প্রেত অথবা তুমি

অনেকটা প্লানচেটের মতো
কিন্তু কোনো পূর্ব পরিকল্পনা থাকে না তার।

মাত্র দু'পাত্র ভার
একটা রোগা নেশার লঘু পারদ
চড়ে, দ্বিতীয় প্রহর আলো-অন্ধকারের
গা বেয়ে, একা-ঘর খাতা বই পত্তর, পাশে রেখে
চড়ে, আমার চৈতন্য শুষে---

অনতি নিকট, লেখার টেবিল বাঁয়ে, আর
একটু দূরে, সামনে, উপর থেকে নিচে, নামে
একটা পেতলের হাতল ওয়ালা সিঁড়ি বেয়ে
স্বপ্ন-শরীর, নরম পা, বাতাসের মতো 
শুধু পদক্ষেপ শব্দে, ধীরে

এই সব মিয়ানো রাত্রির মাঝখান দিয়ে
নেমে আসে, সে, চেনা কয়েক দশক শতক ধরে
যেন অতীত পৃথিবীতে, স্নেহ দিয়েছিল, এ জীবনে
হঠাৎ, কোনো প্রবল, শূন্য ফেনিত রাতে

তাম্রবর্ণে, মৃদু ও অসীম ছন্দে, সংযমী আনন্দে
দীর্ঘাঙ্গী দেবী, দেবাসুর তুচ্ছ করে, এখানে
মনে হয়ে ওঠে... বাগদেবীর সখী সরস্বতী ? 
হ্যাঁ, অথবা না, কিন্তু সে তেমনই আশ্চর্য
খুব নিকটবর্তী হলে, চিনি যেন তাকে আর রূপে
অথচ নিয়েছে ধার--- আজ তোমার অবয়ব 

আরও কত রাতে হয়তো অনেক বার, এমনই
মুখ তার বুঝিনি কখনও, যেন চির নতুন 
সে দারুণ, দৃপ্ত ও দয়াময়ী, মৃদু ভাষী, স্নিগ্ধা
কিছু বুঝতাম হয়তো, বিস্ফার চোখে দেখেছি---

কোন প্রাচীন কালের পুরাণ মহল থেকে
মুড়ে আছে মহামূল্যবান সোনা মোড়া শাড়ি
শরীরে তার, আঁধার নেশার ঘরে এমন উপস্থিতি
মৃদু আলোতে, আঁচল দ্যুতি, মোহময় জ্বলে

সে নড়ে চড়ে, দীর্ঘ বাহুতে প্রসারিত হয়ে
সামনে রাখা চেয়ারে উপবেশনে, টানে
যত আশ্চর্য হই, তত‌ হই মুগ্ধ, শান্ত, নিঃশব্দ
নাও লেখো এবার, বলে ইশারায়

তার চোখে আদিম অনন্ত লেখার শব্দ,বর্ণ, ভাব
ফোটে, ঝরে পড়ে কল্পনার রাজকীয় ঝালর
আমি পাগল হয়ে যাই, লিখব লিখব বলে
কাগজে কলমে ওঠে ঝড়, নদী সমুদ্রে ভাঙে

অথচ না, লেখা আসে না তখন, হ্যাঁ তখনই
আসে বিকট কান্না এক, মৃত্যু-খেলার মতন
অথবা অসহায় বাঁচার, নিদারুণ হাহাকারে
মরে বুকের ভিতরে, হাজার অ-বলা, না-বলা

অসহায়, আমাকে সান্ত্বনা দেয়, সে নীরব
আমি তার উপস্থিতির জাদুগৃহে থাকি, ভেসে
যেন তার সঙ্গে আমার কী ঘন কথা হয়ে আছে
রক্তে রক্তে কথোপকথনের পুরাতনী সঞ্চারে

মধ্য-রাত্রি, পঞ্চ-বোধ সংজ্ঞাত, কেন যেন জানে
সে, এ আমার জীবনের সবচেয়ে অধ্যাত্ম-সময়
যা কিছু নেশা, তাতে নেশা হলো কোথায় আর
ওই যে ভাব-সমুদ্র স্নানে, অম্লান, নিয়েছ টেনে
তুমি, অথবা সে তোমার প্রেত-দেবী, বাক-প্রতিম
আমিও ব্যুঁদ, শ্রেষ্ঠ কবিতা-নেশার প্রেমে,
কত বার এই মধ্য যামিনী-যপ জীবনে।






অনিরুদ্ধ সুব্রত

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন