অণিমা মিত্র-এর একগুচ্ছ কবিতা

খেলা
-------------------------------------------
ঝিলিমিলি জ্যোৎস্না হাসে উনুনের আঁচে---
রান্না সোয়াদে প্রেম বৈচিত্ত্য---
মাতৃদেবীর কৃষ্ণকলি আঙুলে
দিল্লাগি।

মহামায়ার খেলা সান্ধ্যচিরাগে।
জননী আমার!
চলে গেলে--
নেতা ধোপানির ঘাটে...



অর্হৎ
------------------------------------------- 
স্বপ্ন বিশেষণে, 
পাতালনদীর ভোগবতী উজান
বিভীষণ স্পৃহায়, 
নুলিয়ার হরিহর খেলা।

নিধুবনে বিষকুসুম।

মহামুদ্রায়, দেবীর নৌবিহার।

ঠাকুরঘরের অষ্টধাতু
যশোদানন্দন,

অসময়ে যেন ,
অর্হৎ হ'তে বলো না আমাকে



উন্মাদের ঘোড়া
------------------------------------------- 
কী বুঝেছো তুমি আর 
কীই বা বুঝি আমি...

ক্রীড়ারথ উন্মাদের ঘোড়া বোঝে জঘন্য ইতর
মুঠোর ভিতরে।

জ্বলন্ত চুলায় 
তাণ্ডব ও লাস্যে চলে
নিত্যসমাস 
দরজা বন্ধ ঘরে...

চা- পানে বিরতি নেই
বিগ্রহ শরীরে---



 সম্পর্ক
------------------------------------------- 
 আপনি-তুমি ভেদরেখা মুছে গেলে, কী থাকে পড়ে---তুই?
সে কী খুব কাছের আদর
না ঘৃণার---

তবে কেন কারণে,
না কারণে, ও জল-- 
বারে বারে পা ছুঁই!

বাইরে যতটা আমার, 
ভিতর ততটা না;
ভেঙে পড়ে, ভেঙে যায়--- হারাই, তবু তুলি না।

গড়লো কবে যে
ভেঙে যাওয়া ভয়!
হয় না যে হয়---
তাতেই বিস্ময়!



অসুখ
-------------------------------------------
 খদ্যোতিকা অসুখ চায়,
অসুখ আসে না।
ওর মণিপুর- চক্রে থেকে থেকে হলুদ ক্রেংকার।

অসুখ চেয়ে বারান্দায়
বসে থাকে সারারাত।

রাস্তার ল্যাম্পোস্টে দু'ঘড়ি সময়ে, ঘাড়-মুখ নামিয়ে
হাটের কথা, ঘাটের কথা
কথার কথা গুগলে
রাত্রি-পতঙ্ ঘিরে।

রাতের ঘড়ি জানান দেয়
তিন প্রহরে।

মহাকাশ নেমে আসে অনাহত- চক্রে-- সবুজ বিশল্যকরণী নিয়ে--" এখেনে বসে কেন?"

খদ্যোতিকা প্ল্যানচেট খোনা স্বরে বলে--নীলখামে অসুখ
পাঠাবে সে।

" সে আর তোমায় অসুখ পাঠাবে না। এসো ঘরে।"

মহাকাশ অর্ধ বঙ্কিম- হাস্যে
খদ্যোতিকার বাজু ধরে
ঘরে আনে।

রক্তিম মূলাধারে পঞ্চাশ পলাশ--
তার ঘাম- বিন্দুতে
নীল খামের অসুখ টলটল।



কার্নেল

অন্ধকার কেঁদে ওঠে-- কার্নেল- কার্নেল
মহাজাগতিক তাপ বিকিরণ
ডালিম-বৃক্ষ ঘিরে--

মনসিজ, তুমি আঘাত করছো কোথায়- কাকে!

ছেনি ও বাটালি যে অনশন-অবরোধে রিস্তা-লজ্জা ঢাকে, তাকে!

বৃদ্ধ সনাতন-- বহু পুরাতন তত্বধারক

ধর্মঘটে হাত রাখে--কাঁদো
ডালিমের অন্ধবিবর 

নির্বেদ কাঁদো।



মেধারণ
-------------------------------------------
      চাঁদমারি লক্ষ্য ছিলো।
তেজস্ক্রিয় চকমকি ঠুকে
মেধা- তলোয়ার নিশারণ তোমার।

মাল্টিকালার বংশীবদন
ক্ষত-বিক্ষত মেধারণে।
জড়িবুটি নিয়ে তুমি তার
শুশ্রূষাকারিণী।

সত্যভামা জানে সে কথা!
গড়খাইমুখি না ছিলো তোমার
না ছিলো পাণ্ডবসখা।

তবু তাকে বঁধুয়া ভেবে
নক্ষত্র চন্দ্রাতপে, একা যাজ্ঞসেনী, একা---



মা-ভূমি
-------------------------------------------
        আহা, কী মিহিন বুনট
         কী টানা- পোড়েন!
          জমিন চমকায়---
   হৃদিপদ্ম মাঝে দেখি
একটি মাছি-- আসনপিঁড়ি

জনৈক শুধায়-- কী নাম তোমার?
কোথা ধাম-- কাহার নন্দিনী?

বোঝ কি না বোঝ
আমার কি দায়--
ত্রিভুজ আঁকা চন্দন বাটা
মা, দ্রাবিড়- ভূমি।



মন্ত্রগুপ্তি
-------------------------------------------
আমাদের অদ্ভুতুরে দৈব - সংলাপ ক্রমাগত মহাবিশ্বে টক্কা টরে।দূরত্ব ছাড়িয়ে এসেছি ব্রহ্ম- অণ্ড হাতে।

গুঁড়ো আলোক-কণা ঐ তো বিছানায় রেণু রেণু। উৎসকথা জানতে চাওয়া বারণ। অর্ধোন্মাদ দু'খানি আস্ত শরীর ধীরে ধীরে রূপান্তরকামী।

শব্দের কম্পাঙ্ক বিছানা শিফটিং হ'তেই শুজনি ধরে রাখে।

কোন মাসে, কোন বছরে যেন সূচনা হয়েছিলো? সমুদ্র পর্যটক তরঙ্গের দীর্ঘ নোট নেন বুলেটিনে।

ঘামে ভেজা উষ্ণতা হ্রাস পায় যদি, প্রসারণ হ্রস্ব করে নিয়েছি।

আমাদের সম্পর্কের হাইড্রোজেন- হিলিয়াম অস্তিত্ব মিললো ভূ- বিজ্ঞানে।

মহাজাগতিক কৃষ্ণবিবরে ভোরের আলো স্ফূরিত হচ্ছে নাক্ষত্রিক ঊষায়।

ঘন আবরণ সরিয়ে উষ্ণ নথ শ্বসন বোঝালো।

এরপর যা হ'লো, অসীম দূরত্বে বিদ্যুতায়ণ ধনাত্মক রূপ নিলো--- একা এই ঋণাত্মক হৃদয়পুর চোখে জ্যোৎস্নার সিপিয়া নিয়ে অনিদ্র ইন্দ্রিয়--
উন্মাদ টক্কা টরে চলছে নিভৃতে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন