('শিহরনটুকু বেঁচে থাক'- তমাল মুখোপাধ্যায়)
সন্তোষ দাস
"গেমপ্ল্যান একটা তো থাকেই-/ তাকে ধরে মাঠে ছোটাছুটি।"- কিছু কিছু কবি আছেন যারা সাহিত্যে বিচরণের আগে একটি নির্দিষ্ট গেমপ্ল্যান তৈরী করে রাখেন। কবিতার জগত তাদের কাছে অন্ধকারে হাতিদর্শন নয়। কবিতার জগতে একটি স্বতন্ত্র দাগ রেখে যেতে তারা বদ্ধপরিকর। তমাল মুখোপাধ্যায় সেরকমই একজন কবি। কাব্যচর্চার মধ্য দিয়ে সবসময় তিনি এক শিহরন অনুভব করেন যা তার একান্তই ব্যক্তিগত। তাই তিনি লিখে ফেলেন - 'শিহরনটুকু বেঁচে থাক' নামক আস্ত একটি কাব্যগ্রন্থ।
কবি কাব্যচর্চায় মগ্ন হয়ে পুরোনোকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চান না। আধুনিকতার সমস্ত বেড়াজাল কেটে কবি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। তাই তার কলম বলে ওঠে - "জলে জঙ্গলে আজ কেউ বাঁচাবে না/ প্রযুক্তি কৌশল জেনে নিতে হবে।" এই অমোঘ উচ্চারণের মধ্য দিয়েই কবির উত্তর-আধুনিক চিন্তাভাবনার স্পষ্ট ছাপ লক্ষ করা যায়।
কবি তমাল মুখোপাধ্যায় জীবনের সমস্ত অনুভুতিকে ব্যাখ্যা করতে পারেন খুব সোজাসাপ্টা দৃষ্টিভঙ্গিতে। তাই তিনি লেখেন- "ভাড়াগাড়ি নিয়ে সোজা দীঘা/ সমুদ্রে সুনামিটা দেখা হয়ে গেল।"- সুনামির ধ্বংসাত্মক রূপও কবির কাছে রুটিনমাফিক আগমন। আবার পারুলডাঙার মাঠে এসে কবি যেন নস্টালজিক হয়ে পড়েন। তিনি লেখেন - "এখনও চাঁদ ওঠে নিয়ম মাফিক।"
সমগ্র কাব্যগ্রন্থটি পড়ে সহজেই বোঝা যায় যে কবিতাগুলির মধ্যে কোনো জটিলতা নেই। নেই কোনো গভীর দর্শনও। যা আছে তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ভালোলাগার দৃশ্য - ভালোবাসার চিত্রকল্প। সহজ কথাকে সহজভাবে তুলে ধরতে গেলে যে নিবিড় চর্চার প্রয়োজন হয় তা কবি তমাল মুখোপাধ্যায় রপ্ত করেছেন। তাই তিনি তার কবিতায় মশাল না জ্বেলে কবিতাকে গভীর অন্ধকারে এক চিলতে আগুনের মতো উপস্থাপন করেছেন। যেটা করার জন্য যথেষ্ট মুন্সিয়ানা লাগে।
'সমিধ' থেকে প্রকাশিত দু'ফর্মার সংকলন 'শিহরনটুকু বেঁচে থাক'। পাঠক পড়তে পড়তে দৈনন্দিন জীবনে নানান জটিলতার মাঝেও অনাবিল আনন্দের সন্ধান পাবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন