বাসুদেব দাসের অনুবাদ কবিতা
(মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ)


.কিশোর মনজিৎ বরা (২টি কবিতা)

ক)
একলব্য
(ভাষান্তর :- বাসুদেব দাস)


ব্যাধের সন্তান আমি 
এটাই আমার প্রথম এবং অন্তিম পরিচয় 

ইতিহাস বারবার আমার হাতে 
তুলে দেয় গুণবিহীন এক একটি ধেনু 
আর চতুর হাতে কেটে নেয় আঙ্গুল 

প্রাণাধিক গুরুদেব কেবল আমার 
আঙ্গুলটা কেটে নিল 
আমি তো মাথা পেতে দেবার জন্য প্রস্তুত ছিলাম 
একটি মাত্র উত্তরীয় গায়ে দিয়ে 
আমি একটি কল্পনার পৃ্থিবীতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম 
তাই আমার শরবর্ষণে কল্পনার শিল্প ছিল,
আরণ্যক নিস্তব্ধতা এবং অদৃশ্য 
দল হরিণের দলের মধ্যেও সেই 
সৃজনের সন্ধান করেছিলাম,এমনকি একজন 
কাল্পনিক আচার্যের সামনে আমি দীক্ষা নিলাম 
কুরুক্ষেত্রে কর্ণ এবং আমি একত্রিত হলে 
থমকে যেত স্বয়ং ব্যাসদেবের কলম 
আর মধুসূদন তোমার সুদর্শন
অথচ আমি নির্বিবাদে মেনে নিলাম 
নিয়তির নির্দেশ 
সঁপে দিলাম নিজেকে ভাগ্যদেবীর কোলে 

আর মহাকাব্য বুড়ো আঙ্গুলটা কেটে নিয়ে 
সমগ্র জীবনে আমাকে কল্পনা রাজ্যে নির্বাসন দিল –

ধন্য হে মহান ভারতরাষ্ট্র    


খ)
দীঘার স্মৃতি 
(ভাষান্তর :- বাসুদেব দাস)


দীঘার সমুদ্রতীরে আমরা 
একজোড়া মানুষ বসে আছি
আদিম একজোড়া মানুষ
আমাদের হাতে মোবাইল নেই 
চোখে নেই চশমা

হঠাৎ কিছু একটা স্মৃতি হয়ে যাওয়াটা 
আধুনিক মানুষের অসুখ 

পদাতিক সৈন্যের মতো ঢেউগুলির বেষ্টনী 
সন্ধ্যাবেলা। শঙ্খ বেচা মহিলাটির হাতের শূন্যতায় 
জীবনের ধূসর মিনতি



২.নুরুল সুলতান (দুটি কবিতা)

ক)
কবির ঘর
(ভাষান্তর :- বাসুদেব দাস)

                 

কবির ঘরে হরিণী নাচে 
চঞ্চল ময়ূর পেখম তুলে হাসে
সহস্র পদ্ম এবং এক ঝাঁক প্রজাপতি 
কবির ঘরে বৈশাখ আনে
জৈষ্ঠমাসের সূর্যের উত্তাপে 
গাছগুলি সাঁওতালী নৃ্ত্য নাচে
কবির ঘরে মানুষ আসে 
একঝাঁক নিশ্বাস উটের মতো গলা মেলে মেলে
শ্রমিক আলির গন্ধে 
কবির ঘর উন্মনা করে
কবির আঙ্গুলে সহস্র রাত আঙটি হয়ে আসে
কেতকী ফুলের পাপড়িগুলি 
কবির ঘরে কাগজ হয়ে উড়ে
কবির ঘরে কবি থাকে
কবির ঘরে কবির পায়ের ছাপ থাকে
পাহাড়ের শিলগুলি কবির ঘরে
বরফ হয়ে গড়িয়ে পড়ে
মন্দিরের চূড়াগুলি কবির ঘরে খেলা করে 
সমুদ্রের শঙ্খ এবং মৎস্য 
কবির ঘরের পরিচিত পদ্য 
কবির ঘরে আসলে একটা ঘর থাকে না
ঘর নামের একটা পৃথিবী থাকে
কবি একা পৃথিবীর জন্য
যুদ্ধে নামে।


খ)
কাজললতা
(ভাষান্তর :- বাসুদেব দাস)
         
এসো কাজললতা
আমার প্রেমিকের মুখে 
জানালা দিয়ে নেমে আসা আলোর ছায়া 
তোমার দীর্ঘ নিশ্বাসে
আমার নিশ্বাসের রাতে 
সেই পুরোনো অনুরাগের
আখরা মেলতে এসো
কাজললতা,তুমি শ্যাম বর্ণের
তুমি আসার পর থেকে 
আমার সমস্ত হলদে 
পার হয়ে উড়ে যাওয়া প্রজাপতি 
আর ফুরুৎ করে দেখা দেওয়া ভোমরা
তুমি এলে কিছুই থাকে না কাজললতা
বছরের পরে বছর সন্ধে 
শীতে নিস্তব্ধ একটি সকাল 
কেবল তোমার নামেই 
এঁকে রাখা আছে  
আমার প্রেমিকের বরণ ঢেকে 
দিয়ে যাও নতুনের ফোঁটা তুমি 
এই যে দুহাত মেলে দিয়েছি
দেখেছ কি কাজললতা 
ঠোঁটদুটি কীভাবে কাঁপছে।

৩.অলকেশ কলিতা (২টি কবিতা)

ক)
শিল্পভাবনা
(ভাষান্তর :- বাসুদেব দাস)

শিল্পভাবনা কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়?

কিসের জন্য বলে একবার জিজ্ঞেস করে 
সে চুপচাপ উল বুনতে থাকল।
ড্রয়িং রুমের একোরিয়ামটিতে 
মাছগুলি এখন কী করছে 
কেউ জানল না।

সকালে আমার গাড়ির চাকায় 
একটা বিড়ালের বাচ্চা মরেছে।
পথ হারিয়ে ফেলছে মমতা।
আমি এমনিতে এক গ্লাস জল ঢালছি,ঠাণ্ডা
সে বলল আমাকেও একগ্লাস দাওতো।
সাড়ে আটটা বাজে
কী কথায় সে আজ অল্প বেশি পরিপাটি হয়ে আছে ?
শিল্পভাবনা ?
হঠাৎ সে দুটো উলের ঘর দ্রুত খুলতে শুরু করেছে।
তথাপি মুখটা কেমন 
এমনিতে হাসছে বলে মনে হচ্ছে।

উলবোনা কাজটাতে কেজানে 
কতটা শিল্পভাবনা রয়েছে।


খ)
ঘাস
(ভাষান্তর :- বাসুদেব দাস)


আমি ঘাস ভালোবাসি 
তোমাদের না জানিয়েই তারা যেখানে পারে সেখানে জন্মেছে।
আমি ঘাস ভালোবাসি আমার মাথাটা গরম কর না।
আমার অষ্টধাতুর হৃদয়টা 
আমি ঘাসের মধ্যে হারিয়ে যেতে দিলাম।
ঘাসের মতো উঁচু আমি একটা বিষণ্ণ ছায়ামূর্তি 
আমার ক্ষীণ হয়ে যাওয়া মুখটা ঘাসে ভরে আসছে।
অনুগ্রহ করে আমাকে ঘাসের মধ্যে পড়ে থাকা 
একটা কেউটে বলে ভাব
আমার মাথাটা গরম কর না।
তোমরা আমাকে ভুলে গেলে 
আমি ঘাসের মধ্যে স্মৃতির  কাঁটা থাকা একটা কুলগাছ হতে পারব।
উপহারের কাগজে মুড়ে থাকা 
একটা কাটা মাথা না হয়ে 
স্মৃতিকে তোমরা যদি একটা বেলে কুল গাছ হতে দিতে।
পৃথিবীর আপনমনে গান গাওয়া পাখিগুলির জন্য 
তোমরা কিছুটা শান্তি দাও।
একটা গান তুফান উপড়ে ফেলে।
ঠোঁট থেকে ছিনিয়ে নেয় শিসধ্বনি।
একটি শিশুর নখদর্পণে 
পৃথিবীর বিষয়ে একটা ছোট রূপকথাঃসেটাঈ কেবল সুরক্ষিত।
একটি কবিতা খামচে আছে 
জোরে,একমুঠো সবুজ ঘাস 
আমি ঘাস ভালোবাসি।
আমার মাথাটা গরম কর না।  
  
 
৪.প্রেমনারায়ণ নাথ  (২টি কবিতা)

১)
বোবা মানুষটা
(ভাষান্তর :- বাসুদেব দাস)


দেশহীন ভাষাহীন সেই ভূখণ্ডের বোবা মানুষটা আমিই 
অপেক্ষা করছি আকাশের দিকে দুহাত মেলে
খোদাই করা আছে আমার কপালে 
লোহার গজালে দুর্দশার পঙ্কিল স্তবক
স্বপ্নহীন এই দেশে বাজিয়ে চলছি নিদ্রাহীন বাসনার সুর 
মুখহীন একটা মুখোসে নিয়ে আছি আর্তরব 

বলতে চেয়েও বলতে পারি না গাইতে চেয়েও গাইতে পারি না
ধাতব প্রাত্যহিকতায় ভিজে উঠা সূর্যের মুখে 
পাখির কাকলিহীন প্রভাত 
কাঁদলেও দেখবে না আমার চোখের জল 
কাঁদলেও শুনবে না আমার ক্রন্দন
জঙ্গল হারিয়ে ফুল না ফোঁটা আমি তোমাদের মাটির অসম
জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত গেঁথে রাখি ছোঁ
কঠোর মাটির এই ছোঁ-ঘরে

আশাও পূরণ হয় না যেখানে স্বপ্ন দেখিনা যেখানে 
দুব্বো জন্মায় না যেখানে দুপা পড়ে না 
আগুন হয়ে ছাই হয়ে  পাখি হয়ে  এক এক করে আকাশ 
এক এক করে মানুষ 
ফড়িং হয়ে স্ফুলিঙ্গ হয়ে লাফিয়ে নাচে যেখানে তাণ্ডব

দেশহীন ভাষাহীন সেই ভূখণ্ডের বোবা মানুষ আমিই 
অপেক্ষা করছি আকাশের দিকে দুহাত মেলে

টীকা-
ছোঁ- খড় মাটি দিয়ে তৈরি মূর্তির কাঠামো 
ছোঁ ঘর –অভিনেতাদের সাজঘর 


২)
ভ্যান গঁগের এই রাতের কাফেতে
(ভাষান্তর :- বাসুদেব দাস)

সুন্দর করে সাজানো রয়েছে চেয়ার-টেবিল
সুন্দর করে সাজানো রয়েছে সমস্ত ধরনের পানীয় 
সুন্দর করে সাজানো রয়েছে জীবন
এই রাতের কাফেতে 
হলদে আলোতে  আলোকিত অন্ধকার

সুন্দর করে আছে সাজানো আছে মন্ত্রণা 
সুন্দর করে সাজানো আছে ষড়যন্ত্র 
সুন্দর করে সাজানো আছে মরণের ফাঁদ 
এই রাতের কাফেতে 
নীল আকাশে কাগজের সাদা ফুলের মতো 

তারা ঝলমল 
মানুষগুলি এখানে অপ্রাকৃ্ত হতে পারে 
কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে দাম্ভিক সময় 
সোডিয়াম লাইটের আলোতে ভয়ঙ্কর চোখের চাহনি 
নিশাচরের ত্রৈমাত্রিক হাসি
এই রাতের কাফেতে
তান্ত্রিকের রক্তে আঁকা 
এক অপ্রাকৃত রাতের পট
সর্বনাশ হতে পারে 
উন্মাদ হয়ে যেতে পারে সবাই 
এমনকি মৃত্যু হতে পারে জীবনের ক্যানভাস
এই রাতের কাফেতে


৫.ডঃপূর্ণ ভট্টাচার্য  (২টি কবিতা)

ক)
একটি গাধার সঙ্গে একদিন
(ভাষান্তর :- বাসুদেব দাস)

এ.

একটা গাধার সঙ্গে একদিন শহরটায় ঘুরে বেড়িয়েছি
সে যেদিকে যেতে চায় সেদিকে গেছি
প্রশ্নানুসারে উত্তর দিয়েছি।
আকাশ ছুঁতে চাওয়া কয়েকটা অট্টালিকা দেখে 
গাধাটা আমাকে জিজ্ঞেস ক্রল-‘ওসব কী দাদা’?
সেগুলি ঘর।ধনে সাজানো মনের ঘর।
কল্পনার রাজপ্রাসাদ।উর্ধ্বমুখী।
সে ঈষৎ হাসল।
দুজনে যেতে থাকলাম
        দুজনে যেতে থাকলাম


বি.

হঠাৎ সে থমকে দাঁড়াল।
একজন মানুষ অন্য একজন মানুষকে ঘুষি মারছে
অন্যজনের নাক থেকে বয়ে আসছে ভেতরের রক্ত
একজন পুরুষ একজন মহিলার হাত ধরে টানছে
সে আমার মুখের দিকে তাকাল।
ও ওটা সিনেমা হল।
কিছুদিনের মধ্যেই মুক্তি পেতে চলা একটা সিনেমার পোস্টার।
আসলে কেউ কাউকে ঘুষি মারছে না 
কোনো পুরুষ নারীর হাত ধরে টানছে না 
রক্তও বের হয়নি 
আমাদের মনোরঞ্জনের জন্য দেখানো হচ্ছে।

কিছুটা দূরে গিয়ে গাধাটা থেমে গেল
সে যেন ভাবনা বিভোর।চিন্তায় আকুল।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম –কী ভাবছ
ভেবে ভেবে সে বলল
‘নিজেকে আমার গাধা গাধা বলে মনে হচ্ছে।’ 


  সি.

দুজনেই চলেছি 
দুজনেই চলেছি
একটা উদ্যানের কাছে সে দাঁড়াল।
উদ্যানে একটা মূর্তি রয়েছে।
একবার মূর্তিটার দিকে 
একবার আমার দিকে গাধাটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

ও সেটা একটা মানুষেরই মূর্তি 
পিতা শুদ্ধোধন।মাতা মায়াদেবী
গৃহত্যাগী।নিরঞ্জনা নদীর তীরে বসে 
আকাঙ্খার পূর্ণতাপ্রাপ্ত একজন মানুষ।
গাধাটা এবার কিছুই বলল না।
নিঃশব্দে 
তার চোখ থেকে প্রেম-অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। 


খ)
কথা
(ভাষান্তর :- বাসুদেব দাস)


কথা আমাদের পরম বান্ধব
কথা আমাদের পরম শ্ত্রু।
শ্ত্রু আর মিত্রের
যে অস্বাভাবিক সমাহার 
তার নামই কথা।

কথা দুই প্রকারের 
শ্ত্রু কথা,মিত্র কথা।

কথাটা,মানে বিষয়টা 
বিভ্রান্তিমূলক
অথচ কথাটা একেবারে সত্যি।

হাসি হয়ে কথাগুলি 
যখন হৃদয় সিক্ত করে
আমরা নীলিমার বুকে স্নান করি
করুণায় যখন ডুবে যায় 
কথাগুলি 
মায়ের চোখের জলে ঝরে
দুঃখের একবাটি অন্ধকার।

কথাগুলি আপনাকে 
অবলম্বন করতেও পারে 
অথবা নিরালম্বন ও করতে পারে।

অন্ধকারকে সাদা বললে 
যদি তুমি ছেড়ে দিতে পার হস্তিনাপুর
তোমার চুলে বাইতে পারে 
হীরার মতো মুক্তো।

মোটের ওপর
কথাটা কাটা না জ্ঞেলেও 
কথায় পুরস্কার না পেলেও 
কথা তোমাকে বান্ধব সাজাতে পারে 
অথবা শ্ত্রু সাজাতে পারে

তুমি কী স্থিতিতে থাকবে
তার সিদ্ধান্ত তোমার নিজের।


৬.ভূপেন গগৈ  (২টি কবিতা)


ক)
রিক্সাওলা
(ভাষান্তর :- বাসুদেব দাস)


তৃতীয় বিশ্বের 
স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে 
অন্যতম সে ।

সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত 
পরিশ্রম করে।
তিনটি চাকার ওপরে ভর দিয়ে
ছেঁচড়ে নিয়ে বেড়ায় 
ক্ষুধা আর রুটির কিছু 
আদিম স্বপ্ন।

মানুষের ভিড়ের মধ্যে সে
নিরন্তর মানুষকে টানে।
গাড়িগুলির প্রতিযোগিতার মধ্যে সে 
দ্রুততার সঙ্গে সাইড চায় 
অপরিচিত কারও
গন্তব্যস্থানে।

রাতের পর রাত 
আধপেটা ভাত 
কিছু মদ আর কিছু 
অসুরক্ষিত যৌনতার বাইরে সে 
কিছুই জোড়া দিতে পারে না 
দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে।

একদল ছোট ছোট সন্তানকে ছেড়ে 
তাঁর প্রথম পত্নী পালিয়ে গেল
একজন ট্রাক ড্রাইভ্রারের সঙ্গে।
দ্বিতীয়জন মারা গেল 
ডেঙ্গু ম্যালেরিয়া জ্বরে ।
তৃ্তীয়জন গর্ভবতী 
চতুর্থ সন্তানের।
বিকেলের উনুনে 
তাই তাঁর বহু রুটি চাই।
একদিনের আয়ে হয়ে উঠে না 
পর্যাপ্ত চাল-আটা-কেরাসিন
আর মদ
        অথবা শীতের দিনের 
        একটি কম্বল।

        তৃতীয় বিশ্বের 
        স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে 
        অন্যতম সে।
 


খ)
কবির ঘর
(ভাষান্তর :- বাসুদেব দাস)



প্রতিদিন 
আমি আমার ঘরে ফিরে আসি 
যদিও আমি জানি 
আমার ঘর আমার আশ্রয় নয় 

তবু ফিরে আসি 
বিকেলের বাজার শেষে প্রতিদিন 
আমি আমাকে টেনে আনি
আঁকাবাঁকা একটা পরিচিত পথ দিয়ে 
কারণ আমার ঘরে এখনও আমার 
বৃ্দ্ধ মা বাবা আছে
পুত্র পরিবার আছে
ক্ষুধা আর মৈথুনের রাতগুলি আছে
আধো ঘুমের স্বপ্নগুলি আছে

সবাই 
আমাকে পেছন থেকে টানতে থাকে 
দূরে যেতে দেয় না 
হারিয়ে যাব বলে ভয় করে

আমার সন্তান আমাকে বলে –
কবি হতে হবে না আপনি আমার 
পিতা হয়ে থাকুন
আমার পত্নী আমাকে বলে-
কবি হতে হবে না আপনি সব সময় 
আমার পতি হয়ে থাকুন
আমার বৃ্দ্ধ মা বাবাও বলে
আমার পত্নী এবং সন্তানদের হতে

আমি কাউকে অস্বীকার করতে পারি না 
তাঁদের জন্যই আমি প্রতিদিন 
বাড়ি ফিরে আসি এবং 
সকালবেলায় খুঁজতে বেরোই 
ক্ষুদকণা।।



.কৃষ্ণকায় মাঝি  (২টি কবিতা)


ক)
শূন্যতা
(ভাষান্তর :- বাসুদেব দাস)


একদিন আমি শূন্যতার সাঁকো দিয়ে বেয়ে বেয়ে 
শূন্যতা দিয়ে একটি ঘর বানালাম 
আমার ঝুলিটাও ছিল শূন্য 
পকেটও ছিল শূন্য 
আমার অজ্ঞাতসারে শূন্যতার ঘরে প্রবেশ করল 
একটু আলো 
আলো জিজ্ঞেস করল 
তোমার চোখে এত শূন্যতা কেন 
রোদ আমাদের শূন্য ঘরের চালে উঠে জিজ্ঞেস করল 
তোমার হৃদয়ের শূন্যতা কে পূর্ণ করবে 
আমি খুঁজে খুঁজে আকাশকে আনলাম 
শূন্য ঘরের চালে শূন্য একটা আকাশ চাই 
শূন্যতার বাক্সে বৃষ্টি এত রঙ মাখে 
আমি বুঝেও বুঝতে পারলাম না শূন্যতা পূরণ করার জন্য 
এক কাঠা এক বিঘা মাটি কেন লাগে 
কেবল মাটি আর জলেই 
শূন্যতার সম্পূরণ অথবা সমাধি তৈরি করতে পারি 
শূন্যতার হাতে ধরে 
আমি আবার একটা শূন্য শহরে উপস্থিত হলাম 
শূন্যতার চিৎকারে শূন্য হয়ে পড়ে আল্লা-ঈশ্বর 
কেবল শূন্যতাই ঘিরে রাখে চারপাশের ফুঁপিয়ে কান্না
আমার হাত ঘড়িতে এখন সময় শূন্য 
ধীরে ধীরে শূন্য হয়ে আসা একটি নদী 
খুঁড়ে খুঁড়ে জলের খোঁজ করলাম 
বাতাসে শূন্যতার একটা ভায়োলিন বাজাতে বাজাতে 
সমস্ত কিছু শূন্য করে দিল
এবার শূন্যতার ক্ষয়ীভবন টুকরো টুকরো করে খসিয়ে 
শূন্যতায় আমাকে পুঁততে থাকে 
আমার শূন্য হয়ে আসা রক্ত-মাংস-জল 
শূন্যের মধ্যে বিলীন হয়ে গেল
প্রকৃতপক্ষে আমি ও শূন্যই
বিশ্বাসহীনতার
অসীম শূন্যতায় ছিটকে পড়া 
নামহীন একটা শূন্য তারা… 


খ)
শকুনের চোখের জল
(ভাষান্তর :- বাসুদেব দাস)


আধমরা একটা শকুন সেদিন ছটফট করছিল 
একদিন একরাত মৃত্যুভাবনা তাকে চুষে খাচ্ছিল 
তার পাখায় বসে মাছিরা ভনভন করে গন্ধ ছড়াচ্ছিল 
তার মৃত্যুর আর কয়েকপ্রহর বাকি 

ছটফট করতে করতে হঠাৎ তার প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেল
মাছিরা দলে দলে হাসতে লাগল
মাছিগুলি লালকেল্লা থেকে উড়ে এসেছিল 
গগন বিদীর্ণ করা চিৎকার শুনে 

তার সঙ্গের শকুনগুলি কয়েকফোঁটা চোখের জল ফেলল

শোন শোন 
একদিন একদল শকুন শব টেনে টেনে খাচ্ছিল 
অকস্মাৎ শঙ্খ গতিতে 
আকাশ থেকে একটা সারস নেমে এল

শকুনগুলি চেঁচামিচি শুরু করল 
আর সঙ্গীদের বলল পালা পালা 
বেচারা ক্ষুধাতুর শকুনগুলি 
বাপ কাকার বৃত্তি ছেড়ে যায় কোথায়

একে একে চাপে শকুনগুলি মাংস বমি করে দিল 
(দিল্লিকা লাড্ডু খেলেও মজা নাখেলেও মজা।) 
সবাই জানে 
শকুনের অভিশাপে বুড়ো গরু মরে না…

1 মন্তব্যসমূহ

  1. A benign gesture from Mr. Basudev das and "bhubondanga" to spot the limelight upon some fresh and important poets from Assam. Heartening and humbling to find my poems amidst these noteworthy translations, they look very satisfying in Bangla. The bridge between the two languages has always been enabling and we hope for its further benefits to readers. Once again thanks a lot to "bhubondanga" and Mr. Basudev das.

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন