ভৈরবীরাগের স্বপ্ন
বিভাবসু
১.
আজ রাত তোমাকে নিয়ে বিষাদ খেলেছে
ব্যথাময় কোরে তুলেছে মুহূর্তদের
শব্দেরা জড়িয়ে নিয়েছে বিষ
আর হাওয়ায় ফুলের হন্তারক প্রোরোচনা
তুমি ছুঁতে চেয়েছো কোনো মেঘলা আগুন
শীতল জলরাশি
অথবা অনিকেত কোনো স্বপ্ন
কিন্তু শেষমেশ জড়িয়ে পড়েছো আত্মধ্বংসে
তোমার এই কষ্টকথায় আমিতো
এক অনাহূত রাতচরা পাখি
ডানা ঝাঁপটানো ছাড়া কিইবা কোরতে পারি!
২.
সেই ভেজা মেঘেরাও তোমার কষ্টো ছুঁতে পারে
আমি পারি না
আমার ব্যথাগুলো তাই
অনন্য, একক আর আরোগ্যহীন
তবুও আমি সেই সম্ভোগের কথা বোলি
আদরের কথা বোলি
শরীর ছাপিয়েও যা ছুঁয়ে দেয় মেধার চিলেকোঠা
তুমি সেই কথাশোরীরে ছিটিয়ে দাও শুশ্রূষা
আর আমার ভেতরে জেগে ওঠেন কালভৈরব
তোমার তখোন ভৈরবী হোতে বাধা থাকে না কোনো
কোনো এক মেঘজন্মে
তোমার সাথে এক আকাশ উড়বো
মেঘ শমিত হোক
বৃষ্টি প্রমিত হোক
তুমি হোয়ে ওঠো আরেকটু আদুরে
৩.
তুমি জানো না
আমি কতোবার পুড়ে খাকঁ হোয়েছি তোমার আগুনে
সে আমার ব্যক্তিগতো দহন, আত্মরতিও বলতে পারো
সে আমার একলা একার নরকগুলজার
সে আমার গোপন সৃষ্টিলোক
কতোবার একা একাই পেরিয়ে এসেছি
জন্ম না নেওয়া কুঞ্জবন
আর তোমার অলিখিত স্বপ্ন দিয়ে বানানো
ঝর্নাতলার ঝিরঝির
হতে পারে এসব গতজন্মের কথা
হতে পারে পরজন্মেরও
জানি না আসছে জন্মে
কী নামে ডাকব তোমাকে!
৪.
তোমাতে বিহার করি রাতদিন
সেই আমার আনন্দভ্রমণ
সেই আমার মৃত্যুবিলাস
তোমার স্বপ্নে অপলক মিশে থাকতে ইচ্ছে করে
অথচ অলীক সেই স্বপ্নকথা
জানি তোমার স্বপ্নে অন্যকোনো আলো লেগে আছে
আমি বড়োজোর পরিত্যক্ত এক বাতিঘর
তবু এভাবে যে গান জন্ম নেয়
এভাবে যে প্রেম জন্ম পায়
তারাও অলৌকিক
অথবা এভাবে কিছুই হয় না
একটা ঝমঝমে সুখস্মৃতি ছাড়া
আমি ঘুমের ভেতরেও তোমাকে দেখি
তোমার শরীরে শরীরী আদর মেখে দেই
তাকে তুমি বলতেই পারো পুষ্পকথা
অথবা পাপাচার
বিনিময়ে স্বপ্ন আসে
অথবা আসে না
এভাবে আমার শরীরে তৈরি হয় তোমার শরীর
এভাবে তোমার মেঘলা হৃদয়
অঝোর হোয়ে ভেঙে পড়ে আমার আকাশে
৫.
আজ আমি কোনো সংস্কার মানব না
আজ আমি গর্হিত আগুন জ্বালাবো তোমার শরীরে
আজ আমি রোমে রোমে টাঙিয়ে দেবো নীতিহীনতার মশাল
আজ আমি তোমার সমীপে
নোতুন এক প্রস্তাবনা আনবো, আদরের
কামনার ঝড়জলে আজ তছনছ কোরবো তোমাকে
তোমার ঠোঁটে এঁকে দেবো তীব্রতর ক্ষতচিহ্ন
নাভিতলে চাষ কোরবো দামাল এক সোহাগকথা
আজ তোমাকে আমি জন্মান্তরের প্রেম শেখাবো
আজ তুমিও উন্মাদিনী হবে
আসমুদ্র শুষে নেবে আমাকে
জাগিয়ে তুলবে অনন্ত লাভাস্রোত
আজ পাগল ও প্রলাপ জমবে পৃথিবীতে
এইসব ভাবতে ভাবতে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ি কখন
প্রিয়তমা, যোদি ভালোই বাস তবে
অনন্তবিরহ কেন ঘিরে থাকে আমাদের!
৬.
আজ আমরা এ-ওর স্বপ্নের ভেতরে ঘুমাব
এ-ওর বুকের মধ্যে খু্ঁজে নেবো উৎসাহী আষাঢ়গান
পরস্পরের প্রশ্বাসের ভেতরে ঢুকে গিয়ে
বাড়িয়ে নেব প্রাণবায়ু
আজ আমরা পেরিয়ে যাব ঘাসকথার দিন
ঝিঁঝিঁকথার রাত
ভোর হোলে ভৈরবীরাগে বাজবে সকাল
তারপর তোমার সূর্যতর্পণ শেষে
একটা বিষণ্ণ নোদীর কাছে যাবো আমরা
নোদীটির নাম হবে ফুলকথা
তোমার চোখের মতো টলোমলো তার জল
তোমার বুকের মতো উথাল তার ঢেউ
তাহলে এভাবেই কথায় কথায় বোনা হবে আমাদের প্রেম
আর তোমাকে পাবার স্বপ্ন কোনোদিন ফুরবে না আমার
৭.
আজ আর কোনে স্বপ্ন নেই আমার
কোনো উত্তরণও নেই
কোনো অবতরণতো নেইই
অথচো তুমি আছো প্রিয়তমা
প্রিয় আতরদানির মতো
শৌখিন
সিন্দুকে ভরা
অনাদৃত
নিজের মতো করে ছুঁয়ে দেখবার কেনো উপায় নেই বলে
শরীরে শরীরে উষ্ণতা বিনিময়ের খেলা নেই বোলে
কৃত্রিম, প্রসন্নতাহীন ভ্রমণকথা এক
যেন আজ
নয় কাল
নয় পরশু শেষ হবে এই দারুণ তামাশা
তবুও তোমাকে ভালোবাসতে ভালো লাগে
আদরে আদরে লণ্ডভণ্ড কোরে দিতে ইচ্ছে করে
ইচ্ছে করে রসাতলের দেবীকে জাগিয়ে
দেখাই—
একে বলে প্রেম
একেই বলে আলো
তবু আজ আর কোনো স্বপ্নো নেই আমার
কোনো উত্তরণও নেই
কোনো অবতরণতো নেইই
৮.
অ্যাকটা উজ্জ্বল জাহান্নামের দিকে হাঁটি
অথোবা অ্যাকটা নেভানো স্বর্গের দিকে
একটা মৃত্যুপ্রবণ সূর্যাস্তের মধ্যে গুটিসুটি মেরে বোসে থাকি
ব্যক্তিগত শরীরের ভেতরে জাগাই প্রাচীন স্মৃতিকথা
স্মৃতিকথাতে জ্ঞানপাপী হাওয়ারা থাকে
তারা তোমার-আমার প্রেমে অনন্তবিচ্ছেদ বিছিয়ে রাখে
আমি তোমার নরোম স্তনে মাথা রেখে যতোবার ঘুমুতে যাই
তোমাকে কতো কতো দূরে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ওরা
যতোবার তোমার শোরীরে ভেঙে পোড়তে চাই
আষাঢ় মেঘের মতো
মেটাতে চাই জন্মোজন্মান্তরের পিপাশা
ভেঙে ফেলতে চাই তোমার লাজুক প্রতিরোধ
প্রজ্ঞাপারমিতা আমার
তোমার রোমে রোমে
দস্যুর মতো মেখে দিতে চাই নিজেকে
ততোবারই ভেঙে যায় ঘুম
এই আমার একক নরকযাপন
এই আমার অনন্য তুমি-সাধনা
৯.
মেঘলা হোয়ে আছি
তুমিহীন মেঘলা হোয়ে থাকি
তুমিহীন একলা হোয়েই বাঁচি
অথচ
তোমার শরীরে জেগে থাকা রাধাকুঞ্জে যাওয়া হয়নি কখনো
তোমাকে ঘিরে থাকা উত্তুঙ্গপাহাড়েও
কোনো সৌখিন-ভ্রমণে মাতিনি
অথবা তোমার সিগ্ধ-সরোবরে ডুবসাঁতারও খেলিনি আমি
তবু দেখো ভালোবাসার রাজ্যপাট ছেয়ে আছে আচরাচর
আমার শরীরে লেপ্টে আছো তুমি অমৃতধারার মতো
মৃত্যু অবধি হেঁটে যাচ্ছি তোমার নরম হাত ধোরে
মেতে আছি অনুপমলীলীয়
আমার গোপন ভৈরবী
আমার অনিবার্য ফুলকথা
তোমার মেঘলা অনুষঙ্গে আমিও ম্লান হোয়ে মিশে থাকি
তুমি বুকে এলে আমি রাজা হোয়ে উঠবো
সম্রাজ্ঞী, তোমার প্রশ্রয় পেলে আমি তো রাজাধিরাজ
১০.
তোমাকে কি হারিয়ে ফেলেছি আমি?
কোনো বিষণ্ন নদীতীরে?
না হোলো বুকের ভেতরে এতো খাঁখাঁ কেনো?
রাধা, আমার মেঘলাধারা!
বলো, তোমার ভেতরে কেন নেই আমার এইটুকুও ছায়া? ছোঁয়া?
তাহলে অন্য কোনো নদীজলে ভাসিয়েছো প্রাণ?
নোতুন প্রাণবান স্রোতে ধুয়েছো শরীর?
অন্যকোনো বাঁশিতে মজিয়েছো মন?
আসলে আমিই আমার স্বপ্নকে হারিয়ে ফেলেছি
আমার অনুভূতিলোক সৃষ্টিহীনতায় ঠাসা
যে স্বপ্নপথে তুমি আসতে
তোমার অনুপম কথারা আসতো
সেই পথ বেনোজলে ভেসে গ্যাছে
আমি তোমাকে ঠিক হারিয়েছি
ফলত একা আমি, নিঃসীম একক
১১.
না হয় তোমাকে শুধু ছুঁয়েই থাকবো পরজন্ম অবধি
না হয় তোমার তৃষ্ণার নিচে মেলে ধরবো আমার আর্দ্র ঠোঁট
আর উদয়াস্ত মৃদু সানাই বাজবে
আর ঝরাপাতার টুপটাপ মিশে যাবে তোমার শরীরে
তোমার ভ্রুপল্লব থেকে দিনরাত ঝরে পরবে সুরমাবিন্দু
আমি তাদের কুড়িয়ে-বাড়িয়ে একটা বিষণ্ণ রাজপথ বানাবো
ওর দুপাশে অতন্দ্র প্রহরীর মতো জেগে থাকবে
তোমার কল্পনা দিয়ে বানানো নানা রঙের ত্রিভূজ পতাকা
তোমাকে আমি আমার হারিয়ে যাওয়া ভাবনাদের গল্পো শোনাবো
আমার না পারার কথাবলীতে তুমি মিশিয়ে দেবে অনুপম সহানুভূতি
আমাদের আকাশ-পাতাল ভাবনার আকাশে
কী কী পাখি উড়তে পারবে
তুমি তার একটা তালিকা বানিয়ে দিও
প্রিয়তমা, ভেবো না—
আমি মরীচিকার চিকচিক দিয়ে
তোমার গলার হাঁসুলি বানিয়ে দেবো
আর তারপর হাঁসুলিবাঁকের উপকথায় জুড়ে যাবে
তোমার আর আমার নামও
১২.
একদিন শেষ হয় পথ, পথের মায়াপরিযান
ম্লান হয়ে আসে তোমার গন্ধ, তোমার অলীক শরীর
তোমার নাভীর অতল থেকে উঠে আসা প্রাণবায়ু এখন শীতল, স্মৃতিধন্য
জোছনাকুমারী তোমার আমার প্রেমখেলা, খেলাচ্ছল, থেমে গেল শেষে
আর কোনোদিন হয়ত দেখা হবে না আমাদের
আর কোনোদিনই হয়তো বলা হবে না 'ভালোবাসি'
বন্ধুনি হাওয়ায় আর জুরানো হবে না প্রাণ
আজ চব্বিশের উদ্ভিন্নতায় আমার কৃষ্ণপক্ষপ্রেম
ব্যর্থমনোরথ হয়ে ফিরে আসে নিজেরই ডেরায়
তবু কিছু স্মৃতি, কিছু গোপন বিনিময়
আর কিছু প্রজ্ঞাময় কথাচ্ছল
কিছু আলোকিত আদর-সংরাগ, গান হয়ে
আমার একক বেঁচেবর্তে থাকার অংশ হয়ে ওঠে
হয়ত আরো একটা বনবাস জুড়ে
বেঁচে থাকার রসদ হয়ে যায় ওরা
আজ তোমার না-বলা কথাদের আমি
বুনে দেই আমার ছেঁড়া-খোঁড়া হৃদয়ের গভীরে
এরপর গাছজন্ম তোমার...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন