এলিজি সিরিজ :



নৈঃশব্দ্যের জন্য এলিজি

কাকজ্যোৎস্নার বিপরীতে আমি
কোকিলঅমাবস্যা লিখলাম। তাই নদীর
সব শালিক নীরব হয়ে গেল।
এমনটা যে হবে তা মৌরিফুলের
উপনিষদে লেখা আছে। কিন্তু শালিকের
নীরবতার পর পৃথিবীর তাপমাত্রা কতটা
কমে যাবে, সে বিষয়ে লেখা নেই।
কলকেফুলের হলুদ জবাফুলের
লাল রংকে শ্যামাসংগীত শেখাতে এসেছে,
তাই টগরফুলের স্নানঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে
লাক্স সাবানের গান।
আজ বোকা বিছানায় রবিবার,
আগামীকাল মাননীয় সোমবার আসবেন।
সব গাণিতিক সত্যি। জ্যামিতিক সত্যি,
যেদিন শুক্র আসে সেদিন ডিম্বাণুরা
কোমর দুলিয়ে নাচে।
আমরা জানি না,
কিন্তু সেই নাচের প্রতিটি মুদ্রাই জানে,
আন্টার্কটিকায় কেন তুষারকণারা
নৈঃশব্দ্যের জন্য এলিজি লেখে।





জখম স্বপ্নের জন্য এলিজি

বোবা জামাটি সকালবেলা সাদা
দুপুরবেলা নীল আর রাত্রিবেলা কালো
হয়ে যায়।
রং নিয়ে যে সব রেটিনা পড়াশুনো করে,
ওরা আঙুলকে ক্ষুন্নিবৃত্তি শব্দটির মেল আইডি
দেয় না।
তবু বারান্দার রেলিং ধরে যে সব দীর্ঘশ্বাস
দাঁড়িয়ে থাকে,
তারা কেন বাহান্নতাসের জোকারকে
ভালোবাসে, তা নিয়ে রতিপটীয়সী শব্দটির
কোনো কৌতূহল নেই।
বিষণ্ণতার সান্ধ্যভ্রমণের সময়,
মিথ্যাবাদী তারারা চাঁদ থেকে মোটা অঙ্কের
উজ্জ্বলতা হ্যাক করে।
আর এতেই চাঁদের স্বপ্নগুলি জখম
হয়ে যায়।
কোনো জোনাকিই তার জন্য
পুলিশ স্টেশনে এফ.আই.আর. করে না।
ওরা শুধু,
জখম স্বপ্নের জন্য অন্ধকারে দীর্ঘশ্বাস
ফ্যালে...





ডিনারটেবিলের জন্য এলিজি

যে সিরিঞ্জটি দিয়ে আমার কোমরে
ইঞ্জেকশন দেওয়া হলো তার নিডলটি
বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত।
সিরিঞ্জের ভিতর হাসিখুশি তরলটি
এক্ষুনি আমার রক্তে এলভিস প্রিসলি
হয়ে উঠবে।
টেবিলের ওপর জ্যাকেট খোলা ডিম,
পাশে জেলি মাখানো দু'পিস পাউরুটি,
ডিমের ওপর গান্ধিবাদী বিটনুন। এই সকালেই ওদের ভিসা শেষ হয়ে যাবে।
ডিনারটেবিলটি কিছুই পায় না।
তাই কাঁটাচামচগুলি তার জন্য টুংটাং শব্দ
তুলে নীরব হয়ে যায়।






O (শূন্য)-র জন্য এলিজি

দৌড়চ্ছি।
৩.৪ আমার ডানপাশে,
৪.৩ আমার বাঁ পাশে
৫.২ পিছনে, আর
৬.৭ সামনে।
দৌড়চ্ছি।
এইমাত্র
২.৫ আমাকে অতিক্রম করে গেল।
সে সবার পিছনে ছিল।
২.৫ এর পাশে
৮.৩, কিন্তু সে কোথা থেকে এল?
শুনতে পাচ্ছি :
২.৫, ৮.৩-কে বলছে, হলদে জামা পরা
৫.৩, ওকে কিছুতেই সামনে যেতে দিবি না।
আমার গায়ে হলদে জামা। জানতাম না, আমি
৫.৩,
আজ জানলাম।
জানার পর থেকেই ভাবছি, যদি
২.৫ আমার থেকে
৫.৩ মাইনাস করে দেয়, তাহলে কি
0 (শূন্য)-র জন্য কেউ এলিজি লিখবে...






আইসক্রিমের জন্য এলিজি

দু'টুকরো বরফকে জোড়া লাগানোর
জন্য আমি ফেভিকল ব্যবহার করি না।
আমার ভয় হয়, যদি আইসক্রিমের
মেমোরি হ্যং হয়ে যায়।
আইসক্রিমের মেমোরি হ্যং হলে,
ফেসক্রিমের বিজ্ঞাপনে সন্ধ্যাতারাকে দ্যাখা
যাবে না।
রোদের মেহফিলে বীণার বদলে শোনা
যাবে, হাইহিল জুতোর পপ গান।
ফায়ারপ্লেসের আগুন বন্ধ করে দেবে,
দুর্বাসামুনির বায়োপিক।
গণতান্ত্রিক জিব বারবারই জানতে চেয়েছে,
আইসক্রিমের ব্রহ্মতালুতে কত %
পিংপং বলের কত্থক ।
স্লেজগাড়ির হৃৎপিণ্ডে কত স্কোয়ারফুট
বরফনামা।
তুষারপাতের পাণ্ডুলিপিতে কত ওয়াগন
মৃত্যুর নীরবতা।
জানতে পারেনি।
আজ ক্যানাইন ফিশফিশ করে মোলারকে
বলছে,
সবাই আইসক্রিমকে মার্ডার করে,
অথচ কেউ তার জন্য এলিজি
লেখে না।













সুশীল হাটুই

1 মন্তব্যসমূহ

  1. কিছু বলার নেই দাদা । শুধু আপনার মতো মানুষের কবিতার কাছে নতজানু হয়ে বসে বসে প্রণাম করে নিতে হয়

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন