হারিয়ে যাওয়ার সকাল


 ধুলোর বারান্দায় রোজ সূর্য খুঁজি

 হারিয়ে যাওয়া সূর্যগুলি মুখ ঢেকে আছে


 কত সকাল আসে, বৃক্ষ গুলি ঝড় সামলায়

 আর গর্জন হয় জোয়ারের

 ভেসে যায় দিন ও রাতের গান

 দানবীয় মোচ্ছবের শেষে

 আমাদের অস্তিত্ব সংশয় পড়ে থাকে


 কাকে ডাকব আর কাকে ডাকব না

 এই ত্রিভুবনে কে আমার মোনালিসা?

 পুড়ে যাচ্ছি, পুড়ে পুড়ে ছাই

 যদিও দেহ ও মন, যদিও ভাষা ও ভাষাহীন

 নিজেকেই পাই না খুঁজে আর ।






 

অন্ধের সুখের মতো


 অন্ধের সুখের মতো মনে হয় নিজেকে

একটা বিশাল বৃত্তের ভেতর ঘুরছি

 অথবা একটা খনির গর্ভস্থ অন্ধকার


 কোথাও জনন অঙ্গ আছে?

 মাতৃদ্বার ভেদ করে বাহিরের পথে

 অনন্ত আলোকচ্ছটা তপস্বীর গুহার ভেতরে?


 রোজ ভোরের নেশায় নির্জীব বসে থাকা

আর ক্রন্দনহীন স্তব্ধ আবেগে নিজেকে শুইয়ে রাখা

আর ধারণায় বাহিত নৌকার গতিবেগ নির্ণয়


 এই সব থেকে এক পরপার মনে মনে লক্ষ করা যায়

অথবা কিছু ষড়যন্ত্র অনুমান করে অভিমান পাওয়া

 একান্ত নিজের অপ্রমাণিত, খাঁচার পাখির ভেতর

দানাশস্যের গাছের মতো ক্লান্ত করে রাখে



সবাই আছে চারিপাশে বস্তুত তবু কেউ থাকে না

নিয়ম-পদ্ধতিগুলি কখনো কখনো মনে হয় রাঙা জবা।







 সুখী হবার জন্য


সুখী হবার জন্য গ্রাম ছেড়ে 

          সাবেক মাটির বাড়ি ছেড়ে                                                                                                                                                         শহরে এলাম?

 সুখী হবার জন্য বাবা-মা 

        ভাই-বোনদের ছেড়ে

শহরের ব্যস্ত জীবনে 

হারিয়ে গেলাম?


গ্রামের কাক, কেমন আছ?

গ্রামের চড়ুই, কেমন আছ?

মা-বাবা মিলে এখনও ধান শুকায়?

ভোর ভোর ঢেঁকিতে ভানে সেই ধান?


সন্ধ্যেবেলায় লন্ঠন জ্বেলে 

       এখনও আমাকে ডাকে:

                     আয়! আয়!

                        ফিরে আয় ঘর!


  

 

 



তোমার মতন তিল নেই


তোমার ছবিটি থেকে গেছে 

কতদিন পর বইয়ের ভেতর থেকে

বেরিয়ে পড়ল তোমার ছবিটি।


এখন নির্জন  প্রায় আমি 

উন্মাদ বাতাস আর আসে না আমার বাড়ি

স্মৃতির গোলাপে মালা গেঁথে এখন নির্জনপ্রিয় আমি।


সম্ভব ছিল না কিছু? তাই স্রোত ভাসিয়ে দিয়েছে?

তুমি আমি ভিন্ন দুই দ্বীপে, সমুদ্রে জাহাজ ডুবে গেছে

সেই ইতিহাস জানে ঝড়, তাই স্রোত ভাসিয়ে দিয়েছে


বিকল্প চিবুক তুলে দেখি: তোমার মতন তিল নেই

বিকল্প বাহুটিরও শিরা-উপশিরাময়,

শরীর ভেঙে গেছে যামিনীর, 

               তোমার মতন তিল নেই।



 



ক্রিয়ালোপী


ভাবনার ঘরে নতুন পরান খোয়া গেলে

 কে আর লিখবে মেঘদূত ?

 সামান্য জ্বরের ঘোরে  পুড়বে বিকেল

  বৈষ্ণবের সেই চন্দ্রাবলী

 রাধাবল্লভির দোকান ঘুরে যাবে।


 অনন্ত ছাতিম পাতায় 

প্রথম রবীন্দ্রনাথ আবিষ্কার হলেন

আর ট্রেন ছেড়ে গেল 

দ্রাবিড় পুরুষের গানে

মুক্ত শুধু একটা কচ্ছপ উড়ছে

উড়তে উড়তে মিলিয়ে যাচ্ছে 

শূন্যের গগনে।




 


সৌজন্যের ছেলেমেয়ে


আমাদের আত্মহত্যাগুলি 

কেবলই সংশয়প্রবণ হয়ে যায়;

তাদের পাঠশালা নেই, বৈরাগ্য নেই

কুয়োর ধারে পিপাসা নিয়েই বসে থাকে।

সপ্রতিভ গ্রাম্যবধূরা কখনো কখনো

তাদের উজ্জীবন দিতে আসে,

তারা সেসব উজ্জীবন নিয়ে 

পিছিয়ে দেয় অপার্থিব আত্মহত্যাগুলি।


পৃথিবী ততোধিক শূন্য, যতটা আমাদের শূন্যের ধারণা 

অথবা ততোধিক অন্ধকার, যতটা ধারণা আমাদের।

কথাবার্তার ভেতর সৌজন্য প্রকাশ বাঞ্ছনীয়

এটাই কাম্য বলে কেউ কেউ চিরদিন উদাসীন হয়ে গেছে।

আমরা বাঁচার জন্য নতুন নতুন কুয়ো বসাই

আর আত্মহত্যাকে থামতে বলি

আমাদের সৌজন্যের ছেলেমেয়েরা নতুন পোশাক-আশাকে ঘোরাফেরা করে;

সকাল হয়েছে বলে তারাও আজ  ফুটফুটে স্নিগ্ধ প্রজাপতি।


 





বর্ষার ডায়েরি


আর তেমন কৃষ্ণকলি ফুটল কই?

 হাওয়া আছে

 হাওয়ার ভাষা আছে

 মেঘও অনবদ্য সব

 হৃদয় রামকৃষ্ণের জবা


ছোট ছোট ঘর, এঁদোগলি

মশারা কাহিনি তৈরি করে

সেসব সিনেমা দেখানো হয় না 

মালা শুধু গাঁথা হয় 

শহর তোলপাড় করে মালা


অবশেষে ধর্ষণের ঘুম নিয়ে একটি জানালা

দূরে উদাসীন স্বপ্ন আঁকে

আমরা দেখি হেঁটে যায় নৈঃশব্দ্যের অভিমানী রাধা।
















তৈমুর খান



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন