সাদা কাগজের অক্ষরতৃষ্ণা

কুয়াশাগুলোকে কিছুতেই বিশ্বাস
করতে পারছিলাম না। তবু আমি চোখে
অবিশ্বাসের অ্যালবাম রাখিনি। এখন আমার
সামনে দুটো অপশন খোলা,
১. রাঙা-চশমার রোদ-বন্দনা শোনা, অথবা
২. ফুলদানির বাৎসল্য অনুবাদ করা।

আমি অনেক চেষ্টা করেও লেখার টেবিলে
কোনো নক্ষত্র নামাতে পারিনি। সেই কারণে
আকাশ দেখলেই সাদা রংগুলো আমাকে
বিদ্রুপ করে।

স্বরবর্ণগুলি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। তিন জন
ব্যঞ্জনবর্ণ ওদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন।
আমি ওদের কোকাকোলা দিলাম। তারপর
থেকেই ধূপকাঠিগুলো আমাকে ক্যাপিটালিস্ট
ভাবছে।

আজ সন্ধ্যায় মেলবক্স খুলে দেখলাম,
সেখানে কিছুই নেই। শুধু সাদা কাগজের
অক্ষরতৃষ্ণা পড়ে আছে।





লিঙ্গেশ্বরবাদ

আমি হরিণের ভাষা জানি না।
ঠিক সেই কারণেই জবাফুলের দোতারা দিয়ে
একতারার শোক অনুবাদ করতে পারলাম না।

মেঘের সাদা উল্লাস মেখে কে হুক-খোলা-
জানালা, আর কে ট্রাফিক সিগনালের আলো,
সে কথা জেনে সাদা কাগজের একাকিত্ব
দূর হয় না।

যখন ধর্মযুদ্ধের কথা হয়, জঙ্ঘাসরণির
শিরহনের কথা হয়, তখন গাঙচিলের
কান্না আমার নাভির ছায়াপথে ছড়িয়ে
পড়ে।

চাতকের উপনিষদে লেখা না-থাকলেও এ-কথা
সত্যি,

তারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় নিঃসঙ্গ বিছানায়
জেগে ওঠে লিঙ্গেশ্বরবাদ।






রিমঝিমধ্বনি আর মেঘফুলের গন্ধ

আকাশ থেকে মেঘফুল ঝরছে।
আমি বলার আগেই জানালাগুলো জেনে
গেছে, আজ রোববার। মাংসের গন্ধ ওদের
চোখ খুলে দিল।

বাতাসে ডেটলের গন্ধ। এখন সাদা কাগজে
স্বরবর্ণের নৌকোডুবির তদন্ত শুরু হলে,
নৈরাশ্য শব্দটির আয়তন জানা যাবে।

যেসব বরফকুমারী গর্ভ ভাড়া দেয়,
দ্রৌপদীনামা পড়েও তারা জানতে পারেনি,
সুইসাইডনোটের মেলবক্সে কোনো শীতকাল
নেই।

আমলকী গাছের লজ্জাবস্ত্র আমার
রেটিনায় ধস নামাতে চাইছে। কিন্তু
রিমঝিমধ্বনি আর মেঘফুলের গন্ধ,

আমার চোখ দুটোকে পুন্যিপুকুর করে রেখেছে।







টুথপিক

নিভিয়াক্রিমের রূপকথা শুনে
আমার মেজাজ ভোরের জানলা হয়ে গেল।
আমার আঙুলে একটা টুথপিক।
অনেক অবান্তর প্রশ্ন আমার দাঁতের ফাঁকে
আটকে আছে :

আইসক্রিমের ই.মেল কতটা ঠান্ডা?
বাঁকা হাসির গুপ্তরোগে কতটা ভয়াবহ?
ছেঁড়া-কাঁথার শীত ভয় কি গণতান্ত্রিক?
প্রেমে ফেল ভ্রমর কোন ভাষায় সুইসাইড
নোট লেখে?
নকশিচুমুর হইহল্লা কি ঠোঁটের মধ্যে সীমাবদ্ধ?
খিলিপান কি দাঁতকে রেপিস্ট বলে?
দিনকানা রজনিগন্ধা কোথায় আতর কেনে?

আমি টুথপিক দিয়ে এক-একটা প্রশ্ন
বের করে ড্রেনে ছুড়ে ফেলছি। তবু নতুন কিছু
প্রশ্ন দাঁতের ফাঁকে ঢুকে পড়ছে।

আমার ভয় হচ্ছে। এই প্রশ্ন থেকে দাঁতে
ক্যাভিটিস হবে না তো?








গোলাপি জ্বর

হঠাৎ-ই অধর আর ওষ্ঠের লাল জ্বর
এসে গেল। ওদের জ্যোৎস্না পান করালে জ্বর
সেরে যাবে। এই দুপুরে জ্যোৎস্না পাব কোথায়?

আমাকে স্বপ্নবিদ আয়ানাটি বলল, আপনি
নেলপালিশের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

নেলপালিশ লাল জ্বর সাদা জ্বর হলুদ জ্বর
এমনকি গোলাপি জ্বরের-ও চিকিৎসা জানে।

আমি নেলপালিশের ঠিকানা জানি না।
শ্রীযুক্ত নেলকাটার কি জানে?

আকাশ পাতাল ভাবছি, তখনই কুহুধ্বনি
ছড়িয়ে শ্রীমতী লিপস্টিক এলেন।

আমার বুকে টুংটাং বাজছে। আর আমি
ভাবছি, লিপস্টিকের গোলাপি জ্বর এসে গেলে,

গন্ধ সাবান ঠিক খুন হয়ে যাবে...
















সুশীল হাটুই

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন