ফানুস 


যে ফানুসগুলো উড়ে গেছিল কাল আজ তারা কোথায় যেন ভিজছে দিনটা ডুবে ছিল জলে সন্ধ্যেও ভিজে গেল ঠাকুর দেখতে পেল না ওরা বাজি আলো শব্দ সমস্ত নিঝুম হয়ে পড়ে আছে এত বৃষ্টি এত জলজল জ্বলে ওঠার কথা ছিল যে নক্ষত্রপুঞ্জের মেঘের আড়ালে বৃষ্টিতে ভিজে গেছে সীমানা উপুড় হয়ে থাকা আকাশের কাছে আর একটিও জলবিন্দু থাকবে না কাল থেকে কাল থেকে বৃষ্টির কথা কেউ বলবে না আর কাল থেকে জমা জল ঠেলে উজিয়ে আসবে না কোন রিক্সা ভেঁপু বদলে গেছে অক্লান্ত বৃষ্টির হাতে নৌকোর বাড়াবাড়ি চোখে পড়ছে না যদিও এ বিষয়ে নিম্নচাপ ছাপ রেখেছে বিসর্জনের দিনে প্রতিমার গয়না খুলে নিয়ে বৃষ্টি চলে যাবে যেভাবে যতিচিহ্ন ধুয়ে গেল আজ 
আজ থেকে কাল কতদূরে আর সেই তো দূরের ভাবনা এল এসে দূরত্বের থেকে দূরে নিয়ে এল যেভাবে বৃষ্টি খুলে দিল বন্ধ মুখের ঢাকনা উথলে এল কি কিছু চালের গায়ে লেগে থাকা দুধের গন্ধ বৃষ্টির ধারায় ধুয়ে দিলেও থেকে যায় বৃষ্টির অপরিহার্যতা এখানেই সীমিত প্রকৃতির অংশ হয়ে থেকে যাওয়া শুধু যেমন ফানুস যেমন মানুষও একে অন্যকে পরিপূরক ভাবে একে অন্যের থেকে দূরে চলে যায় রাত কেটে গেলে ফানুসের বেওয়ারিস লাশ পড়ে থাকে অথচ কোন পচা গলা লাশের সম্মুখীন হই না আমরা আমাদের রোজকার দিন চলে চাকায় গড়িয়ে গড়িয়ে চাকা আবিষ্কারের সূত্র ধরে কেউ পৌঁছে যায় গুহায় কেউ ফিরে আসে বাড়িতে সবার আড়ালে থেকে পেছনের পর্দা দুলে ওঠে সজোরে নতুন ফানুসের প্যাকেট খুলে নেবার সময় এবার
আজ আকাশ মেঘযুক্ত বৃষ্টিহীন রাতে হাওয়াও তেমন এলোমেলো নয় ফলে ফানুসের আজ নিয়মিত ওড়ার কথা ভাইফোঁটা দিয়েছে যারা নিয়েছে যারা তারাও ওড়াবে আগে প্যান্ডেল ভ্রমণ হোক দিনের খাওয়াদাওয়ার রেশ রয়ে গেছে যেহেতু আজ রাতে হাল্কা খাবার কিছু তার আগে ফানুসের কথা আসে গন্ধকে তার জড়িয়ে নিলে কিছু গুঁড়ো অনুভূতি হাতে মেখে যায় একমাত্র প্রশস্থ এক লাইটার জ্বালিয়ে দিতে পারে দেশলাই এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় যেহেতু অনেকটা ভিজে ভাব কাঠির গায়ে জড়িয়ে রয়েছে বারুদের মুখে এক বিন্দু জলকণা অদৃশ্য হয়ে ঝুলে আছে চন্দনের টিপ শুকিয়ে ঝরে গেলে ভাইফোঁটা কি মুছে যাবে যতিচিহ্নের মতই নাকি অনন্ত এক স্নেহ নাগপাশ জড়িয়ে থাকবে কপালে গালে মুখে বুকে ঠিক কতদিন পরে আবার ফানুসের কথা এসে পড়বে এদের মাঝে ঠিক যতদিন যতিচিহ্ন বিরাম নিয়েছে  
রোববারের গায়ে ছুটি লেখা থাকে ফানুসেরও ছুটি আজ যেন বহুযুগ পরে কর্মক্লান্ত শরীর বিশ্রামে যাবে বুকের আগুনে পুড়ে গিয়েছে শরীরের রঙ হাড় মাংস সিদ্ধ হয়ে ন্যাতানো কাঠামো পড়ে আছে কেউ কি চেনে ওকে কেউ কি চিনেছিল কেউ কি জেনেছিল ওর পরিণতি ছুটির ক্লাসরুম বন্ধ আজ জ্বলজ্বলে রাতের গা থেকে একে একে পেরেক ছাড়িয়ে খুলে নেওয়া হবে এলইডির থ্রেড উৎসব শেষ হলেও আলো থাকে মনের ভেতরে জ্বেলে যায় কেউ হাজার ফানুস লক্ষ ফানুসের ছায়া আকাশ লক্ষ্য করে ওড়ে ক্রমাগত ওড়ে চোখের ভেতরে দেখা আর না দেখা পাশাপাশি থাকে নক্ষত্রের গায়ে ঘর গড়ে এতদিন যেমন থেকেছে ফানুসের বাড়ি অপেক্ষা এসে বসে হাই তোলে ঘুমোতে যায় আবার জেগে বসে থাকে গালে হাত দিয়ে ফানুস উড়ে গেছে জেনে ফুরিয়ে যায় নি রাত আলোর আভা নিয়ে ভোর আসে ঘুম থেকে ডাকে ওঠ ওঠ বেলা বয়ে গেছে ফানুস ঘুমোয় না অলিতে গলিতে ঘুম ফেলে রাখে মাঠে মাঠে কৃষকের হাত ভরে যায় গন্ধকের ফসলে সাদা শরীরের ভেতরে লুকনো থাকে আগুনের বীজ   
আকাশ ছেয়ে গেছে ফানুসের আগুনে দূর থেকে আসা বিমানচালকের হাত এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেছে আলোর ভুলভুলাইয়ায় চোখে ধাঁধাঁ লাগে ও কি ফানুস নাকি কোন আলেয়া নাকি রাতের উল্কাপাত বিমানের নামাওঠা দেখে ফানুসের নির্লিপ্ত এক চোখ রানওয়ে জুড়ে পড়ে থাকে কিছু ফানুসের পোড়া হাড় কোমরের ঘুনসিতে বাঁধা তামার পয়সা শুভকামনা নিয়ে জেগে থাকে আঁধারের বুকে দূর থেকে দূরে চলে যায় খুরের সংকেত যে পথে ফানুসের ছায়া পড়েছিল অশ্বগতির কাছে স্তব্ধ হয়েছিল পথের পরিক্রমা রোজ রোজ তারা খসে না জেনেও আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল ভূমি মধ্যমার কাছে দাগ রেখে নির্বাক পড়ে আছে ত্রিশঙ্কুর মত এই ধরাধাম তর্জনী তুলে কেউ কেউ এখনও আকাশের দিকে ফানুসের দিক নির্ণয় করে চলে 
দুদিন পরেই বিন্দু বিন্দু আলোর ছায়া মুছে যাবে ফানুসের কথা ভুলে যাবে যারা একদিন মানুষ ছিল মানুষের বেশে আগুন জ্বেলেছিল আঙুলের ফাঁকে অতর্কিত ফোস্কার অনুভব রয়েছে কিছু কিছু দাগ মুছে গেছে জল ভরা ফোস্কার টলটল অনড় অতীত রাতের হিম জানান দেয় এই সেই হেমন্ত গত বছরের মত এবারও এনেছে কুয়াশার ঘেরাটোপ রাতের কুহেলী শ্যামাপোকার দল মরে যাবে রোজ রোজ হেমন্তের সুর ঘুরপাক খাবে ফাঁকা আকাশে শূন্যতায় ভরে থাকা ফানুসের খোল এখনও জানে না পরিণতি বিষয়ক কোন গল্প বাজারে বিকোয় না মশলামুড়ির কদর বেড়েছে দ্রুত রেটে ফানুস এখনও জানে না চুরমার হয়ে যাওয়া ফুচকার খোলগুলো কীভাবে মুখরোচক হয়ে ওঠে উৎসবের দিনে ফানুস কোনদিন জেনে যেতে পারে নি তার নিজের পরিণতি যেভাবে মানুষের শ্মশান থাকে কবরের গর্ত অপেক্ষা করে ফানুসের নিয়তি বধ্য হয়েছে জ্বলার আগেই       




তুষ্টি ভট্টাচার্য
  


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন