটছো হঠাত তুমি হোঁচট খেলে ও তুলে ধরছে, আর ও হোঁচট খাওয়ার আগেই সামনে পড়ে থাকা বড় পাথরটা তুমি ওকে দেখিয়ে দিচ্ছ। 
--এই পরস্পর পরস্পরের হয়ে থাকাটা কি তোমায় দুজন বুঝতে পারো?
--হ্যাঁ তো। ও তো কোলকাতায় আর্ট কলেজে পড়ে ও বরহমপুরে ওর বাড়িতে পা রাখলেই আমি ওর গায়ের গন্ধ পেয়ে যায়। তুমি বিশ্বাস করতে পারবে কিনা জানিনা। জানার দরকারটাও নেই, কিন্তু বাস্তব বলো ভৌতিক বলো আধিভৌতিক বলো ঘটনাটা হলো এই আমি কিন্তু বেশ বুঝলাম পারি ও বহরমপুরে পৌঁছে গেছে। এি তো গোমাকে বলছি কয়েকদিন আগেকার ঘটনা। পড়া করতে করতে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল ; পড়ার দেবিলে মাথা রেখেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টেরটাই পাইনি। হঠাৎই ধড়মড়িয়ে জেগে ওঠলাম। ফোনটা হাতে নিলাম শীর্ষকে ডাক দিলাম-- এই এই শীর্ষ ঘুমিয়ে পড়েছিস? 
--না না এই তো ঘরে ঢুকলাম, মাত্রতো রাত নটা বাজে। তুই কী করছিস? 
--ওসব কথা ছাড়।  তোর কি কিছু হয়েছে রাস্তায়? মানে আসার পথে? 
--নাঃ,  কী আবার হবে? 
--এই তুই লুকোচ্ছিস কেন? সত্যি করে বল কিন্তু রাস্তায় কী হয়েছিল? 
--ওদিক থেকে খানিকক্ষণ কোনো সাড়াশব্দ নেই। 
--আমি বুঝতে পারছি না তুই ঠিক কী জানতে চায়ছিস?
--ন্যাকামি করিস না তো। তুই খুব ভালো করে বুঝেছিস আমি কী জানতে চাইছি। ঠিকঠাক সত্যি উত্তর দে না হলে খুব খারাপ হবে কিন্তু।  
--আবার ফোনের ওপ্রান্তটা কিছুক্ষণ চুপচাপ। 
--না মানে রাস্তায় হঠাৎই একটা মোটর বাইক প্রায় ঘাড়ের ওপর এসে পড়ছিল আরকি, রাস্তার সক্কলে রে রে করে উঠেছিল। লাফ দিয়ে সড়ে কোনোরকমে বেঁচে যাই। কিন্তু তুই কি করে বুঝলি আমার কিছু ঘটেছে। 


(চলবে)






স্বপন দত্ত 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন