সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
একদিন টাকি ভ্রমণ
যেখানে যাই অন্তত একটা করে ছবি তুলি আজকাল
মুহূর্তদের গায়ে জাপটে থাকা বাতাস
ছবির ভেতর ছুটে আসে যেন...
আসলে এসবও এক ছুতো।
যে শূন্যতা গিলে খেতে চায়
ক্যামেরাবন্দী করে তাদের পাঠাব ভাবি কতবার
তোমার ঠিকানায়…
#
তখন মাঝনদীতে,
ইছামতী কাঁসাই বিদ্যাধরী ঘিরে ছুটছে যেন
দামাল ছেলে আর চুলগুলো
এলোমেলো করে বলছে 'টুকি'।
মাছরাঙা দ্বীপ, বাংলাদেশ, কেয়ার জঙ্গল
কুয়াশামাখা আবছা দুখান নৌকা ভেসে উঠছে মাছের মতো।
চর পড়েছে আশেপাশে
কত ছবি ধরে রাখা যায় না আরো গভীর হতে গিয়ে।
জলের নীচে শব্দ ভেসে ওঠে ।
এক একটা মুখ,
বোবা আয়নার মতো চিহ্নিত করে জীবনমৃত্যু।
#
হয়ত মা বাবা এলে ভালো লাগত আরো।
ভয়ে বন্ধ করা চোখ
অনাবিল চিৎকার
বাক্যহীন হতে হতে ক্রমশ ঢেউ ঢুকে
পড়ছে যেন খালের ভেতর
শিরা উপশিরায় শিরশির করে শীতলতা।
ডুবতে ডুবতে গলা বুজে আসে।
শব্দেরা লাঙল চালায়
দুলে ওঠে সবুজ ফসল।
#
গোলপাতার জঙ্গল, ভেঙে পড়া রাজবাড়ি, ঠাকুরদালান
তবুও খুঁজে পাইনি নবছর আগের
পুরোনো সেই গ্রাম।
খেজুরের তাজা রস
পাটালির গন্ধ আর কতবেলমাখা...
ফসল কাটার পর যে জমি দিয়ে হেঁটে গেছি তখন
এখন পাকা রাস্তায় হোঁচট খাই বড়ো।
এ মসৃনতা তছনছ করে দাবার সাজানো ছক।
#
নদীর কাছে আসি। চেয়ে থাকে বুনো পাখি
ঘোলা জলে ডুব দিয়ে যায়
কত ফেরিয়ালা বাড়ি ফেরে
মাঝিদের কাজ ফুরোয় না যেন
ডিঙিগুলো জ্বলে ওঠে এক এক করে।
একটা ছবি ভেসে আসে।
ক্যামেরা তুলতে তুলতে দেখি
তুমিও কেমন চেয়ে আছো সূর্যাস্ত দেখবে বলে!
১৮.
দেবশিশু
কালো নদীর মতো মুখ
সন্ধে প্রদীপ চোখে যে মেয়েটি
লালসুতো বেঁধেছিল গাছে গাছে
কত সাধু তুকতাক
ধোঁয়ার কুন্ডুলী ছুঁয়ে গঞ্জনার আহুতি
সত্যিই কি ঈশ্বর শুনতে পান?
বন্যা আসে।
ধুয়ে যায় অভিশপ্ত আঁধার
সে যেন এক দেবশিশু
হাসিতে আলো ছড়ায়
দুহাতে জড়িয়ে মা তার মাথা ছোঁয়ায়
জাগ্রত দেবীর থানে!
১৯.
ফিরে আসার দিনটি
#
আজ ফেরার পথে
তাকিয়ে দেখছি যেখানে
আকাশ ও নদী কোন আলাদা শরীর নয়…
ভেসে চলেছি অনিদির্ষ্ট ফেনার পিছু পিছু
অচেনা এক যাত্রী ছুঁড়ে দিচ্ছে দুটিটাকা গঙ্গার জলে
এই যে জলের সাথে কথা বলি এত
আমায় কি পাগল ভাবো?
কত ছায়া সবুজ জলের সাথে মেশে
লঞ্চের পিছনে সাদা বুদবুদ কাটে স্মৃতি
পুরোনো হাওয়া উঁকি দিচ্ছে চোখে মুখে
এ আমার ভালোবাসার শহর,
যন্ত্রণার শহর।
#
ছবিগুলো তুলতে তুলতেই তোমাকে পাঠালাম
উত্তর আসবে না জানি,
শুধু মনে করাতে চেয়েছি কিভাবে
আমাদের অদৃশ্য উপস্থিতি চেয়ে আছে গঙ্গার চড়ার মতো
যেভাবে আকাশ মিশেছে জলের গভীরে
হয়ত আজও কোথাও আমাদেরও রঙ এক।
#
লঞ্চ ভিড়ছে ক্রমশ জেটির দিকে
কমে আসছে জলের টান
ছদ্মবেশ চেপে বসছে বুকের ওপর
ভিজে পা বাড়িয়ে দিই কাঠের পাটাতনে
তোমায় ছেড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা সে শহরে ফেলে রেখে
এগিয়ে যাই আরো চারটে পা , ভিড়ের ভেতর আবার
একা থাকার জন্য!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন