শীতের গল্প
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

শীতের রাতে শীতের গল্প শুনতে হয়। আমার ঠাকুমা এটা জানতো। হিম পড়া শুরু হলেই বুড়ি দুয়ারে লম্ফ জ্বালাতো। আমরা গোল হয়ে বসলেই বলতো, "এ তো ভূতের গল্প নয়, অতো কাছে আসার কিছু নেই। বরং দূরে দূরে থাকলেই লড়াইটা জমবে।" আমরা মাথায় রুমাল বাঁধতাম, কেউ কেউ টুপিও পরত। ঠাকুমা বলতো, "এতসব পরলেই তো হবে না। সব খুলে গল্পের জলে নামতে হবে তো। খুব দেরি হলে বাস ছেড়ে দেবে।" আমরা গল্প শুনতাম আর বাস দেখতাম। গল্পে কারও শীত করলে আমরা লোকের কাছ থেকে তাদের জন্যে গরম জামা চাইতাম। ফুটপাতে খুব বেশি শীত এলে যখন তার কাপড় খুলে যেত তখন আমাদের দাঁতের ওপর দাঁত এসে বসত। কি লাভ হতো জানি না। তবে আস্তে আস্তে লম্ফ আবছা হয়ে আসতো। ঠাকুমার গল্প শেষ হবার আগেই রোদ উঠে যেত। ফুটপাতের যুদ্ধ শেষে আমাদের তখন গলদঘর্ম অবস্থা। আসলে ঠাকুমা তার ছেলেদের অবস্থা জানত তাই গল্প বলার ছলে সে আমাদের শীত পার করে দিত।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন