'কবিতার মুহূর্ত' – কতখানি কবিতা আর কতখানি মুহূর্ত

সংযুক্তা পাল

----------------------------------------

"অথবা যখন মরিয়া বেগে ছুটে আসে বন্যার জল, জনপদ যখন ভেসে যায় হাজার হাজার মানুষের ঘর ভেঙে দিয়ে রাত্রির অন্ধকারে,যখন পশু আর মানুষ একই সঙ্গে হাহাকার করে বাঁচার তাড়নায়,মাইল মাইল জলের ওপর ভেসে থাকে কয়েকটি উঁচু দ্বীপের মতো সাময়িক আশ্রয় শুধু, চোখের সামনে যখন মানুষই বাঁচায় আর মানুষই মারে,যখন রাত্রিশেষে ঝকঝকে সূর্য পরিহাস নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে ঘোলা জলের উপর ভেসে-যাওয়া শবে,সেই প্রখর বাস্তব অথচ অবাস্তব মুহূর্তই আজ আমাদের কবিতা লেখার মুহূর্ত"


কি এই প্রখর বাস্তবতা? উপরের অংশে চিত্রকল্পময় প্রায় সম্পূর্ণ বর্ণনাটাই বাস্তব ; পায়ের নীচে থৈ থৈ জল, দাঁড়ানোর সম্ভাব্য এক চিলতে জায়গার অভাব এদিকে আকাশে ঝকঝকে নীল মেঘ কিংবা সুদূরবর্তী 

কাঞ্চনজঙ্ঘার ক্রমশ কাছে সরে আসা , এই চমকপ্রদ বৈপরীত্যই জীবন—বাস্তব জীবন কিন্তু সংশয় হল 'অবাস্তব' শব্দটা নিয়ে।এই অবাস্তব আর বাস্তবের মধ্যেকার যে দ্বন্দ্ব কিংবা টানাপোড়েন বা সম্মিলন তাই যখন যাপন হয়ে ওঠে এবং সেই যাপিত মুহূর্তই কবিতার মুহূর্ত তখন তো শব্দটা এক স্বতন্ত্র অভিনিবেশ বা গুরুত্ব দাবি করে যার উত্তর বোধহয় শঙ্খ বাবু নিজেই দিয়ে দিয়েছেন উপরিউক্ত অনুচ্ছেদের শেষে –"মৃত্যু তার মুখে রেখে যায়, রেখে যাক , কেবল জীবনের সৌন্দর্য।"

রবীন্দ্র দর্শন এ কথা আগেই বলেছে আমাদের প্রয়োজনটুকুই সত্য ; প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা কিছু তা আসলে উদ্বৃত্ত এবং এই উদ্বৃত্তের মধ্যেই নিহিত থাকে শিল্পের সৌন্দর্য;তাই জলের তোড়ে ভেসে যাওয়া মৃতদেহ কোনই সৌন্দর্যের বার্তা বয়ে আনে না কিন্তু ওই মৃত্যুই চরম অব্যবস্থা,অসাম্য, জীবনের অপরিপূর্ণতা সব কিছুকে অতিক্রম করে তার মুখে জীবনের সৌন্দর্য 'রেখে যায়'-এই বিশ্বাস কিংবা 'রেখে যাক' এই আকাঙ্ক্ষাই সৌন্দর্যের পরিচায়ক হয়ে ওঠে। আসলে এও এক রাবীন্দ্রিক চেতনা যেখানে শুভ বোধ, মানবীয় বোধ, কল্যাণ বোধের সঙ্গে সৌন্দর্যবোধ বা ধারণাটিও সম্পৃক্ত হয়ে যায়।এই বোধ বা ধারণার মধ্যে অবাস্তবতা থাকলেও, চূড়ান্ত কিংবা নৃশংস সত্য-লাঞ্ছিত বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে ওই অবাস্তবতাটুকুই  বা প্রজ্ঞা মিশ্রিত কল্পনা, জীবনানন্দের ভাষায়  বলতে পারি 'কল্পনাপ্রতিভা' ই রচনা করে চলে শিল্পের মুহূর্ত–'কবিতার মুহূর্ত'।এই মুহূর্তই সৃষ্টি করে 'আরুণি উদ্দালক' এর মত কালজয়ী কবিতা। জলপাইগুড়ির ভয়ংকর বন্যার অভিজ্ঞতা যার নেপথ্যে এক ক্রিয়াশীল ইতিহাস হিসেবে অবস্থান করে– 'আর সেই অবসরে ফেটে যায় জলস্রোত, কেননা প্রকৃতি নাকি শূন্যের বিরোধী।'

কিন্তু শুধু কি জলস্রোত? অভিজ্ঞতার মধ্যে সঞ্চিত হয়ে থাকে আরও কিছু–রাজনীতি, মানুষকে নিয়ে করা রাজনীতি, মানুষকে আরও অসহায় করে তুলে ক্রমশ দুরবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রবল কৌশল–


'এ-ও এক জন্মাষ্টমী যখন দু-হাত-জোড়া নীলশিশু হাতে নিঃস্ব দেহ/জল ভেঙে যায়/....... মুহূর্তের তুড়ি লেগে উড়ে যায় সমূহ সংসার/কেননা দেশের মূর্তি/কেননা দেশের মূর্তি দেশের ভিতরে নেই আর !'

এসবকিছুই নিভৃতে চারিয়ে যায় আর তাই একসময় নজরে পড়ে প্রবল অসংগতি–

জলপাইগুড়ির বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারি ত্রাণ নিয়েও যখন চূড়ান্ত অব্যবস্থা  যার প্রতিবাদে মিলিটারি বেয়োনেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে হয় কোন যুবককে; বাঁধ ভেঙে যেতে পারে যে কোন মুহূর্তে জানা সত্ত্বেও সরকারি তরফে শঙ্কা না ছড়ানোর অজুহাতে নির্লিপ্তি বজায় রেখে কোনরকম সতর্কতা জারি করা থেকে বঞ্চিত করা হয় সাধারণ মানুষকে তার পরিনতি কি হতে পারে জেনেও ; জলের তোড়ে ভেসে যাওয়া হতচেতন কিশোরের দেহ, শকুনে খাওয়া মৃত মহিষের শরীর এসবকিছু সামলে নিয়েও নিজেকে টানটান রাখে স্মৃতি তখন স্বভূমে ফিরে আসার পর দীপাবলী রাতে বড় বেশি চোখে লাগে এই দৃশ্য–


'মহিষের ধ্বস্ত দেহে যত লক্ষ রক্তবিন্দু জ্বালায় শকুন/তোমার রাত্রির গায়ে তার চেয়ে বেশি ফুলঝুরি'

কবি এই ইতিহাসকে, কবিতার অভিপ্রায়কে গদ্যে নথিবদ্ধ করবার সময় তাই প্রশ্ন রাখেন 

"প্রতিরোধ কি নেই কোথাও?" কিংবা "এখনও কি নেই কোন আরুণি ?" অজস্র আরুণির উদ্দালক হয়ে ওঠা জন্ম প্রার্থণা করেছেন কবি যা গড়ে তোলে সমস্ত ধ্বস্ততা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ।প্রতিবাদের উচ্চকিত ভাষণ থেকে বরাবরই দূরে থেকেছেন তিনি; শিখিয়ে গেছেন প্রতিহিংসা নয়, প্রতিবাদের অর্থ প্রতিরোধ যা নিজেকে স্থিতধী রেখেও সম্ভব।১৯৬৮ যে লক্ষীপূজো নাগাদ ঘটে যাওয়া এই ভয়ংকর বন্যা পরিস্থিতিকে আগলে রেখেছিলেন অভিজ্ঞান রূপে তারপর ডিসেম্বরে বিষ্ণুপুর যাবার পথে দুর্গাপুরের এক হোটেলে হঠাৎ হানা দেয় সেই স্মৃতি।এই ঘটনার আগে আগেই কবি সদ্য ফিরেছেন বিদেশ থেকে। দুর্গাপুরের সেই হোটেলের ঘরে বসে সেদিন তার মনে হয় " পশ্চিমের কাছে ভিখারি হয়ে দাঁড়ানো আমাদের এই সর্বার্থে ঋণগ্রস্ত দেশের ঘুণে ধরা জীবন, আমাদের নিষ্ক্রিয়তার আমাদের অভিমানের অবসরে প্লাবন হয়ে ছুটে- আসা বাঁধভেঙে দেওয়া এক ধ্বংসের ছবি, আর দূরের অলক্ষ্যে তৈরি-হতে থাকা কোনো আরুণি আর সুমনদের কল্পনা ভরে তুলতে লাগল সেই ঘর।" এই ভাবনার নির্যাস থেকেই লেখা হয়ে যায় 'আরুণি উদ্দালক' । সমাজ ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক কন্ট্রোলিং প্রক্রিয়াকেই আঘাত করেছেন তিনি।


"গড়ে তুলবার দিকে মন দেওয়া হয়নি আর কী/সহজেই বাঁধ ভেঙে যায়/চেতাবনি ছিল ঠিক, তুমি-আমি লক্ষই করিনি/কার ছিল কতখানি দায়/আমরা সময় বুঝে ঝোপে ঝোপে সরে গেছি শৃগালের মতো/আত্মপতনের বীজ লক্ষই করিনি।"

এই যাপন বা মুহূর্ত তাই নিয়েই কবিতা আবার কবিতা যাপনের যে মুহূর্ত তাই নিয়েই 'কবিতার মুহূর্ত'। শঙ্খ ঘোষ এর 'কবিতার মুহূর্ত' বাংলা সাহিত্যে কবিতার ইতিহাস ও সময়কে নথিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে যে মেথোডলজি স্থাপন করেছে –প্রকরণগত অভিনবত্বের দিক দিয়ে তার সত্যিই বিরল। রবীন্দ্রনাথ এর 'ছিন্নপত্র' বা 'ছিন্নপত্রাবলী' যে আমরা দেখেছি এ জাতীয় উপস্থাপন–যেখানে তিনি জমিদারি পর্যবেক্ষণের সময় ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশ এর বিভিন্ন অঞ্চল। সাজাদপুর,শিলাইদহ ,

পাতিসর প্রভৃতি; সেখানে কাছ থেকে দেখছেন মানুষের জীবনাচরণ, নির্বিশেষ থেকে কেউ কেউ হয়ে উঠছে বিশেষ, তাদের মধ্যে থেকেই কেউ কেউ আবার চরিত্র–উপন্যাস কিংবা ছোটগল্পের। উদাহরণ অজস্র আছে কিন্তু পরবর্তীতে  সময় ও ইতিহাসের এতটা নির্দিষ্টকরণ এবং বৃহত্তর সামাজিক বাস্তবতা কিংবা রাজনৈতিক অবস্থার পাশাপাশি ছোট ছোট যাপিত মুহূর্ত যা কবিতা রচনার একান্ত ভিত্তিভূমি তার উৎসকে এভাবে গেঁথে রেখে যাওয়ার এই পরিকল্পনা সত্যিই আমাদের ভাবায়। এছাড়াও এই বইতে কবি শঙ্খ ঘোষ এর আত্মবিরোধ - দ্বিধা- দ্বন্দ্ব যেমন টের পাব তেমনি প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার নৈতিক শিক্ষা এবং প্রকৃত সামাজিকতা কি ? সেই নিরন্তর সাধনার ইঙ্গিত রয়েছে আত্মবিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে।

শুধু কবি নয় , প্রকৃত সামাজিক মানুষ হয়ে উঠতে গেলে এই আত্মবিস্তার ছাড়া কোনমতেই তার সম্ভব নয়। আত্মবিস্তারের জন্যই প্রয়োজন আত্মপোলব্ধি বা আত্মজিজ্ঞাসা, নিরন্তর আত্মমূল্যায়ণ। 'বাবরের প্রার্থণা' অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয় এই কবিতাটির কথাই ধরা যাক –১৯৭৪ এর শেষদিকে,কবির বড় মেয়ে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত অন্যদিকে নকশাল আন্দোলনের গনগনে আঁচ অব্যাহত পরিপার্শ্বে; মেয়ের অসুস্থতার সঙ্গে কোথাও একাত্ম হয়ে যাচ্ছে সামাজিক অসুস্থতা। যাদবপুর ক্যাম্পাসে পড়ন্ত বিকেলে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে কবির পাশ দিয়ে চলে যাওয়া কয়েকটি ছেলেমেয়েকে দেখে তাঁর মনে হয় যা তিনি পরে লিখছেন –

       "কদিন আগেও এখানে যত প্রখরতা ঝলসে উঠত নানা সময়ে,তা যেন একটু স্তম্ভিত হয়ে আছে আজ।কেবল যে এখানেই তা তো নয় , গোটা দেশ জুড়েই।সে কি খুব শান্তির সময় ছিল? একেবারেই নয়। সংঘর্ষ অশান্তিতেই বরং ভরে ছিল দিনগুলি।এই পথ ওই মাঠ,এর প্রতিটি বিন্দু তার কোনো-না-কোনো উন্মাদনার চিহ্ন ধরে আছে,ভুলের 

লাঞ্ছনার আত্মক্ষয়ের, কিন্তু সেইসঙ্গে কিছু স্বপ্নেরও, কিছু জীবনেরও।আজ প্রশমিত হয়ে আছে সব। কিছু-একটা হবার কথা ছিল, অলক্ষ্য কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু হলো না ঠিক, হয়ে উঠল না।

          কিন্তু কেন হলো না? আমরাই কি দায়ী নই? কিছু কি করেছি আমরা?"


এই প্রশ্নবাণ নিজের বা নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে দেবার  সাহস এবং মানসিকতা কজনেরই বা আছে!

আলোচ্য কবিতাটির কেন্দ্রে ঘুরপাকরত এক নির্মম সময় ; সামাজিক ও ঐতিহাসিক বিপর্যয়, অস্থিরতার কথা প্রায় সর্বত্রই বলা হয়ে থাকে কিন্তু কবিতাটির যে দিকটা ভাবায় তা হলো কবির যখন মনে পড়ে যায় হুমায়ূন এর প্রাণ বাঁচাবার তাগিদে বাবর স্বয়ং নিজের প্রাণ এর বিনিময় প্রার্থণা করেন ঈশ্বরের কাছে।এর অনুরূপ বক্তব্যই অনেকটা সময় পেরিয়ে উঠে আসে এই কবির কবিতায়–


'এই তো জানু পেতে বসেছি, পশ্চিম/আজ বসন্তের শূন্য হাত–/ধ্বংস করে দাও আমাকে যদি চাও/আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।'


কিন্তু পরক্ষণেই এই অসুস্থতার জন্য আত্ম-দায়িত্বের দিকটি 

যখনই ঝলসে ওঠে কবিতার পরতে পরতে তখনই উপলব্ধি করা যায় কবি শঙ্খ ঘোষ এর মানুষ শঙ্খ ঘোষ রূপে আত্মপ্রকাশের এক নৈতিক ব্যক্তিগত অভিপ্রায় যা আসলে পাঠককে নৈর্ব্যক্তিক এবং আত্মবিশ্লেষণাত্মক হতে শেখায়।এই দায়িত্ববোধ শুধু একজন কবির নয়,সব মানুষের, সমাজের নীতি 

হওয়া উচিত।

'না কি এ শরীরের পাপের বীজাণুতে/ কোনোই ত্রাণ নেই ভবিষ্যের?/আমারই বর্বর জয়ের উল্লাসে/মৃত্যু ডেকে আনি নিজের ঘরে?'

এখানে 'পাপ' , 'বর্বর জয়ের উল্লাস' ইত্যাদি অনুষঙ্গ প্রমাণ করে কবিতার কেন্দ্রীভূত শক্তি কেবলমাত্র তাঁর মেয়ের অসুস্থতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তার বিস্তার ছিল আরও বৃহত্তর সমাজ–জগত নির্ভর।এই দায়িত্ববোধ তাঁকে সামাজিক করেছে ঠিকই কিন্তু 'ভুল অর্থে সামাজিক' নয়। প্রায় তিনিই প্রথম আমাদের বলা ভালো কবি ও কবিতার সামাজিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যথার্থ সমাজ বাস্তবতা বলতে কবি বা কবিতা কোন বার্তা তুলে ধরবে মানুষের কাছে; জনসংযোগের জন্য যদি কবিতার সত্য বিসর্জিত হয় তবে তাও কাম্য নয় আবার কবিতার সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে গেলে অনেকাংশেই পাঠকের সঙ্গে দূরত্ব রচিত হয় কিন্তু তা ব'লে যে কবিতার মর্ম সহজে ভেদ করা যায় না কিংবা একবার পড়েও যা 'ধ্যানগম্য' তাকে জোর করে মঞ্চে তুলে আনলে পাঠকের বাহবা বা হাততালি পাওয়া গেলেও তাকে 'ভুল অর্থে সামাজিক' বলে তিনি প্রতিপন্ন করেছেন। আসলে কবির সমকালে কি নিয়ে লেখা হবে কবিতা তাই নিয়ে দুটি শিবিরে  বিভাজিত হয়েছিলেন কবিরা এবং তাঁদের কবিতা; একটি গোষ্ঠী মনে করেছিলেন সময়কে মাথায় রেখে কবিতাকে হতে হবে বহির্বাস্তবতাকেন্দ্রিক বা সামাজিক দায়বদ্ধতাসম্পন্ন। সুনীল চন্দ্র সরকার , জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র এর মত কবিরা 'আত্মবিলোপ', 'আত্মত্যাগ' এর কথা বলছেন কবিতায় আবার 'কৃত্তিবাস' পত্রিকাকে কেন্দ্র করে আয়োজিত 'কাব্যসভা' বা 'কবিসম্মেলন' এর মধ্যে

দিয়েও সম্পাদক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় অন্তর্মুখী, 'আত্মকেন্দ্রিক' কবিদের 'চোখ খুলে তাকাতে সাহায্য' করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন কিন্তু কবি দেখেছেন 

                      "কৃত্তিবাস বা শতভিষা-র মতো পত্রিকাগুলির প্রধান সঞ্চয় ভরে উঠেছিল 

আত্মকেন্দ্রিকতারই নির্মাণে।যে 'আত্মপ্রসাদ' বা 'আত্মকেন্দ্রিকতা' র সংঘর্ষের কথা বলা হয়েছিল পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় ,অল্পদিনের মধ্যে সেইদিকেই উদ্গত হয়ে উঠল এর প্রবণতা।"

          অর্থাৎ এক প্রবল স্ব-বিরোধ; বদলালো কেবল কবিতাকে প্রচারের ধরণ।আত্মপ্রচারের এই ধরণ বদলালেও 'আত্মবিস্তার' ঘটলো না। অনেকটা যেন 'কবিতার চেয়ে কবিতার কিংবদন্তি হয়ে উঠল বড়ো।'

অন্যদিকে 'আরো কবিতা পড়ার স্লোগান' নিয়ে যাঁরা কবিতা আন্দোলনের শরিক হয়েছিলেন যেমন নরেশ গুহ কিংবা অরুণকুমার সরকার প্রমুখ তাঁরা সামাজিক বাস্তবতা, রাজনৈতিকতার পরিবর্তে কবিতায় 'নিভৃত শুদ্ধতা' র পক্ষপাতী ছিলেন।অথচ এই দ্বন্দ্বের মাঝখানে দাঁড়িয়ে শঙ্খ ঘোষ এক অন্যতর সত্যের সমাধানকে তুলে আনলেন কবিতায়। পাঠকের সত্য এবং কবিতার সত্যকে কবিতার মধ্য দিয়ে একজায়গায় আনা যেমন ছিল তাঁর সাধনা তেমনই বাইরের পৃথিবী আর ব্যক্তিগত জগৎ,এই দ্বন্দ্বের নিরসন–


"এই দুইয়ের মধ্যে নিরন্তর যাওয়া-আসা করেই কি বেঁচে নেই মানুষ? তার থেকেই কি প্রতিমুহূর্তে তৈরি হয়ে উঠছে না একটা তৃতীয় সত্তা?" 

      এক তৃতীয় সত্তার কথা বলছেন কবি যা ধরে নিতে পারি তৃতীয় নয়নের মত। বাস্তবতা– তার সঙ্গে যা ঘটেনি কিংবা যা ঘটবে বা ঘটতে পারে তার পূর্বাভাস দিতে পারে এই তৃতীয় নয়ন বা তৃতীয় সত্তা,এই হ'ল সেই কবিসত্তা যা সচেতন এবং আত্মমগ্ন অস্তিত্বের মধ্যবর্তী এক যোগসূত্র রচনা করে চলে।তাই একদিকে যেমন লেখা হয়ে যায় 'যমুনাবতী', 'রাধাচূড়া' , 'আপাতত শান্তিকল্যাণ', 'উলটোরথ' এর মত কবিতা যেখানে কুচবিহারের খাদ্য আন্দোলন, জরুরী অবস্থা,দন্ডকারণ্য এবং মরিচঝাঁপির ইতিহাস গ্রন্থিত পাশাপাশি লেখা হয় 'ভিড়', 'বাস্তু', 'লজ্জা', 'আত্মঘাত' জাতীয় কবিতা। আপাতদৃষ্টিতে এই কবিতাগুলির মধ্যেও একটি বিভাজন রেখা টানা গেলেও মনন ও মেধার সাহায্যে বীক্ষণে ধরা পড়বে সরাসরি রাজনৈতিক ইস্যু না থাকা কবিতাগুলির মূল এসেন্সটুকুর মধ্যেও সমাজ , সামাজিক মূল্যবোধ সততই ক্রিয়াশীল এবং অন্যদিকে নিদারুণ রাজনৈতিক কারণেই বা রাজনৈতিক প্রতিবাদের জন্যই যে কবিতাগুলি রচিত সেখানেও ব্যক্তিচেতনা,কবির মননধর্মীতা এবং নিজস্ব চিন্তা চেতনার ফসল নিঃশব্দে রয়ে গেছে। নির্দিষ্ট একেকটি ঘটনা বা পরিস্থিতি ভর করে লেখা কবিতাগুলির যে ইতিহাস রচনা করেছেন কবি তার প্রেক্ষিতে আমরা দেখি সেই ইতিহাস বা ঘটনা কবির হৃদয়ে ,মর্মবেদনে একাত্ম হয়ে  থেকে যাচ্ছে তারপর কোনো একদিন তাৎক্ষণিক কোনো মুহূর্তে সাময়িক কোনো উত্তেজনা বা দৃশ্যকল্পের নিরিখে ঐ ঘটনা বা ইতিহাসের স্মৃতি মনের মধ্যে ঠেলে উঠছে, জাগরূক করছে , অনুরণিত করছে স্মৃতি সম্বলিত অভিজ্ঞতাকে,যেমন 'যমুনাবতী' কবিতাটি।

১৯৭৬ এর ১৬ ই জুন...ট্রান্সভালের সোয়েটো শহরের একটি ঘটনাসম্বলিত কবিতা 'Soweto' পড়তে গিয়ে তাঁর মনে প'ড়ে যায় ১৯৫১ এর কুচবিহারের খাদ্য আন্দোলনের কথা। সোয়েটোতে বোয়ারদের ভাষা 'আফ্রিকান্স' কে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের প্রতিবাদে স্কুলের ছেলেমেয়েরা জড়ো হ'লে বছর বারোর একটি মেয়েকে হত্যা করে পুলিশ। কুচবিহারেও মিছিলে সামিল একটি বছর ষোলর মেয়েকে পুলিশ একইভাবে হত্যা করে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী। স্বাধীনতার চার বছর কেটে গেলেও মানুষকে তার খাদ্য, তার প্রাপ্যের জন্য পথে নামতে হয় এ সত্যিই লজ্জার , তার থেকেও লজ্জার প্রশাসনের এই ঘাতক আচরণ।এই ইতিহাসের দীর্ঘ অবসরের পর একদিন সকালবেলা হঠাৎই কবি জানাচ্ছেন

                "জানলা দিয়ে নীচের গলিতে তাকিয়ে আছি যখন ,রুটি সেঁকার আয়োজনে দোকানি আঁচ তুলছে উনুনে, ময়লাছেঁড়া পোশাকে কটা ছেলেমেয়ে 

তারই পাশে দুলে দুলে পড়ছে মাদ্রাসায়, বারান্দার পিছনে আমাদের ঘর থেকে ভেসে আসছে আমার ছোটো বোনের ছড়া-আওড়ানো,মা ডাকছেন খাবার জন্য–তখন , যেন একদমকায় ফিরে এল একমাসের পুরোনো সেই কুচবিহারের দিন, ফিরে এল নাম-না-জানা সেই মেয়েটির আর তার মায়ের মুখচ্ছবি,দুলে উঠল কয়েকটি শব্দ: নিভন্ত এই চুল্লিতে মা একটু আগুন দে!"

এইভাবেই প্রবাহিত ইতিহাস তাৎক্ষণিক কিছু মুহূর্তকে স্পন্দিত ক'রে একত্রিত করে অতীতের সঙ্গে বর্তমানকে; অনেকটা সেই বিষ্ণু দে র 'স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ' কে স্মরণ করতে হয়। স্মৃতি অর্থাৎ ইতিহাস কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সত্তা ও তার বর্তমানকে আবার সেই বর্তমানের ওপর নির্ভর করেই সত্তা নির্মাণ করে  ভবিষ্যত বা আগামীকে।এ প্রসঙ্গে স্বয়ং শঙ্খ বাবুর মত–


" অতীত থেকে ভবিষ্যৎ পর্যন্ত সময়ের সব টান,আর সেই স্মৃতি থেকে জ্যোৎস্না হয়ে আস্তে আস্তে জেগে উঠতে থাকে কবিতা,কবিতার মুহূর্ত।"


আসলে 'ইতিহাস' মানে কেবল অতীত এ ধারণা সীমাবদ্ধ। ইতিহাস হ'ল এক আবহমান সত্য,যা বিগত-বর্তমাণ এবং অনাগতের মধ্যে এক 

সংযোগসূত্র রচনা করে।তাই সামাজিক ও ঐতিহাসিক সত্যের সঙ্গে কবিতার সম্পর্ককে কবি ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে-


"দেশব্যাপী যন্ত্রণার সঙ্গে সঙ্গে সেই মৃত্যু তবে কবিতারই কথা হতে পারে। কিন্তু সেই একই সঙ্গে কবিতা হতে পারে কবির নিজের জন্ম, তার জেগে ওঠা..."

এই জেগে ওঠা হতে পারে নিঃশব্দে , কেননা শঙ্খ ঘোষ একজায়গায় বলেছেন কবিতা লেখা হবে নিঃশব্দে এবং লিখতে হবে নিঃশব্দ কবিতা। আত্মপ্রচারের প্রলোভনের কাছে বিকিয়ে না গিয়ে আত্মোদ্ঘাটনের পথে হাঁটার সাধনাই একমাত্র জন্ম দিতে পারে এই নিঃশব্দ কবিতার, সেই সাধনার সন্ধান আমরা 'কবিতার মুহূর্ত' এর ছত্রে ছত্রে পাই। এমনকি ব্যক্তির দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-স্ব-বিরোধ, আত্মগ্লানি,আলো-অন্ধকার ,ঔচিত্য-অনৌচিত্যের বোধ, চেতন থেকে অবচেতনে ফিরে যাওয়া আবার 'অবচেতনের উদ্ধার' অর্থাৎ অবচেতনকে চেতনের সঙ্গে মিলিয়ে দেবার সমস্ত যাপন কিংবা মুহূর্ত নিয়েই কবিতার মুহূর্তরা ভ'রে তোলে তাদের সংসার... সমৃদ্ধ হয়‌। সেক্ষেত্রে ভিড় বাসে নির্দিষ্ট স্টপে নামার আগে অনিশ্চয়তার ধুকপুকুনি নিয়ে কানে আসা বাক্যই কখনো হয়ে ওঠে সেই 'ভিড় থেকে দূরে,একারই কোনো কেন্দ্রে' নিজেকে মুখোমুখি দেখার মাধ্যম।

" 'ছোটো হয়ে নেমে পড়্ ন মশাই/'সরু হয়ে নেমে পড়্ ন মশাই/'চোখ নেই? চোখে দেখতে পান না?/'সরু হয়ে যান, ছোটো হয়ে যান–'/আরো কত ছোটো হব ঈশ্বর/ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ালে!/আমি কি নিত্য আমারও সমান/সদরে, বাজারে, আড়ালে?"


এক অনন্য তাৎপর্য কবিতার দ্বিতীয় স্তবক জুড়ে বহমান। আমাদের ক্রমশ ছোট হয়ে আসা অস্তিত্ব কিংবা মূল্যবোধ বেঁচে থাকার তাগিদে, সুবিধা ভোগের তাগিদে আরও খর্ব করার যে রীতি বা নীতি ক্রমবর্ধমান তাকেই কবি যেন ব্যঙ্গ করেছেন কোথাও। সামাজিক মূল্যবোধকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানো, আত্মকেন্দ্রিক মানুষের স্বার্থ-প্রয়োজনে ক্রমশ গুটিয়ে থাকা এবং রাখার উপক্রমকে বিদ্রূপ এও কি সমাজ বাস্তবতা নয়?

অথবা নিছকই আড্ডাস্থলে উত্থাপিত প্রসঙ্গ "শিল্পের মধ্যে জাতীয়-চিহ্ন খুঁজবার মানে আছে কিছু?শিল্প কি স্বভাবতই আন্তর্জাতিক নয়?।

তা একসময় আর নিছক থাকে না বরং শিল্পের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায় মানুষ।'পার্কস্ট্রীটের নৈশযাত্রী' কিংবা 'শেয়ালদায় গৃহমুখী মানুষের চলচ্ছবি ' এরা জাতিক না আন্তর্জাতিক সেই প্রশ্নের সংঘাত কবিকে নিয়ে যায় অস্তিত্বের প্রশ্নে যেখানে সবার মধ্যেই কাজ করে অস্তিত্বের সংকট। বিপন্ন শিকড়কে আঁকড়ে ধরে সত্তাদের চলা ফেরা–এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়; কবি নিজেও তো তাই 'সেই বাংলা থেকে এই বাংলায়।' তিনি নিজেই বলছেন ' এই শূন্য আর প্রত্যক্ষ পদ্মা আর কলকাতা, কৈশোর আর যৌবন এসে মুখোমুখি দাঁড়ায় ; আর এই সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে জীবন। অথবা কবিতা।'

এই প্রসঙ্গেই তাঁর মনে হয় উপনিষদের আত্মপরিচয়হীন সত্যকামের কথা; উপলব্ধি করেন সেই অনন্ত সত্য–আমাদের ভিতরে থেকে যাওয়া আত্মপরিচয়হীন সেই জাবাল সত্যকামের অস্তিত্ব।স্থান-কাল ভেদে আমাদের প্রত্যেকটি স্থানান্তর এর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পরিচয়ও কি প্রতিবার খন্ডিত হয়ে যায় না? নাকি আমরা আসলে সেই সত্যকাম যে তার সততা,নিষ্ঠা,স্ব-ধর্ম পালনের মধ্য দিয়ে দৃঢ়তর করে নিজের পরিচয়–

'আমি যে আমিই এই পরিচয়ে ভরে না হৃদয়?'

এইভাবে নিজের কাছে নিজের ফিরে আসাও হয়ে উঠতে পারে কবিতার মুহূর্ত। সমাজ-ইতিহাস-সময়-দেশ বা রাষ্ট্র-যাপন এবং সমগ্র জীবনের এক অখন্ড আকরগ্রন্থ হয়ে থেকে যায় এই 'কবিতার মুহূর্ত ' বইটি। এমনকি মানবীয় একটি বোধ বা বিশ্বসময় এর নির্মাণের  সঙ্গে সঙ্গে যথার্থ 

সামাজিকতার দীক্ষা, ব্যক্তি থেকে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার  নৈতিক শিক্ষা যেমন এই বইতে পেয়ে থাকি ঠিক তেমনিই 'আমি' র ভেতর একান্ত 'আমি' র গাঢ় হয়ে জুড়ে থাকা অথবা বিচ্ছিন্নতার কোনো মুহূর্তও জন্ম দিতে পারে কবিতার মুহূর্ত; তাই ভাবতে সত্যিই বিস্ময় লাগে কবি যখন বর্ণনা করেন সিনেমা হলের তীব্র অন্ধকারে অকস্মাৎ টর্চের আলোয় এক নারী কন্ঠে শোনা যায় 'লস্ট চাইল্ড? ইজ দেয়ার এনি লস্ট চাইল্ড?' তখন উত্তরের পরিবর্তে ধাক্কা খায় আলো আর স্বর, "সেই মুহূর্তেই সবাই ফিরে আসে নিজের নিজের কাছে,গাঢ় হয়ে আসে চারপাশের হাওয়া, হারিয়ে যাওয়ার হাজার হাজার শুকনো পাতা ঝরে পড়তে থাকে মনের ওপর , আর সেই মুহূর্তই হয়ে ওঠে কোনো কবিতা লেখার মুহূর্ত, তীব্র আর ধাতব।"


তাই বারংবার হয়তো লেখক শঙ্খ ঘোষ এর মনে হয়েছে মানুষ আসলে যেভাবে আছে, সেভাবে সে নেই, যা সে বলে বা বলতে চায় আসলে তা সে আদৌ বলেনা।এইযে মানুষের মধ্যে 'আরেকখানা আরেকখানা আরেকখানা মানুষ' অর্থাৎ এত অসংখ্য মানুষের আনাগোনা, এই টুকরো টুকরো সত্তাগুলোকে জুড়ে নেবার যেমন এক অসংলগ্ন চেষ্টা আবার সেই সামঞ্জস্য বিধান করতে গিয়ে আরো বেশি করে 'পা তোলা' আর 'পা ফেলা ' র মধ্যে দিয়ে এক যাপন থেকে আরেক যাপনে , 'এক কবিতা থেকে আরেক কবিতায় পৌঁছোনো।'

'কবিতার মুহূর্ত' তার 

উৎসর্গপত্র থেকেই সেই বৈশিষ্ট্যকে আত্মস্থ করে এগিয়েছে; তাই নকশাল আন্দোলনের সময়ে অসংখ্য নিহত চরিত্রদের ভিড়ে 'প্রবীর দত্ত' একটি নাম যাকে কার্জন পার্কে হত্যা করে পুলিশ। সেই মৃত্যুর কিছুদিন পর ওইখানে বসন্তকালে পলাশের শোভায় কোনো এক পথচারীর উচ্ছ্বাস কিংবা আনন্দ নিরীক্ষণেই কবি যে পঙক্তিগুলি সাজান তাই এই বইয়ের উৎসর্গ হিসেবে গৃহীত।


'আমারই বুক থেকে ঝলক

পলাশ ছুটছিল সেদিন


লোকেরও লাগছিল ভালো

লোকের ভালো লাগছিল


লোকে কি জেনেছি‌ল সেদিন

এখনও বাকি আছে আর কে?


আসলে ভেবেছিল সবই

উদাস প্রকৃতির ছবি।


তবু তো দেখো আজও ঝরি

কিছু-না থেকে কিছু ছেলে


তোমারই সেন্ট্রাল জেলে,

তোমারই কার্জন পার্কে।'


এইরকম কিছু ইতিহাস আর কিছু মুহূর্ত মিলে তৈরি করে যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তারই এক পৃষ্ঠায় আনন্দ আবার অপর পৃষ্ঠায় হয়তো বিষাদ, সেই দ্বান্দ্বিক মুহূর্তই কখনো বা কবিতার মুহূর্ত; তাই বৃষ্টিমুখর দিনে ভেজা শরীরে হেঁটে যাওয়া কবি ' ভেজা পথ, ভেজা গাছ,ভেজা দেয়ালের' পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে নিজের ভিতরকার সেই দ্বিধাকে খুঁড়ে আনেন,খনন করেন স্ব-সত্তাকে। রবীন্দ্র দর্শনে বরাবর বিশ্বাসী,আস্থাবান কবি শঙ্খ ঘোষ এভাবেই খুঁজে বের

করেন 'আমি' র ভেতর এক অন্য 'মহাজাগতিক আমি' কে।অতএব প্রশ্ন থেকে যায় 'এ কি শহর না কি গ্রাম? এ কি সুখ না কি দুঃখ?এ কি জন্ম না কি মৃত্যু?' সব প্রশ্নের উত্তরগুলো যেন একই উপসংহারে পৌঁছে যায় এবং সে পৌঁছে দেবার দায়িত্বও যেন কবি স্বয়ং গ্রহণ করেন; তাই 'আনন্দভরা এই দ্বিধার মধ্য দিয়ে সেই হলো এক কবিতা লেখার মুহূর্ত' –'কবিতার মুহূর্ত' এর এই তত্ত্বকে নির্মাণ করে যান।

3 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন