তূয়া নূর-এর কবিতা




পুড়ে যাচ্ছ 

কৃষ্ণচূড়া ফুলে ভেসে যাচ্ছে নদী
লাল হয়ে গেছে পানি
লাল পাপড়ি গুলো পানিতে পুড়ে গলে যাচ্ছে
রক্তের রঙে ঢেউ হয়ে ভেসে যাচ্ছে। 

হুবহু একই রকম স্বপ্ন দিনের পর দিন কেউ দেখে?

নৌকার পাটাতনে শুয়ে আমি
তোমার কোলে মাথা। 
নৌকার তল পুড়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে
আগুনে কাঠ পোড়ার মতো শব্দ 
গন্ধ আসে নাকে 
উঠছে ধোঁয়া। 
তুমি কোন এক অচেনা ভাষায় বলছো,
পুড়ে যাচ্ছি আমরা, আছো কেউ সাহায্য করবার। 
কেউ নেই  আশে পাশে। 
কিছুক্ষণ আগেও ছিলো যখন বসেছিলাম ফুলে ভরা কৃষ্ণচূড়া গাছটার নীচে। 
এক কিশোর বাদামওয়ালা এসেছিলো 
বকুল ফুলের মালা নিয়ে এসেছিলো বেগুনী ফ্রক পড়া এক অন্ধ মেয়ে। 

নৌকার পাটাতন ছুঁই ছুঁই 
গরম ভাপ এসে লাগে 
পানিতে পুড়ছে সব
পানিতে অদৃশ্য আগুন,
তোমার আমার শরীর পানিতে পুড়ে যাচ্ছে
গায়ের চামড়া জ্বলছে
গায়ে যেন কেউ ঢেলে দিচ্ছে ঘন সালফিউরিক এসিড
পুড়ে যাচ্ছে পা
পুড়ে যাচ্ছে গোড়ালি
গলে যাচ্ছে হাড়
ডুবতে ডুবতে পুড়তে পুড়তে গলে গলে সব মিশে শান্ত হচ্ছে পানিতে 
দু’জন দু’জনকে জড়ায়ে ধরে ডুবে যাচ্ছি রক্তের মতো লাল পানিতে 
সেই পানি নাক ছোবার আগে প্রতিদিন ঘুম ভেঙে যায়। 

আমাকে ঘুমাতে ইচ্ছে করে না। 
আমার কাছে নির্ঘুম দিন-রাত্রিই ভালো। 




কাছে এসে বসি 

আমি এখন যাই!
যেতে ইচ্ছে করছিলো না 
ইচ্ছে করছিলো আরেকটু থেকে যাই
আরেকটু বসি, 
চুপচাপ  একটা দুটো সরল ভালবাসার কথা।
কে কাকে আটকে রাখে নিজের ঘর-বৃত্তের বাইরে এসে 
তারও ইচ্ছা হয়েছিলো ধরা হাতটা যখন প্রলম্বিত হচ্ছিলো 
ঘুড়ির সূতোর মতো
টেনে ধরে লাটাই গুটায়ে ঘুড়িটাকে কাছে এনে রাখা 
তারও কি বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো খুব 
আরেকটু বসে যাও 
কোন কথা না বলে পাশাপাশি 

কতদিন সে রকম করে বসা হয় নি পাশাপাশি।




রোশনাই 

তোমাকে খুব করে আদর করতে ইচ্ছে করে। 
খুব আদর করতে ইচ্ছে করে কালো জল ভরা মেঘ হয়ে ছুঁয়ে দিয়ে। 
আর তখন তোমাকে চোখে মেঘের ছায়া
ফোঁটা ফোঁটা জলের ছায়া,
আর চোখের ভেতর অপূর্বসুন্দর এক খুশীর চমকানি স্থিরবত হয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। 

তোমাকে খুব ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে 
সকালে দূর্বা ঘাসের ডগায় মুক্তদানা শিশিরের মতো। 

হঠাৎ বাতাস হয়ে ওড়াতে ইচ্ছে করে তোমার খোলা চুল 
মেঘের মতো ওড়ে এসে অল্পস্বল্প আড়াল করবে মুখ
সেই মুখে মৃদু হাসি ছড়াবে চাঁদের রোশনাই। 




পরাধীন হই বারবার

আমাদের কষ্টের অর্জনগুলো আর আমাদের থাকেনা,
পর হয়ে যায় দু'দিনেই।
মজুতদারিদের হাতে গিয়ে ঠিকই জমা পড়ে,
সিন্ডিকেট করে বেচাকেনা হয়। 

আমাদের অর্জনগুলো তৃষ্ণার্ত ঠোঁটের কাছে আঁজলা ভরে তুলে আনা জলের মতো—
মুখের কাছে আনার আগে আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে সবটুকু ঝরে পড়ে। 

সব কিছু খেয়ে নেই উইপোকা,
ফুলে ভরা লাউয়ের মাচান ভেঙে পড়ে মাটিতে। 

আমাদের সব কষ্টের অর্জন,
আমাদের পূর্বপুরুষের জীবন দিয়ে সব অর্জন নিছক গলা পচা মৃতদেহ হয়ে যায়,
আমরা ভালো করে কিছুই যেন ধরে রাখতে পারি না। 

সবকিছু যেন আজো তেমন রাজরানীদের কর্তৃত্বের পাশা খেলা—
আমরা নিজ মাটিতে বারবার অন্তরীণ হই!
বারবার পরাধীন হই!




অপব্যাবহার 

তোমার যখন সুযোগ আসে 
খুব ভাল কিছু করার
তখন তুমি সেই সুযোগের সীমাহীন অপব্যবহার করো
গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় গিয়ে অগণতন্ত্রিক হও,
ইতিহাসের নিকৃষ্ট স্বৈরচারী হও। 
যখন তোমার বিচার করার সুযোগ আসে তখন তুমি নির্লজ্জের মতো অবিচার করো। 

কথা দিয়ে কথা রাখার সময় যখন আসে
তখন তুমি বেমালুম ভুলে যাও কথা রাখার কথা। 

তোমার যখন ভালবাসার সময় আসে 
হাতের একটু ছোঁয়া
অথবা মুখের একটা কথা পাল্টে দিতে পারে অনেক কিছু
তখন তুমি বিমুখ হও,
ঘৃণা দিয়ে ভালবাসাকে বিষের বাষ্পদলা বানায়ে
ছুঁড়ে দাও বান। 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন