(মূল অসমিয়া কবিতা থেকে বাংলা) ভাষান্তর:- বাসুদেব দাস





চন্দন গোস্বামীর কবিতা

ভাষান্তর:- বাসুদেব দাস




১.

কবিতা

  যতই অর্থ করবে ততই

        যন্ত্রণা বাড়বে

        উচ্চারিত শব্দ মাত্রই কথক

        পাঠক নিদারুণ মানুষ

 

        মহাবিশ্বের আলোক বর্ষের সপ্তম মাত্রায়

        অর্থ করে করে দূর দিগন্ত অভিমুখে নাবিকটি

        একটা ঘাস থেকে অন্য একটি ঘাসে ঘুরে বেড়ায় জোঁক

        শুয়োরের যৌনাঙ্গের রক্ত শুষে শুষে

        আভাস নেয় প্রাচীনতম কথা

 

        গুপ্তচর আকাশে-বাতাসে

        জলে-স্থলে

        শরীরের কোষে কোষে

        যুগে যুগে গুপ্তচর গুপ্তচরকে

        যে পাঠ দিল অসার

        তাতে কবি দেয় সার

 

        কার জন্য যৌনতার অচল-অটল বৃক্ষ

       

        ছল-চাতুরির পাশাখেলায় মত্ত

        আকাশ বাতাস চাঁদ সূর্য তারা 

       

        মেঘময় ভূমি

        কেউ আমাকে কিছু বলেছে বলে মনে পড়ে না

        আমার আসার সময় সবাই আগুন থেকে দূরে

        আলাপে মগ্ন

       

        জল থেকে উঠে এসে প্রত্যেকেই

        শরীরটা সেঁকে নেয়।

 

        জল আর আগুন সবাইকে পরিচ্ছন্ন করে

        আগুন আর জল দুজনেই দুজনের প্রাণের

       

        এই সমস্ত কিছু জানার পরেও

        ফলটা মুখে গুঁজে

        কত যে শোভাযাত্রা এল গেল কত যে আশা

        কত যে মায়া কে অপেক্ষা করে থাকে শেষের শব্দটা

        শোনার জন্য সৈ্নিক না প্রেমিক

       

        যুদ্ধভূমিতে আপনার মাংসে ক্ষুধা মেটানো প্রত্যেকের

        বহু নরক পার হয়ে আসা

        থেমে থেমে কাঁপিয়ে হৃদয়

        স্বপ্ন-দুঃস্বপ্নের ফোঁপানিতে

        পৃথিবীর সমস্ত নির্যাতিতের নিষ্করুণ কথা

       

        এত পঙ্গু্ত্ব কে দূর করবে

       

        শালিক দম্পতির ঠোঁটে ঝলসে উঠা

        ভোরের রোদের কে অর্থ করে

 

        কথার জন্য অপেক্ষা করে থাকা কথা 

 

২.

ভাস্কর্য

(১)

        আকাশের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়

        সমস্থানিক জলযান

        পৃথিবীর সমস্ত মানুষের কণ্ঠ গলায়    পরিভ্রমণ

        সমস্ত গাছ-বৃক্ষ

        কীট-পতঙ্গ

        জীব-জন্তুর কথা-বার্তা  হয়ে ঝরে পড়ে নিচে

        কত পুরাতন বৃষ্টির সৃষ্টি

        যা তুষার খণ্ড রূপে সঞ্চয় করে রাখে

        বয়ে নিয়ে বেড়ায় সৃষ্টি অনাদি অনন্ত দর্পণ

        করুণতম অথবা নান্দনিক

(২)

        তথাপি কে কী স্বার্থে মানুষকে পৃথিবীর

        সন্তান বলে বলল

        উপলদ্ধি অবিহনেই জীবনের খাঁচাটা

        মানিমুনির সুকোমল শিকড় থেকে

        ছড়িয়ে পড়া সতেজ সুগন্ধি

        জীবনের ভাস্কর্য গড়ে

 ____________________________________________



 


কংকণা দত্ত-এর কবিতা

ভাষান্তর:- বাসুদেব দাস


১.

কবি  


    বিখ্যাত-বন্ধ্যা-ভয়াতুর কবির মনের আনন্দ

    নিমেষে ধূলিসাত হয়ে যায়

    যে মুহূর্তে

 

    অখ্যাত-উর্বর-শংকামুক্ত কবি

    বন্ধ্যা কবির কাঁধে হাত রেখে

    কানে ফিসফিস করে বলে-

    ঈর্ষা নয়

    করুণা হয়

    আপনার জন্য

 

২.

জীবন 


যে নাটকে থাকে না

পূর্বানুমান এবং পূর্বনির্মাণ

যে নাটকে বাজাতে পারে না

দর্শক হাততালি

ঘোরাতে পারে না ককর্থনার বেত

আরাম কেদারায় বসে

যে নাটকের অন্ত মানে

নিজেরই মৃত্যু

সেই নাটকে নতুন করে জেগে উঠে

বর্ষাতৃপ্ত দিনগুলি এবং

আপনমনে গানের কলি গেয়ে বেড়ানো রাতগুলি

শিস দিয়ে বেড়ায়

প্রত্যেকেই একে অপর থেকে

শুনতে চাওয়া কাঙ্খিত কথা

আর শুনতে না চাওয়া অনাকাঙ্খিত সিদ্ধান্তের বার্তা

সেই নাটকে হিসাবহীন হয়ে পড়ে

নামেলা অঙ্ক মেলানোর জন্য গ্রহণ করা

চায়ের পেয়ালা নতুবা

মদের আর্দ্রতা,

সঙ্গতির লয়,বিসঙ্গতির প্রলয়

সকারাত্মক সামঞ্জস্যতা,

প্রশ্নবোধকতায় স্তব্ধতা

তথাপি কিন্তু অন্তহীন হৃদয়ের আকুল বাঞ্ছা

 

স্বইচ্ছার মারপ্যাঁচে গঠিত এই নাটকের দৃশ্য

পুনঃপৌ্নিক প্রবৃত্তিতে পরিচালিত

এর প্রতিটি অঙ্ক

আর হয় আপনাদের মতোই

আমিও তৎপর হয়ে আছি

বিলীন হয়ে যাবার জন্য

বর্তমানের এই দৃশ্যে,এই অঙ্কে।

 ______________________________________



 

ধীমান বর্মণের কবিতা

ভাষান্তর:- বাসুদেব দাস


১.

ফুল এবং যুদ্ধ

    যুদ্ধ লাগলেই

    ফুলগুলির জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠি

   

    ওদের বাঁচাতে চাই

    শত দহনের ধোঁয়া থেকে

   

    যুদ্ধ লাগুক বা না লাগুক

    ফুলগুলি একদিন মূর্ছা যাবে

    সূর্যসম এই সত্য জেনেও

    আমরা ফুলের চাষ করি

    গড়ে তুলি বাগিচার শিল্প

 

    অথচ যুদ্ধ লাগলেই

    ফুলগুলি মূর্ছা না যাবার জন্য

    আশীর্বাদ মাগি

 

    কারণ,

    সেটাই হবে যুদ্ধের শেষ পরিণতি

    যদি মৃত যোদ্ধাকে বিদায় দেবার জন্য

    জগতে বাকি না থাকে

    একটি ফুল

 

 

২.

চিত্রকর বৃষ্টি


    Painting is silent poetry

            Poetry is painting that speaks

                                          -Simonids

            ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে

   

    ঝরে পড়া ফোঁটাগুলিকে

    ছাতা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে রাখছে

    মানুষেরা

 

    মানুষের ছাতাগুলি পিছলে

    বৃষ্টি মাটিতে ছবি আঁকছে

 

    আজ মাটির ক্যানভাসে বৃষ্টি যে ছবি আঁকছে

    আগামীকাল সবুজ রঙ জড়িয়ে

    সেই ছবি জীবন্ত হবে

   

    বৃষ্টির এই সার্থক সৃষ্টি মাড়িয়ে

    মানুষেরা যেতে থাকবে

 

    অবশ্য ঝিরঝিরে বৃষ্টিকে

    বাধা না দিয়েও মাঝে মধ্যে

    একটি ছেলে এই পথ দিয়ে যায়

 

    বৃষ্টি তার জামায়

    অসংখ্য বিন্দু এঁকে দেয়

    যেহেতু সমস্ত ছবির আদিই বিন্দু

   

    গুরু বৃষ্টি এঁকে দেওয়া বিন্দুগুলি

    হৃদয়ে রেখে

    সেও নীরবে ছবি আঁকে

   

    আর সে আঁকা ছবিগুলি

    অনবরত থেমে থাকে-

 

    নিজের থেকে সরিয়ে না রাখলে

    বৃষ্টি সবার দেহে এঁকে দেয়

    চিরসবুজ জীবন্ত ছবি

 ______________________________________




নীলিম কুমারের কবিতা

ভাষান্তর:- বাসুদেব দাস


১.

অক্সিজেন সিলিণ্ডার


‘অক্সিজেন খাবে?’

সিলিণ্ডারটি আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করছে

খাবার মতো আর কিছুই ছিল না

বাবার

তাঁর বোবা ঠোঁট বলল –

লম্বা গলার সিলিণ্ডার,

কিছুক্ষণ পরে তুমিও মুক্তি পাবে

তিনটে দীর্ঘ রাত তুমি সঙ্গ দেওয়ার জন্য

তোমাকে কৃতজ্ঞতা জানাবার মতো

সময়ই হয়তো পাব না

আমার চোখের শেষ ভাষা বুঝতে পারবে সিলিণ্ডার,

‘আমি যে কেবল তোমাকেই

বলে যেতে চাই যাবার সময়

কেউ যেন শুনতে না পায়

এমন কি আমিও ।'

আমাকে ঘিরে রাখা

এই আত্মীয়দের চোখের জল

আমার পথ পিছল করতে চায়

আমি ওদের কীভাবে

যাই বলি বল সিলিণ্ডার

ও আমার শেষ বন্ধু।

আমাকে তুমি ছুঁয়ে আছ

এত নিবিড়ভাবে,

নাক দিয়ে ঢুকে আমার ভেতর পর্যন্ত গিয়েছ

আমার রক্তে মিশ্রিত করে দিয়েছ তোমাকে

তবু বড় কষ্ট পেয়েছি সিলিণ্ডার

ঘন ঘন নিশ্বাসে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি

বেঁচে থাকার ধার

এভাবেই সুদে মূলে আদায় করেই

ছাড়বে নাকি আমাকে জীবন?

বল সিলিণ্ডার

কিছুক্ষণ পরে সবাই আমাকে ছেড়ে যাবে

যদি কেউ থাকে টুলটিতে বসে

সে ও পড়বে ঘুমিয়ে

আর সেই সুন্দর মুহূর্তে আসবে

পাখা মেলে দেবে

আমি আন্তে করে ওঠে যাব

তখন আমার চোখ স্থির হয়ে যাবে

আমি কিছুই দেখতে পাব না

তখন তুমি যে একা হয়ে পড়বে সিলিণ্ডার

আমি উড়ে যাব অন্য এক জগতে

সেখানে পুনরায় তোমার সঙ্গে দেখা হবে

পুনরায় দেখা হবে

তুমি আর সেখানে সিলিণ্ডারে ঢুকে থাকবে না

বিদায় বিদায় বিদায়।


২.

একটি আইসক্রিম থেকে আমার জন্ম হয়েছিল


একটি আইসক্রিম থেকে

আমার জন্ম হয়েছিল-কথাটা

খুলে না বললে কেউ বিশ্বাস করবে না যে

আইসক্রিম থেকে কীভাবে

মানুষের জন্ম হতে পারে!

কথাটা বলছিঃ

আমার জন্মের আগে থেকে

আইসক্রিম ছিল। অবশ্য

সুলভ ছিল না আজকের মতো।

কেবল প্রচণ্ড গরমের দুপুরবেলাগুলিতে

দুয়েকজন ব্যাপারী

ঘণ্টা বাজিয়ে বাজিয়ে

একটা কাঠের বাক্সের ভেতরে

লাল আর হলদে রঙের

আইসক্রিম বিক্রি করে ঘুরে বেড়াত।

যদিও সেগুলোকে আইসক্রিম বলা হত,

সেগুলোর চরিত্র ছিল বরফের।

বাঁশের কাঠি একটাতে ধরে

যা চুপিচুপি খেতে হত!

সেই ঘন্টার ঠান্ডা আওয়াজ শুনলে

ঘরের ভেতর থাকতে পারত না

কোনো ছেলে-মেয়ে।

বরফওয়ালার পেছন পেছন একদল

ছেলে-মেয়ে ঘুরে বেড়াত

কয়েকজন বরফ লুকিয়ে লুকিয়ে এবং

কয়েকজন লুকোতে না পেরে

অন্যদের আধা খাওয়া হওয়া পর্যন্ত

পথ চেয়ে চেয়ে!

সেই দলটিতে ছিল একটি

ফ্রক পরা।আর

একজন ছিল হাফপেন্ট পরা,

যার পকেটে ছিল

দুয়েকটা খুচরো পয়সা!

হাফপেন্টটার দিকে

বড় কাতরভাবে তাকাত ফ্রকটা-

ফুসলানোর জন্য একটা আধখাওয়া বরফ

হাফপেন্টটা ছিল আরও বেশি চালাক

সে জানত ফুসলানোর সমস্ত মন্ত্র।

সে টকটকে লাল রঙের একটা নতুন বরফ

কিনে দিয়েছিল সেই ফ্রকটার হাতে।

তখন থেকে

সেই ফ্রকটা

চিরদিনের জন্য

সেই হাফপেন্টটার পেছন পেছন ঘুরে বেড়াল।

সেই ফ্রকটাই ছিল আমার মা।

আর সেই হাফপেন্টটাই ছিল

আমার পিতা।

রহস্যটা ছিল সেখানেই

সেই ফুসলানোর আইসক্রিমটা

মা যদি না খেত

আমার জন্মই হত না।

এভাবেই একটা আইসক্রিম থেকে

আমার জন্ম হয়েছিল।

এখন

আইস্ক্রিমকে নিয়ে

সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ভুগছি আমি ।

কেন না এই আইসক্রিমকে

আমি কোনোদিন ভালবাসতে পারলাম না

আর ঘৃণা করতেও।

 ______________________________________

 



গঙ্গামোহন মিলির কবিতা

ভাষান্তর:- বাসুদেব দাস


১.

এই মাটির ভালোবাসায়

 

     আকাশের যাযাবরী মেঘ জানে

     কোন ঋতুতে কাছাকাছি এলে

     হালোয়া-রোয়নীর সঙ্গে

     মাঠে নিবিড় ভালোবাসার

     কথা বলতে পারি

 

     পৈ্তৃক পরম্পরার আজন্ম বিশ্বাসী

     মাটি কখনও বিশ্বাসঘাতক হয় না

     কোনোদিন করে না প্রতারণা

     প্রতিদিন কেবলই দিয়ে যায় প্রতিদান

 

     আমরা কৃ্ষকের সন্তান

     মাঠ আমাদের ঘর

     সুখ-দুঃখের আধার

     এই দেহ কাঁদা জল

     মাটির ভালোবাসায় জীবন

     মাটিতে একদিন বিলীন। 


২.

সন্ধিক্ষণ


    মঙ্গলবার আমার জন্মবার

    সেদিন সেলুন বন্ধ

    মনটা এমনিতেই ভালো লাগে

    বুধবারের সকালবেলা

    বিষণ্ণ হয়ে পড়ে মন

    এদিন আমার মুখমণ্ডলের

    বালিমিশ্রিত মাটিতে

    পাতলা ঘাস-বনের মতো

    গজিয়ে উঠা দাড়ি কাটার দিন


    সেভিং ক্রিমের ফেনার ঢেউয়ে

    সেলুনের বিশাল আয়নায়

    মুখটা যেন

    কোনো শিল্পীর কার্টুন চিত্র!!


    চোখজুড়ে যেন

    মেঘের সুড়ুঙে

    জ্বলজ্বল করতে থাকা এক জোড়া তারা 

    সযতনে তীক্ষ্ণ ক্ষুর

    নেমে আসে গলায়

    সর্বশরীরে বয়ে যায়

    ভয়ঙ্কর এক বরফ শিহরণ।


    জীবনন মরণের সীমা

    চুলের সমান শিরায়।


    ঠান্ডা ব্লেডের স্পর্শ

    কেড়ে নেয়

    চিকণ, মসৃণ হওয়ার বাসনা।

 ______________________________________

 


সঙ্গীতা মেধির কবিতা

ভাষান্তর:- বাসুদেব দাস


১.

পরিক্রমা বিষয়ক


মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস

 

    একটা বৃত্তকে জড়িয়ে

    আমরা ঘুরতে থাকলাম

    আমাদের অভীষ্ট যাত্রা আরম্ভ করলাম না শেষ

    করলাম

 

    যে সমস্ত পেয়ে সুখী হলাম

    একইজিনিসের জন্য একদিন দুঃখী হলাম

    একই বৃত্তকে জড়িয়ে ঘুরতে থাকলাম

    কোথাও পালতোলা নৌকা নিয়ে ভাটির দিকে

    গেলাম

    কোথাও বন্দর পেলাম কী পেলাম না

    পুনরায় আবার যাত্রা করলাম

    কখনও স্টেশন থেকে ফিরে এলাম                                                        

    গন্তব্য পেলাম কী পেলাম না

    পুনরায় একবার যাত্রা করলাম

 

    একটা বৃত্তকে কেন্দ্র করে আমরা বসে রইলাম

    দাঁড়িয়ে থাকলাম

    অপেক্ষা করে রইলাম

    যেতে থাকলাম

    কখনও শিখরে পৌছলাম

    কখনও অতলে

    যাত্রা আরম্ভ হল অথবা শেষ হল

    অগণন শূন্যতা আর পূর্ণতা

    আগুপিছু করে আমাদের ঘিরে রইল

 

    বৃত্ত থেকে পরিত্রাণের একটা পথের খোঁজে একদিন

    কেউ একজন নিরুদ্দেশ হল

    তারপরে আরও একজন

    এভাবে নিরুদ্দেশ হওয়া মানুষদেরও বৃত্ত

    যত্ন করে রাখল

    তারপর থেকে প্রতিদিন আমরা বৃত্তকে

    পরিক্রমা করি

    হাসি,কাঁদি

    পরিধিতে বসে হিসাব করি দেনা পাওনার,

    দিনান্তে বৃত্ত আমাদের উপহার দেয়

    এক একটি লাল সূর্য

    আর তাতে মজে আমরা বৃত্তের জয়গান গাই

    একদিন অজান্তে পরিক্রমা শেষ হবে

    আর আলগোছে আমরা জড়িয়ে ধরব একটা

    নতুন বৃত্ত

    নাম দেব জন্ম

 

২.

ভগ্নাবশেষ


আমি আমাকে শান দিতে কোথাও কিছু ভুল

করেছি

গড়তে গিয়ে কোথাও ভেঙ্গেছি

ভাঙ্গতে গিয়ে গড়েছি

ছিন্নভিন্ন করেছি অস্তিত্বকে

আত্মা না বোঝা আত্মীয়দের অনেক

দূরে ঠেলে দিয়েছি,

কোনো অপরিচিত বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছি

 বেড়াচ্ছি

আড়ষ্ট হচ্ছি

প্রাপ্তি রিক্ততা আনে বলে

আবছা বিকেলে আধলি একটা নিয়ে

হাসছি অথবা কাঁদছি

 

মোট কথা ভাঙ্গা গড়ার মধ্যে মজে আছি

নিজের ভেতরে জীব একটাকে প্রতিপালন

করছি

কী এক শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় তাকে বাইরে

বের করে দিয়েছি

আমার মলিন রক্তে মাখা তার শুভ পাখা

দুটি বারবার ধুয়েছি

এবার শ্বাস রুদ্ধ হওয়ার আগে ঢুকিয়ে

নিয়েছি

এখনও উড়ার সময় হয়নি বলে

একটা ঘুমপাড়ানি গান গাইছি

একটার ঘুমের জোগাড় করেছি

 

এইমাত্র আমি ঢলে পড়ব

আর জেগে উঠব এক ভোরে

কোথাও থেকে একটা সাদা রঙবেরঙের প্রজাপতি এসে

গালে বসবে আমার এবং

জীবটার সঙ্গে খেলবে

কিছু সাদা পৃষ্ঠা ছিটিয়ে দেবে

আলগোছে শান দেওয়া কলমটা তুলে নেব

পৃষ্ঠাগুলি ভরিয়ে যাব

সেই বর্ণের সৌরভে পৃথিবীটা একটা আতরের

গোলক করে তুলব

এভাবেই হাজারবার মরে যাব

আর বাঁচাব

একটু একটু করে সুগন্ধি বিলোব

আধুনিক গল্পটাকে প্রাচীন সুতো দিয়ে

ঘিরে ফেলব

এতকিছুর পরে কিছু করতে বাকি

থাকলেও

আর আপোষ করব না

সমজদার পাঠকের জন্য ইঙ্গিতই যথেষ্ট

 

 

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন