মধ্যপ্রাচ্যের মহিলা কবিদের মধ্যে অন্যতম বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর  তুর্কি কবি বেজান মাতুর। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘মানসন্স ফুল অব ব্রিজেস' (Mansions Full of Breezes)।  ১৯৯৯-তে প্রকাশিত তাঁর দ্বিতীয় কবিতাগ্রন্থ 'মেক সিওর গড ডাজ নট সি মাই লেটার্স' (Make Sure God Does Not See My Letters )। বিজান মাতুর-এর মাতৃভাষা 'কুর্দিশ' কিন্তু তিনি কবিতা লেখেন তুর্কি ভাষায়।


তাঁর জন্ম ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ-পূর্ব তুর্কিস্তানের মার্শের হাইতাইত শহরে। দেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গাজিয়ানতেপের ঐতিহ্যশালী লাইসি (Lycee) নামক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি লেখাপড়া করেন। আনকারা বিশ্ববিদ্যালয় (Ankara University) থেকে তিনি আইন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষালাভ করেন, যদিও আইন ব্যবসাকে তিনি পেশা হিসেবে কোনোদিনও গ্রহণ করেননি। সাংবাদিকতা ও সৃজনশীল সাহিত্যচর্চাই বেজানের জীবন-জীবিকা।


বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থাতেই দেশের বিশিষ্ট পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখাপত্র প্রকাশিত হয়। আলোচকরা তাঁর কবিতাকে 'গূঢ় ও মরমিয়া' (dark and mystic) বলে অভিহিত করেন। তাঁর প্রথম চারটি কাব্যগ্রন্থের নাম ইংরেজি অর্থান্তরে:

1. Mansions Full of Breezes, 1996

2. God Must Not See My Letters, 1999

3. The Sons Reared by the Moon, 2002

4. In His Desert 2002


এই চারটি কাব্যগ্রন্থের কবিতাতেই বেজান তৈরি করেছেন ভাষা, অনুভব ও চিহ্নকল্পের (imagery/signs) এক বিশিষ্ট জগৎ। কুর্দিশ ভাষার প্রাচীন কবিতা, বেজানের জন্মস্থানের গ্রামীন প্রকৃতি ও লোকসংস্কৃতির নানান উপাদানের মিশ্রণ ও আত্তীকরণের মধ্যে দিয়ে বেজানের কবিতার বিশিষ্ট হয়ে ওঠা। বেজান প্রতিনিয়তই সৃজনশীল। তাঁর অন্যান্য কবিতাগ্রন্থগুলি :


1. How Abraham Abandoned Me, 2008

2. The Gate of East:Diyarbakir, 2009

3. Sea of Fate, 2010

4. Looking behind the Mountain, 2011

5.Son Dag, 2014


নিজস্ব অভিজ্ঞতা, কুর্দিশ ও তুর্কি প্রাচীন সাহিত্যের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য ও সুফি ধর্মের মেলবন্ধনে বেজানের কবিতা হয়ে উঠেছে অনন্য এক কণ্ঠস্বরের চিহ্নলিপি। বেজানের কবিতা বক্তব্যপ্রধান বা স্টেটমেন্ট-ধৰ্মী নয়। বেজান আত্মজৈবনিকতার অতিকথন ও স্বীকারোক্তিমূলক কবিতার উচ্চনাদকে পরিহার করেছেন। ফলতঃ কোনও একটি বিশেষ অভিধায় বেজানের কবিতাকে শৃঙ্খলিত করা সহজ নয়। বহুরৈখিকতা-বহুকৌণিকতার দ্যুতিময়তা তাঁর অবলোকনে, তাঁর অক্ষরযোজনায়।





বেজান মাতুর-এর কবিতা

অনুবাদ: রুদ্র কিংশুক



১. পৃথিবীর স্বপ্ন

তার নিঃসঙ্গতায় রাতের আকাশ
ভাবল 
কেন এই নক্ষত্রমালা?
কেন অন্ধকার হৃদয়ে এই গুঞ্জরিত কণ্ঠস্বর?
যখন এই কন্ঠগুলো সরে যায়
কীই বা আর পড়ে থাকে
এই যন্ত্রণা ছাড়া যা আমার হৃদয়  ছিঁড়ে খায়?
     
 
যদি ধ্রুবতারা একদণ্ড সরে যায় তার জায়গা থেকে
মৎস্যজীবী কি হারাবে তার পথ?
মেষ পালককে ভুলে যাবে তার শিস?
হয়তো কিছুই ঘটবে না,
কিছুই বদলাবে না আমার সত্য।
আমি পৃথিবীর স্বপ্ন।
ঘুম শেষে ঘুম-মানুষ 
দেখবে যে সে জেগে উঠছে,
প্রকৃত অন্ধকার দূরে।




২. প্রত্যাবর্তন

পৈত্রিক বাড়িতে ফেরা
মানে অন্ধকারের ফিরে আসা।
কেবল সেখানে রক্ত বৃদ্ধি পায়।
বাড়িটির ঠিক বুকের ভেতর...
  

সবকিছুই স্মরণে থাকবে।
   



৩.নির্বাক বাড়ি

উঠানে অপেক্ষমান নির্বাক বাড়ি।
সে রাতকে ভাবল মৃত্যু। আর জগৎকে বিদায়




৪. যা পথ খোলে তার অন্ধকার

একটা কূয়োর উপরে ঝুঁকে পড়ো 
ঝুঁকে পড়ো এবং অনুভব করো গ্যাব্রিয়েলের ডানা
এবং তোমার ডানার অভাব।
দ্যাখো সেখানে
কীভাবে শব্দেরা থাকে 
কীভাবে একজন মানুষ অন্যজনের ভেতরে প্রবাহিত
হয়তো যা পথ খোলে তাই অন্ধকার।
তোমার এবং আমার ভেতরে
হয়তো কেবল একটা দৃষ্টিনিক্ষেপ
যেখানে তুমি যাও
তোমার সন্ধান 
আল্লাহ-উৎকীর্ণ এক অঙ্গুরীয়। 
হয়তো আল্লাহর আগে ভালোবাসাই তুমি চাও
তোমার খোঁজ ভালোবাসার জন্য।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন