কবি পরিচিতি: খান আলাউদ্দিন জন্ম: ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭, রবিবার। কাপাসিয়া, গাজীপুর। পড়াশোনা: বিজ্ঞান, মানবিক, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য। প্রকাশিত কবিতার বই: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডিসঅর্ডার। চৈতন্য, বইমেলা ২০২১।
খান আলাউদ্দিন -এর কবিতা
পুরুষ মা
ফুলের পরাগরেণু, গর্ভমুন্ড রাশভারী বাতাসে উড়ে গেলো বলে আমি কি এমনই অকৃতদার থাকবো? আমি কি জিনের বাহক শুক্রানোর সদ্ব্যবহার করবোনা? আমারই স্টেমসেল থেকে ডিম ও স্পার্ম উৎপন্ন করে আমি কি কখনো জন্ম দিবো আমার সন্তান? যুগপৎ মা ও পিতা হবো। মাতৃত্বের অনুপযোগী আমার স্তন লালগ্রহের মরে যাওয়া নদী, বালিয়ারি অথবা কিসমিস শুকনো, অন্তঃসারহীন আধার। এ কেমন দুগ্ধগ্রন্থিহীন দুধ আমি ধরি আমার শরীরে? আমি মা হলে কি আমার বুকে দুধ আসবে? পুরুষ মা হলে কবে কার বুকে দুধ আসে?
শ্রী শ্রী সর্বজনীন দক্ষিণা কালীমন্দির ও মহাশ্মশান
১
শ্মশানে শূন্যতা থাকে, শূন্যতার মাঝে সোডিয়াম ক্লোরাইড নোনতা। বটগাছআশ্রিত অতিকালো প্র্রেতাত্মক বাদুড় মরাপোড়া গন্ধে গাছ পাল্টায়। শ্মশানে নিহিত ভয়, চারপাশে অচেনা গুল্মঝোঁপ, তৃণলতা সর-সর কাঁপে। যার মাথার খুলির পানপাত্র বৃষ্টির জল ধরে, তার আজ নিজস্ব চরিত্র নেই, রুপ নেই, গঙ্গাঅববাহিকায় অহংকারে উড়ে বেড়ানো নেই; পোড়া ছাই কেলাসিত করে সিকিপরিমাণ শারীরিক সোনা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
২
আমি অচ্ছুৎ অস্পৃশ্য চাঁড়াল জীবনে বহু জীবন্মৃত শব পুঁড়িয়েছি কখনো সজ্ঞানে কখনো মহুয়ামত্ত হয়ে শ্মশানে শ্মশানে। মৌটুসী হলুদ পাখালি বিমুখ হলে তাকে ভেবে মৃত তার বঙ্কিম গোলাপি স্মৃতি নিয়ে গেছি বহ্নিমান আরক্তিম চিতায়। সেখানে আগুনে তাপে অস্থি থেকে খসে গেছে বামুন মেয়ের অস্থি-ত্বক-চুল। নিকটস্থ বন থেকে শুকনো কাঠ, মরা ডাল এনে চিতাকে সম্প্রসারণ করেছি; এখনো কি সম্প্রসারণ করছি না হা- জনম?
Mostly cloudy 31°
এমন দিনেই শুধু গ্রাভিটির টানে কিস্তি ডুবে যায়, সুনীল আকাশ হয় মেঘলা অথবা আংশিক মেঘাচ্ছন্ন ।
জল হয়ে ঝরে পড়তে থাকে ঘনীভূত হাইড্রোজেন
বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে থাকে অন্তহীন দীর্ঘশ্বাস
যেন কোথাও শূন্যতা আছে , শূন্যতার অভ্যন্তরে ফোটনবিস্ফোরক, স্মৃতি-প্রেম-অশ্রু , শূন্যতা থাকেনা।
এমন দিনেই শুধু পুঁড়া পুঁড়া ওজোনগন্ধ ভারী করে ভোরের বাতাস আর মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে যায়।
বিমূর্ত দিগন্ত
দিগন্ত যদিও একটা ধারণামাত্র ; আমি আজ বিমূর্ত দিগন্তকে প্রত্যক্ষ করেছি এবং বহুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম দিগন্তেরই দিকে। আজকাল দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকে ক্ষীণদৃষ্টির লোকেরা, যাদের মায়োপিয়া আছে। এতে চোখের আরাম হয়, রাতে নক্ষত্রখচিত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে একসময় তারাগুলো চোখের নিকটে নেমে আসে, কি আশ্চর্য! চোখে বাষ্প থাকায় কাছে দূরে সবকিছূ ঝাপসা হয়ে আসছিলো। যেনবা দূরদেশে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বন থেকে বের হয়ে আসবে বুনোবিড়ালশাবক। মেঘের মতো হস্তীযূথ। দিগন্তের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, বজ্রের ছুরিতে ফালি ফালি দিগন্ত। মেঘে মেঘে জলভারানত ইউটোপা চোখের আড়ালে চলে গেল, স্কুলবালিকা যেন ঘরফিরতি।
দূরবীণ থেকে খসে পড়া হে কাঁচ
আমি কি সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া নাবিকের মতো তোমাতে তাকিয়ে খুঁজে ফিরি শ্যামবর্ণ উপকূলরেখা, সমুদ্র বন্দর, দ্বীপপুঞ্জ।
দূরবীণ থেকে খসে পড়া হে কাঁচ, হে স্ফটিক, তোমার ভেতর দিয়ে বহুদূর মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকি
কখন যে দূর কাছে চলে আসে, কাছে চলে আসে মাধবীলতার দেশ,
নক্ষত্রের স্বচ্ছ আলো, প্রসারিত বিশ্বব্রহ্মান্ডের তারাবন। সব কৌতূহলে দেখি, দেখে আমি ধ্যানমগ্ন, সৌন্দর্যে আবিষ্ট হয়ে পড়ি। আর আমার উপর চির শান্তির শিশির ঝরে পড়তে থাকে।
সিসিফাস
অদৃষ্ট নিয়ন্ত্রিত দিন শুরু হচ্ছে আর দশটা দিনের মতো... পাথর ঠেলে যে লোকটা মিথ হতে চেয়েছিলো, সে কখনো সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে পৌঁছুতে পারেনি ছাদে। চিলেকোঠায় আসতেই তাকে শিখতে দেয়া হলো অ্যাবসার্ডভর্তি শূন্যের নামতা। ততক্ষণে পাথর গড়াতে শুরু করেছে সমতলে। পাহাড়ের গা বেয়ে প্রত্যাবর্তন করছে মনোটোনাস সন্ধ্যা। এই একটিমাত্র কাজ, এই একজনমাত্র শ্রমিক পরস্পর জড়িত, অবিচ্ছেদ্যভাবে ।
নিজের ঘা নিজে চুলকাতে ভালো লাগে বলে
আগুন নিভে যাবার সময় হলেই উসকে দিয়ে যাও, বাঁশের চোঙ দিয়ে ফুঁ দিতে থাক ভেজা ঊনুনে। হৃদয়ে। রামগিরি পর্বত থেকে উড়ে আসে গর্ভবতী মেঘ।
ধরার ভূপৃষ্টে বৃষ্টি হলে ভূগর্ভ ক্রমশ ঠান্ডা হতে থাকে, সূর্যের শরীর থেকে ছিন্ন সে হূতাশ করে! কার্ণিশের নিচে বিপত্নীক চড়ুই পাখিটি ভিজে যাওয়া আপন শরীর খুঁটে, আজো নিজের ঘা নিজে চুলকাতে ভালো লাগে বলে।
ঘরপলায়ন
আমি আর সমাজ কল্যাণ বিভাগের প্রিয়া মিলে পালিয়ে গিয়েছিলাম। তখন আষাঢ় মাস। অবিরাম বৃষ্টি দেখতে দেখতে আমাদের মাঝে টাইম ট্রাভেলার জেগে উঠেছিলো। অথচ স্পেসশিপ আলোর গতিতে ছুটতে পারেনা; আলোর গতিতে কেবল আলোই ছুটতে পারে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা নাক্ষত্রিক স্পেসরুট ধরে এগিয়ে চললাম। স্বয়ংক্রিয় যান ছোট ছোট গ্রহাণুর পাশ দিয়ে আমাদের উর্ট ক্লাউডের ঘন স্তরে নিয়ে গেলো। চোখে হাইপার ভিশন গ্লাস থাকায় আমরা অবলোহিত আলোক দেখছিলাম। তখন আষাঢ় মাস, পৃথিবীতে চালতা ফুলের মৌসুম আর আমাদের ঘাড়ে পালিয়ে যাবার ভূত চেপেছিলো। দূরে যে সবুজ গ্রহ তার থেকে কসমিক মাইক্রোওয়েভ ফলো করে ...
হাই ব্যান্ডউইথ
বহু ধ্যান , বহু কাঠখড় পুঁড়িয়ে ও ভালোবেসে আমি আজ তার সাথে কথা বলতে পারছি আন্তরিক চিন্তা তরঙ্গে, 'হ্যালো' বলছি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল পাঠিয়ে । আমাদের মন ও মগজ এক হয়ে গড়ে তুলেছে বিস্তীর্ণ কম্যুনিকেশন নেট। ঠিক, এটাই সিস্টেম টেলিপ্যাথি! এই যে এখন নিউরন ও নিউরোট্রান্সমিটারে জ্বলে উঠছে সবুজ আলোক , এটাই ইলেকট্রিক্যাল ইমপালস , এটাই প্রিয়ার কল ইনকামিং । হ্যালো প্রিয়া ... তুমি কাঁদছো ? সর্দি? লুকিয়ো না কি হয়েছে বলো। দূরে তোমার কান্নার ফলে এখানে আমার পাড় ভাঙছে, ঝড় হচ্ছে , শুরু হয়ে গেছে বাটারফ্লাই ইফেক্ট! তুমি কাঁদলে যে আমারো কষ্ট হচ্ছে। প্লাগ ইন ছাড়াই আমাদের মন থেকে মনে ডাটা ট্রান্সফার হচ্ছে প্রিয়া
মৃত্যু
কোনো এক দূরবর্তী ঘাসভরা-মাঠে মৃত মানুষের মতো শুঁয়ে আছি। শুঁয়ে থেকে থেকে অতীতের নিষ্পেষণে, অপ্রেমের দুখে, ঘুমে হাত পা সমূহ শক্ত হয়ে গেছে রিগর মর্টিসে। বিন্দু বিন্দু শিশিরের ফোঁটা ঝরছে , ভিজে যাচ্ছে আপাদমস্তক। আমাকে কি শেষ স্নান দিচ্ছে রাতের শিশির? আমার শরীরে মার্চপাস্ট করে উঠে আসছে মাজরা পোকা , ছোট ছোট সোনাব্যাঙ, নাচুনে ঘাসফড়িং, ডিম থেকে সদ্য জন্মানো সাপের বাচ্চা। দেখো, এরাই আমার শেষকৃত্যে অংশ নিতে এলো। আর মানুষেরা নাড়ি ছুঁয়ে, স্টেথোস্কেোপে হার্টবিট মেপেও আমাকে মৃত বলছে না। যত্তোসব অসংবেদনশীল মানুষেরা। এদিকে আমার দেহ পরজীবীদের বাস্তুতন্ত্র হয়ে যাচ্ছে, প্রবেশ উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে রে মরণ !
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন