মানসী বিশ্বাসের কবিতা
১.
মা
ঘন চুলে সন্ধ্যে নামতে
রুটি করা, কড়া পরে যাওয়া হাতে
ক্ষমা আর মলম
জ্বর হলে খুব ভালোলাগে
সারারাত জাগা চোখের মায়ায়
অসুখ, আরো অসুখ চাই
২.
যে পাড়ায় ঘুম আসেনি বহুকাল
অচিরেই নিভেছে ঢেউ
মরে গেছে কলরব
পোকাতে খাওয়া পাতা গুলো সামনে বিছিয়ে
বসে আছি
নির্মেদ সত্যি নিয়ে
জানি, আমরা পাল্টে গেছি
একরাতে কেউ ঘুম পাড়াতে আসে না শহরে
জট পাকানো ধুলো ঝেড়ে উঠে আসা শিশু খোঁজে আশ্রয়
মা কোল নিয়ে আসে
বোঝানোর আগেও পাশে ছিলেন যিনি
যে পাড়ায় ঘুম আসেনি বহুকাল,
সে পাড়ায় তুমি না এলে
আড়ি...
৩.
গেরস্ত ভিটে
হুড়মুড় করে নেমে আসছেন বনদেবী
বাঁশের চল্লায় খাপছাড়া বুক
উঠছে নামছে
কতগুলো মুখ, কয়েকশো হিংস্র ঠোঁট
শৃগাল দৃষ্টি
বদলে একটি পরিণত শরীর
বনদেবী আসছেন
নিঃসাড় শরীরে উঁকি মারে জোনাকি
গেরস্ত ভিটেয় চাপচাপ রক্তের দাগ স্পষ্ট
৪.
হাভাতে
পুণ্যির পায়েসে একফোঁটা গোচনা
হিসেব দস্তাবেজের বন্দিঘর
না শূন্য মানুষের ঘরে অতিথি
একচুমুকে ছিনতাই অধঃস্তন
রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া চুঁইয়ে
ক্ষোভ
প্রেম অধরে একচুমুক নেশা
মারাত্মক হাভাতেরা
খুশিতে হন্য
তুমি কি চিনবে প্রাক্তনের গোলাপকে!
৫.
ছোঁয়ার পরে
বহুবছরের শোকে পাথর হওয়ার পর
যখন দেখা হবে আমাদের
তোলা থাকবে কিছু কথা
কিছু স্মৃতি, অভিনয়
কিংবা টুকরো করে রাখা ছোঁয়া
গরম ভাতে মাখা মাংসে খুঁজবে রক্ত
লালফিতের বেণীতে প্রিয়তমা আরো সুন্দরী হবে
ক্ষণিকের জ্যোৎস্নায়
আমাদের স্বপ্নে ছোট্ট প্রজাপতি
ছুঁয়ে দেবে নরম পা
হৃদয় নিঙড়ে বেরিয়ে আসবে দুঃখ
সুখের আঙিনায় ছড়াবো যাকে
৬.
শরীর
এতোটুকু ধূসরের নিচে মেঘ, শান্ত বাতাস
মুঠোধান, আঁচল, স্মৃতির উল্লাস
সব বোগাস! সবই!
কিছুদিন অন্তরে হাত রাখি,
বসন্তের গান শরীরে,
অথচ, অথচ কি বিপুল খরা এসেছে শরীরে,
একটা হাত নেই সেখানে...
বিনিময়ে উষ্ণ চোখ আর ইশারা মাত্র
ধুয়ে নেবে আর্তকান্নার আওয়াজ
এ শরীর?
৭.
পড়ন্ত আলোয়
ধরো একটা সন্ধেতে আমাদের দেখা হল
অভিমানের চোখ ঠেলে সরে গেলাম অন্য পাশে
ঠোঁট কেঁপে গেল অজানা এক ভয়ে
তুমি সরে যাবে তো আমার মতোই?
নাকি পাশে এসে বলবে
চলো ঘুরে আসি আরেকটু
এটুকু ঘুরেই ক্লান্ত হলে?
নাকি ফুচকার টকজলে কাটবে বাকি কথা...
ধরো এক বিকেলে দেখা হল হঠাৎই
আমি সরে এলাম
আচরণে আঁকলাম অপরিচিতা
তুমি কি অবহেলা টানবে কাঁধে?
কিংবা এসে
বলবে, ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেন?
আবার আগের মতো চোখের তলায় পড়েছে কালি...
ঘুম হয়নি কয়েকদিন...
আগের মতো আসি না অনলাইনে...
ঘন ঘন পাল্টাই না কেন ডিপি ...?
ধরো এক রাতে
মার্জিত আর চুপচাপ আমিকে দেখে থমকে গেলে
জিজ্ঞেস করবে তো এত চুপচাপের কারণ?
দমকা বাতাসে কানের লতিতে আটকে থাকা চুল
উড়ে যেতে চাইবে যখন জোৎস্নার স্নিগ্ধতায়,
হাত দিয়ে সরিয়ে বলবে...
আবার কি বন্ধু হতে পারিনা আমরা?
তোমার বন্ধু হতে চাইব না আমি
ইচ্ছে করেই বলব, বন্ধুর অভাব নেই আমার
তুমি জোর করে আসবে আগের মতো,
ফিরে ফিরে বলবে দূরে ঠেলে দিতে নেই
কাছে টানলে আঁকড়ে রাখতে জানতে হয়...
আমাদের পুরনো ভুলকে মূর্ছা যেতে দাও পড়ন্ত আলোয়
একবার অন্তত সৎ সাহস রেখে
পারবে না বলতে?
৮.
সেই মেয়েটাকে
এমন কিছু দিন রেখেছি তার কাছে
বুকে বুক ঘষে রাখা আছে কথা
জিভে ঘষা আড়ষ্টতা
খোঁলা বাঁধা চুলে আলতো গোলাপ
কাঁটা বেঁধা চোখ, হালকা কাজল, ছোট্ট টিপ কালচে
পেন দিয়েছি, আমার বিরুদ্ধে বলেছি লিখতে
ডায়েরি দিয়েছি, বলেছি এতে ক্ষোভ লেখো
অন্ধকার জুড়ে লিখে দিও নাম জোড়া
জায়ার মতো থেকো খোঁপা বিহীন চুলে
ঠোঁট জুড়ে একেঁছি কয়েক চুমুক হালকা মেদুর রোদ
আল্পনা ঘেরা জোৎস্না,
অসহ্য কোমরবাঁধা, একটু উঁচু করে পড়া টিপ...
এমন কিছু দিন রেখেছি তার কাছে
বলেছি আসব ফিরে কোন একদিন
৯.
আ যোনি লম্বিত
চলন বাঁকা তাতে হয়নি ক্ষতি
মুখ ঘোরানো পঙক্তিতে আটকে প্রভা
কিছু গণিতের শেষে গরমিলই ভালো
নাকউঁচু স্বভাবে পড়েনি ছেদ
অন্তঃমিলের লালকালি শুকিয়েছে বহুদিন
আমরা ভয় পাই প্রেমে পড়তে
অতঃপর লাল গোলাপের কাঁটায় এঁকে দেব ঘ্রাণ
চোখের কাজলে অনুরাগ
অধরে অভিযোগ যত
একপৃষ্ঠা পড়ার পরে উলটে দেখো
বদলায়নি কিছুই
শুধু
কৌমার্যের কিছু সংজ্ঞা আছে কোমর জুড়ে
১০
সেই কবিকে
চলে গেছো বহুদূরে
কিছু খলবলে ব্যথায় আক্রান্ত বুক
না, বলা হয়নি সব কথা
ইচ্ছে করেই বলেনা অনেকে
কিছু জটিল অঙ্ক জটিল বলেই আনন্দ আসে
বহুদিনের কথা এক নিমিষে ক্ষান্ত
কথারা ফুরিয়ে আসে কাছে এলে
তুমি বরং দূরেই থাকো,
আদর মাখব অন্ধ মাঝরাতে
উপরের ঠোঁটে জমা রাগ যতদিন না মোছানোর দায়িত্ব নেবে
চূড়ান্ত ব্যস্ততার যবনিকা যতদিনে না নামবে
যতদিন না চোখে চোখ রেখে বলবে কথা
ততদিন কবি তুমি ভেবো একজন আজও কথা বলার অপেক্ষায়
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন