গুচ্ছ কবিতা

     



অকিঞ্চন                        

বলয়টাকে প্রতিবার ভুলে ফেলে আসি। ভাবখানা এই
ও ছাড়া যেন আমার বড়ো শূন্য আর নেই!
প্রতিবার কবিতা পড়তে বসে ফাঁকা হয়ে যায় বুক
তোমরা বোঝ না, বুঝতে পারো না
কী ভীষণ শূন্য থেকে উঠে আসে বাচক
বুকভরা শূন্য গর্ভ নিয়ে।
দাম মেটাও কেবল- করতালি দিয়ে।

শব্দের হাহাকার শুধু কানে বেহাগ তোলে।
এমন কতো হয়- হঠাৎ সব যাই ভুলে
ভুলে যাই- কেন দাঁড়ানো এখানে আপাদবুদ্ধু সেজে
কেন ঠকে যাওয়া বারবার নিজে নিজে।
স্রোত তো আপন খেয়ালে চলে
শূন্য বেশী খায় আলো নীলাভ বলে,
আরো অনেক আলোকবর্ষের পেছুটান কাটিয়ে ভাঙে ঘুম, নজর হোক না প্রশংসিত_

আমি জানি গভীরতা কী ভয়ানক নিঃঝুম।

মায়াময় চাঁদ নামে প্রতি রাতের জীবনে
মায়া অমানিশা, দিতে চেয়ে ভরাট কামনা নির্জীব দেহ গোনে।
জীবন এমন কিছুই দেয় প্রতি মুহূর্তে আক্ষরিক রাতের ছন্দে
আমি সতৃষ্ণ দেখি বলয়ের শূন্যতা, তারপর? বিহ্বল আনন্দে।

এখনও মায়া কেড়ে নিতে পারেনি ফেলে আসা বলয়
অবাধ্যতায় ভরেনি আমার ফাঁকা
শূন্যস্থান পূরণেই তো যত ভয়!
                        





আছে যে নেই

এই কাছে সরে আসা নামান্তর বিলয়
বেদান্ত ব্যঙ্গ কি করেনি বলে অপচয়

দৃষ্টির বুক জুড়ে ভেসে হেসে জেগে দৃশ্য
দৃশ্যতঃ জাগা নয়, ঘুমে জেগে অবিমৃষ্য

স্পর্শ যে দংশনে দংশায় মোহের দেয়াল
উচাটন হয় মন, সাজে খেয়াল-বেখেয়াল

তবুও তো তুমি আছ যদিও বিরুদ্ধ গতি
ত্বমেব সমর্পয়ামি,লাভ,মান,যশ,যত খ্যাতি

করুণা চাই না চাই ছুঁয়ে দেখা,কখন বিলয়
কখন সমাধি নাম জাগরণে পায় পরিচয়।






আপন যে জন

সমুদ্রতটে যেখানে থেকে যায় পা
সে বালুকণা ছাড়া যদি আপনত্ব অধিক
দাবী করে কেউ
তবে তুমি তাকে ডেকো বনলতা অথবা নীরা |

এছাড়া যদি-
অভিধানে তোমার উঠে আসে সেই কিশোরী, যাকে
হজাগিরি নাচতে দেখে ভেবেছিলে এই হর্মস্থল
অপ্সরা-কিন্নর বেষ্ঠনের বাইরে অপেক্ষারত রয়ে গেছে
মানবীর ইচ্ছের দাসে, সেখানে হয়তো বা তটে এসে মিশে যাওয়া
তরঙ্গের আয়ু
চুম্বনে রেখে যাবে অতিরিক্ত শ্বাস আপনত্বের দাবী রেখে
মানবের পায়ে_

হয়তো বা শালিকের জোড়া আধুনিক জমায়েতের আবর্তনকে
এভাবেই চেনে আজও নিঃসঙ্গতা ঢেকে |
    






স্থবির        

স্টেশনটা পার করে গেলে মনে হয়
আগের স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে ট্রেন। 
যেন গন্তব্যে যাওয়ার পথে ঠিক পরেরটায়
নিজেকে রাখলে সেটা মর্গের সামিল।
শীতল বস্ত্রখণ্ড এক জড়িয়ে দেবে লহমায়
আপাদমস্তক, হাড়ে হাড়ে জমবে লিটমাস,
অসূয়া কান্নারা ভীড় জমাবে রেললাইন জুড়ে।

যে কোন ট্রেন নিজেদের তাড়িয়ে নেয় এই
স্টেশনের ত্রিসীমানা থেকে, এড়িয়ে যায়
এই দশকের লজ্জা, সম্ভ্রমচ্যুত খাদ্যের দেহ
যন্ত্র হলেও তার, অধিপতি জানে এই শহরে
আজও নগর রেখে যেতে পারেনি সভ্যতা।

ট্রেন জানে,
সামনের স্টেশনে লেগে আছে আজও
দাঁতের দাগ,যেটা পার করা সম্ভব হবে না,
কিছুতেই না।
            






অনুযোগ                       

দরদাম করে কিনে আনা বাউটিতে যখন
মাথা তোলে সাপ
পিঠের ঘামে হাত থম মারে,
ভুলে যায় মন 
এইমাত্র পাতিয়েছি যে আসর তীব্র বাসনায়
তার পরিণতি ঠকে যাওয়া |
ঠকিয়েছে স্যাঁকরা নাকি ঠকালাম আমি কিংবা
এই নগ্ন তুমি ? 

কেন যে পাড়ার বৌয়েরা আজও মন রাখা কথা
বলতে শিখলো না!
            






রেশ                   

আর এখন
গুচ্ছ কবিতাগুলো নুক্তা হারিয়ে জুদা হয়ে গেল খুদা থেকে |

চোখ তুলেই
না পড়া টিপ নিজেকে না দেখতে পেয়ে
ধূ ধূ কপাল থেকে ছুঁড়ে দিল ভেংচির ইমোজি,
প্রবল হাসিতে তার
অধরা কম্পন আর 
উপেক্ষায় দর্শক আকুতি |

না পড়া টিপ
কালোজিরে > ঘুঘুর ডিম > গ্রহণ লাগা চাঁদ > অমাবস্যার রাত হলে
ভালোবাসা একমুখী, বোঝা যায় |

টিপ পড়লেই
কবিতারা গুচ্ছ হয়ে যাবে, কথা দিয়েছে |
অবশ্য, তোমার তো- বয়েই গেছে...
             








হেমন্ত সরখেল

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন