দেবানন্দ ভট্টাচার্য-এর কবিতা
একান্ত দর্পণে
কবিতার মাধুর্য মুখ স্নিগ্ধ আবহ
শুধুই কি তাই ? অন্তরস্থ কঙ্কালও
আছে----ইতি ও নেতির সহাবস্থান।
আশ্চর্যের কিছু নেই, পরিণতি যে
গতিসূত্রের নিয়ম মেনে
যে পাতা সহজে ঝরে যায়, ওরা
কেউ স্বেচ্ছামৃত নয়,
আজকাল বিবাগি হাওয়ায়
অনুভূতির বিম্ব দর্পণে!
শব্দভেদ
শব্দ সন্ধানে শব্দভেদী বাণ
মূর্ত বিমূর্ত প্রতিরোধ ফুঁড়ে
দেখা যাক কোন অচিনপাখি
নজরে পড়ে কিনা।
ভাবছি, শব্দময় যন্ত্রণায় আরো
কতটা কাতর হওয়া যায়!
আশ্চর্য হই, চর্যাপদ ভেবে, লুইপাদ
কহ্নপাদ---সন্ধ্যা ভাষায় লেখা
প্রাচীন পদাবলী!
অচ্ছুত মুখ
নিমছায়া সশরীরে ডালপালা মেলে
ধুলোয় পটচিত্র যেন
এর চেয়ে উৎকৃষ্ট সাদা কালো ছবি
এ যাবৎ দেখিনি কখনো!
এ রকম সাবলীল ভাবভঙ্গি শুধু
অচ্ছুত মুখেই দেখা যায়
দেখুক, না দেখুক কেউ----সেই মুখে
বিদ্যুতও চমকায়!
দেয়ালে দরজায় পতিতা পল্লির
কার্নিশে ছায়া
পাথুরে শহর দূর থেকে ঝরে পড়ে
ভাঙা চাঁদ----অকৃত্রিম মায়া!
একদল শেতাশ্ব
প্রকাশ্যে অনেকেই কাঁদতে পারে না
তবে ঘুমের মধ্যে কাঁদে।
রাশভারী থাকতে হয় এবং বিধি মেনে
গম্ভীর----তাঁরাও ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে
খোলামেলা হাসেন।
যে যেমনই হোক না কেন, ঘুমন্ত মানুষ
চোখ মুখ ঠোঁট ও চিবুক, সবটুকু নিয়ে
দারুণ সুন্দর! শান্ত অথচ মরণশীল!
আমি তো প্রায়শই ঘুমের মধ্যে দেখি :
একদল স্বর্গীয় শ্বেতাশ্ব মেঘ উড়িয়ে
ছুটে আসছে। আমাকে ভেঙেচুরে দিয়ে
ওরা পশ্চিমে চলে গেল।
ছাতিম তলায়
শ্মশানবৈরাগ্য
কবরের প্রশান্তি উভয়ত
মিলেমিশে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
দক্ষিণের বারান্দায় বসে কখনো কখনো
আমি ভারী হাওয়ার গন্ধ টের পেয়েছি।
নীরবতার সুযোগ নিয়ে ঘড়ির কাঁটাটাও
বেপরোয়া হয়ে ওঠে। গোপন অপরাধ,
নিষিদ্ধ স্বপ্নগুলো উশলে ওঠে।
এমনতেমন হলে প্রিয় ছাতিম গাছটিকে
খুব মনে পড়ে। ছাতিমের গন্ধ দেহ মনে
নিষ্পাপ একটি নদী ভাসিয়ে এনে দেয়।
কবরের প্রাশান্তি ও শ্মশানবৈরাগ্য নিয়ে
এখন আমি ছাতিম তলায় এসে বসেছি।
জিজ্ঞাসা নেই কেন
রাত কত হল? জানতে চাইছে না কেউ
যদিও শহর এখনো জেগেই আছে
আকাশ অনেকটা ঝুঁকে এসেছে
গুটিকয় বিবর্ণ তারার পাশে
ময়লা চাঁদ, বড্ড বেমানান।
সৌরজগতের ভাবগতি
ভালো ঠেকছে না
প্রকৃতিপাঠে অনেক কিছু জানা যায়।
মানুষ এখন গিনিপিগের মতন টিকে
আছে। দূষণ উষ্ণায়ন---শাসকের দম্ভ,
বিজ্ঞাপন..........বন্ধুর মতো বুকে হাত
রেখে যারা বললেন 'আছি', রং বদলে
তাদের নৌকো পালটে যায়।
রাত কত হল? জিজ্ঞাসা নেই কেন?
মস্তিষ্কহীন মানুষ গড়ার কাজ চলছে।
চারদিকে দাগছোপ, দুর্গন্ধে বোঝা যায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন