ময়ূখ হালদারের কবিতা
১.
অমৃত ভাণ্ড
শেকলের একটানা ঘর্ষণ
দুরন্ত অগ্নিবৃষ্টিতে ধুয়ে যাচ্ছে চামড়া
ঘুমের ভেতর অজস্র কাটাকুটি দাগ ভয় আর ওয়েল্ডিং মেশিনের ঘড়ঘড় শব্দ
পেরিয়ে যাচ্ছি নরকের সিঁড়ি
জলের ড্রামে রাখা আছে ভালোবাসার গল্প
কেটে ফেলা হয়েছে মাছেদের পাখনা
একটি নীল বেড়ালকে দেওয়া হয়েছে পাহারাদারের
চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ
তার সবুজ চোখে দুটো পৃথিবী
বাঁদিকের মণি ছেলেবেলার আটপিল খেলা মার্বেল
আর ডানদিকেরটা নাইন এম এম গুলি
মরা গাছের শুকনো ডাল থেকে গলে পড়া ঘড়ি গিলে নিচ্ছি কোয়ার্টার পাস্ট ফিউচারের সঙ্গে দারু মিশিয়ে
ফ্যাবিউলাস অমৃত ভাণ্ড
২.ডিমেনশিয়া
চেতনার দেহরক্ষী
ফি বছর অগাস্ট মাসে বন্দেমাতরম
নাকের শিকনি চেটে ধুলোমাখা বাচ্চাটাও ঝান্ডা ওড়ায়
ভাতের বদলে সস্তা চকোলেট
অসুস্থ মাঠের ওপর ল্যান্ড-রোলার চালিয়ে ক্লান্ত
তেষ্টা মেটাতে পুকুর পাড়ে এসে নিজেকে দেখলাম
অসহায় ভ্যাম্পায়ার
রক্তে ভেসে যাচ্ছে কলজের কাঠ
বেহুলা কি ঘুমোচ্ছে নাকি বাসন মাজতে গেছে
বিল গেটসের বাড়ি
আমি জানিনা
বস্তুত আমরা কিছুই জানিনা
মুখে দুধের বোঁটা আর চোখে ঠুলি
উৎসব করছি এবং ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো হাইরাইজ দেখে হাততালি দিচ্ছি
৩.
ফরেন্সিক রিপোর্ট
যে নদীর ঘাড়ে কোনও মানুষ চাপেনি এবং
বুকে আঁকা হয়নি পিউবিক রেখা
এমন এক উত্তরাধুনিক ধারার ভেতর দিয়ে
সময় এসে পড়েছে আমার ঘরের দেওয়ালে ঝুলতে থাকা ঘড়ির প্যারালাইজ্ড কাঁটাদের পায়ে
চশমার বাই-ফোকাল কাচ অথবা কলমের অ্যালিবাইকে বিশ্বাস করিনা তবুও নির্লজ্জের মতো দেখি এবং লিখি যা আমার দেখার অথবা লেখার
কথা ছিলনা এরকম কিছু ভয়ংকর সত্য
নজরবন্দি ঘনকের ভেতর
কোথাও রক্তের দাগ নেই
শরীর ও মনে ঘাতক আঙ্গুলের ছাপ তারার মতো জ্বলজ্বল করছে
আকাশ এক আশ্চর্য ফরেন্সিক রিপোর্ট
৪.
নেকড়ে
খুলে গেছে মাজল
হাঁ-মুখে বিদ্যুতের ঝলক
অসহায় মালিক জানে
এই মুহূর্তে পোষ্য-র চেয়ে বিশ্বস্ত কেউ নেই
একদল জুতো মিলিয়ে গেল শহুরে ধুলোয়
মানবিক দরজা-জানলাগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মাটিতে
দূরে কোথাও কবর খোঁড়ার শব্দ
তীব্র থেকে তীব্রতর
মনে পড়ছে
হাতে ফুল মুখে চওড়া হাসি
এগিয়ে আসছিল মানুষ
আর পায়ে পায়ে থেঁতলে দিচ্ছিল আমার নিঃশ্বাস
তারপর অন্ধকার
প্রিয় নেকড়েটা চেটে চেটে বুক থেকে মুছে দিচ্ছে যন্ত্রণা
৫.
হাতের জন্ম
ভাবনায় মরি
ভাবনাতেই বাঁচি
কার্য সম্পাদন করবে যে হাত
তার জন্ম হয়নি এখনও
নাকি হয়েছে
আমরা খবর পাইনি
অথবা নিতে চাইনি
খেলার পরে অবশিষ্ট কুয়াশা
মাথায় গায়ে ঘষেমেজে
চকচকে কয়লা
জমতে জমতে তৈরি হয়েছে
বিরাট পাহাড়
নদীর নাচ থেমে আছে
একটা বিস্ফোরণের জন্য
বারবার একসাথে শুয়েছি
কিংবা শুধুই রিরংসা
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন