পোস্ট মডার্ন  কবিতা : কিছু কথা
পর্ব:১
তাপস গুপ্ত

যদি বলা হয় পোস্ট মডার্ন হল সময়ের অথবা নির্দিষ্ট সময়ের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির একটি নিয়ন্ত্রিত প্রচলিত পরিভাষা যা সাংস্কৃতিক কার্য কলাপ জনিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুলভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে এই তত্ত্বটির অথবা ধারণাটির বিন্দু বলয় দূরবীন দর্শনে চেষ্টা প্রাপ্ত হল মাত্র।
বিষয়টির দোরগোড়ায় পৌঁছনোর পূর্বে একথা জানিয়ে রাখা আবশ্যক যে,পোস্ট মডার্ন কি, কাকে বলে ইত্যাদি সংক্রান্ত আলোচনা এখানে গৌণ উদ্দেশ্য মাত্র,মুখ্য উদ্দেশ্য নয়।রচনাটির মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইওরোপ ও আমেরিকার কিছু পোস্ট মডার্ন কক্ষস্থিত কবিদের  অনুবাদিত কবিতায় তাঁদের ছুঁয়ে দেখা।
কবিতার  অনুবাদই এখানে মূল বা মুখ্য পদ, পথও। আশঙ্কা এই যে, অনেক সময় গৌণ, মুখ্য কে ছাপিয়ে  যাওয়ার আবেগী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। স্বস্তি এটাই, আশঙ্কা যখন পূর্বেই নিরূপিত তখন ভারসাম্য বজায়ের দায় ও দায়িত্ব রক্ষিত হওয়ার আন্তরিক চেষ্টা থাকবে।

পোস্ট মডার্ন শব্দটির প্রায়োগিক বহুলতা কেবল মাত্র  এ্যাকাডেমিক বিধি ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধ নেই;দর্শন, চলচ্চিত্র,শিল্প,সাহিত্য,সংস্কৃতি ক্ষেত্র ছাড়াও  নির্মাণ শিল্পের পরিকাঠামো জুড়েও তার ব্যবহারের সমগ্রতা লক্ষ্য করা যায়।২০১১র ২৯ জুলাই শুক্রবারের "দ্য গার্ডিয়ান " দৈনিকে ফিল্ম ক্রিটিক পিটার ব্র্যাডশ হলিউড প্রোডাকশনের 
' ক্যাপ্টেন আমেরিকা: দ্য ফার্স্ট এ্যাভেঞ্জার্' সম্পর্কে লিখলেন "ক্লেভার পোস্ট মডার্ন টুইস্ট"।
আবার একই দিনে ওই সংবাদ পত্রের সাহিত্যের পাতায় " Gods Without Men" নভেল সম্পর্কে ক্রিটিক হ্যারি কানজরু লিখলেন,"আয়রণিক পোস্ট মডার্ন সফিস্টিকেসন"।

সিনেমা ও সাহিত্য দুটি ক্ষেত্রে শব্দটির ভিন্ন মাত্রায় প্রয়োগ কৌশল লক্ষ্য করা গেলেও এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যেতে পারে নিহিত অর্থের দুটি ক্ষেত্রেই   তার যথাযথ ' ডিসকোর্স ' ঘটেছে।
 ১৯৩০ এর দশকে স্পেনের চিন্তাবিদ ফ্রেডেরিকো দে অনিস প্রথম ' postmodernismo ' শব্দটি ব্যবহার করেন। ইনি আবার উনামুনোর বন্ধুও ছিলেন। এই সময়ের স্প্যানিশ কবিদের কবিতার বিশেষণ এবং দ্যোতক হিসেবে শব্দটির সৃষ্টি। এরপর দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের শেষে এটি পাড়ি দেয় আমেরিকায়। সেই ইতিহাস ছুঁয়ে দেখার পূর্বে  আমরা আমেরিকান কবি ডোনাল্ড জাস্টিসের একটি কবিতা পড়ে নেব: কবিতার নাম " Beyond the Hunting Woods ", যার নামকরণ করেছি "মৃগয়াসন্ধানী অরণ্যবৃক্ষ ছাড়িয়ে "


মৃগয়া সন্ধানী অরণ্য বৃক্ষ ছাড়িয়ে( beyond the hunting woods)

মৃগয়া সন্ধানী অরণ্যবৃক্ষ কাঠ অতিক্রান্ত
সেই বহুদূরের অজ্ঞাত প্রাসাদ দুর্গের কথা বলতে চাই, 
যার দূর্গসম মিনারে ছিল 
উনিশ শতকের ঠমকি ঠাট শৈলী
যেখানে দীর্ঘ ঘাসের পাতায় ছিল
শত শত আগুন ফুলকির জোনাকি লম্ফন,
দুষ্ট ক্ষতের মত ভাসে
কীটে খাওয়া জুঁই গোলাপের গন্ধ,
সেই চমৎকৃত সময়ের স্মৃতি ছবিতে আছে
মহিলা আর কুমারী ঠোঁটে সাসাফ্রাস পাতা ছাল
আর বুনো এল্ডারবেরি ওয়াইনের
বিষাক্ত নেশার চুমুক,
শিকার প্রিয় অরণ্যবৃক্ষ থেকে আরো দূরে
মানুষটি বসে আছে তার শিকারি লাল হাউন্ডের
পোষ্য হিংস্রতায় 
অলীক অথবা রূপকথা ছবির মত স্থির পশুবৎ।

সেই আগন্তুকের কাছে জানতে চাওয়া যে
বিশিষ্ট ওই মিনার গৃহের অন্বেষণে আবিষ্কারে পাবে না  হাওয়া অথবা জীবন্ত বস্তুর জলবায়ু,
স্নিগ্ধ সুরায় নিঃশেষিত মুগ্ধ সময়
বিলুপ্তি পাবে শোধিত অতীত গর্ভে,
আর নারীরা থাকবে তার অথবা তাদের
বিশুদ্ধ পরিচ্ছন্ন ত্রুটিহীন অভিক্ষিপ্ত
অঙ্গের কঙ্কালে
এবং
শিকারি অরণ্যের বৃক্ষচ্ছায়
রহস্য কুহেলির মত্ততায়
মহোদয় হারাবেন বুনজ দৃশ্য দর্শন
হারাবেন ঝাঁঝালো সুন্দরী অবয়ব ঝাঁঝ,
এরপরেও কি আসবেন কখনও
কখনও বা
এই মৃগয়া সন্ধানী বৃক্ষমাঝে?

১৯২৫ এ মিয়ামির ফ্লোরিডায় জন্ম নেওয়া ডোনাল্ড জাস্টিস তাঁর নির্বাচিত কবিতার জন্য ১৯৭৯ তে পুলিৎজার সম্মানে ভূষিত হন। দীর্ঘদিন আইওয়া ইউনিভার্সিটির সাহিত্যের কর্মশালার সঙ্গে যুক্ত মানুষটি তাঁর সৃষ্টির ক্ষেত্রে সব সময়ই ছিলেন ' সিরিয়াস এক্সপেরিমেন্টালিস্ট ' ।

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন