তাপস গুপ্ত 




পোস্টমডার্ন ভাবনা: কিছু কবিতা

পর্ব ৬

ক্ল্যারেমন্ট ম্যাকেনা কলেজের ইংরেজি ভাষা ও তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক রিকার্ডো কুইনোস ,তাঁর একটি থিসিস পেপারের প্রস্তাবনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আমেরিকান সাহিত্য প্রসঙ্গে পোস্টমডার্ন নিয়ে আলোচনায় এই  "নাটকবাজী"র নামকরণ করেছিলেন: The drama of the two America's: Modernism, postmordernism and deconstruction.

রোমান্টিসিজম থেকে বেরিয়ে মর্ডানিজম  তার যাত্রা শুরু করেছে রোমান্টিসিজম কে সঙ্গে নিয়ে তেমনি পোস্ট মডার্ন প্লেটোনিক অধিবিদ্যা কে অস্বীকার করেও তাকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেছে তার  নিজস্ব স্বপ্নময় অভিযাত্রা। আমেরিকান রা যাকে বলেন " .. the politically active counter culture of 60's "
এইযে অধিবিদ্যা কে অস্বীকার এবং তাকে স্বপ্ন মেনে  সঙ্গে নিয়ে চলা এই চিন্তন উৎসের প্রত্ন সন্ধানে আমাদের সন্ধানী মন পাড়ি দিলে যে মানুষটির সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে তিনি হলেন হেরাক্লিটাস ( BC 535)। হেরাক্লিটাসের রচিত কোনো বই না থাকলেও তার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাণী  ভাব শিষ্য দের মাধ্যমে উনিশ শতকের শেষের দিকে দুই জার্মান পন্ডিত এর হাতে এসে পড়ে এবং তারা এ বাণী বা ফ্রাগমেন্টস গুলিকে তালিকাবদ্ধ করে প্রকাশ করেন। এই আপাত সহজ বাণী গুলির সারাৎসার হল এর  স্ববিরোধিতা। লক্ষনীয় যে, কোনো বাণীতেই তিনি দুটি পৃথক বস্তুকে এক হতে দিচ্ছেন না। যেমন তিনি বলছেন, ওপরে ওঠার পথ এবং নিচে নামার পথ এক। অন্য একটি বাণী তে বলতে দেখি, আমরা একই নদীতে অবগাহন করছি কিন্তু করছি না। আমরা হই এবং হইনা। আর একটি বাণী তে তাকে বলতে শুনি, সুপন্ডিত হেসিয়াড দিন ও রাতের চরিত্র বুঝতে পারেন নি, দিন ও রাত এক। বোঝা যায় হেরাক্লিটাসের এক মানে বহু। অর্থাৎ এক থেকেই তৈরি এই বহুত্বের দর্শন। তিনি তাঁর আর একটি fragments এ বলছেন, কোনো origin বা উৎস নেই, জীবন চলেছে তার নিজস্ব গতিশীলতায়, এক অন্তহীন becoming এর মধ্য দিয়ে।
প্রতিবন্ধকতাহীন  বোধগম্যতায় ধরে নিতে  অসুবিধে হয় না,  এগুলি বেদান্ত দর্শনের শূণ্যবাদ, যা পরবর্তী কালের গোত্র ভুক্ত  বৌদ্ধ ও জেন বাণী সমূহের সাজুজ্যময় শ্বরধ্বনি মাত্র। হেরাক্লিটিসের এই becoming প্লেটোর মেটাফিজিক্সের এর বিপরীতে। কারণ এই becoming, স্থানুবৎ being এর প্রধান শত্রু। এই becoming এই রয়েছে উত্তরআধুনিক চিন্তা দর্শনের মর্মমূল। পোস্টমর্ডানিস্টরা এই মত মানেন না।ফুকো বা দেরিদা কেউই এই তত্ত্ব কে তাঁদের আলোচনায় পাত্তায় আনেন নি।ফুকো প্রাধান্য দিয়েছেন জিনিওলজিকে আর দেরিদা এসব  তুড়ি মেরে উড়িয়ে বলেছেন ' সুপ্লেমা ' বা গোঁজামিল। তাই বলা হয় পোস্টমডার্ন আর কিছুই নয়, কিছু চমকপ্রদ বিপরীতধর্মী ভাষা শব্দর কচলানি ; কয়েকজন দার্শনিকের আলাপচারিতা মাত্র।
থাকল ব্ল্যাক মাউন্টেন গোষ্ঠীভুক্ত রবার্ট ক্রিলির একটি কবিতা ও তার অনুবাদ:

After Lorca

The church is a business,and the rich
Are the business men.
               When they pull on the bells, the
Poor come pilling in and when a poor man dies, he has a
Wooden
Cross, and they rush through the ceremony.

But when a rich man dies, they
Drag out the Sacrament
And a goldenl cross, and go doucement,doucement to the cemetry.

And the poor love it
And think it's crazy.

কবিতা টির অনুবাদ হল:

লোরকার পর


বিত্তবান ব্যবসায়ী বর্গের
কারবারি পীঠস্থান হল চার্চ
তাদের নাড়ানো ঘণ্টা দোলায়
দরিদ্রের দল ঠাসাঠাসি ভিড় জমায়
এবং যখন এরা মারা যায়
তখন তারা সামান্য কাঠের ক্রুশ সহ
যোগ দেয় সাধারণ  উৎসবে।

কিন্ত ধনীর মৃত্যুতে
তারা দেয় ধর্মীয় ঠাটের চমক,
ধীরে ধীরে মৃদু আর আলতো ভাবে
টেনে নিয়ে যায় আড়ম্বরে
সোনায় মোড়ানো ক্রুশ চিহ্ন
বিলম্বিত যমকে সমাধি প্রান্তরে।

(ক্রমশ)

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন