বিভাবসু 





মেঘকুমারী

১.

তারপর জন্ম হোলো বৃষ্টিকথার 

অবিরাম ধারাবর্ষণের 
বিরামহীন আদর-সোহাগের 

তোর রোমে রোমে 
আর কোনো বিষাদের বিষদবিবরণ থাকলো না বলে 
গান গাইলো হাওয়াদের তুলতুলে মেয়েটা
আর নুপুর পরে নাচলো তাধিন
সারা সকাল, সারা দুপুর
হয়তো সারাটা বিকেলও এমনি যাবে

তুই আমার বৃষ্টিকথার টাপুরটুপুর 
তুই আমার নবীনা মেঘকুমারী...

২০.০৯.২১


২.

তোকে পেলে ভোরের সূর্য মায়াখ্যালে 
ছেলেমানুষী করে 
হয়ে ওঠে ফুরফুরে 
খোশমেজাজ 
আরোখানিক রঙদার 
আর ভারী আদুরে 

ভোরের সেই হলুদ মায়াবী আলোয় 
তুই কেমন পরি হয়ে উঠিস 
কিযে সুমন্ত, কিযে সুরেলা হয়ে উঠিস 
আমি বোঝাতে পারবো না 

এখন আমি সুস্থির, প্রাণবন্ত 
রোগ ধুয়ে গেছে শরৎবৃষ্টিতে
বিছানায় জবুথবু হয়ে শুয়ে থাকি না আর 

তোকে পেলে সূর্য সুস্থ হয়ে ওঠে

২৪.০৯.২১


৩.

একে একে মুছে যাচ্ছে দিগন্ত
ভেঙে যাচ্ছে সব বধির গণ্ডি
ধুয়ে যাচ্ছে একপেশে সীমানাসকল

তোর আর আমার মধ্যে জেগে উঠছে 
একটা স্বপ্নিল সাঁকো 
একটি মায়াবী পারাপারের অপরূপকথা

আমি ভুলে যাচ্ছি আমাকে 
আমার সমস্ত প্রাপ্তিহীনতা মুছে দিচ্ছে সব অভিযোগ 

আমার সীমাবদ্ধতায় তুই পরিয়ে দিয়েছিস চরৈবেতি 
আমার স্থবিরতার জুড়ে দিয়েছিস অন্তহীন কাফেলা 

আমি এখন পথিক 
আমি এখন পথ

আপনজন হয়ে উঠছিস তুই
আপনমন হয়ে উঠেছিস তুই

২৬.০৯.২১


৪.

জলের সাপেক্ষে তুই আমার জলপরি
ঘুমের সাপেক্ষে তুই আমার ঘুমপরি 

মেঘের সাপেক্ষে তুই আমার ডানা 
পথের সাপেক্ষে তুই আমার গন্তব্য 

তোর শরীরে কখন লেপ্টে গেছে আমার ছায়া 
ছায়ার সাপেক্ষে তুই আমার পরজন্ম 

আমার রোমে রোমে তোর লজ্জার উৎসব
লজ্জার সাপেক্ষে তুই আমার কামনাসূত্র 

তোর সাপেক্ষে আমি ঢেউ
ঢেউয়ের সাপেক্ষে তুই আমার ভাসান

২৬.০৯.২১


৫. 

বৈরাগ্য আর মোহ 
বিতৃষ্ণা আর প্রেম
দেহ আর মন 
তুই আর আমি 

কিছু কিছু শব্দ পাশাপাশি এলে 
অদ্ভুত এক বিপন্নতার জন্ম হয় 

যেদিন তুই প্রথম আমার পাশে এসে 
একটা বিষণ্ণ মাছরাঙার মতো দাঁড়িয়েছিলি 
আমি ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম 
কেন জানি না আমার বৈরাগ্য মোহাক্রান্ত হয়ে উঠছিলো 
জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা ছুঁতে চাইছিলো প্রেমময় হাত
দেহের বিষণ্ণতাকে ছাপিয়ে উঠছিলো মনের আব্দার 

তুই আমি পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছি 
একটা অনিবার্য বিপন্নতার দিকে...

২৭.০৯.২১



৬.

ছড়িয়ে রয়েছি আমি পথের ধুলোয়
ঘাসের ডগায় 
ঘামে 
আর রোম রোমে
আর কোষে কোষে

ছড়িয়ে রয়েছি তোর সারা শরীরে, মর্মে 
অন্তঃস্থলে
স্বপ্নের মতো 
সুখের মতো

আমি ভেসে যাচ্ছি অসীমে, অনন্তে 
সময়ের ভেলায়
আমি তোকে ছুঁয়েই পেরিয়ে যাচ্ছি মৃত্যুর বৈতরণী 

তুই গড়ে তুলছিস নোতুন এই আমাকে 
তুই সেই জাদুশরীর 
যা আমাকে নিয়ে যাছে সব বিষণ্ণতার উর্ধ্বে 

তাই ছড়িয়ে রয়েছি 
তাই বিছিয়ে রয়েছি
আব্রহ্মাণ্ড

২৮.০৯.২১


৭.

মুহূর্তের ভাঁজে লুকিয়ে ফেলি তোকে
প্রতিদিন আরো কয়েক পশলা তুই 
আরেকটা ঝড়ের সম্ভাবনা 
কতো কতো সতর্কতাসংকেত
আমার হৃদয় উপচে ওঠে সুখে, প্রেমে

সাগরে গভীর নিম্নচাপ ঘনীভূত হচ্ছে 
পাহাড়ে ধ্বস নামছে হুড়মুড়িয়ে 
সবকিছু লুকিয়ে রাখতে গিয়ে 
আবিষ্কার করছি
কখন আমারই শরীর হয়ে উঠেছিস 

আমার মেঘলা মেঘলা নারী 
আমার একলা চলার পথ
আমি হারিয়ে ফেলছি খেই 
তুই আমার লুকোনো সংকট 
লুকিয়ে আছিস বুকে

২৯.০৯.২১


৮.

তুই যেন হাওয়ায় মোড়ানো একটা গান 
সারাদিন বাজিস 
সারাদিন উড়ে উড়ে কোথায় যে হারিয়ে যাস 

মৃত্যুর অপেক্ষায় থেকে থেকে 
আমি আজ ক্লান্ত 
সে খবরে পাখিদের কোনো গা নেই 
সে অপেক্ষায় পাখিদের কোনো রাও নেই 

তুলো তুলো মেঘের সাথে তোর কী এক নাছোর সখ্য 
কী এক পিরিতিসংশ্লেষ 
তাহলে আমি কি শুধুই বিষণ্ণতার বার্তাবহ? 

নিজের কাছে কতদিন ফেরা হয়নি 
কতদিন ইচ্ছে হয়েছে তোকেই ডানা করে উড়ি 

এখনো ঘুম না এলে তোর ভেতরেই সাঁতার কাটি
তবু তীরে ওঠা হয় না...

২৯.০৯.২১


৯.

মেঘের সাথে ভাব করি
জলের স্রোতে ভাসিয়ে দেই আত্মকথা 
মাঝরাতের ট্রাফিকে মিশিয়ে দেই তোর স্মৃতি 

কে জানি গুনগুনিয়ে গান গাইছে
শিউলি ফুলের দিন 
তোর ধূলোপড়া মেসেজগুলি মুছে ফেলেছি 
তবু স্বপ্নগুলোর রেশ এখনো রয়ে গেছে 

কতকাল দেখি না তোকে 
কোনোদিন দেখেছি কি? 
কতোকালের পরিচয়েও কতো কতো অচেনা থাকে 

সময় কখনো কখনো খুব ভারি হয়ে ওঠে 
মৃত্যুও তার কাছে নির্ভার 

একজোড়া সারস উড়তে উড়তে 
পশ্চিম আকাশে হারিয়ে গেল

আকাশ জুড়ে মেঘেদের ভাসান
মেঘ ফিরতেই চায় না

৩০.০৯.২১


১০.

রহস্য কমে না কিছু 
বরং বাড়ে
কেবলি বেড়ে যায়

এতো এতো পর্যটনের পরেও 
দেবীপীঠ সেই ছায়াঘন, শঙ্কুল আর মায়াবী 

এই প্রাপ্তিতে ধন্য হই 
এই প্রাপ্তিতে মহিমা বাড়ে আমার

তুই আমার চারপাশ জুড়ে 
টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে থাকিস 
জড়িয়ে থাকিস
আর আমি ভরে থাকি আলোতে, সুখলহরীতে, 
প্রেমে 

যতোবারই দেখি তোকে 
ততোবারই হারিয়ে ফেলি থই 

যতো যতো দেখি তোকে 
ততোই তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠি 

যতোই রহস্যজট খুলি 
ততোই জটপাকাতে থাকে 

০১.১০.২১



১১.

শরীরের মায়ায় জড়িয়ে থাকি
অপরূপ, অনিবার্য সে আলো
মোহময় তার উজ্জ্বলতা 
আর কীযে সুখদ 

প্রতিটি ভোরের আলো 
তোকে আরো স্নিগ্ধ করে তোলে 
আরো নির্মেদ, নির্ভার করে তোলে
তাই আরো গন্ধমদির হয়ে ছড়িয়ে পাড়িস তুই

ভালোবাসলে মেঘও কথাময় হয়  
ভালোবাসলে পাখিরাও গান শোনায় 
তুই এলে আমার শব্দেরা নিরভার হয়ে ওঠে 
তুই ভালোবাসলে কাব্যময় হয়ে ওঠে মধ্যরাত 

প্রাণের মায়ায় জড়িয়ে রাখি তোকে 
সব স্তব্ধতাকে জয়ঢাক করে বাজাই 
ভালোবাসা এমনই আত্মধ্বংসী
ভালোবাসা এমনই চিরন্তন 

ভোরর আলো তোর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে 
আসলে আমি তোর সারা শরীরে লেপ্টে থাকি 
ভোরের মতো

০৪.১০.২১


১২.

তোর অভিমানী ঠোঁটে আমার বিজয় পতাকা উড়েয়েছি
তোর মেঘমন্ত স্তনে আমার সুপৌরুষেয় অধিষ্ঠান 
তোর দ্বীপভূমিতে আমার সাধের চাষবাস

চাষীপুত্র আমি
মেঘের কাঙাল
জলের তৃষ্ণায় মাতোয়ারা এক প্রেমিকপুরুষ

আমাকে ভরিয়ে রাখিস ঢলঢল জলের সোহাগে
আর পাড় ভাঙে আমার 
অপার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে মরি 

‘মেঘ...’ বলে ডাকি 
তুই রিমিঝিম করে সাড়া দিস 

সব মেঘকে মেঘদূত হতেই হবে এর কোনো মানে নেই 
মেঘকুমারী আসছে ফাগুনের কাছে 
আমরা এইসব শারদীয় মুগ্ধতা পৌঁছে দেবো...

০৫.১.২১
L

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন