ফুরিয়ে যাচ্ছে। শেষ হচ্ছে দিন, ফুরিয়ে আসছে যোগাযোগ,  মৃত্যু প্রতিনিয়ত দুয়ারের গোড়ায় ছায়া ফেলে সরে যাচ্ছে, অদূরেই শোনা যাচ্ছে মর্মান্তিক হাহাকার। কে বা যেতে দিতে চায়! তবু যাচ্ছে৷ স্বজন, বন্ধু, প্রিয়জনেরা। 
         এই হাহাকারের মধ্যেই প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে আসে ভাষা শহীদ দিবস।  এবারেও আসবে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা জানাবো, বাংলাভাষা নিয়ে কথা বলবো, সেই ভয়ংকর দিনের স্মৃতিচারণ করবো, মাতৃভাষার সংকট নিয়ে আলোচনা হবে। ছ'দশক পরে আর কি-ই বা হবে! হতে পারে! মাতৃভাষার সংকট-ই তো আমাদের বোধে আসে না। নানান ভাবে, বিচিত্র পথে আমাদের মা-য়ের ভাষা যে ক্রমে সাজ বদলাতে বদলাতে ঐ ১৯-এ মে-র ভাষার দমনের বিরুদ্ধে, অনাচারের প্রতিবাদে সেই আবেগের, ভালবাসার বহুদূরে বয়ে চলেছে, সে খেয়াল কি আমরা করছি! শহীদের আত্মদান আজ বড় অকিঞ্চিকর মনে হওয়া বিষ্ময়কর কিছু নয়। বস্তুত কিছু ভাষাকর্মী আজ প্রায় ব্রাত্য হয়ে পড়ছে অধুনার সাপলুডোর দৈনন্দিন যাপনে। তারা নিজেদের সাধ্যমতো বাংলাভাষার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, ভাষার উন্নতির জন্য, নতুন চলনপথের সন্ধানের জন্য নিজস্ব ভাষায় লড়াই করে চলেছেন। তারা অকুতোভয়, তারা নিজের কাছেই শপথ বদ্ধ।  বরাক উপত্যকায় ১৯মে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল,  যে প্রাণগুলি পুলিশের গুলিতে অকালে ঝরে গিয়েছিল কেবল মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার প্রয়োজনে, আজ খুব দীন হৃদয়ে সেই শহীদদের প্রণাম জানাচ্ছি, সেই সঙ্গে সঙ্গে এই পূত প্রভাতে অভিবাদন জানাই, শ্রদ্ধা জানাই বর্তমানের ভাষা কর্মী বৃন্দসকলকে। তাদের নিজস্ব কলমে মাতৃভাষার জন্য যে ভালবাসার ধ্বজা এখনো উজ্বল, তাকে এই মহান প্রভাতে জানাই প্রণাম।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন