জন্মমৃত্যু সম্পর্কে

করুণানিধান মুখোপাধ্যায়

আজ ভোরে ৬.৪৫ মি. আমার একমাত্র ছেলে আরক মারা গেলো । ব্রংকোনিমোনিয়া ।

আমি একা ওকে নিয়ে চলে গেলাম নদীর ওপারে । ওপারে বালিয়াড়িতে ।

বসে বসে অনেক কিছু ভাবলাম । তারপর ওর গায়ের সঙ্গে ভারি পাথর বঁধে মাঝগঙ্গায় ফেলে দিলাম ।

পাথর খঁজতে প্রাব দুঘণ্টা লেগে গেলো ।

বাড়ি ফিরে এসেছি । আমার বৌ ভীষণ কাঁদছে । মানুষের সেন্টিমেন্ট নষ্ট করার মতো আমার কাছে কিছুই নেই ।

আজ দুপুরে অফুরন্ত সময় ছিল ।

আমার জন্ম কাশীতে । বাবা তখন আই.এন.এ.তে নেতাজির গ্রুপে ।


তারপর পঁচিশ বছর যখন, বাবা আমায় নিয়ে যান রেংগুনে ।

আই.এন.এ. ছেড়ে দিয়ে বাবা পুলিশে চাকরি নেন । রেংগুনে একনাগাড়ে প্রায় ১০ বছর ।


তারপর সাইরেন, ব্ল্যাক-আউট,

সংবাদপত্রের হেডলাইন, হাসপাতাল । জাহাজে চেপে বর্মা থেকে সোজা খিদিরপুর ।

খিদিরপুর থেকে আবার কাশী ।

জানতে পারলাম বাবা কোনো বার্মিজ মেয়েকে বিয়ে করেছেন । সেই থেকে

সমাজের বিরুদ্ধে, সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, নিজের বিরুদ্ধে

লড়াই । লেখা-পড়া হল না । ক্লাস টেনে-এ পৌঁছে বাবার টাকা

বন্ধ হবে গেল । তখন থেকেই আমি নেমে গেলাম ।

হেল্প! হেল্প!! হেল্প!!!

ছোটবেলায় আঁকার ঝোঁক ছিল । ক্লাসে ফার্স্টবয় ছিলাম । ছবি আঁকতে গিয়ে

সব তালগোল পাকিয়ে গেল । কাশীতে একটা ঘর ভাড়া করে নিজের স্টুডিয়ো করলাম ।

ছবি দেখে লোকে পাগল বলতে লাগলো । বাড়ির লোকে মা বোন সকলেই পাগল বলে

বাড়ি থেকে বের করে দিলো । আমিই বাড়ির বড় ছেলে ছিলাম ।

ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়ে একটা কায়স্থ মেয়ে বিয়ে করলাম ।

অব্রাহমন বলে বাড়িতে ঢুকতে পাই না ।

কেউ নেই । কেউ নেই ।


( জেব্রা নং দুইতে প্রকাশিত )

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন