মৌমিতা মিত্র-এর গুচ্ছ কবিতা
কথা চুরি গেলে
অনেকটা রাগে অথবা ঘেন্নায়
গলা ফাটিয়ে সারাদিন গালাগাল করে একটু থামলে
সামনে আমিই এসে দাঁড়াই।
ফুলেফেঁপে ঢোল হয়ে ওঠার গন্ধ ছড়ালে
হাওয়া ছেড়ে একটু একটু করে আয়তনের সীমারেখা
আবার অতিক্রম করে পুরোনো জামা গলিয়ে নিই ;
ফাটা চামড়ায় তাপ্পি দিয়ে আর ফুল এঁকে
আয়নার সামনে রঙ ঢালি।
কানদুটো একে একে খুলে গেলে কানে আসে
প্রতিবেশীদের সাক্ষাৎকার ;
তাদের চোখে এক মুহূর্তের জন্যেও ধোঁয়া লাগেনি।
সরঞ্জাম জোগানো আর ছবি এঁকে ফেলা এক নয় বলে
কথা গিলে খেতে আসে ব্যর্থকালের শংসাপত্র!
আমরা সবাই সমব্যথী
একটা মানুষ ক্ষয়ে যেতে নিলে
কতটা পুড়ে যেতে পারে তার সংসারের বৃত্ত
সেই হিসেব কষতে কষতে আমরা হঠাৎ সমব্যথী হই
কানের কাছে উড়তে থাকা মশা মারি আর বলি
' তোমার সাহসের লাল রঙে সবুজ জন্ম নিক '
যদিও আমাদের আগামীকাল
ঝলমলে বিদ্যুতের সাদা আলোয় স্পষ্ট
প্রহরীদের একজন হয়ে আমরা শুধু
মানুষের স্বপ্নের দরজায় দাঁড়িয়ে
শান্তভাবে নিঃশ্বাস নিই আর
মাংস খাই আরতি শেষে
আশ্রয়ের নিরাপত্তায় আমরা সমাজবদ্ধ জীব
আমরা সবাই সমব্যথী ব্যথার বর্ণ পরিচয় না জেনেই
সম্পর্ক
প্রতি রাতে আমি জেগে যাই।
প্রতি রাতে
একে একে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো
সামনে এসে ভিড় করে।
পোড়া খাবারের গন্ধ
রান্নাঘর থেকে একে একে
সব ঘরে উঠে আসে।
প্রথম রাতেই সকলে ছেড়ে গিয়েছিল
আমাকে ভার দিয়ে।
প্রতি রাতে পোড়া গন্ধ তাই
আমাকেই খোঁজে; কথা বলে।
রাত শেষ আমার ছুটি হয়।
প্রতি ভোরে
আমাদের সম্পর্কে আর একটু নিশ্চয়তা আসে।
জল তুলির সীমান্ত
একটা নির্দিষ্ট দিকে তাকাচ্ছি না বলে
চারপাশের বৃত্তের কেন্দ্র সরে সরে
সমান্তরাল রেখা তৈরি হচ্ছে চারপাশে
গড়িয়ে আসা জলের মতো তরল গন্ধে ভেজা বিশ্বাস
নখ বার করা পশুর ছায়ামূর্তির ধার ঘেঁষে
পাতার মাপে কেটে নিচ্ছে এক একটা গোটা জীবন
দূর থেকে দেখলে
একটা ভিন্ন জল-তুলির সীমান্ত আঁকছি আমরা
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন