যে ঘরের ঘর নেই

মায়িশা তাসনিম ইসলাম

১.

কোনদিকে যাচ্ছো? তুমি সৈনিক? বীরপুরুষ?

তোমার পা দেখি যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে!!

তোমার মাথাটাও কি যাচ্ছে?


আমার শ্লোগান নেই, ক্ষুধা আছে

ভাত চেয়ে প্ল্যাকার্ড লেখা আছে?

শত্রুর আগে ক্ষুধাকে মেরে ফেলা যায়?


তুমি কি সীমান্তে যাচ্ছো? প্রহরী?

দেশভাগের পর আর দেশ দেখিনি

গ্রাম দেখেছি, কাঁটাতার দেখেছি, দেশ দেখিনি

খুনি দেখেছি, প্রহরী দেখিনি।



তুমি বুদ্ধিজীবী? মন্ত্রনালয়ে যাচ্ছো?

মগজ বিক্রি করো? নাকি মগজ তোমাকে?

তোমার শব্দ ও জ্ঞান কি প্রভুর সিগার?


আমি রেলপথ হতে কুড়োচ্ছি পাথর

হৃদয়ের ওজন যদি বাড়ে...



২.

প্রতিদিন তালার অপবাদে ভারী দরজাটা খুলেই ঢুকে পড়ি

অথচ ঘর দেখতে পাই না

মদ্যপান করতে গিয়ে দেখি জল নেই

ভাত পঁচানোর আগেই খেয়ে ফেলি কিছু ভাত,

তাতেই নেশা ধরে যায়!

এলিয়ে পড়তে গিয়ে আবারো দেখি ঘর নেই


আমার এক প্রতিবেশী কিছুদিন আগেই বললেন

"আপনি যখন থাকেন না, দরজাটা অকথ্য ভাষায় আপনাকে গালিগালাজ করে

তালা না খুলে বরং দরজাটা একদিন ভেঙে ফেলবেন

আপনি তখন ঝর্ণামুখর একটি ঘর পেতে পারেন।"


সাহস খোলার চাবি খুঁজতে গিয়ে একটা বিজ্ঞাপন চোখে পড়লো

"ঘরহীন মানুষদের বিনামূল্যে সিন্দুক দেওয়া হচ্ছে"



৩.

সন্ধ্যা নামেনি

এখনো দুপুরের ক্ষত ধোঁয়া ওড়াচ্ছে বেইমান ঠোঁটের মতো

গ্রীষ্মের মহামারী রোদ এখানে একদম পক্ষপাতহীন!

তাই সন্ধ্যা নামার অপেক্ষা নেই; তেতো ওষুধ গ্লাসে মিশে যায় নির্দোষ রোদের কয়েকফোঁটা ভিটামিন


সূর্য ডোবার ঘর প্রিয়তম কেউ শুয়ে থাকা মর্গ

কেউ জানে না-- মর্গের চৌকিদার সেই চাঁদ নিজেকে পোড়ায় 

ছাই উড়ে জোছনার, চোখে তখন সুরমার প্রয়োজন নেই

সন্ধ্যা নামে না, ক্ষতের গন্ধ পেয়ে বিশ্বস্ত কুকুরগুলোও অন্যখানে যায় পাউরুটির সন্ধানে


মানুষ আফসোসহীন--

বন্ধুদের নৌকাগুলোয় ফুটো অনেক, তবু নদীর প্রবেশ নেই

মানুষ আফসোসহীন--

ছাইদানি দেখতে না পেয়েও হাসছে না আগুন!

আন্দাজ নেই, দু আঙুলের ফাঁক দিয়ে কতোখানি ফেলে দেয়া যায় কাউকে


প্রশ্ন শুধু, সন্ধ্যা কেনো নামে না?

সন্ধ্যা নামলেই কেবল বুদ্ধের ইজারা নেয়া এক বৃক্ষের নিচে বসে পৃথিবীকে বোকা বানানো যায় সহজেই



৪.

অফিসে যাচ্ছো না দেখে কপোল

কাপড় গোছানোর রুল ভাঙিনি

স্যুটকেস ধরে আছে হিসাবী আঙুল

তোমার হৃদয়ের মতো এখনো ঘুমোতে পারিনি


শরীর মেরিনেশন, ওভেনে প্রিহিটেড শীৎকার

শরীর বদহজম, কাপুরুষ পুরুষ হওয়ার রেস্টুরেন্ট বিকার


ঘরণীর চুলের মার্কার মোটা কাগজের পাতলা যৌনতা

তিনবেলার বাধাই রেসিপি তার ঢিলা খোপা


যুবতী-দরজা এমন রাতগুলোতে হাতুড়ির জোরে ভাঙেনি

তোমার হৃদয়ের মতো এত বড় হাই দশ বছরে তোলা হয়নি



৫.

মেয়েটা আগে বইমেলায় যেতো

একুশের পাতা ওলটানো জ্ঞানের পিলগ্রিম নয়--

অবধারিত পৃথিবীর কয়েক ইঞ্চি বাইরে হাঁটার সৌখিন

জ্ঞানীদের দেখে শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টাও হয়ত!

তখনো সে লেখিকা নয়

পাঠক, প্রত্যক্ষ ভাবে 'মেয়েপাঠক'


মেলার কোনো এক আক্ষরিক সন্ধ্যায়--

বড়সড় স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো অভিকর্ষহীন

পৃথিবীর কয়েক ইঞ্চি বাইরে তখন একটা হাতের বিস্ফোরণ!

যেসব জীবাণু হাতে কিলবিল জ্ঞানী প্রাঙ্গণ


'মেয়েপাঠক' এখন উদ্ভ্রান্তি লেখে জ্ঞানহীন

মেয়েপাঠক থেকে পাঠক মাইনাস করলেই সমাধান মিলে

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন