ছায়ার পাখি (এপিসোড-১) 
 রুদ্র কিংশুক

খড়গেশ্বরী। নদীর নাম। তার ডাকনামও আছে।খড়ি। খড়ে। পশ্চিম বর্ধমানের মানকরে উৎপন্ন হয়ে মন্তেশ্বর, কুসুমগ্রাম হয়ে সে কুতিরডাঙা গ্রামের উত্তর ও পূর্ব দিক জলোত্তরীয় বেষ্টন করে চলে গেছে নান্দাই গাবতলার দিকে। আর কয়েকটা পা দূরেই তো  ভাগীরথী। তার গন্তব্য, ঐকান্তিক অভীপ্সা। কুতিরডাঙার ডাঙা নাম নদীর জলে ভেজা। গ্রামের পশ্চিম দিকে আদিগন্ত মাঠ। তারও পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত বাঁকানদী।  সেও এসেছে বর্ধমান থেকে  মড়াইপিড়ি, কাদপুর নামের গ্রামগুলোর মানুষ,  ফসল আর ফসলপাহারার কাকতাড়ুয়াদের পিপাসা মিটিয়ে। গ্রামের ঠিক উত্তর-পশ্চিম কোণে বাঁকার জলধারা এসে পড়েছে খড়িতে।  এখানেই শেষ নয় গ্রামের দক্ষিণ দিক দিয়ে শীর্ণকায় ছোট্ট একটা নদী এসে মিশেছে খড়িতে। জায়গাটার নাম রামেশ্বরপুর । কুতিরডাঙার খুব কাছেই। নদীটির নাম মায়াময়। পাখিপাখি। গুরজোয়ানি।

গ্রামের ঠিক নৈর্ঋতকোণে যেখানে খড়ির প্রবাহিত জলধারায় এসে মিশেছে বাঁকা। সেই জায়গাকে গ্রামের লোকেরা বলে তেমোয়নির ঘোল।  কেন যে এমন নাম কেউ জানে, বুঝতেও পারে না। জায়গাটা বাঁকানদীর মোহনা‌। মধ্যব‍র্তী জল‍রাশি  কোন নারীর মাথা। আর তিন দিকের জলধারা যেন সেই মাথা থেকে গড়িয়ে পড়া তিনটি সুদৃশ্য বেণী। ত্রিবেণী আর মোহনা--- তাই ক্রমে ক্রমে বদলাতে বদলাতে তেমোয়নির ঘোল। বর্ষার বিপুল জলরাশি যখন খড়িতে পড়ে তখন তৈরী হয় ঘোলা জলের ঘূর্ণি। নতুন শব্দের ঘূর্ণির ভেতর পুরাতন কীভাবে যে হারিয়ে যায়! যারা বলতে পারত সেই প্রাচীন জনপদ আর তার জনলোক মুছে গেছে। তাদের স্মৃতিটুকু ইথারে কেবল ছায়ার পাখি হয়ে ভেসে বেড়ায়।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন