মলয় রায়চৌধুরী
এলি এলিয়াহু
এলি এলিয়াহু’র কবিতা
(ইজরায়েলের ইহুদি ভাষার কবি)
অ্যালিবাই
ভাষান্তর: মলয় রায়চৌধুরী
যেদিন ঘটনাটা ঘটেছিল আমরা কফির আড্ডায় বসেছিলুম।
আমরা দিব্বি দিয়ে পরস্পরের উপস্হিতির কথা বলতে পারি ।
পরে, আমরা বাড়ি ফেরার গতানুগতিক রাস্তা ধরলুম ।
যে প্রতিবেশীরা দৌঁড়ে এসেছিল তারা নিশ্চিত বলবে ।
তারপর রোজকার মতো টিভি দেখে বিছানায় সটান হলুম।
সারা রাত আমরা কেউ উঠিনি ।
একটু এপাশ-ওপাশ করেছিলুম বিছানায়, কিন্তু ভালোভাবেই ঘুমোলুম
( আমরা ভাবলুম, ভালোবাসা সব রকমের অপরাধ চাপা দিতে পারে )।
যদি কেউ জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়া ছেলেটার কথা জানতে চায়,
আমাদের কাছে তার যথাযথ অ্যালিবাই আছে।
আমাদের চোখ ঘটনাটা দেখেনি,
আমাদের হাত সেই রক্তারক্তি ঘটায়নি ।
ইকরা খিলজি
ভারতীয় উর্দু কবি ইকরা খিলজি’র কবিতা
খবিশ KHABISH خبيث “Impure; base; wicked.”
ভাষান্তর: মলয় রায়চৌধুরী
আমি অশুদ্ধ, আমি নোংরা
আমি ভবঘুরেপনার প্রচারক
স্বর্গের বিশুদ্ধ পরিদের গানের
সৌন্দর্যের প্রতিমা আমি নই
আমি আমার কামনার দাসী
আমি লালসার বুদবুদ
আমি জীবন্ত, আমি ভঙ্গুর
তবু আমি অহঙ্কারের মিনার
আমি মাত্রাধিক অহমিকার মানুষী
তোমরা আমাকে কখনও ছুঁতে পারবে না
তোমাদের মনে হতে পারে আমি খড়ের বা লাঠির শব
কেনই বা আমি ভুয়ো আকাঙ্খায় গড়ব নিজেকে ?
তোমরা যতোটা স্বার্থপর, আমিও ততোই
কেনই বা আমি পরার্থতার প্রতিমা হবো ?
তোমাদের মতনই মিষ্ট আমার কথাবার্তা
আমি কেন মিছরির তৈরি সৎচরিত্রের দেবী হবো ?
আমি অতিসাধারণ
তোমাদের খাতিরে ভালো হবার ভার আমি কেন বইব ?
তোমাদের রয়েছে উন্নত হবার গর্ববোধ
কিন্তু খ্যাতি আমার কাছে সহজেই আসে
তোমাদের যদি প্রাণহীন হাসিমুখ ভালো লাগে
তাহলে শ্বেতপাথরের মূর্তি যোগাড় করে নাও
তোমাদের আনন্দের খাতিরে আমার কপালের বলিরেখা উবে যাবে না
আমার মুখমণ্ডলের ভাবভঙ্গী তোমাদের আদেশ পালন করে না
এমনকী তা তোমাদের খাতিরে নয়
আমি সৌন্দর্যের জিনিস নই
আমি বিনয়ের আজ্ঞাবহ নই
আমি লাবণ্যের কথা জানি না
আমি পুজো করা মানি না
তোমাদের স্নেহ বা মনোযোগ চাই না
মনে করার কারণ নেই যে তোমাদের ছাড়া আমি দুর্দশাগ্রস্ত
তোমাদের রাজত্বের প্রজা আমি আর নই
বাধিত নই তোমাদের কৃতজ্ঞতায়
মনে কোরো না তোমাদের প্রাসাদের আমি পাপোশ
এবার বলো, তোমাদের বিশ্বস্ততার প্রতিশ্রুতি কেমন ছিল
যখন আমি ছলনাময় তাবিজ হয়ে উঠি
যে তোমাদের জাহাঙ্গীর করে তুলেছিল
আমি আর তীরবঞ্চিত ঢেউ নই
স্বর্গের কৌতূহলে চেপে আমি উড্ডীন
ইতিহাসের পাতা আমাকে মুছে ফেললেও
বিশ্বাসীরা আমাকে আশীর্বাদ করবে
আমার দেহ আর আমার মনকে বহুকাল বোরখায় ঢেকে রাখা হয়েছে
কিন্তু এই অন্ধকার সময়ে আমার অস্তিত্ব দীপ্তিময়ী
আকাশে এমনই কানাকানি চলছে
শেকলে বেঁধে কতোকাল আমাকে পেছনে ফেলে রাখবে
আমার ক্ষমতা বহুকাল প্রদর্শিত হয়েছে
আর কতোদিন মাদ্রাসাগুলো আমাকে অপমান করবে
বহুকাল আমি পদাতিকের যুদ্ধ লড়ে চলেছি
আমার বিদ্রোহ এই পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে
আর আমার ষড়যন্ত্র দুর্বলও নয় মূর্খেরও নয়
যে ক্ষমতাপ্রাসাদ থেকে তোমরা আমাকে দাবিয়ে রাখো তাতে আমি ঢুকে পড়েছি
আমি তোমাদের জগতকে অলঙ্কৃত করার জন্যে যে সৃষ্ট নই তা তোমাদের জানার সময় এসে গেছে
তেনজিন সানদু
তেনজিন সানদু (জন্ম ১৯৭৭ ) একজন কবি, লেখক এবং তিব্বতি শরণার্থী এবং রাজনৈতিক কর্মী । ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তাঁকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সংক্ষিপ্ত মেয়াদে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার করেছে বা কারাগারে প্রতিরোধমূলক হেফাজতে নিয়েছে । যখন তাঁর বাইশ বছর বয়স তিনি তিব্বতে গিয়ে বসবাস করবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু তাঁকে গ্রেপ্তার করে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল । তেনজিন সানদু বলেছেন, "তারা আমাকে বলেছিল যে আমি ভারতে জন্মগ্রহণ করেছি তাই আমি তিব্বতে বসবাস করতে পারি না।"
তিব্বতি কবি তেনজিন সানদু’র (Tenzin Tsundue ) কবিতা
উদ্বাস্তু
ভাষান্তর: মলয় রায়চৌধুরী
যখন আমি জন্মেছিলুম
আমার মা বলেছিলেন
তুই একজন উদ্বাস্তু ।
পথের ধারে আমাদের তাঁবু
তুষারের ধোঁয়া ওড়াতো ।
তোর কপালে
তোর দুই ভ্রুর মাঝে
একটা ‘উ’ ছাপ খোদাই করা আছে
বলেছিলেন আমার শিক্ষক ।
আমি আমার কপাল
রগড়ে আর আঁচড়ে পেয়েছি
ধৃষ্ট এক রক্তবর্ণ ব্যথা ।
আমার তিনটে জিভ আছে
যে-জিভ গান গায়
তা আমার মাতৃভাষা
কপালে খোদাই করা ‘উ’
আমার ইংরেজি আর হিন্দির মাঝে
তিব্বতি ভাষায় কথা বলে ।
সলোমন ওচয়ো-ওবুরু
ইউগাণ্ডার কবি সলোমন ওচয়ো-ওবুরু-র কবিতা
যখন আপনি ঘুমিয়ে পড়েন
ভাষান্তর: মলয় রায়চৌধুরী
যখন আপনি ঘুমিয়ে পড়েন
একটা চোখ নিশ্চয়ই জেগে থাকা দরকার
কেননা যখন বিপদ আসন্ন
তার একজন সাক্ষী তো থাকবে
.
যখন আপনি ঘুমিয়ে পড়েন
একটা হাতের উচিত প্রস্তুত থাকা
কেননা যদি কোনো ডাকাত এসে পড়ে
হাতটা শরীরের রক্ষা তো করতে পারবে
.
যখন আপনি ঘুমিয়ে পড়েন
একটা কানের সতর্ক থাকা উচিত
কেননা কেউ যদি ফিসফিস করে কথা বলে
অন্তত গোপন কথাগুলো জানতে পারবে
.
যদি আপনি মারা যান, তাহলেও মরবেন না
মৃত্যুকে এমন কোনো ছাড় দেবেন না যে সে আপনাকে খুন করে কেটে পড়ে
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন