তপন গোস্বামী-র কবিতা




নদী 


দূর থেকে দেখেছি তোমাকে
ঠিক সেরকম আছো যেমন আগে দেখেছি
হাসলে টোল পড়ে
কপালের ভাঁজে নিরুচ্চার অসংখ্য প্রশ্নমালা
বয়স বেড়েছে, কিন্তু মনে হয় এখনও তুচ্ছ করতে পারো আমাদের সমস্ত অহংকার।
পাশ দিয়ে নদী চলে গেলে
পা-টেপার শব্দটুকু অবশিষ্ট থাকে।
পরের গৃহিনী তুমি,থাকো ঐ নদীর ওপারে ঘাসের মত সবুজ তোমার গৃহস্থালি
বটপাতার মত দুদিকে ছড়িয়ে পড়ে তোমার জীবন পাখির বাসার মত কুটি দিয়ে তৈরি নিখুঁত তোমার ঘর।
বাজারে তোমার স্বামীর লটকনের দোকান ধারবাকিতে জেরবার, আর্ধেক মালই থাকে না ---

তোমার কোন মনস্তাপ নেই, মানুষটা ভাল সন্ধেবেলা কিচিরমিচির করতে করতে বাসায় ফেরে। তাই অভাব কিংবা দুঃখ কোনকিছুই তোমাকে টসকাতে
পারেনি নদীর জল যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেছে।
তুমি গ্রামে এলে দেখা করতে আসি
তোমার কুশল ভাসে অসংখ্য ঘাসের কুঁড়িতে। তবু জিজ্ঞেস করি "কেমন আছো?"
"বিন্দাস"। সমস্ত শরীরে তার অকলঙ্ক চাঁদের কিরণ
ঢেউগুলো সরে যায় নিরাপদ দূরে।
সব গ্রামেই কিছু কিছু বিশুপাগল রয়ে গেছে
যারা চিরকাল নদীর ধারে থাকে যুগ্ধস্রোতে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়
কিন্তু কোনদিন ভরসা করে মুখ দেখল না নদীর জলে।



শহীদ 

আকাশের গায়ে কাঁধের ঝোলাটি রেখে বেড়াতে গিয়েছে নাক তুলে ঘন বর্ষা চারদিকে কত ছুঁকহুঁক করে বেড়াল শক্ত লাঠিটা এ বয়সে বড় ভরসা।

উঠতি মেয়ের পায়ের দুপাশে চাকা বাড়ি ফিরবার সময়ের মানা নেই সুতরাং তুমি ধানগুলো তুলে রাখো সামনের দিনে ভাত পাবে চই চই।

ভরা বাদলায় নদীর দুধারে বাস ছেলেপুলে নিয়ে আমরাই ঘর করি এটাও যুদ্ধ, প্রতিদিন বারোমাস কাদামাটি দিয়ে জীবনের মুঠো ধরি।

মৃতদেহ ভেসে একদিন দূরে যাবে শহীদের ভিটে রাক্ষসীজল খাবে।



বাঘের বিক্রম 

তখন ছিল চাঁদের রাত, বাতাসে বুনোফুলের গন্ধ। শরীরে ছিল বাঘের বিক্রম।

ঠিক তখন একজন বাঘকে আমি মাথা কামাতে দেখেছিলাম একজন নাপিতের কাছে। তারপর জলের সামনে গিয়ে নিজের শরীরকে শুদ্ধ করেছিল।

বাঘের আজ ভ্যাকসিনের দিন। কোভ্যাকসিন না কোভিসিল্ড, সেটা ঠিক করতে না পারার জন্য বুনোগন্ধ বা চাঁদ কোনকিছুর জন্যই বাঘের নিজস্ব কোন সিডিউল নেই। কিন্তু এন ৯৫ মুখোশ সে যথারীতি পড়েছে।

বেশিক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখলে মানুষের মত বাঘের রাগ চাড়া দিতে পারে। তাই ওকে লাইন ছেড়ে দেওয়াই ভাল।

এখন কবিরা বলুন, বাঘের বিক্রম উপমাটা দেওয়া কোভিদের বাজারে আর চলবে কিনা!


শিশু রবি 

জেগে থেকে যারা ঘুমিয়ে পড়েছে কাল গল্পের শেষে রাজকন্যার নাগাল না জেনেই তারা বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছে বাড়ি, পাড়া, নাম তারা সব ভুলে গেছে।

তাদের ফেরাবে কোন মালতীর ফুল কোন বনে ভাসে রাজকন্যার চুল রাক্ষসী তার ভোমরা মরণজলে ফাঁদ পেতে ছিল নিপুণ মায়ার ছলে।

অবাক ছেলেরা জানে না নিরুদ্দেশ জানে না বিপদ, জানে না পথের শেষ তবু রাক্ষসী পাঙ্গা নিও না তুমি মৃত্যু ওদের হাতে পায়ে ঝুমঝুমি।

দেশে দেশে ওরা আছে বিভিন্ন দেশে

যুগে যুগে ওরা জন্মায় ভালবেসে জানতে চায় না গল্পের শেষ লতি কার পাতে মুড়ো, কার হল দুর্মতি।

ঘুম এসেছিল পরিশ্রান্ত রাতে চাঁদের কিরণ লেগে ছিল তার হাতে স্বপ্নের তীরে নতুন সূর্য ওঠে গাছে গাছে কাল এসব ছেলেরা ফোটে।

গল্পের নদী ঐ দেখো চর জাগে নিচে জল শুধু শুয়ে থাকে অনুরাগে ভেতরে ভেতরে একটা নতুন ছবি আঁকতে এসেছে একদল শিশু রবি।।



শুয়োর 

তোমার মুখ যদি শুয়োরের মত হয়

আর ঘোঁত ঘোঁত করা যদি স্বভাব হয় তাহলে লোকে তোমাকে শুয়োর বলবেই।

প্লাস্টিক সার্জারি করে তুমি পাল্টে ফেলতে পারো মুখ কিন্তু ঘোঁত ঘোঁত পাল্টাবে কি করে! পাঁক দেখলে যে তোমার শরীর শিরশির করে ওঠে গলকম্বলের থর কেঁপে ওঠে জামাকাপড় থাকলেও তা আমরা বেশ বুঝতে পারি। পাড়ার সমস্ত বাগান তোমার চেনা কবে কার মাইনে হয়, তাও তুমি জানো কখনও কাবুলির বেশে, কখনও আপন চেহারায় তুমি দেখা দাও, নোটিশ লটকে দাও দেয়ালে যা তার শেষ অলংকারটি গলা থেকে খুলে না দেওয়া পর্যন্ত ঘোঁত ঘোঁত করতে থাকো তুমি।

সামনে নয়, পেছনে সবাই তাই তোমাকে শুয়োর বলে ডাকে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন