ডুলুং নদীর জলে
ধারাবাহিক যাপনকথা
(দ্বিতীয় পর্ব)
যে নদীটা পরম তৃপ্তিতে শুয়ে আছে গভীর বনের
ছায়ায়... তার দু'পাশের কোলাহল কোন নৈঃশব্দের
অপেক্ষায় অক্ষরমালা গেঁথে গেছে পরম মগ্নতায়,
সেইখান থেকে উড়ে আসে পরিশুদ্ধ জলের গন্ধ।
ভেসে আছে ছিপনৌকার ভিতরে ছায়া ছায়া প্রাণ।
বাতাসের দূরান্ত থেকে ছুটে আসে মহুলের ঘ্রাণ।
শালগাছে কচি শাখার উন্মুরতায় ফুল ধ'রলে যেমন
প্রজাপতির পাখনায় রোদ্দুর এসে পড়ে, বা জনৈক
সাইকেল আরোহী ক্লান্ত প্যাডালের চাপে নাক উঁচু
ক'রে বিভোর গন্ধে হেসে ফেলে একাএকা... তেমনি
একটা স্বপ্নের কোলাজ সাজিয়ে রাখি মনে মনে।
কামরার সকলেই চলেছে কোন ধর্মীয় আশ্রমে...
সাধারণ এইসব মানুষের চোখেও উপচে উঠতে
দেখি নরম আতিথেয়তা। টুটুন পাশের এক বয়স্ক
মহিলার সাথে কথা বলছে। আর মহিলাটি সরল
ভাষ্যে আমাদের চা পানের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।
দূরের সিট থেকে উঠে এসে তার সমর্থ পুত্র দিয়ে
দিচ্ছে ফোন নম্বর, আর তাদের বাড়ির ঠিকানা।
তখন হয়তো গুনগুনিয়ে উঠছে বুকের নিবিষ্টতায়
আকাঙ্খার গান। সে সুর তার আত্ম-আহ্লাদের
ছোঁয়া মাখছে গলার কাছে। আর আমার কানের
কাছে রিণরিণিয়ে উঠছে মিহি নদীর স্রোত।
আড় চোখে দেখছি মোবাইলের স্ক্রীন। টুটুনের বৃদ্ধ
অঙ্গুলি ছুঁয়ে স'রে স'রে যাচ্ছে ছবির সারি। একটা
বাজছে তখন। ও পাশের সিট থেকে কেউ হয়তো
তখন বলছে... বাইশ মিনিট লেট...
তাওও... এই যে একটা গতি, এই যে একটা নতুন
পথের গন্ধ কোড়া কাপড়ের পাট থেকে উঠে আসছে,
এই যে অপেক্ষমানতা... আগামী তিনটি দিনের
অঢেল পরিকল্পনার ভাঁজে ভাঁজে জড়িয়ে যাচ্ছে...
এ তো তৃপ্তিরই অন্বেষা। টুটুনের আপাতঃ কড়া
মুখের চামড়ায় তাহলে ঐ আলোর আভাস ভাসে
কেন? গল্পের টুকিটাকির ভিতরে তাহলে উসখুসে
আঙুলগুলো তেরেকেটে বাজায় কেন?
ঝাড়গ্রাম স্টেশনের বাইরে আসতেই আমাদের
বোধ জুড়ে সবুজএর রঙালিপনা। বোঝা মাথায়
দু'জন মহিলা ধীর পদক্ষেপে চ'লে যাচ্ছে পিচ
রাস্তা ধ'রে। পথপাশে শুয়ে আছে ছায়ার ভিতরে
মাদি কুকুর। লেজটা নড়ছে তার। মহিলার মাথায়
ভারী বোঝা, তাও দাঁড়ালেন, কোমড়ের গেঁজ উল্টে
একমুঠো ভাঙা বিস্কুট হাত নীচু ক'রে কুকুরীর
মুখের কাছে দিলেন। বিনম্র আনুগত্যে কুকুরীর
চোখ দু'টো থেকে ভালোবাসার গন্ধ বেরুচ্ছে।
টুটুন চায়ের কাগুজে কাপ উঁচু ক'রে এগিয়ে দিচ্ছে
আমার দিকে। আকাঙ্খা একটু ছায়া খুঁজতে ঢুকে
যাচ্ছে দোকানের ছাউনির ভিতরে।
( ..... ক্রমশঃ)
অসামান্য লেখা!
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন