রক্তিম 


ইদানীং লালরঙ দেখলেই শরীর কেমন যেন ঝিমঝিম করে ময়ূরিকার। শীত  শীতও লাগে। মনে হয়, তার প্রতিটি ধমনী শিরা উপশিরায় প্রবাহিত রক্তের উষ্ণস্রোত আস্তে আস্তে উষ্ণতা হারাতে হারাতে একেবারে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। একটা তীব্রশীতল তরলস্রোত পাক খেয়ে বেড়াচ্ছে তার শরীরে। তখন সে আর  সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। উর্দ্ধাঙ্গের ভার বইতে পারে না নিম্নাঙ্গের   দুটি পা। দেহের ভারসাম্য হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে ধরাতলে। পড়েই থাকে। উঠে  দাঁড়ানোর মতো সামান্য শক্তিও আর অবশিষ্ট নেই। অচেতনের মতো পড়ে থাকে  অথচ ঠিক চেতনা হারায় না। অর্ধসচেতন দেহ-মন অনুভব করে, কত কত যে পুরুষ একে একে এগিয়ে আসছে তার দেহের ভীষণ কাছাকাছি! ঘনিষ্ঠ হচ্ছে,  উপগত হচ্ছে! তাদের পুরুষাঙ্গের নির্মম সঞ্চালনে বিধ্বস্ত হচ্ছে তার যৌনাঙ্গ। আন্দোলিত হচ্ছে শারীরিক অবয়ব ও সত্ত্বা। তার দেহের প্রতিটি ধমনী শিরা উপশিরায় প্রবাহিত তীব্রশীতল তরলস্রোতে অনুপ্রবেশ করছে এক তীব্রউষ্ণ তরলস্রোত। অথচ সেই উষ্ণস্রোত কোনো উষ্ণতাই ছড়াতে পারছে না তার দেহমনে। বরং আরও আরও শীতলতায় নিমজ্জিত হচ্ছে তার সামগ্রীক অনুভূতি ও অস্তিত্ব।    
  
চিকিৎসাশয্যায় দীর্ঘদিন শায়িত থাকতে হয়েছিল ময়ূরিকাকে। তার যৌনাঙ্গ  ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। রক্তপাত হয়েছিল প্রচুর। ক্ষতবিক্ষত শরীর  মেরামত করে যেদিন ময়ূরিকা বাড়িতে ফিরে এসেছিল, মনে হয়েছিল, এই শরীরটা যেন তার নিজের শরীর নয়, বরং অন্য কারও। এই শরীরের  বোধ, অনুভূতি, উপলব্ধি সবকিছুই অন্যরকম। অথচ তাকেই বয়ে বেড়াতে হচ্ছে সেই অবাঞ্ছিত শরীর। এবং শুধু তার শরীরেই নয়, স্নায়ুতন্ত্রেও ঘটে গেছে এক অস্বাভাবিক অঘটন।  

ঘটনাটা অবশ্য জানাজানি হয়নি একেবারেই। পাড়া প্রতিবেশী বা আত্মীয়স্বজন কেউই জানতে পারেনি আসল ঘটনা। তাদের জানানো হয়েছিল, নিছকই পথ দুর্ঘটনা। মাত্র ঘন্টা চারেকের জন্য ময়ূরিকাকে তুলে নিয়ে গেছিল ফান্টুস ও তার চার শাকরেদ। ময়ূরিকা ফান্টুসকে চিনত। সন্ধ্যে নাগাদ সে তার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে কলেজের কাছাকাছি যে অধ্যাপকের কাছে প্রাইভেট টিউশন পড়তে যেত, সেই পাড়ারই একটা কালভার্টে বসে নরক গুলজার করত ফান্টুস তার শাকরেদেরা। ফান্টুস এই অঞ্চলের স্বনামধন্য সমাজবিরোধী। ময়ূরিকার শরীরের প্রতি তার লেলিহান লালসা। একদিন পড়তে আসার সময় ফান্টুস তার মুখোমুখি হয়ে সরাসরি প্রস্তাব দিয়েছিল, রাস্তার পাশের ঝোপের আড়ালে গিয়ে তার সঙ্গে শোবার জন্য। প্রস্তাবটা শুনে ময়ূরিকা এতটাই নার্ভাস হয়ে পড়েছিল যে, তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠেছিল। শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে সে পড়েই যাচ্ছিল, ফান্টুসই তাকে ধরে ফেলেছিল। না, ফান্টুস সেদিন আর কিছু করেনি, ছেড়ে দিয়েছিল। ময়ূরিকা ভয়ে আর পড়তেও যায়নি সেই পাড়ায়। কিন্তু দিন দশেক  পরে ফান্টুস তার চারজন শাকরেদের সহযোগিতায় ময়ূরিকাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছিল তার ঠেকে। গ্রীষ্মের মধ্যাহ্ন। শুনশান পাড়া। সন্ধ্যের আগে ময়ূরিকার অর্ধচেতন শরীরটা সযত্নে পৌঁছেও দিয়েছিল বাড়িতে।

সেদিন সেই চরম দুর্যোগের মধ্যেও ময়ূরিকা দেখেছিল, এক একটা উত্থিত পুরুষাঙ্গ তার যৌনাঙ্গে প্রবেশের আগে নিতান্তই কৃষ্ণর্ণের, কিন্তু যখন তা শিথিল হয়ে বেরিয়ে আসছিল, তখন টকটকে রক্তবর্ণের।  








কাজল সেন 

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন